একজন নারীর ক্ষেত্রে প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার অনুভূতিটাই অন্যরকম। বিয়ের পর নারীদের সাধারণত অনেক ধরনের শারীরিক পরিবর্তন দেখা দেয়। এছাড়া এ সকল বিষয় নতুন অবস্থায় বুঝে ওঠা সহজ হয়ে ওঠে না একজন মেয়ের ক্ষেত্রে। আর এই সমস্যাগুলো বা এই লক্ষণগুলো উপলব্ধি না করতে পারার ফলে নানান ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় মেয়েদের। নারীরা গর্ভবতী হলে তা সঠিক সময়ে জানতে না পারলে মা এবং শিশুর দুজনেরই ক্ষতি হতে পারে। তাই এই বিষয়টিকে মাথায় নিয়ে আমরা আমাদের আজকের আর্টিকেলটি শুরু করব। আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়টি হলো প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে। আশা করছি আমাদের আজকের এই প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ আর্টিকেলটি গর্ভবতী মেয়েদের জন্য কার্যকরী হবে। তাই দেরি না করে জেনে নেই প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণগুলো সম্পর্কে।
প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ
গর্ভবতী হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ হল
গর্ভবতী হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ বিয়ের পরে কোন মাসে যদি মাসিক মিস হলেই টেনশন বেড়ে যায়। এই মাসিক মিস হওয়ার দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত কেউ চায় না এখন বাচ্চা নিতে তাই সেই গর্ভবতী হল কিনা সেটা নিয়ে চিন্তিত থাকে। আবার অন্যদিকে আরেকটি কারণ হলো যারা বাচ্চা নিতে চায় হঠাৎ পিরিয়ড মিস হওয়াতে একটু চিন্তিত হয়ে পড়ে যে মিসকান হল বাচ্চার জন্য নাকি, না অন্য কোন সমস্যা রয়েছে। যারা কিনা প্রথমবার গর্ভবতী হয় তারা বেশির ভাগই গর্ভধারণের পর অনেকটা সময় চলে গেলেও বুঝতে পারেনা যে তারা গর্ভবতী হয়েছেন। তারা ধারণা করে শারীরিক কিছু পরিবর্তন এর ফলে এইরকম হয়েছে। গর্ভবতী হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ টাই হলো পিরিয়ড মিস করা। তাই এই বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ এর মধ্যে অন্যতম একটি লক্ষণ হল মাসিক না হওয়া।
শারীরিক ক্লান্তি বোধ
প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ এর মধ্যে শারীরিক ক্লান্তি বোধ হওয়া অন্যতম। যখন মেয়েরা গর্ভবতী হয় থাকে তখন তাদের শরীর অনেক অংশে ভারী হয়ে যায়। ওই সময় তাদের শরীর সবসময় ক্লান্তি বোধ করে, অযথা অকারণে জীবনী ভাব আসে, ঘুমের পরিমাণ আগের তুলনায় বেড়ে যায়। গর্ভবতী হওয়ার শুরু থেকেই এ লক্ষণগুলো দেখা যায়। অনেক বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা মনে করেন প্রোজেস্টেরন হরমোনের কারণে এই ঘুম ঘুম ভাব হয়ে থাকে। আপনি যদি আপনার মধ্যে এই ধরনের লক্ষণ গুলো দেখতে পান তাহলে বুঝতে হবে আপনি গর্ভবতী।
বমি বমি ভাব হওয়া
