শীতে কোষ্ঠকাঠিন্যে মুক্তি উপায়
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক আজ আমরা শীতে কোষ্ঠকাঠিন্যে মুক্তি উপায় নিয়ে আলোচনা করব। মানুষের জীবনে কোষ্ঠকাঠিন্য যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা। অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন ও খাদ্যাভাস কোষ্ঠকাঠিন্যের পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করে। সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই শীতে কোষ্ঠকাঠিন্যে মুক্তি উপায় নিয়ে আমরা আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি এই আর্টিকেলের।
কিছু ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য বংশানুক্রমিক। বিভিন্ন মানসিক অবস্থার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। খাদ্যভ্যাসে পরিবর্তনের কারণে অধিকাংশ মানুষই এই সমস্যায় ভোগে। কিন্তু তার সামরিক এবং সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। শারীরিক কসরতে কম হলে বা ব্যস্ত জীবন শৈলী কারনেও কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। উদ্বেগ, অবসাদ বা অন্য আবেগজনিত বিষয় ও এই সমস্যার পিছনে রয়েছে। অবসাদ বা কিছু বিশেষ ধরনের ঔষধ সেবনে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই শীতে কোষ্ঠকাঠিন্যে মুক্তি উপায়।
প্রচুর পানি ও তরল এবং যথেষ্ট আঁশযুক্ত খাবার খান প্রতিদিন। গোটা শস্য, শাকসবজি, ফলমূল, যেমন বেল, পেঁপে ইত্যাদি হল আঁশযুক্ত খাবার। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ উপকারী হচ্ছে মধু। দিনে তিনবার 2 চা চামচ করে মধু খান । আপনি চাইলে এক গ্লাস গরম পানির মধ্যে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একটি পান করুন।শীতে কোষ্ঠকাঠিন্যে মুক্তি উপায় কিছুদিনের মধ্যে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে।
অতিরিক্ত মাংস খাওয়াবা ফাইবার জাতীয় খাবার কম খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বীজ সহ পেয়ারা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কেটে যেতে পারে। রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখা পাঁচ থেকে ছয় পিস কিসমিস ও কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দিতে পারে। ইসবগুলের ভুষি, অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী ঘরোয়া টোটকা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমাধানে বেশ কাজে আসে।
লেবুর রস
লেবুর রস কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খুবই কার্যকরী।এক গ্লাস গরম পানিতে লেবুর রস দিয়ে দিন। এর সঙ্গে আধা চা-চামচ নুন এবং সামান্য মধু মিশিয়ে নিতে পারেন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এটা পান করুন। দ্রুত ফল পেতে সন্ধ্যায় আরেকবার পান করুন এই মিশ্রণটি। শীতে কোষ্ঠকাঠিন্যে মুক্তি উপায় কিছুদিনের মধ্যে ফল পেয়ে যাবেন।
ক্যাস্টর অয়েল
ক্যাস্টর অয়েল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খুবই কার্যকরী। সকালে খালি পেটে এক বা দুই চা চামচ ক্যাস্টর অয়েল খান। আপনি চাইলে ফলের রসের সাথে কেস্টারওয়েল মিশিয়ে খেতে পারেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আপনি পরিবর্তন দেখতে পাবেন। ক্যাস্টর অয়েল গ্রহণের পর কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে আপনি মুক্তি পেয়ে যাবেন।
কলা
কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা সমাধানের মহা ঔষধ বলতে পারেন কলা কে। কলাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা সমাধানে দারুন কাজ করে। এতে থাকা পটাশিয়াম ক্ষুদ্রান্ত্রের কর্ম ক্ষমতা বাড়িয়ে হজম শক্তি কে আরো গতিশীল করে।
শসা
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে শসা কে প্রাধান্য দিতে পারেন। শসা তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি। সেইসঙ্গে এতে থাকা কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে আপনাকে দূরে রাখে। কারণ কোষ্ঠকাঠিন্য যাদের রয়েছে তাদের প্রচুর পরিমাণে পানি গ্রহণ করতে। আর যারা কম পানি খায় সাধারণত তাদেরই কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। তাই আমাদের পানিজাতীয় খাদ্য খাওয়া উচিত।
কলমি শাক
কলমি শাক কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। কলমি শাকের পাতা ও কান্ডে পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। খাদ্য হজম হচ্ছে খাদ্য, পরিপাক ও বিপাক ক্রিয়ায় সহায়তা করে। তাই ডায়েটে কলমি শাক রাখতে পারেন।
কিউই
