আন্তর্জাতিক নারী দিবস |
ভূমিকা : পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর কবি কাজী নজরুল ইসলাম চোখে নারী এভাবেই ধরা পরেছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস এর পূর্বনাম আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস। সভ্যতার অভাবনীয় সাফল্যের পেছনে নারী ও পুরুষের সমান অবদান অনস্বীকার্য। নারীকে বাদ দিয়ে পুরুষের একক অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নের কথা কল্পনা করা যায় না। কিন্তু যুগ যুগ ধরে নারীরা অবহেলিত ও শোষিত হয়ে আসছে। পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থায় সামাজিক কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, নিপীড়ন ও বৈষম্যের বেড়াজালে নারীরা তাদের অধিকার বিসর্জন দিয়ে আসছে। তাই নারী মুক্তির আহ্বান নিয়ে প্রতি বছর ৮ মার্চ বিশ্বব্যাপী নারী দিবস পালন করা হয়।
নারী দিবসের ইতিহাস বা পটভূমি:
আজকের নারী দিবস একদিনে গড়ে উঠে নি। দিবসটি উদযাপনের পিছনে রয়েছে এক গভীর ইতিহাস। এর ইতিহাস হল নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। সাল ১৮৫৭, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউয়র্কের রাস্তায় সুতা কারখানার নারী শ্রমিকের মিছিল। মিছিলের কারণ ছিল মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। কিন্তু নিষ্ঠুর সরকার সেই মিছিলে লেঠেল বাহিনী দিয়ে নারী শ্রমিকদের উপর দমন পীড়ন চালায়। এরপর ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। যার নেতৃত্বে ছিলেন জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিন এবং সংগঠনে ছিল নিউয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক নারী সংগঠন। পরবর্তীতে দ্বিতীয়বারের মত ১৯১০ সালে আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে। এতে প্রায় ১৭ টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি যোগ দিয়েছিল। এবং এই সম্মেলনে ক্লারা ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। অবশেষে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ১৯১১ সাল থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে। ১৯১৪ সাল থেকে মোটামুটিভাবে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ নারী দিবস হিসেবে পালিত হলেও বাংলাদেশে স্বাধীনতার লাভের পূর্ব থেকেই এই দিবসটি পালিত হওয়া শুরু হয়। ১৯৭৫ সালে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয় এবং দিবসটি পালনের জন্য জাতিসংঘ বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান করে।
নারী দিবসে জাতিসংঘের প্রতিপাদ্য :
প্রতিবছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিকভাবে নারী দিবস পালন করা হয়।এবং প্রতি বছর একটি বিশেষ প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে দিবসটি পালিত হয়। নারী দিবসে জাতিসংঘের প্রতিপাদ্য নিচে তুলে ধরা হল:
জাতিসংঘের প্রতিপাদ্য বছর :
- ১৯৯৬ অতীত উদযাপন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
- ১৯৯৭ নারী এবং শান্তি
- ১৯৯৮ নারী এবং মানবাধিকার
- ১৯৯৯ নারী প্রতি সহিংসতামুক্ত পৃথিবী
- ২০০০ শান্তি স্থাপনে একতাবদ্ধ নারী
- ২০০১ নারী ও শান্তি : সংঘাতের সময় নারীর অবস্থান
- ২০০২ আফগানিস্তানের নারীদের বাস্তব অবস্থা ও ভবিষ্যৎ
- ২০০৩ লিঙ্গ সমতা ও সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০০৪ নারী এবং এইছ আই ভি/ এইডস
- ২০০৫ লিঙ্গ সমতার মাধ্যমে নিরাপদ ভবিষ্যত
- ২০০৬ সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারী
- ২০০৭ নারী ও নারী শিশুর ওপর সহিংসতার দায়মুক্তির সমাপ্তি ২০০৮ নারী ও কিশোরীদের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ
- ২০০৯ নারী ও কিশোরীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে নারী-পুরুষের একতা
- ২০১০ সমান অধিকার, সমান সুযোগ- সকলের অগ্রগতি ২০১১ শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নারীর সমান অংশগ্রহণ
- ২০১২ গ্রামীণ নারীদের ক্ষমতায়ন- ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের সমাপ্তি।
- ২০১৩ নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়
- ২০১৪ নারীর সমান অধিকার সকলের অগ্রগতির নিশ্চয়তা
- ২০১৫ নারীর ক্ষমতায়ন ও মাবতার উন্নয়ন
- ২০১৬ অধিকার মর্যাদায় নারী-পুরুষ সমানে সমান
- ২০১৭ নারী-পুরুষ সমতায় উন্নয়নের যাত্রা, বদলে যাবে বিশ্ব কর্মে নতুন মাত্রা। ২০১৮ সময় এখন নারীর:
- উন্নয়নে তারা, বদলে যাচ্ছে গ্রাম-শহরের কর্ম-জীবনধারা
- ২০১৯ সবাই মিলে ভাবো, নতুন কিছু করো নারী-পুরুষ সমতার নতুন বিশ্ব গড়ো
- ২০২০ প্রজন্ম হোক সমতার, সকল নারী অধিকার
- ২০২১ করোনাকালে নারী নেতৃত্ব গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব
- ২০২২ নারীর সুস্বাস্থ্য ও জাগরণ।
সংবিধানে নারীর অবস্থান: বাংলাদেশের সংবিধানে নারীর যথাযোগ্য অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে। সংবিধানে নারীর অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষা করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধারা সন্নিবেশ করা হয়েছে। ১৯ অনুচ্ছেদে বর্ণনা হয়েছে “জাতীয় জীবনে সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের ক্ষমতা রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবে।” ২৭ নং ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে- “সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।” এছাড়াও ২৮(১), ২৮(২), ২৮(৩), ২৮(৪), ২৯(১), ২৯(২)-ধারায় নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকারের বিধান রয়েছে। ৬৫(৩) ধারায়
নারীর জন্য জাতীয় সংসদে আসন সংরক্ষিত আছে এবং এ ধারার অধীনে নারী স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।
নারী দিবসের তাৎপর্য: নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী অধিকার সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে নারী দিবস গভীর তাৎপর্য বহন করে।আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীদের ঐক্যবদ্ধতার একটি বড় উদাহরণ। ১৯০৮ সালের ৮ মার্চ নারীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কারণে পরে এই দিনটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এর ফলে নারীরা ভোটাধিকার পায় এবং তাদের প্রতি বিভিন্ন বৈষম্য দূরীভূত হয়। এভাবে নারী আন্দোলনের জন্য আন্তর্জাতিক নারী দিবস তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নারী দিবস নারীকে স্মরণ করিয়ে দেয় তাদের অধিকার আদায়ের দাবি, তাদের অবদান এবং সারা বিশ্বে তাদের অবস্থনের কথা।
বিশ্বের প্রেক্ষাপটে নারী:
পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোতে নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি প্রথম সাড়া জাগায়। আর এ ক্ষমতায়ন সফল করতে এগিয়ে আসে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ নারীর রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালকে ‘বিশ্ব নারী বর্ষ’, ১৯৭৫-১৯৮৫ সালকে নারী দশক হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৭৫ সালে মেক্সিকোতে, ১৯৮০ সালে কোপেনহেগেনে ১৯৮৫ সালে নাইরোবিতে এবং ১৯৯৫ সালে বেইজিংয়ে যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উন্নত দেশগুলোতে যেমন আমেরিকা, ব্রিটেনে, কানাডা, জাপান প্রভৃতি দেশের নারী সকল ক্ষেত্রে পারদর্শী। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারী সাম্যের গান গাই – আমার চক্ষে পুরুষ-রমনী কোনো ভেদাভেদ নাই। – কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের কারণেই নারীরা বৈষম্যের শিকার হয়।
