বাবা দিবস কবে এবং কেন উদযাপন করা হয়

বাবা দিবস কবে এবং কেন উদযাপন করা হয়

বাবা দিবস কবে, বাবা দিবসের উদযাপনের ইতিহাস কি, বাবা দিবসের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য সম্পর্কে আজকে আলোচনা করব। প্রতিবছর বাংলাদেশেও বাবা দিবস উদযাপন করা হয়। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা বাবা দিবস এর ইতিহাস কি। কিভাবে এই বাবা দিবস এল কেনই বা এই বিশ্ব বাবা দিবস উদযাপন করা হয়। তো চলুন বিশ্ব বাবা দিবস এর ইতিহাস এবং তাৎপর্য সম্পর্কে জেনে নিন। বাবা দিবস উদযাপনের পেছনে একজন নারীর অপরিসীম অবদান রয়েছে তা পর্যায়ক্রমে আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। 

বিশ্ব বাবা দিবস কবে

প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্ব বাবা দিবস উদযাপন করা হয়। সেই হিসাব মতে বিশ্ব বাবা দিবস ২০২৩ উদযাপন করা হবে ১৮ই জুন। তো বাবা দিবস কবে এটা জানলাম এবার আমরা বাবা দিবসের পেছনের কাহিনী সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। 

বাবা দিবস উদযাপনের ইতিহাস

বাবা দিবসের ইতিহাস সম্পর্কে এখন আমরা জানবো। বাবা দিবসের ইতিহাস নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে গেলে একজন নারীর কথা চলে আসে। তিনি বেশ বাবা ভক্ত ছিলেন। প্রথম দিকে তিনি নিজে নিজেই ব্যক্তিগতভাবে বাবা দিবস উদযাপন করতেন। কালক্রমে ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য একটি দিবসে পরিণত হয় এটি। আজ আমরা কিভাবে এই নারীর ছোট্ট একটি উদ্যোগ আজকে সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে সেই ইতিহাসের সম্পূর্ণটা জানবো। 

এই নারী তার পিতাকে অনেক ভালবাসতেন। তার পিতাকে যে তিনি ভালবাসতেন সেটার বহিঃপ্রকাশ করার জন্য ব্যক্তিগতভাবেই বাবা দিবস উদযাপন শুরু করেন। আর এই মহীয়সী নারীর নাম হচ্ছে: সনরা স্মার্ট ডড। একবার তিনি কোন এক গির্জায় মা দিবস উদযাপন উপলক্ষে বেশ আয়োজন লক্ষ্য করেন। 

মায়ের প্রতি এত ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখে তিনি বিস্মিত হন। পরক্ষণেই তিনি সেই গির্জায় ফাদার্সদেরকে বোঝান যে শুধুমাত্র মা দিবস উদযাপন করলেই হবে না বাবা দিবসে উদযাপন করতে হবে। একজন সন্তানকে লালন পালন করার জন্য অবশ্যই মা অনেক তিতিক্ষা সহ্য করেন কিন্তু পাশাপাশি একজন বাবাও একজন সন্তানকে মানুষ করার ক্ষেত্রে অনেক বেশি ভূমিকা রাখেন। তাই মা দিবস যতটা গুরুত্ব সহকারে পালন করা হয় ঠিক ততটা গুরুত্ব সহকারে বাবা দিবস পালন করা উচিত। 

এই কথা শুনে গির্জার ফাদাররা তাকে সম্মতি দেয়। তার মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে তারাও তার মতের সাথে একমত পোষণ করে। আর এই শুরু হলো বাবা দিবসের সূত্রপাত। এরপর ১৯১০ সালের ১৯শে জুন সর্বপ্রথম তিনি নিজ উদ্যোগে বাবা দিবস উদযাপন করেন। এভাবে করে প্রতিবছর ব্যক্তিগতভাবে বাবা দিবস পালন করে আসছিলেন। 

