ভাবসম্প্রসারণ: আত্মশক্তি অর্জনই শিক্ষার উদ্দেশ্য
ভাবসম্প্রসারণ: মানুষের বিভিন্ন মানবীয় ও মহৎ গুণাবলির মধ্যে আত্মশক্তি অন্যতম। কেউ আত্মশক্তিকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারে, আবার কেউ পারে না। আত্মশক্তির বলে মানুষ নিজের শক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে ও কাজকর্ম করতে পারে। আত্মশক্তি না থাকলে মানুষ নিজের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। তখন সামান্য কাজেও তাকে অন্যের সাহায্যের অপেক্ষায় বসে থাকতে হয়। আত্মশক্তি মানুষের মাঝে গুপ্তধনের মতোই অজ্ঞাতভাবে থাকে। আত্মশক্তি মানুষের একটি সুপ্ত প্রতিভা। শিক্ষার মাধ্যমেই এটা একজন মানুষের অন্তরে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হতে পারে। যে শিক্ষা মানুষকে তার আত্মপ্রত্যয়ে উজ্জীবিত করে না, সে শিক্ষা প্রকৃত শিক্ষা নয়। কারণ শিক্ষার উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষের এ সুপ্ত প্রতিভাকে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত করা।
শিক্ষা মানুষকে আত্মবিশ্বাস প্রসারে সাহায্য করে। আত্মবিশ্বাস আত্মশক্তিরই নামান্তর। মানুষকে সুন্দর, সমৃদ্ধ ও সুখী জীবন লাভ করার জন্য অনেক দুঃখকষ্ট সহ্য করতে হয়, অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয় এবং অনেক প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে সংগ্রাম করতে হয়। আত্মশক্তি না থাকলে মানুষ এ সংগ্রামে বিজয়ী হতে পারে না। আত্মশক্তি দ্বারা মানুষ নিজের দোষ-গুণ, ভালোমন্দ বুঝতে পারে। নিজের ক্ষমতা সম্বন্ধে আস্থাশীল হয়; জীবনের চরম ও পরম সত্য লাভ করতে সমর্থ হয়। নিজেকে বুঝতে, শিখতে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। শিক্ষাজীবনকে সুন্দর, সুচারু এবং আত্মনির্ভরশীলরূপে গড়ে তোলে। জীবন সার্থক হয়। হাদিসে আছে, “যে শিক্ষা গ্রহণ করে, তার মৃত্যু নেই।" মূলকথা হলো, মানুষকে আত্মশক্তি অর্জন করতে হলে শিক্ষিত হতে হবে, শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। সুতরাং শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ যাতে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয় সেদিকে লক্ষ রাখা প্রয়োজন। আর নিজেকে জানা, নিজের ক্ষমতা-অক্ষমতা, নিজের শক্তি-দুর্বলতা সম্বন্ধে সম্যক উপলব্ধি করতে পারা শিক্ষার উদ্দেশ্য। আত্মশক্তি মানুষের একটি সুপ্ত প্রতিভা। শিক্ষার মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের অন্তরে যাতে আত্মশক্তি বিকশিত হয় সে ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। কারণ আত্মশক্তিহীন মানুষ পরমুখাপেক্ষী, যা কাম্য নয়।