৬ মাসের শিশুর খাবার তালিকা
আপনার সোনামনির বেড়ে ওঠার প্রতিটা ক্ষেত্রে আপনি খুবই যত্নবান। আপনি হয়তো চেষ্টা করেন আপনার সোনামণিকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করতে। কিন্তু অনেক সময় আমাদের জানার ঘাটতির কারণে আমাদের পরিকল্পনায় ভুল হয়। তাই আপনার ছোট্ট সোনামণির খাদ্য তালিকা নিয়ে আপনাকে ভাবা উচিত। যেন আপনি আপনার ছোট সোনামণির বা শিশুর খাবারের জন্য সঠিক পরিমাণ খাবার এবং সঠিক খাবার নির্বাচন করতে পারেন। এই আর্টিকেলে আমি ছয় মাসের শিশুর খাবার তালিকা নিয়ে আলোচনা করব। তাই যাদের ছয় মাস বয়সী শিশু রয়েছে তারা আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
মায়ের দুধ
মায়ের দুধের বিকল্প খাবার এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। তাই মায়ের দুধের বিকল্প নেই বললেই চলে শিশুর খাদ্যের জন্য। এই ছয় মাস পর্যন্ত সর্বোত্তম খাবার হচ্ছে মায়ের বুকের দুধ। কিন্তু ছয় মাস বয়স বাড়ার সাথে সাথে শিশুর খাবার তালিকায় নতুন পুষ্টিকর খাবার যোগ করতে হয়। এ সময় শিশুর সাধারনত শারীরিক বৃদ্ধির সাথে সাথে মেধা বিকাশের প্রয়োজন হয় তাই মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবারের প্রয়োজন পড়ে। এই বাড়তি খাবার তৈরি করাতে আমাদের ৬ মাসের শিশুর খাবার তালিকা সম্পর্কে জানা দরকার। আসুন জেনে নেই ছয় মাস বয়সী শিশুর খাবার তালিকা সম্পর্কে।
ছয় মাসের শিশুর পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা
- ক্যালসিয়াম- আর এবং দাঁতের বিকাশের জন্য ক্যালসিয়াম খুবই দরকারী একটি উপাদান।
- আয়রন- আয়রন শরীরের বর্তনশীল অংশগুলিতে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত সরবরাহ করতে সাহায্য করে।
- জিংক- জিংক পুরুষের গঠন মেরামত এবং বৃদ্ধিতে উন্নতি ঘটায়।
- প্রোটিন- প্রোটিন শিশুর কোষের গঠনের উপাদান হিসেবে কাজ করে এবং প্রোটিন শিশুর বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য একটি উপাদান।
- ভিটামিনস- শিশুর দহি বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা উপাদান।
- মিনারেল বা খনিজ- সোডিয়াম পটাশিয়াম এর মত খনিজ গুলি সরাসরি শিশুর বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে।
- শর্করা বা কার্বোহাইডেট- শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার শিশুর দৈনন্দিন কার্যকলাপ এ শক্তি যোগাতে সহায়তা করে।
- ফ্যাট- ফ্যাট শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে এবং ত্বকের নিচে আস্তরন গঠনের সহায়তা করে।
সবজি খিচুড়ি
সবজি খিচুড়ি খুবই কমন একটা খাবার যা ছয় মাস বয়সী শিশুকে খাওয়ানো যেতে পারে। ডাল টমেটো শাক গাজর সামান্য তেল দিয়ে খিচুড়ির মতো রান্না করে শিশুর জন্য খাবার প্রস্তুত করতে পারেন। তবে নিশ্চয়ই শিশুর খাবারের মরিচ দিবেন না। এছাড়া ছয় মাসের শিশুর খাবারের তালিকায় থাকতে পারে মাছ এবং মুরগির খিচুড়ি। সুজি পায়েশ ডিমের পাতলা নরম হালুয়া ফলের রস এমনকি সবজি সিদ্ধ করে ম্যাশ করে শিশুকে সুস্বাদু খাবার বানিয়ে খাওয়াতে পারেন।
মাছ মাংস ডিম
শিশুর শারীরিক বৃদ্ধির জন্য তার আমিষের চাহিদা পূরণ করতে আমির জাতীয় খাবারের প্রয়োজন পড়ে। তাই শিশুর খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন মাছ মাংস এবং ডিমের তৈরি খাবার। এছাড়া দুধের তৈরি খাবার ছয় মাস বয়সী শিশুকে খাওয়াতে পারেন। এই মাছ মাংস ডিম শিশুর প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করবে।
ছয় মাস বয়সী শিশুর খাবারের তালিকায় ফল
শিশুর 6 মাস বয়স থেকেই ফল খাওয়ানো যায়। তবে প্রথমে কলা দিয়ে আপনি আপনার শিশুকে ফল খাওয়ানো শুরু করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কলাটিকে ভালো করে পিষে নিবেন। অথবা একটি ব্লেন্ডার নিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে পারেন। এভাবে শিশুটিকে কলা দিয়ে খাওয়ানো শুরু করবেন। তারপর যখন শিশুটি কলা হজম করার সক্ষমতা অর্জন করবে তখন আপনি ফল যেমন বেদনা আঙ্গুর আপেল ইত্যাদি খাওয়াতে পারেন।
পাকা পেঁপে
শিশুকে পাকা পেঁপে খাওয়াতে পারেন। পাকা পেঁপে রস করে শিশুকে খাওয়াতে পারেন। এছাড়া যদি শিশুকে কাঁচা পেঁপে খাওয়াতে চান তবে অবশ্যই সিদ্ধ করে নেবেন এবং ভালোভাবে পিষে নেবেন।
শিশুর জন্য চালের সুজি
