স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে আলোচনা । ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস রচনা প্রতিযোগিতা
ভূমিকা : ২৬ শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ।১৯৭১ সালে এই দিনের সূচনায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধু তার এই ঘোষণার হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে দেশকে শত্রুমুক্ত করার আহ্বান জানান । শুরু হয় সর্বাত্মক মুক্তিযুদ্ধ ।১৯৭০ সালে পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করলেও ক্ষমতা হস্তান্তরব্যাপারে সামরিক সরকার ষড়যন্ত্র শুরু করে ।সামরিক সরকার নিয়ন্ত্রিত হতো পশ্চিম পাকিস্তানিদের দ্বারা এবং পশ্চিম পাকিস্তানেরদের স্বার্থে । পূর্ব বাংলার বাঙালিদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্মী বঙ্গবন্ধু আজীবন সংগ্রাম করেছেন । ২৫ শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙ্গালীদের উপর গণহত্যা শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ স্বাধীনতার ঘোষণা করেন । বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হলে তার নির্দেশ অনুযায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা দ্বারা যুদ্ধ করে দেশকে শত্রুমুক্ত করেছিলেন ।১৯৪৭ সাল থেকে ২৪ বছর ধরে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক বাহিনী বাংলার উপরে যে নিপীড়ন শোষণ চালিয়েছে, নয় মাসে রক্ত ক্ষুঁয়ে মুক্তিযুদ্ধে তার অবসান ঘটে । ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ থেকে এই দেশের মানুষ স্বাধীন , কেননা ওই তারিখেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন ।
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস : ১৯৭১ সাল ২৬ শে মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ স্বাধীনতার ঘোষণা করেন । পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের আবির্ভাব ঘটে। বাংলাদেশ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হয়। সরকারি বেসরকারি নানা উদ্যোগের মধ্য দিয়ে দিনটি পালিত হয়ে থাকে। অফিসে, বাড়িতে, সড়কে, যানবাহনে, স্কুল কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বত্রে বাংলাদেশ জাতীয় পতাকা শোভা পায় । এই দিন জাতীয় স্মৃতিসৌধ সহ সারাদেশে স্মৃতিসৌধ গুলোতে পুষ্প অর্পণ করা হয়।একই সঙ্গে শিশু কিশোর সহ বিভিন্ন বাহিনী কুচকাওয়াজ , আলোচনা , সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপিত হয় ।
অপারেশন সার্চলাইট : ইতিহাসে ঘৃণিত গণহত্যা ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের অপারেশন সার্চলাইট । ঐদিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা , পিলখানা , রাজারবাগ পুলিশ লাইনসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এবং ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে হত্যা করে অসংখ্য নিরস্ত্র বাঙালিকে । যা পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম হত্যাকান্ড ।
২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস রচনা প্রতিযোগিতা
স্বাধীনতার ডাক : ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগ জয়ী হলেও পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতা হস্তান্তর করেননি । বরং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সরকার তখন ষড়যন্ত্র শুরু করে । এর ফলে১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দান ( বর্তমান সোহ রাওয়াদি উদ্যান ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার উন্মুখ ১০ লক্ষ জনতার মানুষের সামনে বর্জ্য কন্ঠে ঘোষণা করেন- আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায় । এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম । এরপর গড়ে উঠে আন্দোলন । ২৬ শে মার্চ প্রথম প্রহরে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার লিখিত ঘোষণাপত্র দিয়ে যান। ২৬ শে মার্চ দুপুরে চট্টগ্রামের নেতা এমএ হান্নান চট্টগ্রামের কালুঘাটের স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা পত্র টি পাঠ করেন ।
বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ও বিকাশ : বাঙালি জাতির রাজনৈতিক সচেতনতা ও জাতীয়তাবাদের উন্মেষ পূর্ব থেকে হলেও রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে তা জোরালো হয় । পাকিস্তানের গর্ভনর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দু কে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেন । এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে শুরু হয় ভাষা আন্দোলন । ওই ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ নেয় ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি । ওই দিন ভাষার দাবিতে রাজপথে শহীদ রফিক সালাম বরকত সহ অনেকে । ভাষা ও সংস্কৃতির উপর শাসকগোষ্ঠীর আঘাত ছিল বাঙালিদের কাছে তাদের অস্তিত্বের মূল্য আঘাত স্বরূপ ।
