বাংলা নববর্ষ রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক আজ আমি আপনাদের সাথে বাংলা নববর্ষ রচনা নিয়ে আলোচনা করব। কেননা বাংলা নববর্ষ রচনা একটি বাঙালি জাতির জীবনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলা নববর্ষ বলতে আমরা পহেলা বৈশাখ বা বাংলা মাসের একলা বৈশাখে বলে থাকি। যা বাঙালি জাতি জীবনে বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ নামে পরিচিতি অর্জন করেছে। আজ আমরা আপনাদের আপনাদের সাথে বাংলা নববর্ষ রচনা বিশেষভাবে তুলে ধরবো। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
ভূমিকা:
পহেলা বৈশাখ বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন।টি আমাদের কাছে নববর্ষ নামে পরিচিত। কারো নববর্ষ আমাদের কাছে বেশি ও সমষ্টিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর সর্বোত্তম নববর্ষ একটা ঐতিহ্য। নববর্ষে আমরা অতীত বছরের তিরোধান এবং সমাগত বছরের আবির্ভাবের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়ে যায়। যে বছর প্রাকৃতিক রঙ্গমঞ্চন থেকে বিদায় নিল একদিকে তার সুখ অন্যদিকে দুঃখের বহু স্মৃতি মাখা চিত্র বিলিয়ন মান এবং অন্যদিকে যে বছর প্রাকৃতির রঙ্গমঞ্চে আবির্ভূত হলো তার ভাবি অথচ অনিশ্চিত সম্ভাবনা সুনিশ্চিত রুপে বিদ্যমান।
বাংলা নববর্ষ আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় গণমুখী, সর্বজনীন উৎসব।এ দিনটিতে অতীতের সব দুঃখ কষ্ট ভুলে গিয়ে নতুনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ওঠে। তারা জানে এ নতুন অনিশ্চিত সুনিশ্চিত সম্ভাবনায় পরিপূর্ণ। তাই মন সারা দেয়, চঞ্চল হয়, নতুনকে গ্রহণ করার প্রস্তুতি নেয়। চির চেনা অতি আপন ঐতিহ্যের ছোঁয়ায় বাংলার হাটে, মাঠে, ঘাটে শহরে বন্ধরে মহাআনন্দে মেতে উঠে সকল মানুষ ।সাফল্য ও সমৃদ্ধির আলোকধারায় বিভিন্ন আনন্দ উৎসবে বৈশাখী মেলায় সমবেদ হয় দেশের সর্বস্তরের মানুষ।
দেশে দেশে নববর্ষ:
বিশ্বের দেশে নানা জাতি নানা ভাবে নববর্ষ উদযাপন করে থাকে। বাঙালি, ইরানি, চীনা, জাপানি, ইংরেজ এবং ফারসি। সবাই পালন করে নিজ নিজ নববর্ষের উৎসব। খ্রিস্টান জগতে পয়লা জানুয়ারি পালিত হয় নববর্ষ। তার প্রভাব আমাদের দেশের অভিজাত সম্প্রদায়ের উপর রয়েছে। ধর্মীয় দিক থেকে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দুনিয়ায় নববর্ষ আসে রোমের আশুরা থেকে। ইরানিদের নববর্ষ হচ্ছে নও রোজ, ইহুদিদের নববর্ষ হচ্ছে রাজ হাসান,আর ভিয়েতনামিদের নববর্ষ হচ্ছে তেত। যেভাবে যে নামে উদযাপন করা হোক না নববর্ষের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে স্নাতফূর্ত আনন্দ উৎসব শুভবোধ।।
নববর্ষে উজ্জ্বল প্রত্যুষ বাঙালির জীবনেও আনে আনন্দবোধ, আনের সম্মেলন চেতনা। নানা সমূহর আমরা উদযাপন করি বাংলার নববর্ষ উৎসব। কামনা করি: পুরনো দিনের জন্য ক্লান্ত দিনগুলো অবসান হোক আসুক নানা জীবন, নতুন স্বপ্ন নিয়ে, নতুন প্রত্যাশা নিয়ে।প্রত্যাশা করি: হতাশা ও নৈরাজ্যের হাত থেকে মুক্তির, মনের কালিমা ও চিত্তের দৈন্য থেকে মুক্তি। কবিগুরু কণ্ঠে উচ্চারিত বাণী যেন মুখর হয়ে ওঠে প্রতিটি বাঙালির সত্তায়।