গর্ভবতী হলে বমি বমি ভাব হওয়াটা সকলের কাছে একটি পরিচিত লক্ষণ। অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের কারণেও বমি হয়ে থাকে। কিন্তু সাধারণ মানুষের বমি হওয়ার সাথে গর্ভবতী মায়ের বমি হওয়ার বিষয়টা ভিন্ন। সাধারণত বদ হজমের কারণেও অনেক সময় বমি হয়ে থাকে। কিন্তু প্রেগনেন্সির বমির বিষয়টা একটু অন্যরকম। কনসিভ করার পরে দুই থেকে চার সপ্তাহ পর থেকেই বমি বমি ভাব দেখা দেয়। বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠে বমি বমি ভাব হওয়া ও মাথা ধরার সমস্যা বেশি দেখা দেয় বলে একে মর্নিং সিকনেস বলা হয়ে থাকে। আর এই সমস্যাগুলো শুধু সকালবেলায় নয় দুপুর বেলা কিংবা রাতের বেলাও যেকোনো সময় হতে পারে। আপনি যখন বাচ্চা কনসিভ করবেন ঠিক তার চার সপ্তাহ পর থেকে আপনার মর্নিং সিকনেস শুরু হয়ে যাবে। আবার অনেক সময় দেখা যায় এই চার সপ্তাহের মধ্যেও এরকমটা দেখা দিতে পারে। আর এই মর্নিং সিকনেস জনিত সমস্যা 14 থেকে 15 সপ্তাহ পর্যন্ত হয়ে থাকে। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে এই অনুমানটা সঠিক নয়। কারো কারো ক্ষেত্রে এই সমস্যাটা বেশি হতে পারে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে এই সমস্যাটা কমও হতে পারে। এই সময় বমি হওয়ার ফলে গর্ভবতী মেয়েরা ঠিকঠাক মতো খাবার খেতে পারে না। কিন্তু তাদের জোর করে হলেও খাবার খেতে হবে। কেননা খাবারগুলো বমির মাধ্যমে বের হয়ে যায় শরীর থেকে। ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই খাবার খেতে না চাইলেও জোর করে খেতে হবে। প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ এর মধ্যে অন্যতম একটি লক্ষণ হলো বমি বমি ভাব হওয়া।
খাবারের প্রতি রুচিহীনতা
প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ এর মধ্যে অন্যতম একটি লক্ষণ হল খাবারের প্রতি রুচিহীনতা। ওই সময় অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় কোন খাবারই খেতে ইচ্ছে করেনা। খাবারে অন্যরকম একটা গন্ধ লাগে। অনেক সময় দেখা যায় নিজের প্রিয় খাবার তখন খেতে ইচ্ছে করেনা। কোন কিছু খেতে একদমই ইচ্ছে করবে না খাবারের প্রতি কোন রুচি থাকবে না। কেননা গর্ভবতী হলে মেয়েদের শরীরের ইস্ট্রোজেন নামক হরমোন নিঃসরণ বেড়ে যায় যার ফলে খাবারের প্রতি অরুচি দেখা দেয়। প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার ফলে আপনার খাবারের প্রতি এই অরুচিহীনতা আপনাকে দুর্বল করে তুলবে। কিন্তু এই সময় খাবারের প্রতি রুচি হীনতা থাকলেও জোর করে হলেও খেতে হবে। কেননা খাবার না খেলে নিজের এবং বাচ্চার ক্ষতি হবে।
পেটে গ্যাস হওয়া
এমন অনেক মেয়ের পিরিয়ড হওয়ার আগে দেখা যায় পেট ফেঁপে যায় বা পেটে গ্যাস হয়ে থাকে। মেয়েদের পিরিয়ডের সময় শরীরের হরমোনের কিছু তারতম্য ঘটে যার ফলে এরকমটা হয়ে থাকে। আর আপনি যখন গর্ভবতী হবেন তখন দেখবেন হঠাৎ এইরকম অনুভূতি হচ্ছে। গর্ভকালীন সময়ে পেট ফুলে যাওয়া কিংবা পেটে গ্যাস তৈরি হওয়া পরিমাণে বেড়ে যায়। আর এই গ্যাস হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো ঠিকঠাক মতো খাবার সেবন না করা। কেননা গর্ভবতী হলে খাবারের প্রতি রুচি থাকে না, যার ফলে কোন কিছু খেতে ইচ্ছে করেনা। এর ফলে অনেকটা সময় পার হয়ে যায়। আর এই খালি পেট থাকার কারণেই শেষ হয়ে যায়। তাই গর্ভকালীন সময়ে অবশ্যই এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ এর মধ্যে অন্যতম একটি লক্ষণ হল পেটে গ্যাস হওয়া।
স্তন ফুলে যাওয়া কিংবা স্পর্শকাতর হয়ে ওঠা
