নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি এই ব্যাপারে আপনারা অনেকেই ইন্টারনেটে সার্চ দিচ্ছেন। তাই ভাবলাম এই ব্যাপারে আপনাদের সামনে একটি পোস্ট উপস্থাপ করি। তো চলুন প্রসিদ্ধ মহাদেশগণের মতামত অনুসারে নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কিনা সেই সম্পর্কে আলোচনা তুলে ধরি।
নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি
স্বামী স্ত্রী একে অপরের সঙ্গে মেলামেশা করা এবং সব স্বপ্ন দোষের কারণে অনেক সময় গোসল ফরজ হয়ে যায়। কিন্তু কিছু কিছু সময় আমাদেরকে সেহরি খাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ঘুম থেকে উঠতে হয় এবং সেই মুহূর্তে গোসল করার সময় থাকে না। এই মুহূর্তে যদি গোসল না করে সেহরি খেয়ে রোজা রাখে তাহলে রোজা হবে কিনা সে সম্পর্কে মূলত আজকের আলোচনা। এ ব্যাপারে একটি প্রসিদ্ধ হাদিস বর্ণিত রয়েছে তাহলে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রমজান মাসে স্বপ্নদোষ ছাড়া আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম অপবিত্র অবস্থায় সুবহে সাদিক পার করেছিলেন। তারপরে তিনি গোসল করে রোজা রেখেছেন।
প্রসিদ্ধ ওলামায়ে কেরামগণের মতে গোসল ফরজ হওয়া অবস্থায় গোসল না করে সেহরি খেলে রোজা সহি হয়ে যাবে। তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ফজরের নামাজের ওয়াক্ত শুরুর আগেই গোসল করে নামাজ আদায় করতে হবে। কেননা জেনে শুনে সুস্থ মস্তিষ্কে বিনা কারণে গোসল না করে অপবিত্র অবস্থায় যদি কেউ এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা করে তার জন্য মারাত্মক গুনাহের কাজ হয়ে যাবে। তাহলে এতক্ষণে নিশ্চয়ই আপনি বুঝতে পেরেছেন যে নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কিনা।
ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম
গোসল আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। বিভিন্ন অনেক সময় গোসল করা ফরজ হয়ে যায়। কি কি কারনে গোসল ফরজ হয় তা নিচে লিখছে তবে তার আগে কিভাবে খরচ গোসল আদায় করতে হয় সেটা আলোচনা করে নিচ্ছি। কেননা কিভাবে খরচ গোসল আদায় করতে হয় সেটা না জানার কারণে আমাদের মুসলমান ভাই-বোনদের মাঝে অনেকেই এবাদত কবুল হচ্ছে না বা কবুল না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বলেন যে যদি আমরা এক সাগর পরিমাণ পানি দিয়ে গোসল করি কিন্তু সেটা যদি নিয়মের বাইরে হয় তাহলে সেই গোসল দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা যায় না। তাই সঠিক নিয়মে গোসল করা অনেক জরুরী। গোসল করার সঠিক নিয়ম এবং কেন গোসল খরচ হয় এগুলো নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।
যেসকল কারণে গোসল ফরজ হয় তা জেনে নিন
- গোসল ফরজ হওয়ার পেছনে যে সকল কারণ রয়েছে তার নিচে বর্ণনা করা হলো।
- স্বপ্নদোষের মাধ্যমে বা অন্য উপায়ে বীর্যপাত হলে।
- বিধর্মী থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে।
- স্ত্রী সহবাস করলে যদি সহবাসের সময় বীর্যপাত হয় অথবা না হয় তারপরেও গোসল ফরজ হবে।
- মেয়েদের মিলস এর সময় অথবা হায়েজ, নিফাজ এর সময়।
গোসলের ফরজ কয়টি
গোসলের ফরজ হচ্ছে মোট তিনটি
- বরগরা সহ অর্থাৎ ভালো করে কুলি করা। অবস্থায় রোজা অবস্থায় গড়গড়া করার প্রয়োজন নেই।
- নাকের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌঁছানো। তবে রোজা রাখা অবস্থায় শুধু নাকে পানি দিলেই হবে তবে নরম হার পর্যন্ত পানি না পৌঁছালেও হবে।
- সমস্ত শরীর উত্তম ভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে নেওয়া এমন ভাবে ধুতে হবে যেন শরীরের কোন অংশই শুকনো না থাকে।
ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম
- ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম পর্যায়ক্রমে নিচে তুলে ধরা হলো
- প্রথমত গোসল শুরু করার সময় বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে শুরু করতে হবে।
- এরপর আলাদা আলাদা ভাবে দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নিতে হবে।
- যদি শরীরের পরিধানকৃত কাপড়ের কোন অংশে নাপাকি লেগে থাকে তাহলে সেটা আগে পরিষ্কার করতে হবে। যেহেতু তিনবার ধোয়ার সুন্নত তাই এক্ষেত্রে তিনবার ধুয়ে নিলে ভালো হয়।
