সিরিয়া ও তুরস্কে হওয়া সাম্প্রীতিক ভূমিকম্প নিয়ে আজকের পৃথিবী অনেকটা চিন্তিত। ভূমিকম্পের মতো ভয়াবহ দুর্যোগ সামাল দেওয়া অত্যন্ত কঠিন ।ভূমিকম্প কেন হয় এবং করণীয় কি আমরা অনেকেই এ বিষয়ে ধারণা নেই। আমাদের এই বাংলাদেশ ভূমিকম্প প্রবণ দেশ না । তাই আমরা ভূমিকম্পন সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণা নেই। তাই আমাদের এই বিষয়ে সতর্কতা থাকা উচিত কখন যে আমাদেরও এমন ভূমিকম্প হতে পারে । ভূমিকম্প সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা প্রত্যেকের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে আগে থেকেই ধারণা থাকলে এর কবল থেকে রেহাই পাওয়া যায় সেই সাথে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলা করা যায়।
ভূমিকম্প কেন হয় ?
ভূমিকম্প হচ্ছে ভূমির কম্পন। ভূমিকম্প কেন হয় তা বুঝতে হলে আমাদেরকে ভূপৃষ্ঠের গঠন সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন । ভূমিকম্প মূলত একটি শিলা যখন একটি শিলা অন্য একটি শিলার সাথে সংঘর্ষ করে উপরে উঠে তখনই ভূমিকম্প সংঘটিত হয় তখন আমরা এর অনুভূতি পাই । তাছাড়া আমরা জানি ভূমিকম্প হওয়ার তিনটি অন্যতম কারণ হলো ; ১। ভূপৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তন ২। আগ্নেয়গিরির অগ্নিপাত ৩। ভূপৃষ্ঠের শিলা ।বর্তমান সময়ে তুরস্ক ও সিরিয়ায় যে ভূমিকম্পটি হয়েছে তা মূলত ভূপৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তনের কারণেই ভয়াবহ দুর্যোগটি ঘটেছে ।
অমনিও প্লেটের মাধ্যমে পৃথিবীর উপরের অংশ গঠিত ।অনেকেই প্লেটিকে বলে টেকটনিক প্লেট । টেকটনিক প্লেটগুলো ধীরে ধীরে একে অপরের থেকে নানা কারণে আলাদা হয়ে গিয়েছে । প্লেটগুলোর মধ্যে নানা কারণে এদের মধ্যে সংঘর্ষ হয় । সংঘর্ষের ফলে শ্রেষ্ঠ শক্তি তরঙ্গ আকারে ছড়িয়ে পড়ে ভূপৃষ্ঠের মাঝে । এই তরঙ্গ শক্তিশালী হলেও ভূপৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে । পর্যাপ্ত শক্তি হলে ভূপৃষ্ঠের উপরে আসে এবং কম্পন সৃষ্টি করতে পারে তাই এ ধরনের কম্পনকে বলা হয় ভূমিকম্প । তাই আমরা যে ভূমিকম্পের কারণ জানতে পারলাম এর কারণে মূলত সিরিয়া ও তুরস্ক ভয়াবহ ভূমিকম্প ভূপৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগটি দেখা দিয়েছে ।
ভূমিকম্প হলে করণীয়
প্রাকৃতিক দুর্যোগ গুলোর মধ্যে ভূমিকম্প হলে খুব বেশি সময় পাওয়া যায় না এতে করে অনেক প্রাণহানি ঘটে । এবং মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তছনছ করে দিতে পারে সবকিছুই । ভূমিকম্প কবল থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য আপনার আমার বাড়িঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে ভূমিকম্প প্রতিরোধক করে নির্মাণ করলে অনেকাংশেই নিরাপদ থাকতে পারবেন । আমরা জানি যে ভূমিকম্প হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খোলা স্থানে আশ্রয় নেওয়া উচিত এতে করে আমরা নিরাপদ থাকতে পারবো । যে কোন দুর্যোগের ক্ষেত্রে বিশেষ করে ভূমিকম্প হলে মাথা ঠান্ডা রেখে পদক্ষেপ নিতে হবে । বাইরে দেখতে হবে কোথায় ফাঁকা জায়গা আছে সেখানে সমবেত হতে হবে তবে বড় বড় দালানের নিচে না যাওয়াই উচিত বরং ফাঁকা স্থানে সমবেত হতে হবে ।
