FCPS full meaning । FCPS Full Form। FCPS পূর্ণরুপ কি? |
FCPS full meaning । FCPS Full Form। FCPS পূর্ণরুপ কি? সম্পর্কে এই পোস্ট। এই পোস্টে আমরা আলোচনা করব FCPS full meaning । FCPS Full Form। FCPS পূর্ণরুপ কি?
FCPS = Fellowship of the college of physicians and surgeons
FCPS হচ্ছে চিকিৎসা জগতের একটি বিশেষ ডিগ্রির নাম।
এফসিপিএস-এর সাতকাহন
লিখেছেন-ডাঃ সিরাজুল ইসলাম।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষদের একটা অংশের কাছে এমবিবিএস পাশ করা হতভাগা ডাক্তারদের উপাধি হল ‘সিম্পল’ এমবিবিএস ডাক্তার। তাই এমবিবিএস পাশ করে তরুণ ডাক্তাররা এখন আর বসে থাকেন না। তারা ‘সিম্পল’ উপাধী দূর করতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জনে লেগে পড়েন। এদের মধ্যে একটি বড় অংশ এফসিপিএস ডিগ্রী অর্জনের চেষ্টা করেন।
এফসিপিএস ডিগ্রীর ন্যূনতম সময় চার বছর হলেও ডিগ্রীটি অর্জন করতে কি পরিমান সময় লাগে,
তার ধারণা পাওয়া যায় যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিডিং রুমে যাওয়া হয়। এফসিপিএস পরীক্ষার আগ দিক দিয়ে রিডিং রুমে গেলে দেখা যায় যারা পড়াশোনা করছেন তাদের কারও মাথায় চুল নেই, কারও দাড়ি পেঁকে গেছে, কারও চুল আছে কিন্তু দেখলেই বুঝা যায় বয়স পয়ত্রিশ পার হয়েছে। এদের মধ্যে এমন ডাক্তারও আছেন যার সন্তান ও তিনি পরীক্ষার দিন একসাথে বের হন, পরীক্ষা দেবেন বলে!
এসসিপিএস ফাইনাল পরীক্ষা বছরে দুইবার হয়। যারা ফাইনাল পরীক্ষা দেয়ার শর্ত পূরণ করেছেন তারা আল্লাহর নাম নিয়ে পরীক্ষা দিতে শুরু করেন এবং মনকে বুঝিয়ে নেন যে এফসিপিএস মানে- ‘ফেইল কনফার্ম পাশ সেলডম’!! হ্যাঁ, এ পরীক্ষা এমনই কড়া হয় যে একবার দুবারে পাশ করার ঘটনা খুব কম। তাই চতুর্থ বা পঞ্চম বারের মত ফাইনালে বসছেন এরকম ডাক্তারের সংখ্যাটাই বেশী। একই সাথে, এই পরীক্ষার পদ্ধতিটি এমন যে, শুধু পড়ালেখা করে একজন এফসিপিএস করে বের হয়ে আসবেন সেই সুযোগ নেই। বরং, কারা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তত্ববধানে সিনসিয়ারলি ট্রেইনিং করেছেন তথা রূগীদের পাশে থেকে, রূগীদের সেবা দিয়ে নিজেদের দক্ষ করে তুলেছেন এবং একই সাথে যে বিষয়ে পরীক্ষা দিচ্ছেন সেই বিষয়ে যথেষ্ট (মানে- অনেক) জ্ঞান অর্জন করেছেন, তা এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট বের হয়ে আসে। সে হিসেবে এই পরীক্ষায় পাশ করা ডাক্তারদের মান প্রশ্নের উর্দ্ধে। বিদেশের যে কোন স্নাতকোত্তর ডিগ্রীর চেয়ে কোন অংশে কম নয়, বরং কিছু ক্ষেত্রে বেশীই।
কিন্তু কিভাবে হয় এই পরীক্ষার শুরু? কোন শর্ত পূরণে একজন এফসিপিএস ফাইনালে বসতে পারেন?
