ছোলার উপকারিতা ও অপকারিতা
ছোলা হল আমাদের দেশের অতি পরিচিত একটি ডাল। রমজান মাস আসলে দেখা যায় ছোলা বেশি খাওয়া হয়। কিন্তু শুধুমাত্র রোজা আসলেই নয় আজকাল আমরা সব সময় ছোলা খেয়ে থাকি। কেননা ছোলায় রয়েছে অনেক পুষ্টি। ছোলা প্রোটিন জাতীয় খাবারের মধ্যে পড়ে। ছোলা শরীরের বেশ প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে। স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে ছোলা বা বুটের বেশ সুনাম রয়েছে। ছোলা বিষয়টা মুখ্য রচক, আবার শক্তি যোগায়, আবার দেখা যায় পেটের ভিতর অবস্থান করে বেশিখন। অনেক সময় দেখা যায় ছোলা খেলে দেহের বিভিন্ন ব্যথা দূর হয়। প্রতিদিন সকালে দেখা যায় কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। তাই ভাবছি আজকে আপনাদের সামনে ছোলার উপকারিতা ও উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব।
আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়টি হলো ছোলার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে। তবে চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক আমাদের আজকের আর্টিকেল ছোলার উপকারিতা ও অপকারিতা।
আরো পড়ুনঃ ইন্টারনেটে নিরাপদ থাকার উপায়
ছোলার উপকারিতা ও অপকারিতা জানার আগে চলুন জেনে নেই ছোলা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
ছোলা খাওয়ার নিয়ম
ছোলা কাঁচা সেদ্ধ বা তরকারি রান্না করে খাওয়া যায়। কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে খোসা ছাড়িয়ে কাঁচা আদার সঙ্গে খেলে শরীরের একই সঙ্গে আমিষ ও এন্টিবায়োটিক যাবে। আমিষ মানুষকে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যবান করতে সাহায্য করে আর এন্টিবায়োটিক যেকোনো অসুখের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
ছোলার উপকারিতা ও অপকারিতা জানার আগে চলুন জেনে নেই ছোলার প্রকারভেদ সম্পর্কে।
ছোলার প্রকারভেদ
- ছোলার সাধারণত দুই প্রকার হয়ে থাকে।
- একটি হল দেশি ছোলা
- অপরটি হল কাবুলি ছোলা
কাঁচা ছোলার উপকারিতা
- হৃদ রোগের ঝুঁকি কমে
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
- রক্ত চলাচল সাহায্য করে
- ক্যান্সার রোধ করে
- কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী
- যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
- রক্তে চর্বি কমায়
- অস্থির ভাব দূর করে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- হাতে ও পায়ে তালু জ্বালাপোড়ার দূর করে
- কফ সরাতে সাহায্য করে
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
- মেরুদন্ডের ব্যথা দূর করে
- কৃমি নাশক হিসেবে কাজ করে
ছোলার উপকারিতা
- ছোলা হলো একটি পুষ্টিকর ডাল। এটি হল মলিবেডনাম ও ম্যাঙ্গানিজ এর চমৎকার উৎস। ছোলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণের খাদ্য আঁশ। সেই সাথে ছোলাতে রয়েছে আমিষ, কপার, ফসফরাস এবং আয়রন।
- হৃদ রোগের ঝুঁকি কমাতে ছোলার উপকারিতা অপরিসীম। কেননা ছোলাতে রয়েছে দ্রবণীয় এবং অদ্রবিনীয় উভয় ধরনের খাদ্য আশ। যা কিনা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
- অস্থির ভাব দূর করতে ছোলার উপকারিতা অনেক। কেননা ছোলাতে শর্করার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এর পরিমাণ কম থাকায় শরীরের প্রবেশ করার পর অস্থির ভাব দূর হয়।
- ছোলাতে সালফার নামক খাদ্য উপাদান রয়েছে। সালফার মাথা গরম হয়ে যাওয়া এবং হাত পায়ের তলা জ্বালাপোড়া কমায়। তাই বলা যায় যে জ্বালাপোড়া দূর করার জন্য ছোলার উপকারিতা অপরিসীম
- যৌন শক্তি বাড়াতে ছোলার ভূমিকা অপরিসীম। রাতে ছোলা ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে প্রতিদিন খেলে যৌন শক্তি বাড়ে। ভাজা ছোলা শ্বাসনালীতে জমে থাকা পুরনো কাশি বা কফ ভালো হওয়ার জন্য কাজ করে। ছোলা বা বুটের সাঁক শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার বা আঁশ রয়েছে ছোলা বা ছোলার সাকে। ডাইটারি ফাইবারে অবস্থিত এই পাতলা আঁশ যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- ছোলা কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত সমস্যা দূর করে। , মলত্যাগ করা সহজ হয়। যার ফলে নিয়মিত মলত্যাগ হয়ে যায় বলে ক্ষতিকর জীবাণু খাদ্যনালীতে থাকতে পারে না। ফলে খাদ্যনালির ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক অংশে কমে যায়। খাদ্যের আশ রক্তের চর্বি কমাতে সহায়ক। রক্তের চর্বি কমানোর জন্য ছোলার উপকারিতা।