নিচতলায় থাকলে ভবন থেকে বাইরে যেতে হবে তবে আপনি যদি ভবনেই থাকেন তখন সে ক্ষেত্রে আপনাকে টেবিল বা খাটের নিচে আশ্রয় নেওয়া উচিত । তবে আপনাকে আরো সতর্ক থাকতে হবে সম্ভব হলে মাথার উপর বালিশ হেলমেট বা নরম কিছু রাখা উচিত । এছাড়াও বহু তল ভবনেরআশ্রয় নেবার সময় একসাথে এক স্থানে আশ্রয় না নিয়ে ছড়িয়ে আশ্রয় নেওয়া উচিত । ভবনের নিচে আশ্রয় নেবার সময় কলাম্ এ নিচে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে । গ্যাস বা বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে দূরে থাকা উচিত । বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলে তা বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে এবং সেই সাথে গ্যাস বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে । ফোন বা মোবাইল কাছে থাকলে ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য জরুরি সেবায় নাম্বার গুলো সংরক্ষণ করে রাখতে হবে এবং লিফট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে ভূমিকম্পের সময় ।
ভূমিকম্প হলে সতর্ক থাকতে হবে কেননা অনেক সময় ভূমিকম্প একেবারে শেষ হয় না ভূমিকম্পের পর বেশ কয়েকটি ভূমিকম্প দ্বিতীয়বার হতে পারে । তাই সকল ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে সুশৃংখল বজায় রেখে বের হতে হবে আমাদেরকে সম্ভব হলে আমাদেরকে উদ্ধার কাজে নেমে পড়তে হবে এবং সেই সঙ্গে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি যেন আমরা মোকাবেলা করতে পারি সেই সাহসিকতা রাখতে হবে ।
ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব কি ?
আমরা দেখি যে ভূমিকম্প হলে আমরা টের পাই না কিন্তু দ্বিতীয় ভূমিকম্পটি প্রথম ভূমিকম্পের ঘন্টার খানেক সময় এর অনুমান আমরা করতে পারি । প্রথম ভূমিকম্পটি অনুমান করা যায় না । এখন পর্যন্ত কোন প্রযুক্তি তৈরি করা হয়নি যার মাধ্যমে ভূমিকম্পের পূর্বভাস দেওয়া সম্ভব । তবে সম্ভাবনা যাচাই করা সম্ভব আধুনিক কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করে । বিভিন্ন ফল্ট লাইনের ভূমিকম্পের পূর্বের ইতিহাস বিবেচনায় এনে ধারণা করা যায় যে এই স্থানে কত বছর ধরে শক্তি সঞ্চিত হচ্ছে বেরিয়ে আসবে সে সম্পর্কে কোন পূর্বভাস দেওয়া সম্ভব হয়নি । পূর্বাভাস পাওয়া যায়নি বলে ভূমিকম্প সব থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ।
এজন্য চাই সঠিক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি । তবে ভূমিকম্পের থেকে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব হবে । তবে ভূমিকম্প কখন হবে তা জানাবার মত প্রযুক্তি এখন আবিষ্কৃত হয়নি । এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা এখন গবেষণা করে যাচ্ছেন । তাছাড়া ভূমিকম্প মাপার যন্ত্রের নাম সিসমোগ্রাফ মিটার এই যন্ত্রের সাহায্যে ভূমিকম্পের পরিমাপ নির্ণয় করা হয় ।
ভূমিকম্পের আগে যা যা করতে হবে
- বিদ্যুৎ ও গ্যাস লাইন বন্ধ করার নিয়ম পরিবারের সবার জানা উচিত ।
- পরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণের জন্য বিল্ডিং কোড মেনে চলতে হবে ।
- ঘরের উপরে ভারী জিনিস পত্র না রাখা এবং সেই সাথে হেলমেট এর ব্যবস্থা রাখা ।
উল্লেখিত পদক্ষেপ গুলো জানা থাকলে আমরা ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ থেকে রেহাই পাব । এতে করে আমাদের জান মালের ক্ষয়ক্ষতি হবে না । আশা করি আপনারা উল্লেখিত পদ্ধতি গুলো জেনে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন এবং সেই সাথে পরিবারের সবাইকে রক্ষা করতে পারবেন ।