স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য : জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম । এই দিনটি প্রত্যেক বাংলাদেশীদের জীবনে আনন্দ-বেদনা এক অম্ল মধুর অনুভূতি। এক দিকে হারানোর কষ্ট অন্যদিকে মুক্তির আনন্দ । তবে শেষ পর্যন্ত সবকিছু ছাড়িয়ে স্বাধীনতা প্রাপ্তির অ পার আনন্দ বড় হয়ে ওঠে প্রতিটি বাঙ্গালীদের কাছে । এই দিনটি প্রতিবছর আসে আত্মত্যাগ , আত্মপরিচয় বার্তা নিয়ে । নব উদ্যমে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা ও দিক নির্দেশনা নিয়ে আসে এই দিন । আমাদের উচিত এই দিনটিকে শক্তিতে পরিণত করে নতুন দিনের পথে এগিয়ে চলার ।
২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস রচনা প্রতিযোগিতা
যে কারণে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয় : স্বাধীনতা দিবস আমাদের প্রত্যেক বাঙালির জন্য একটি গৌরবের দিন । একই সাথে বেদনার দিন তবে অনেকের মধ্যে প্রশ্ন জেগে থাকে কেন আমরা স্বাধীনতা দিবস পালন করব । ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । মানে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে । আর স্বাধীনতার জন্য বাঙালি কি করতে হয়েছে এ বিষয়ে অবশ্যই আমাদের জানা কর্তব্য । দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের ফলে অর্জিত স্বাধীন বাংলা । হাজারো বাঙ্গালীদের বুকে রক্ত ঢেলে দিয়েছে স্বাধীনতার জন্য । এই স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকে আমরা এই দিনটি স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করে থাকি । এই দিবসটি আমাদের মনে করে দেয় বাঙ্গালীদের কথা যারা জীবন দিয়ে আমাদের এই বাংলাদেশ উপহার দিয়ে গেছেন বিভিন্ন উৎসবের মাধ্যমে আমরা এই দিবস পালন করে থাকি । দিবসটি পালনে আমরা যেমন আনন্দ প্রকাশ করি তেমনি মনে পড়ে যায় । সেই সকল মুক্তিযোদ্ধাদের কথা যারা হারিয়ে গেছেন যুদ্ধের ময়দানে । সেই সকল ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা এই ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করে থাকি । ২৬শে মার্চ হচ্ছে মহান স্বাধীনতা দিবস ।
২৬ শে মার্চ এর ইতিহাস : অনেকেই জানি অপারেশন সার্চলাইট নামে একটি বিষয় রয়েছে যেটি গণহত্যা । পশ্চিম পাকিস্তান ১৯৭১ সালে ২৫ শে মার্চ রাতে পূর্ব পাকিস্তান তথা সাধারণ মানুষের উপর নির্মম হত্যাকাণ্ড চালায় । সেই গভীর রাতে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় গোলা বর্ষণ সহ নারীদের উপর নির্যাতন করে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী । যার ফলে সেই রাত্রিকে অপারেশন সার্চলাইট বলা হয়ে থাকে । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ মধ্যরাতে হানাদার বাহিনীর কাছে গ্রেফতার হন । গ্রেপ্তার হবার কিছুক্ষণ আগে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা পত্র স্বাক্ষর করেন । সেখানে ঘোষণাটি লেখা থাকে:
- এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান । বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি বাহিনীকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক ।
পরবর্তীতে দীর্ঘ নয় মাস বাংলাদেশের মানুষ তাদের জান- প্রাণ দিয়ে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করে ।১৯৭১সালের সেই যুদ্ধে বাংলাদেশের প্রায় ৩০ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন । যার ফলে বাংলাদেশ পেয়ে যায় একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ । যা পৃথিবীর বুকে পরিচিত একটি দেশ ।
- ২০২৩ সাল ২৬ শে মার্চ কততম স্বাধীনতা দিবস ?
- ২০২৩ সাল বাংলাদেশ স্বাধীনতা দিবস ৫১ তম দিবস হিসেবে পালন করা হবে ।
- ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস ঘোষণা করা হয় কবে থেকে ?
- ১৯৮০ সাল ২৬ শে মার্চকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় ।
আশা করি আপনারা এই পোষ্টের সাহায্যে ২৬শে মার্চ কি দিবস জানতে পেরেছেন । আমরা আরো উল্লেখ করেছি ২৬শে মার্চ কেন পালন করা হয় । 26 মার্চের সঠিক ইতিহাস আলোচনা করেছি । তাই সবার সাথে শেয়ার করে সবাইকে জানিয়ে দিন । তাহলে আপনারা এর সঠিক ইতিহাস জানতে পারবেন