শিশুর বৃদ্ধির সাথে সাথে তার খেলাধুলা সহ বিভিন্ন চলাফেরায় শক্তি দরকার হয়। চালের সুজি অনেকটা ভাতের মত কাজ করে।
ভেজিটেবল পিউরি
একটি ছয় মাস বৈশিষ্ট্য যখন ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তখন তার প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং পুষ্টির দরকার হয়। কিন্তু তখন শুধু দুধ অথবা সুজি দিয়ে তার পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। তখন বিভিন্ন ধরনের সবজি যেমন লাউ কুমড়া গাজর সিম ভালো করে সিদ্ধ করে চটকে শিশুকে খাওয়ানো যেতে পারে। সবজি সেদ্ধ শিশুর শরীরের জন্য ভালো উপকারী। তবে জোর করে খাওয়াতে যাবেন না। ধীরে ধীরে আপনার বাচ্চাকে সবজিতে অভ্যস্ত করুন এবং সাথে শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়াতে থাকুন।
ডালের স্যুপ
সিদ্ধ ডাল যেহেতু শক্ত খাবারের মধ্যে পড়ে না তাই আপনার ছয় মাসের বয়সের শিশুকে সিদ্ধ করা ডাল খাওয়াতে পারেন। এজন্য প্রথমেই ডালকে ভালোভাবে সিদ্ধ করে নেবেন এবং পানি কমিয়ে অর্থাৎ ডালকে ঘন করে ভালো করে পিষে নেবেন। ডালের সাথে কিছুটা মাখন এবং নুন মিশিয়ে নিতে পারেন। খেয়াল রাখবেন ডালের দানাগুলো যেন একদম নরম হয়।
আলু দুধ এবং বাদাম
শিশুর দৈহিক গঠনে আলু এবং দুধের সাথে বাদাম মিশ্রিত করে খাওয়ানো যেতে পারে। এর জন্য আলোকে ভালো করে সিদ্ধ করে নিতে হবে এবং বাদামকে ভালোভাবে পিষে পেস্ট করে নিতে হবে।
ছয় মাস বয়সী শিশুকে খাওয়ানোর আগে সচেতনতা
যেহেতু ছয় মাস বয়সী শিশু খুবই ছোট তাই তার খাবার তৈরীর ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সচেতন থাকতে হবে। ছয় মাস বয়সী শিশুকে খাবার তৈরি করার ক্ষেত্রে কি কি বিষয় সচেতন থাকতে হবে এরকম কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হলো।
- সব সময় সদ্য প্রস্তুত করা খাবার খাওয়াবেন। অর্থাৎ বাঁশি পচা খাবার অথবা ফ্রিজে রাখা খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত থাকবেন।
- খাওয়ানোর সময় প্রথমে তরল জাতীয় খাবার খাওয়ানো শুরু করুন। যেমন ডাল দিয়ে আপনি খাবার শুরু করতে পারেন। প্রথমেই কঠিন অথবা শক্ত খাবার।
- এলার্জি তৈরি হতে পারে এমন খাবার শিশুকে দিবেন না। অথবা বিশেষ বিশেষ খাবারের শিশুর এলার্জি হতে পারে সেই বিষয়টিতে সচেতন থাকতে হবে।
- শিশুকে খাবার দেওয়ার আগে খাওয়ানোর জন্য যে পাত্র গুলো ব্যবহার করতে হবে সে পাত্রগুলোকে পাঁচ মিনিট গরম পানিতে ফুটান।
- শিশুকে সাধারণত স্টিলের পাত্রে বা ইকো ফ্রেন্ডলি পাত্রে খাওয়াবেন। শিশুকে কখনোই সস্তা প্লাস্টিকের পাত্রে খাওয়াবেন না। প্লাস্টিকে থাকা bp শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকারক ।
- শিশুর খাবারের মধু চিনি বা নুন মেশাবেন না।
- শিশুকে চেয়ারে বসিয়ে খাওয়াবেন এবং খাওয়ানোর সময় হাঁটাচলা বা চলাফেরা করবেন না দৌড়াদৌড়ি করবেন না।
- শিশুকে একসঙ্গে জোর করে অনেক বেশি খাবার খাওয়াবেন না।
- শিশুকে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার দিন যেন তার রুচির পরিবর্তন হয়।
ছয় মাস বয়সী শিশুর কতটা খাবার খাওয়ানো উচিত
ছয় মাস পর্যন্ত যেহেতু শিশুর মায়ের বুকের দুধেই যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে। এর পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের দুধ আপনারা শিশুর খাবারের তালিকা যোগ করতে পারেন যেহেতু 6 মাসের পরে মায়ের দুধ যথেষ্ট হয় না। এরপর আপনি আপনার সন্তানকে বিভিন্ন ধরনের ফলের সাথে ধীরে ধীরে পরিচয় করান। এবং বিভিন্ন ধরনের সবজির সাথে পরিচয় করান। তবে নিশ্চয়ই খেয়াল রাখবেন এটি যেন শিশুর দৈহিক ওজনের তুলনায় যতটুকু খাবার দরকার তার চেয়ে বেশি হয়ে না যায়। আমরা অনেকেই মনে করি খাবার খাওয়ালেই শিশুর দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। এমনটি বাবা একেবারে অনুচিত।
সতর্কতা
এখানে যে বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত এবং সবার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু আপনার শিশুর ওজন অনুযায়ী কি পরিমান খাবার দরকার সেটা একজন স্বাস্থ্যকর্মী নির্ধারণ করে দিতে পারে। তাই আপনার নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সাথে সবসময় যোগাযোগ রাখুন এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তা। সর্বোপরি আপনার শিশুকে পুষ্টিকর এবং পরিমিত পরিমানে খাবার খাওয়ান।