এই ফলে আছে নানা ধরনের ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। পাশাপাশি একটি কিউই তে আর আই আড়াই গ্রাম ফাইবার। তা ছাড়াও রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পানি। সব মিলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দিতে বেশ কার্যকরী বলা যায় এই ফল কে।
আঙ্গুর
এই ছোট ছোট ফলগুলোতে রয়েছে খাদ্যের নানা ধরনের জরুরি উপাদান। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পানির জুড়ি মেলা ভার। শরীরে পানির মাথা যতবেশি থাকবে, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমবে ততই। আঙ্গুরের পানির সঙ্গে রয়েছে যথেষ্ট ফাইবার। ফলে কয়েকটি করে আঙ্গুর খাওয়া খেলে শরীর সুস্থ থাকবে, তেমনি মুক্তি মিলবে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা।
আপেল
পুষ্টিবিদদের মতে, আপেল কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতে সক্ষম। আপেলে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সমাধান খোসাসহ আপেল খাওয়া উচিত। রোজ সকালে একটি আপেল কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। তাই আমাদের সকলের উচিত যে ফলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার উপস্থিত রয়েছে সেই ফলটি কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য উপযুক্ত ফল হিসেবে বিবেচনা করা। কারণ কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া জন্য আমাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণে পানি প্রয়োজন হয়।
খেজুর
খেজুর পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং প্রাকৃতিক পূর্ণ একটি ফল। এছাড়াও খেজুর মিষ্টি এবং ঠান্ডা প্রকৃতির হয়। মিষ্টি যারা কোষ্ঠকাঠিন্য, হাইপার এসিডিটি, ব্যথা জয়েন্ট, চুল পড়া, এলার্জিতে ভুগছেন তাদের জন্য সেরা খাবার হতে পারে খেজুর। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানিতে দুই থেকে তিনটি ভেজা খেজুর খান। খেজুরে আছে এমন কিছু পুষ্টিগুণ, খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। কখনো কখনো ডায়রিয়া জন্য এটা বেশ উপকারী।
আমলকি
আমলকি বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান করতে পারে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে আমলকি খেলে উপকার পাবেন। এক চা চামচ আমলকীর গুঁড়া বা তিনটি তাজা আমলকির রস খেতে পারেন।
কিসমিস
কিসমিসের আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতে দারুণ কার্যকর। তবে ভেজানো কিসমিস খাওয়া ভালো। কারণ শুকনো খাবার খাওয়ার ফলে গ্যাসট্রিকের সমস্যা হতে পারে। পানিতে ভিজিয়ে রেখে খেলে এগুলো সহজেই হজম হবে।
ঘি
গরুর দুধের ঘি মেটাবলিজম উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি শরীরের ফ্যাট বজায় রাখতে সাহায্য করে যা , ফ্যাট ভিটামিন যেমন : ভিটামিন এ, ডি, ই, এবং- কে কে শোষণের জন্য প্রয়োজন। এক গ্লাস উষ্ণ গরুর দুধের সঙ্গে এক চা-চামচ গরুর দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য আক্রমণ ব্যক্তিদের জন্য দারুন কাজ করে। তবে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য কি না খাওয়াই উচিত।
মেথি বীজ
এক চামচ মেথি বীজ সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে খালি পেটে খেতে পারেন। এছাড়া, মেথি গুঁড়ো করে নিন। ঘুমোনোর আগে এক গ্লাস হালকা গরম পানির সাথে এক চা-চামচ মেথি গুঁড়ো মিশিয়ে খেতে পারেন।
আইসক্রিম, চিপস, সিদ, কফি, ব্ল্যাক টি , ফাস্টফুড এবং পিজ্জা বা বরজাত খাবারের ফাইবারের ঘাটতি থাকে। এগুলো কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা ডেকে আনতে পারে। চকলেট ভাজাপোড়া, লাল মাংস( গরু, খাসি ইত্যাদি), প্রচুর চিনি যুক্ত বেকারি খাদ্য যেমন কেক, পেস্ট্রি কেক, এবং আয়রন ক্যাপসুল, কাঁচা কলা ইত্যাদি কম খাওয়াই ভালো। কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে জগিং, রানিং বা সাইক্লিং এর মত শরীরচর্চায় নিযুক্ত থাকেন।
শেষে বলা যায় যে শীতে কোষ্ঠকাঠিন্যে মুক্তি উপায় সম্পর্কে আমরা আপনাদের অনেক কিছুই ধারণা দিতে পেরেছি। এবং অনেক ফলাফল সম্পর্কে বলেছি। যে ফলগুলো মধ্যে অনেক ফাইবার রয়েছে। যেটা পানির ঘাটতি পূরণ করে। কারণ শীতে কোষ্ঠকাঠিন্যে মুক্তি উপায় সম্পর্কে আমরা যদি বলতে চাই তাহলে শরীরে পানির ঘাটতি জন্যেই কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। তাই আপনারা যদি শীতে কোষ্ঠকাঠিন্যে মুক্তি উপায় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে অবশ্যই আমাদের আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন। আর পানি বেশি বেশি করে খাবেন।