তার এই প্রচেষ্টার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টে একসময় বাবা দিবস উদযাপন সম্পর্কে আলোচনা উত্থাপিত হয়। পার্লামেন্টে এ ব্যাপারে একটি বিল পাস হয়। সেই বিল অনুসারে ১৯১৩ সালে এটিকে জাতীয় সরকারি ছুটির দিবস হিসেবে ঘোষণা করার বিল উত্থাপিত হয়। যদিও সেই বিল পরবর্তীতে ১৯২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কেলভিন কুলিজ পাশ করেন। 

যখন প্রেসিডেন্ট এই দিবসটিকে সমর্থন দিয়ে বিল পাস করেন তখন এটি ধীরে ধীরে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। সারা বিশ্বের শরীরে পড়ার ফলে প্রত্যেক দেশেই এই বাবা দিবসটি গুরুত্ব সহকারে পালন করা হয়। এই বাবা দিবসের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য অনুধাবন করে ১৯৬৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিনডন বি জনসন বাবা দিবসকে সরকারি দিবস হিসেবে ঘোষণা দেন। 

এই হচ্ছে বাবা দিবস সম্পর্কে ইতিহাস। আশা করছি যারা বাবা দিবস পালন করছেন কিন্তু ইতিহাস সম্পর্কে জানতেন না তারা বিশ্ব বাবা দিবস সম্পর্কে সঠিক ইতিহাসটি জানতে পেরেছেন। আমরা আমাদের বাবাকে অনেক ভালোবাসি। বাবা দিবসকে উপলক্ষ করে বাবার প্রতি ভালোবাসা বহিঃপ্রকাশ করানোর জন্য আমরা চাইলে অনেক কিছুই করতে পারি। নিচে কেন আমরা বাবা দিবস উদযাপন করি সে সম্পর্কে আরও কিছু আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। 

বাবা দিবস কেন উদযাপিত হয়

আমরা আমাদের বাবাকে অনেক ভালোবাসি। শুধুমাত্র বাবা দিবস উপলক্ষেই যে বাবাকে ভালোবাসবে তা কিন্তু নয়। বাবা দিবস পালন করার মাধ্যমে বাবা সম্পর্কে আমাদের আরো আবেগ দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে নতুন করে অনুধাবন করার সুযোগ হয়। বাবাকে আমরা সারা বছর যেভাবে ভালোবাসি সেভাবেই ভালোবেসে যাবো তবে বাবার গুরুত্ব এবং তার প্রতি আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে নতুন করে ভাবার জন্য বিশ্ব বাবা দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। 
বাবার প্রতি সম্মান এবং ভালবাসার জন্য: বাবার প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর জন্য এই বাবা দিবসের উদযাপন করা হয়। এমনিতেই আমরা সবাই বাবাকে ভালবাসি। তারপরেও বাবা দিবসকে কেন্দ্র করে যদি আমরা বাবার জন্য আরো এক্সট্রা কিছু করতে পারি সেটা নিশ্চয়ই আমাদের জন্য ভালো হবে। সে জন্যই প্রতিবছর বাবার প্রতি নতুন করে সম্মান এবং ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করার জন্য এটি অন্যতম একটি মাধ্যম। 
আমাদের জীবনে বাবার গুরুত্ব: বাবা হিসেবে সন্তানদের জীবনে বাবার বন্ধুত্ব কত বেশি সেটা নতুন করে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য বাবা দিবসের তাৎপর্য অনেক বেশি। বাবা আমাদের জীবনে অত্যন্ত অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি সেটা আমরা সবাই জানি কিন্তু বাবা দিবস এলে সেটা সম্পর্কে আমাদের আবেগ অনুভূতি আর একটু বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগ থাকে। বলতো এই বিষয়গুলোকে প্রকাশ করার জন্য বাবা দিবস উদযাপন করা হয়। 
বাবার সার্বিক দেখাশোনার ব্যাপারে তৎপর হওয়া: নিশ্চয়ই আমরা আমাদের বাবাদেরকে দেখাশোনা করি দায়িত্ব পালন করি কর্তব্য সম্পর্কে আমরা সচেতন রয়েছি। কিন্তু বাবা দিবস এলে আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে তৎপরতা আরেকটু বেড়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। তাই প্রত্যেক বাবা দিবসেই আমাদের জীবনে আমাদের বাবাদের সম্পর্কে দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে আরো সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। 
বাবার ত্যাগ তিতিক্ষা শ্মরণ করা: বাবা আমাদের জন্য কত দুঃখ কষ্ট সহ্য করেছেন। আমাদেরকে মানুষের মত মানুষ করার জন্য তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তার এই অক্লান্ত পরিশ্রম এবং ত্যাগের বিনিময়ে আজকে আমরা এতদূর আসতে পেরেছি। এসব কিছু স্মরণ করার জন্য অবশ্যই বাবা দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। যদিও আমরা বাবাকে অনেক ভালোবাসি বাবার একদিকে সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল রয়েছে তার পরেও বাবা দিবসে এই বিষয়গুলো নতুন করে মনে পড়ে। তাই অবশ্যই বাবা দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম প্রত্যেক সন্তানের জীবনে। 