চলুন, একটু গোড়া থেকে জেনে নেই- Fellow of College of Physicians and Surgeons (সংক্ষেপে এসসিপিএস) বাংলাদেশের চিকিৎসকদের অন্যতম স্নাতকোত্তর ডিগ্রী। এটি প্রদান করে
Bangladesh College of Physicians and Surgeons) নামক বাংলাদেশ সরকারের বিধিবদ্ধ একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয় এই প্রতিষ্ঠান থেকেই পাশ করা ফেলোদের মধ্য থেকে
নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা। এমবিবিএস পাশ করার পর একজন ডাক্তারের বেছে নিতে হয় সে
কোন বিষয়ে স্নাতোক্তর ডিগ্রী নেবে। ইন্টার্ণশিপের সময় মেডিসিন, সার্জারী ও গাইনী-অবস্ ওয়ার্ডে কাজ করতে গিয়েই অনেক তরুণ ডাক্তার তাদের পছন্দের বিষয় বেছে নেন। কেউ শুধু ইন্টার্নাল মেডিসিনে বা জেনারেল সার্জারী বা গাইনী ও অবসটেট্রিক্স বিষয়ে থেকে যান আর কেউ কেউ ডিগ্রী নেন অন্যান্য
সাব-স্পেশালিটিতে (যেমন: নিউরোলজি,নিউরোসার্জারী ইত্যাদি)। আবার কেউবা বেসিক
সাবজেক্টে (তথা এনাটমি, ফিজিওলজি, প্যাথোলজি ইত্যাদি) ক্যারিয়ার করেন। বিসিপিএস ক্লিনিকাল (অর্থাৎ মেডিসিন, সার্জারী ও গাইনী-অবস)ও বেসিক সাবজেক্ট উভয়টিতেই ফেলোশিপ দিয়ে থাকে। বাংলাদেশে অধিকাংশ ডাক্তার এফসিপিএস সাবস্পশালিটিতে না করে ইন্টার্নাল মেডিসিন, জেনারেল সার্জারী ও গাইনী-অবস্-এ করেন।(সাবস্পেশালিটি করতে চাইলে তারা সাধারণত এমডি ও এমএস করার চেষ্টা করেন।)
এফসিপিএস পরীক্ষাকে দুটো অংশে(তথা পার্টে) ভাগ করা হয়েছে। ফাস্ট পার্ট পরীক্ষাটিকে এফসিপিএস-এ এনট্রেন্স পরীক্ষার মত বিবেচনা করা যায়। একজন ডাক্তার এমবিবিএস পাশ করে ইন্টার্ণ শেষ করার ন্যূনতম এক মাস পনেরো দিন পরে এই পরীক্ষা অংশগ্রহন করতে পারবেন। তবে পরবর্তীতে যে কোন সময় এই পরীক্ষা দিতে কোন বাঁধা নেই। এফপিসিএস ফার্স্ট পার্ট পাশ করলে একজন সেকেণ্ড পার্টে অংশগ্রহন করার একটি শর্ত পুরণ করলেন। সেকেণ্ড তথা ফাইনাল পার্টে অংশগ্রহন করার আরো দুটি শর্ত হল: এক, তিন বছর ট্রেইনিং ও একবছর কোর্স (তথা ক্লাস) বা এক বছর পেইড পোস্টে ট্রেইনিং এবং দুই, বিসিপিএস অনুমোদিত একজন সুপারভাইজারের অধীনে একটি ডিসারটেশন সাবমিট করা।
তিন বছর ট্রেনিং-এর বিষয়টিতে কোন প্রতিষ্ঠানকে সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয় না। বরং ডিস্ট্রিক্ট লেভেল