- নাপাকি লেগে থাকো অথবা না থাকুক তবে সব সময় গোপনাঙ্গ ধুয়ে নিতে হবে।
- কারো কারো মতে গোসলের পূর্বে অজু করে নেওয়া উত্তম।
- তারপর মাথায় পানি ঢালতে হবে।
- প্রথমে ডান কাঁদে পানি ঢালতে হবে
- এরপর বাম কাঁধে পানি ঢালতে হবে।
- সর্বশেষ শরীর ভিজে উত্তম রূপে ধুয়ে নিতে হবে।
- পুরো শরীরে এমন ভাবে তিনবার পানি ঢালতে হবে যেন শরীরের কোন অংশই শুকনো না থাকে। যদি পুকুর অথবা নদীতে গোসল করা হয় সে ক্ষেত্রে তিনবার পানি ঢালার প্রয়োজন নেই তবে কিছুক্ষণ সময় ডুবে থাকলেই হবে।
- সমস্ত শরীর ঘষে মেজে সুন্দর করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে হবে।
- নারীদের ক্ষেত্রে যে সকল অঙ্গে গহনা গাটি পড়া হয় সেই জায়গাগুলো ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
- আমাদের শরীরের যে সকল অংশে বা অঙ্গে পানি পৌঁছাতে অসুবিধা হয় যেমন কান কোনই আঙ্গুলের ফাঁক বগলের নিজ চুলের গোড়ায় ইত্যাদি এই অঙ্গগুলো খুব ভালো করে পানি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
- গোসল শেষে গোসলের ভেজা কাপড় তিনবার ধুয়ে নিতে হবে।
এটাই হচ্ছে ফরজ গোসল সম্পন্ন করার সঠিক নিয়ম। গোসল করার পরে আর আলাদা করে ওযু করার প্রয়োজন হয় না। আমাদের মাঝেও অনেকেই এমন আছে যারা গোসল করার পর অজু করে নামাজ পড়ি । তাদের উদ্দেশ্যে বলছি গোসল করার পর আর অজু করার প্রয়োজন হয় না। অনেকে মনে করতে পারেন গোসল করার পর কাপড় পরিবর্তন করার সময় হাঁটুর উপরে কাপড় উঠে যায় যদি এমন হয় তাহলেও ওযু করতে হবে না।
ফরজ গোসল ছাড়া রোজা রাখা যাবে কি
ফরজ গোসল ছাড়া রোজা রাখা যাবে কিনা এ সম্পর্কে সঠিক ফয়সালা হচ্ছে যে, ফরজ গোসল ছাড়া রোজা রাখা যাবে। তবে এখানে আরো কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। ফরজ গোসল না করে রোজা রাখা গেলেও ফরজ গোসল না করে নামাজ পড়া যায় না। যেহেতু সেহরি খাওয়ার পর ফজরের নামাজ আদায় করতে হয় তাই যেন নামাজ কাজা না হয় সেজন্যই মূলত ফরজ গোসল সম্পন্ন করা উচিত।
নাপাক অবস্থায় সেহরি খেলে রোজা হবে কি
নাপাক অবস্থায় অবশ্যই রোজা রাখা যাবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যদি আপনার নাপাক অবস্থায় সেহেরী খান পরেই কিন্তু আপনাকে নামাজ আদায় করতে হবে। এখন যদি আপনি নামাজের আগে গোসল করে নিতে পারেন তাহলে আপনার গুনাহ হবে না। কিন্তু যদি নাপাক অবস্থায় সেহরি খাওয়ার পর অলসতা করে নামাজ কাজা করে ফেলেন তার জন্য আপনাকে গুনাগার হতে হবে। তাই আমার মনে হয় নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কিনা এ ধরনের প্রশ্ন না করে বরং পবিত্র অবস্থায় সেহরি করে রোজা রাখাই উত্তম হবে।
নাপাক অবস্থায় কি কি করা যাবে না
পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। আর অপবিত্র অবস্থায় অনেক কাজ রয়েছে যেগুলো ইসলামের নিষিদ্ধ। ফরজ গোসল না করে আপনি রোজা রাখতে পারবেন ঠিক আছে কিন্তু অপবিত্র অবস্থায় এমন কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ যেমন-
- অপবিত্র অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করার নিষেধ।
- অপবিত্র অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত করা নিষেধ।
- নাপাক অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করা যাবে না।
- কাবা ঘর স্পর্শ করাও নিষেধ।
শেষ কথা নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি
আশা করছি এতক্ষণে আমরা বুঝতে পেরেছি যে নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কিনা। মোট কথা হচ্ছে যে নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কিন্তু আমি আবারো বলছি কিন্তু নাপাক অবস্থায় রোজা রাখলে দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কাজা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যেহেতু রোজা একটি ফরজ এবাদত ঠিক অনুরূপ নামাজও একটি ফরজ এবাদত। নাপাক অবস্থায় রোজা রাখতে গিয়ে যদি আমরা নামাজ কাজা করি তাহলে আমরা অনেক বেশি গুনাগার হয়ে যাব। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে নাপাক অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কিনা সেটা নিয়ে চিন্তা না করে বরং কিভাবে পবিত্র অবস্থায় রোজা রাখা যায় সেটা নিয়ে ভাবাই উত্তম।