নিশি অবসান, ওই পুরাতন
বর্ষ হল গত
আমি আজই ধুলি তলে এ জীর্ণ জীবন
করিলাম নত
বন্ধু হও, শত্রু হও, যেখানে যে কে রং,
ক্ষমা করো আজিকার মত
পুরাতন বরষের সাথে
পুরাতন অপরাধ যত।
পহেলা বৈশাখ
পহেলা বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম দিন। এ দিন টি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের নববর্ষ হিসেবে পালিত হয়। এটি বাঙালি একটি সর্বজনীয় লোক উৎসব। এদিনে আনন্দঘন পরিবেশে বরণ করে নেওয়া হয় নতুন বছরকে। কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক হলো নববর্ষ। অতীতের ভুল ত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধির কামনায় উদযাপিত হয় বাংলার নববর্ষ। বাংলা নববর্ষ রচনা পালনের সূচনা হয় মূলত আকবরের সময় কাল থেকেই। তারপর থেকে মুঘলরা জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়া পর্যন্ত পহেলা বৈশাখ পালন করতেন।
নববর্ষের সংস্কৃতির তাৎপর্য:
আমাদের পরিচয় কে বহন করে বাংলা নববর্ষ আমাদের জাতিসত্তা। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে নববর্ষ আজ আমাদের জাতীয় উৎসব। আমাদের ঐতিহ্য সংস্কৃতির চেতনা কে আমরা প্রত্যক্ষ করি নববর্ষের অনুষ্ঠানে, আবিস্কার করি এ উৎসবে। নববর্ষের সংস্কৃতি কর্মকান্ডে আমরা আমাদের জীবনা বন্দি ও কল্যাণ ধর্মী রূপটিকে খুঁজে পাই। নতুন নববর্ষকে স্বাগত জানানো মানে আমাদের জীবনকে নতুন ভাবে গ্রহণের সাজানোর প্রস্তুতি।। আমাদের নববর্ষের উৎসব নির্মল আনন্দের উচ্চ ধারা। এখানে আনন্দের বিস্তার আছে তা কখনো পরিমিতি বোঁচকে ছড়িয়ে যায় না। বিদেশে নিউ ইয়ার্স ডে তে যে উদ্যানতা প্রত্যক্ষ করা যায় তাতে প্রতিবছর বহু প্রাণের আকাল মৃত্যু ঘটে। আনন্দের আয়োজন বিষাদের বিরোধ হয়ে ওঠে।
নববর্ষ ও বৈশাখী মেলা:
সম্ভবত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সর্বজনীন সব মেলা। নববর্ষ কে উৎসবমুখর করে তোলে বৈশাখী মেলা। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের এক মহামিলন ক্ষেত্র এই মেলা। মেলা শব্দের অভিধানিক অর্থ প্রাচুর্য আমাদের কুটির শিল্প জাত এমন কোন পণ্য নেই যা বৈশাখী মেলায় দৃষ্টিগোচর হয় না। প্রচুর সামগ্রির এমন বিপুল সমাবেশ হয় বলে এর নাম দেওয়া হয়েছে মেলা। মেলা অত্যন্ত আনন্দঘন হয়ে থাকে। স্থানীয় কৃষিজাত দ্রব্য কারুকণ্ড লোক শিল্প জাতপন্ন কুটির শিল্প জাত সামগ্রীয় সকল প্রকার হস্তশিল্প জাত এবং নৃত্য শিল্প জাত সামগ্রী এ মেলায় পাওয়া যায়।। এছাড়াও শিশু কিশোরদের খেলনা মহিলাদের সাজসজ্জা সামগ্রী এবং বিভিন্ন লোকজ খাদ্যদ্রব্য যেমন চিড়া, মুড়ি, খই, বাতাসা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার সংগ্রহ থাকে বৈশাখী মেলায়।
বাংলাদেশের নববর্ষ উদযাপনের বৈশিষ্ট্য