হাসপাতাল থেকে শুরু করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের যেখানে একজন এফসিপিএস করা কনসালটেন্ট আছেন তার সুপারভিশনে ট্রেইনিং করা যায়। ট্রেইনিংকে ছয়মাসের ক্ষুদ্র ভাগে বিভক্ত করে দেয়ায় নিজের সুবিধে মত ছয় মাস ছয় মাস করে তিন বছর ট্রেইনিং শেষ করার সুযোগ আছে। তবে প্রত্যেকবার ট্রেইনিং শেষে বিসিপিএস- এর ডাটাবেজে আপডেট করে আসতে হয়।(২০১২ সাল থেকে নতুন নিয়ম অনুযায়ী)। একজন ডাক্তার যে বিষয়ে এফসিপিএস করছেন তার উপর ভিত্তি করে ট্রেইনিং-এর শর্তের কিছুটা ভ্যারিয়েশন আছে। (বিসিপিএস-এ ওয়েবসাইট থেকে এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যাবে: www.bcpsbd.org) ট্রেইনিং ‘অবৈতনিক’ ভাবেও করা যেতে পারে, আবার ‘বৈতনিক’-ও হতে পারে। তবে, ‘বৈতনিক’ ট্রেনিং পোস্ট কম হওয়ায় অধিকাংশ ব্যক্তিই অবৈতনিক ভাবে ট্রেইনিং শেষ করার চেষ্টা করেন।
.যারা বিসিএস-হেল্দ ক্যাডারে সরকারী চাকুরী করছেন তারা উপজেলায় দুবছর পার না করে ট্রেইনিং পোস্টে আসতে পারেন না। আবার ট্রেইনিং পোস্ট কম থাকায় ঘুষ-তদবির ছাড়া ট্রেইনিং পোস্টে আসা যায় না। সে হিসেবে যারা এমবিবিএস-এর পর পর সরকারী চাকুরী করছেন তাদের এফসিপিএস শর্ত পূরণের সুযোগ পেতে পেতেই বয়স ত্রিশ পার হয়। (লক্ষ্যনীয়, এমবিবিএস পাশ করে ইন্টার্ণশিপ শেষ করতে করতে বয়স পঁচিশ থেকে ছাব্বিশ হয়ে যায়)। সুতরাং তারা ফাইনাল পার্টে বসতে বসতেই পয়ত্রিশে পা দেন। (অন্যদিকে, যারা এমবিবিএস পাশ করে অনারারী ট্রেইনিং করে শর্ত পূরণ করেছেন কিংবা ফাইনালে বসে পাশও করে ফেলেছেন তারা যদি শেষ মুহূর্তে বিসিএস-স্বাস্থ্য ক্যাডারে ঢুকতে পারেনও
চাকুরীর মেয়াদে তারা জুনিয়র হয়ে পড়েন। এদের প্রমোশন হয় দেরীতে।)
.ডিসারটেশন করতে হয় দু’ধাপে। প্রথম ধাপে শর্ত হল, ফার্স্ট পার্ট পাশ করার পর বিসিপিএস-এর তিন দিনব্যপী ডিসারটেশন ট্রেইনিং-এ অংশগ্রহণ করতে হবে। এরপর, বিসিপিএস অনুমোদিত একজন
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে সুপারভাইজার হিসেবে ঠিক করতে হবে। তার সাথে আলোচনা করে একটি বিষয়
ঠিক করতে হবে এবং উক্ত বিষয়ে একটি প্রটোকল লিখে বিসিপিএস-এ জমা দিতে হবে। প্রটোকল জমা
দেয়ার দেড় বছর পরে কেবল ফাইনাল পরীক্ষায় বসা যাবে। দ্বিতীয় ধাপে, প্রটোকল বিসিপিএস
থেকে অনুমোদিত হলে রিসার্চ সম্পন্ন করে ডিসারটেশন জমা দিতে হবে ফাইনাল পরীক্ষার ন্যূনতম ছয়মাস আগে। ডিসারটেশন বিষয়টিতে প্রয়োজনীয় খরচাদি, দৌড়াদৌড়ি এবং পড়াশোনা করতে হবে পরীক্ষার্থীর নিজের। সুপারভাইজর ও বিসিপিএস-এর সংশ্লিষ্ট ডাক্তাররা শুধ ভুল হলে বারবার ভুল ধরিয়ে দিবেন। ফলে ট্রেনিং-এর পাশাপাশি ডিসারটেশনের কাজটি একজন ডাক্তারের জন্য যথেষ্ট মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
.যাই হোক, একজন ডাক্তার উপরোক্ত সকল শর্তপূরণ করে এফসিপিএস সেকেণ্ড পার্ট তথা ফাইনাল পরীক্ষায় বসতে পারেন। রিটেন,ওএসপিই, শর্ট কেস, লং কেস, ভাইভা প্রত্যেকটি পর্যায়ক্রমিক অংশে পৃথকভাবে পাশ করতে পারলেই কেবল একজন ডাক্তার বিসিপিএস-এর ফেলো হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। এই পরীক্ষার সময় একজন পরীক্ষার্থীর জীবনে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। কেউ এই ঝড়ে বেঁচে বের হন। কেউ ফিরে যান বাড়িতে ছয়মাস বা একবছর পর পুনরায় ‘ঝড়ে’ পড়ার জন্য। কেউ কেউ আবার আশা ছেড়ে দিয়ে ‘সিম্পল’ এমবিবিএস-ই থেকে যান শেষ পর্যন্ত। আমাদের ইউনিভার্সিটির গ্র্যাডুয়েট ভাই বা বোনেরা যখন ছাব্বিশ বছর বয়সে মাস্টার্স শেষ করে চাকুরী করে সাত আট বছর পার করে দিচ্ছেন (ধরে নিলাম চাকুরী পাশের পরপরই পেয়ে গেছেন) তখন ডাক্তাররা স্নাতকোত্তর ডিগ্রী পরীক্ষা দেয়ার জন্য নিজেকে কেবল তৈরী করতে পেরেছেন। সুতরাং এই ডাক্তাররা যদি আরও ঝড়ঝঞ্চা পেরিয়ে এফসিপিএস ডিগ্রীটি অর্জন করতে পারেন তখন তারা যদি আপনাদের কাছ থেকে চিকিৎসা পরামর্শের বিনিময়ে বৈধ উপায়েই পাঁচশটি টাকা নেন তখনকি খুব বেশী দাবী করে ফেলেন? (প্রসঙ্গত, অস্ট্রেলিয়ায় একজন জেনারেল প্র্যাকটিশনারের ফি পঞ্চাশ ডলার তথা প্রায় চার হাজার টাকা এবং একজন স্পেশালিস্ট ডাক্তারের ফি একশত পঞ্চাশ ডলার তথা প্রায় বার হাজার টাকা।)
পাঠক, উত্তরটি বিবেচনার ভার আপনাদের উপরই ছেড়ে দিলেম। কেউ কেউ প্রশ্ন করতে পারেন যে অস্ট্রেলিয়ায় ডাক্তারদের ফি বেশী হলেও খরচও বেশী। কিন্তু বাংলাদেশে খরচের সাপেক্ষে চিন্তা করলেও
বিশেষজ্ঞ ফি কম। দু'দেশে খরচের সাথে আয়ের তুলনা করে দেখলে বিষয়টা পরিস্কার হবে: অস্ট্রেলিয়ায় এক ডজন ডিমের দাম ৪.৩২ অস্ট্রেলিয়ান ডলার, একজন স্পেশালিস্টের ফি ১৫০ অ. ডলার। রেসিও: ৩৪ (প্রায়) বাংলাদেশে এক ডজন ডিম ১০৫ টাকা, স্পেশালিস্ট কনসালটেশন ফি ৫০০ টাকা। রেসিও:
৫ (প্রায়) লিভিং কস্ট সম্পর্কে জানতে দেখতে পারেন
এখানে:১. অস্ট্রেলিয়া: http:// www.numbeo.com/cost-of-living/country_result.jsp...
২ . বাংলাদেশ: http://www.numbeo.com/cost-of-living/country_result.jsp ...
অস্ট্রেলিয়া একজন স্পেশালিস্ট হবেন আনুমানিক প্রায় ৩২ থেকে ৩৪ বছর বয়সে আর বাংলাদেশে
একজন স্পেশালিস্ট হওয়ার পরীক্ষা দিতে শুরু করবেন প্রায় একই সময়ে।