- ছোলা অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। এটি আমিষের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস। ছোলা আমিষের পরিমাণ মাছ বা মাংসের মাংসের পরিমাণ এর প্রায় সমান তাই খাদ্য তালিকায় ছোলা থাকলে মাছ-মাংস পরিমাণে কম থাকলেও চলে। ছোলার ডাল তরকারিতে, ছোলা সেদ্ধ, সেদ্ধ ছোলা ভাজি, ছোলার বেসন, ছোলা ভুনা নানান উপায় ছোলা খাওয়া যায়।
- আমাদের দেশে সাধারণত দুই ভাবে ছোলা খাওয়া হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে আস্ত ছোলা যেটাকে আমরা অনেক সময় ভেজে খাই বা সিদ্ধ করে খাই। আরেকটি হচ্ছে ছোলার ছাতু। আমাদের গ্রামগঞ্জে অনেক সময় ছোলা কে ঘুরা করে এই ছাত্র ব্যবহার করা হয়। যাদের ওজন বাড়ানোর প্রয়োজন হয় তাদের ক্ষেত্রে এবং বাচ্চাদের খাবারের এই ছোলার ছাতু ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কেননা এই ছোলার ছাতু বাচ্চাদের দৈহিক বৃদ্ধিতে এবং ওজন বৃদ্ধিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণভাবে প্রভাব ফেলে।
- ছোলার আর শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। প্রোটিনের চাহিদা পূরণে আমাদের মাছ-মাংস দুধ ডিম ডাল সবই খেতে হয় । আর ছোলা হল একটি প্রোটিন জাতীয় খাবার। তাই খাবার তালিকায় অবশ্য অবশ্যই ছোলা রাখতে হবে।
- ছোলা খাওয়ার মাধ্যমে অনেক ধরনের ব্যথা দূর হয়। ছোলাতে রয়েছে ভিটামিন বি। আর ভিটামিন বি মেরুদন্ডের ব্যথা স্নায়ুর দুর্বলতা কমায়। তাই আপনি যদি এই নিয়মিত ছোলা খান তাহলে দেখা যাবে আপনি ভেতর থেকে সুস্থ থাকবেন।
এতক্ষণ আমরা আলোচনা করেছি ছোলার উপকারিতা সম্পর্কে এখন আমরা আলোচনা করব ছোলার উপকারিতা সম্পর্কে।
ছোলার অপকারিতা
- কাঁচা ছোলার তেমন কোন অপকারিতা দিক নেই। কিন্তু কিডনি রোগীদের ছোলা না খাওয়াই ভালো। আপনি চাইলে ছোলা কাঁচা না খেয়ে রান্না করে খেতে পারেন। ছোলা দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী বিধায় সকলের উচিত একটি সঠিক পরিমাণে ছোলা খাওয়ার অভ্যাস করা।
- ছোলার অপকারিতা মধ্যে আরেকটি হলো অতিরিক্ত তেল ও মসলা দিয়ে ছোলা রান্না করে খাওয়া। কেননা রোজা রেখে দীর্ঘক্ষণ পানাহার থেকে বিরত থাকার পর তেল মশলা জাতীয় জিনিস কম খাওয়াই স্বাস্থ্যকর। তাছাড়া আপনি যদি রোজা না রাখেন তারপরও মসলা জাতীয় খাবার আপনার শরীরের জন্য ঠিক নয়। তাই ছোলাতে অবশ্যই মসলা কম দিতে হবে।
- কাঁচা ছোলা ভেজে না খাওয়াই ভালো। আপনাদের মধ্যে যাদের কিনা বমির সমস্যা রয়েছে। তাদের কাচা ছোলা না খাওয়াই উত্তম।
- আপনাদের মধ্যে যাদের কিনা হজম শক্তি কম তারা ছোলা হজম করতে একটু সমস্যায় পড়বেন। কেননা ছোলা হজম করতে সময় লাগে। যাদের রক্তের ডায়ালিসিস চলছে যাদের শরীরের ,ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেশি রয়েছে তারা যে কোন রকমের ছোলা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
ছোলা যারা খাবেন
প্রথমত ছোলা থেকে ছোট বড় সকল পুষ্টি পাওয়া যায়। ছোলা আমাদের দেশের খুবই পরিচিত একটি ডাল বা বুট। শুধুমাত্র রোজায় এই ডাল খাওয়া হয় কিন্তু এখন প্রায় সময়ই এই ডাল খাওয়া হয়ে থাকে। ছোলাতে অনেক পুষ্টি থাকে। যা কিনা প্রোটিন গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। ছোলা শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে। অনেক সময় দেখা যায় যে অনেক মানুষ ছোলা না বিছিয়ে তাড়াতাড়ি সিদ্ধ করে খেয়ে ফেলে এবং এই বিষয়টা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ছোলা কে অবশ্যই সারা রাত ভিজিয়ে রেখে খেতে হবে যদি সেটা সম্ভব না হয় তাহলে পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা ছোলা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এর ফলে ছোলাতে থাকা কেমিক্যাল বাহিরে চলে যাবে। আবার রোজা ছাড়া যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তারা ছোলা খেতে পারেন। আবার যদি টক দইয়ের সাথে মিলিয়ে খাওয়া যায় তাহলে তো ফাস্ট ক্লাস এবং সেকেন্ড ক্লাস। ছোলা ছোট বড় সকলেই খেতে পারবেন। কিন্তু ছোট শিশুদের জন্য নবজাতকদের জন্য যারা কিনা ৫ মাস ঊর্ধ্বে ছয় মাস চলছে তাদের ছোলার ছাতু খাওয়ানোটা বেশি উপকারী।
আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়টি ছিল ছোলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি আপনারা সকলে বিস্তারিত হবে জানতে পেরেছেন ছোলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আশা করব এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য খুবই উপকারী হিসেবে গণ্য হবে। আপনাকে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