প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ এর মধ্যে অন্যতম একটি লক্ষণ হল স্তন ফুলে যাওয়া কিংবা স্পর্শকাতর হয়ে ওঠা। অনেক মেয়েদের দেখা যায় মাসিকের আগে স্তন ফুলে যায় বা স্পর্শকাতর হয়ে যায়। হাত লাগালেই স্তনে ব্যাথা লাগে। ঠিক সেই রকমই গর্ভধারণ করার পরে এরকম অনুভূতি হতে পারে। গর্ভকালীন সময়ে স্তন ফোলা ফোলা লাগে। স্তনে হাত দিলে ব্যথা অনুভব হয়। এক কথায় বলতে গেলে গর্ভকালীন সময়ে স্তন অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। আর এই সম্পূর্ণ প্রেগন্যান্সের সময়টাতে স্তনের আকারের পরিবর্তন দেখা যায়। অনেক মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা যায় নিপেলে চাপ লাগলে এক ধরনের তরল পদার্থ বেরিয়ে আসে। আর এই এক ধরনের তরল পদার্থ বের হয়ে যাওয়া ভয়ের কোন কারণ নয়। কিন্তু স্বাভাবিক এর চেয়ে অধিক হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রেগনেন্সি কিট
প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ এর মধ্যে অন্যতম একটি লক্ষণ হল পিরিয়ডের তারিখ চলে যাওয়ার 10 দিনের মধ্যে মাসিক না হলে প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে পারেন। আর এই প্রেগনেন্সি টেস্ট আপনি বাসায় থেকেই করতে পারবেন। এখন বিভিন্ন দোকানে প্রেগনেন্সি কিট পাওয়া যায়। সেই প্রেগনেন্সি কিট কিনে বাসায় এনে প্রস্রাবের মাধ্যমে প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে পারেন। প্রেগনেন্সি কিট এর মধ্যে প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করার সকল বিষয় সম্পর্কে উল্লেখ করা থাকে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে আপনি যদি সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হন। তাহলে হসপিটালে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করুন।
বার বার প্রসাবের অনুভূতি হওয়া
প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ এর মধ্যে অন্যতম একটি লক্ষণ হল বার বার প্রস্রাব হওয়া। কর্মকালীন সময়ে আগের তুলনায় প্রসাবের পরিমাণ বেড়ে যায়। এ সময় অতি দ্রুত তাড়াতাড়ি প্রস্রাবের বেগ হয়ে থাকে। আর এই সময় অবশ্যই প্রসাব না করে আটকে রাখবেন না। কেননা আপনি যদি প্রসাব আটকে রাখেন তাহলে এটা আপনার শরীরের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। আর এই প্রস্রাবের অনুভূতি হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি যদি মনে করেন এই পরিমাণটা অস্বাভাবিক পরিমাণ। তাহলে অবশ্যই দ্রুত তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।
বিষয়টি ছিল প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলো সম্পর্কে। সকল মেয়েদের এই বিষয়গুলোর প্রতি অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। কেননা গর্ভকালীন অবস্থায় মা এবং শিশু দুইজনেরই সুস্থ থাকা জরুরী। প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ আর্টিকেলটি গর্ভবতী মায়েদের জন্য, কিংবা যে মেয়েরা নতুন বিয়ে করেছেন তাদের এই বিষয়গুলো জানা খুবই জরুরী। যখন আপনি সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হবেন আপনি একজন গর্ভবতী মহিলা। ঠিক তখন থেকেই নিজের আরো বেশি খেয়াল রাখা শুরু করুন। এবং চিকিৎসকের চলুন। আপনাকে আমাদের আজকের আর্টিকেল প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সম্পূর্ণ পড়ার জন্য ধন্যবাদ।