পহেলা বৈশাখ বাংলার জনসমষ্টি অতীতের সুখ দুঃখ ভুলে গিয়ে নতুনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ওঠে। জানে নতুন অনিশ্চিত সুনিশ্চিত সম্ভাবনায় পরিপূর্ণ। তাই মন সারা দেয়, চঞ্চল হয়। নতুনকে গ্রহণ করার প্রস্তুতি নেয়। আর সেদিন প্রত্যাহী কর্ম কাজ ছেড়ে দিয়ে ঘরবাড়ি ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হয়। আটপৌরে জামা কাপড় ছেড়ে ঢব দুরন্ত পোশাক পরিচ্ছন্ন পড়ে বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা করে পানাহারে মেতে ওঠে। রমনার বটের তলায় জড়ো হয়ে গান গাই, হাততালি দেই। সবকিছু মিলে দেশটা যেন হয়ে ওঠে উৎসবে আনন্দে পরিপূর্ণ। এছাড়াও কতগুলো স্থানীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে বাংলার নববর্ষ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উঠে। যেমন: মেঘের কাছে জল ভিক্ষা করা, বার্ষিক মেলা, পূর্ণা হো, হালখাতা ইত্যাদি।
নগর জীবনে নববর্ষ উদযাপন:
বর্তমানে নগর সংস্কৃতির আদলে অত্যন্ত জাঁকজমত পূর্ণভাবে নববর্ষ উদযাপিত হয়। পহেলা বৈশাখের প্রভাতে উদ্যয় মান সূর্যকে স্বাগত জানানোর মধ্যে দিয়ে শুরু হয় নববর্ষের উৎসব।। এ সময় নতুন সূর্যকে প্রত্যক্ষ করতে উদ্যানের কোন বৃহত্তমূলে বা লোকের ধারে অতীত প্রত্যুষে নগরবাসীরা সমবেত হয় নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করে।। সাধারণত সকল শ্রেণীর এদিনে সকল বয়সের এবং ঐতিহ্যবাহী বাঙালি প্রসব পরিধান করে। নববর্ষকে স্বাগত জানাতে তরুণীরা লাল পেড়ে সাদা শাড়ি, হাতে চুরি, খোপায় ফুল, গলায় ফুলের মালা এবং কপালে টিপ পরে আর ছেলেরা পড়ে পাজামা ও পাঞ্জাবি। কেউ কেউ ধুতি পাঞ্জাবি ও পরে। এই বাংলার নববর্ষের দিনে পান্তা ভাত একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। সঙ্গে থাকে ইলিশ মাছ ভাজা। এভাবে লুকোচ বর্ষবরণ প্রথা গুলোর কোন কোনটির অনুসরণের মাধ্যমে গ্রামীণ ঐতিহ্য অনেকটা সংরক্ষিত হচ্ছে।।
উপসংহার:
নববর্ষ সমগ্র মানুষের কাছে নবজীবনের দ্বারা উন্মোচিত করে দিক। নতুন বছর যেন মুষ্টিমে ধোনির ভোগবিলাসের সংকীর্ণ উল্লাসে পরিণত না হয় দারিদ্র লাঞ্ছিত পীড়িত মানুষের নিষ্ফল বিলাপে যেন পৃথিবী বিষন্ন না হয় ওঠে যুদ্ধ ভিন্ন বিশ্বের পাসবস টির তাণ্ডব যেন শান্তির শুভ শক্তির কাছে পরাজিত হয়। আসুন পহেলা বৈশাখের সামনে রেখে আমরা আমাদের মধ্যকার সকল বিভেদ ও দিদা দূর করার চেষ্টা সথেষ্ট হয়ে উঠি। আমরা জাগ্রত হই অখন্ড জাতীয় চেতনায়। আমরা রুদ্ধ হয়ে আগামী গর্বিত প্রেরণায়। নতুন বছর আমাদের সবাই জীবনের সুখ সম্ভার বয়ে আনুক এটাই হোক আমাদের প্রত্যাশা। আজ নববর্ষের এই শুভক্ষণে আসুন কোভিদ কন্ঠে মিলিয়ে আমরা বলি:-
”’ যতক্ষণ দেহ আছে প্রাণে,
প্রাণপণে পৃথিবী সরাবো জঞ্জাল.
এ বিশ্বকে এক শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি-
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।।