বাবার জন্য দোয়া করা: বাবা আমাদের জন্য এত কিছু করেছেন আমরা নিশ্চয় তার জন্য দোয়া করব। তিনি যদি জীবিত থাকেন সে ক্ষেত্রে তো তার জন্য দোয়া করব আর যদি তিনি ইহলোক গমন করেন সে ক্ষেত্রেও আমরা তার জন্য বিশেষভাবে দোয়া করব। যদিও আমরা সব সময় আমাদের পিতা মাতার জন্য দোয়া করি তবে এই দিনটিতে আমরা চাইলে আর একটু স্পেশাল ভাবে তাদের জন্য আল্লাহপাকের দরবারে দোয়া দরখাস্ত করতে পারি। 

বাবা দিবসের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য সম্পর্কে

ইতিমধ্যে আমরা কেন বাবা দিবস উদযাপন করি বাবা দিবসের ইতিহাস সম্পর্কে জেনেছি। বাবা দিবসের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য সম্পর্কে আর নতুন করে বলার কিছু পাচ্ছিনা। একটা কথাই বলবো আমরা সবাই সবার বাবাকে অনেক ভালোবাসি। বাবার প্রতি শ্রদ্ধা দায়িত্ব-কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করার চেষ্টা করছি।আর বাবা দিবসের গুরুত্ব অবশ্যই অনেক বেশি রয়েছে কারণ এই দিবসকে কেন্দ্র করে অনেকেই তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে নতুন করে তৎপর হতে পারে। 

শেষ কথা: আমরা আলোচনা করেছি বাবা দিবস কবে বাবা দিবসের ইতিহাস বিশ্ব বাবা দিবসে আপনার আমার কিছু করার আছে। কেনই বা আমরা বাবা দিবস উদযাপন করি এর পিছনের কাহিনী কি আশা করছি আপনারা এগুলো জানতে পেরেছেন। আমরা আমাদের বাবাকে অনেক ভালোবাসি আর সেটা শুধুমাত্র বাবা দিবসে যে হবে তা নয়। ভালোবাসা কোনো দিবস কেন্দ্রিক হতে পারে না। ভালোবাসা তো চিরদিনের জন্য। তাই শুধুমাত্র দিবস কেন্দ্রিক ভালোবাসা না দেখে বরং বাবাকে সারা জীবন আগলে রেখে ভালোবাসা শিখতে হবে, ভালোবেসে যেতে হবে। 
 

শাহীন

আমি শাহীন । পেশায় একজন ব্যবসায়ী । পাশাপাশি অনলাইনে কাজ করতে পছন্দ করি। আশা করছি আমার শেয়ারকৃত তথ্য থেকে আপনারা উপকৃত হচ্ছেন আর তা হলেই আমার পরিশ্রম স্বার্থক।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads