بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
(1
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ
ক্বুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক।
বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার,
(2
مِن شَرِّ مَا خَلَقَ
মিন শাররি মাখালাক্ব।
তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে,
(3
وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ
ওয়া মিন শাররি গাসিক্বিন ইযা অক্বাব।
অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয়,
(4
وَمِن شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ
ওয়া মিন শাররিন নাফ্ফাসাতি ফিল্ উকাদ।
গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিনীদের অনিষ্ট থেকে
(5
وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ
ওয়া মিন শাররি হাসিদিন ইযা হাসাদ।
এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে।
সূরা আল ফালাক একটি মাদানী সূরা কারন এটি পবিত্র নগরী মদিনায় নাযিল করা হয়েছিল। কোরানুল কারীমের ১১৩ তম সূরা এটি। সূরা আল ফালাকের 5টি আয়াত রয়েছে। এটি হচ্ছে এক ধরনের প্রার্থনামূলক সূরা। এই সুরাতে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ পাকের কাছে প্রার্থনা করা হয়েছে বা আশ্রয় চাওয়া হয়েছে।
সূরা আল-ফালাক নামকরণ
সূরা আল ফালাক এর নামকরণের পেছনের কাহিনী জানতে হলে এর শানে নুযুল জানতে হবে। নিচে আমরা সূরা আল ফালাক এর শানে নুযুল দিয়ে রাখব। আল-ফালাক শব্দের অর্থ হল “নিশিভোর” । সূরা আল ফালাক এবং সূরা আন নাস দুটি ভিন্ন সুরা হলেও এদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এ দুটি সূরার মূল বিষয়বস্তু প্রায় একই রকম। এবার তাহলে সূরা আল ফালাক নাযিলের কারণ বা এটির শানে নুযুল সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
সূরা আল ফালাক এর শানে নুযুল
রাসূল সাল্লাল্লাহু এর উপর একবার এক ইহুদি জাদু করেছিলেন। এর ফলে তিনি ব্যাপক অসুস্থ হয়ে পড়েন। আল্লাহ তাআলার হুকুমে হযরত জিব্রাইল আলাই সালাম নবীজি সাল্লাল্লাহু সাল্লাম কে জৈনিক ইহুদি তার ওপর জাদু করেছে সে সম্পর্কে অবগত করেন। এবং যে জিনিসের মাধ্যমে তাকে জাদু করা হয়েছে সেটি সম্পর্কেও বলেন পাশাপাশি যাদুকৃত বস্তুটি একটি কুপে লুকিয়ে রেখেছিল সেটিও বলেন। পরবর্তীতে লোকজনকে দিয়ে মহানবী সাঃ উক্ত কূপ থেকে যাদুকৃত বস্তুটি উদ্ধার করেন। সেটিতে মহানবী সাঃ এর মাথার চুল কয়েকটি গিট দেওয়া ছিল। মহানবী সাঃ সালাম সে সময় সূরা আন নাস এবং সূরা আল ফালাক পড়ে ওই বস্তুর উপরে ফু দিলে খুলে যায়। এরপর তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। মুসনাদে আহমাদে এই ঘটনাটি বর্ণিত রয়েছে।
এছাড়া হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাম এর উপর যাদুর প্রভাব পড়ে এবং এতে তিনি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে,, যে কাজটি তিনি করেননি সেটি কেউ করেছেন বলে অনুভূত হয়। এরপর আয়েশা রাঃ কে তিনি বলেন আল্লাহ তায়ালা আমাকে বলেছেন আমার রোগটা কি। নবীজি সাঃ বলেন আমি স্বপ্নে দেখেছি দুজন লোক তার কাছে এসেছে এবং একজন শিওর এর কাছে অন্যজন পায়ের কাছে এসে বসেছে। শিওর এর কাছে যে লোকটি আছে সে অপর লোককে জিজ্ঞাসা করছে ওনার কি রোগ হয়েছে? অন্য লোক দিয়ে উত্তরে বলল ওনাকে জাদু করা হয়েছে। তারপর অপর লোককে আবার জানতে চাইলো কে জাদু করেছে? উত্তরে অপর লোকটি বলল লবীদ ইবনে আ’সাম (ইহুদীদের মিত্র মুনাফিক) জাদু করেছে। এভাবে আবারো প্রশ্ন করা হলো কি দিয়ে যাদু করা হয়েছে? উত্তরে বললেন খেজুর ফলের আবরণীতে‘বির যরোয়ান’ কূপে একটি পাথরের নিচে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে মহানবী সাল্লাল্লাহু সাল্লাম সেই কূপের কাছে গেলেন যা তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেখান থেকে যাদুকৃত চিরঞ্জী সংগ্রহ করেন। এবং আল্লাহর শেখানো সূরা আন নাস এবং সূরা আল ফালাক এর মাধ্যমে জাদু থেকে মুক্তি পান।