তবে একথাও সত্য যে, আলোকোজ্জ্বল প্রভাতে দিকে দিকে আজ নারীপ্রগতির বাদ্য বেজে উঠছে। যার জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী। স্বাধীনতা যুদ্ধে নারী মুক্তিযোদ্ধা ও নির্যাতিত নারীর পুনর্বাসন এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে “নারী পুনর্বাসন বোর্ড” গঠন করা হয়। ১৯৭৮ সালে গঠিত মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে ১৯৯৪ সালে বর্ধিত করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে রূপান্তর করা হয়। দারিদ্র্য বিমোচন, নারী নির্যাতন, নারী পাচার রোধ, নারীর নিরাপত্তা এবং সমঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই হলো মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মূল লক্ষ্য। নারীকে অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি হিসেবে কাজে লাগানোর জন্য National Strategy for Accredited Poverty Reduction (NSAPR-II)-এ বিভিন্ন কার্যক্রম সন্নিবেশ করা হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রায় ৭৬% আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এই পোশাক তৈরির খাতে নারী শ্রমিকের অবদানই সবচেয়ে বেশি। জাতিসংঘ ২০২২ সালের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে “নারীর সুস্বাস্থ্য ও জাগরণ”। এই মূল প্রতিপাদ্যেও আলোকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসের
প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে- “টেকসই আগামীর জন্য, জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য”। এ উপলক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সারাদেশে শোভাযাত্রা, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে দিবসটি উদযাপন করবে।
বিশ্বে নারীর অবস্থান:
বিশ্ব আজ একবিংশ শতাব্দীতে পা রেখেছে,পা রেখেছে এক নতুন সহস্রাব্দে।আমরা যখন নতুন শতাব্দীর প্রথম "বিশ্ব নারী দিবস " পালন করেছি তখনও বিশ্বে নারী সমাজের অবস্থা কিন্তু মটেই সুখ কর নয়।এটাই সত্যেই যে,গত তিন দশকে লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা, পশ্চিম ও দক্ষিণ এশিয়ায় নারী সমাজের শিক্ষা,সাস্থ্য,রাজনীতি ও অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। কিন্তু এটাও সত্যি যে,নারী সমাজের উক্ত অগ্রগতিএকই সময়কালে পুরুষ সমাজের কতৃক অগ্রগতি সমপক্ষ নয়। আর উন্নয়নশীল দেশ গুলোতে নারী সমাজের অবস্থা আশংকাজনক।
উন্নয়নশীন দেশ গুলোতে দরিদ্রসীমার নিচে রয়েছে প্রায় ৬০ কোটির বেশি নারী।এদিকে উন্নত দেশ গুলোতেও দরিদ্রসীমার নিচে বাস করা নারীর সংখ্যা ও কম নয়।তাই বলা যায় দরিদ্রসীমার নিচের সারের নারীদের সংখ্যা প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি।
বাঙালী নারীর অবস্থান:
বেগম রোকেয়া থেকে বেগম সুফিয়া কামাল পর্যন্ত যে সময়কাল অতিবাহিত হয়েছে সে সময়ে তারা যে বাংলার নারীর স্বীয় মর্যাদা, অধিকার, নারীমুক্তির সংগ্রামে লিপ্ত ছিলেন।তা আজ আমাদের কাছে নারীমুক্তির আন্দোলনের উদাহরণ ও প্রেরণা। কিন্তু দু:খজনক যে আজ আমাদের দেশের নারীরা পুরুষশাসিত সমাজের কাছে অবহেলিত। আজও অসংখ্য নারী এসিডনিক্ষেপ, ধর্ষন ও যৌতুকের শিকার হচ্ছে।গৃহপরিচারিকার উপর চালানো হচ্ছে অমানবিক নির্যাতন।এমন একটি দিন ও নেই যেদিন খবরে কাগজে নারী নির্যাতন এর কথা ছাপা হয় না।যদিও বিভিন্ন উন্নয়ন মুলক কাজে এখন নারীরাও জড়িত।গার্মেন্টস শিল্পে লক্ষ লক্ষ নারী জড়িত রয়েছে।এবং পরিক্ষায় মেধাতালিকায় মেয়েদেরই লক্ষ করা যায়।তারপরে ও সমাজে নারীদের উপর কেমন জানি একটা অবহেলিত দৃষ্টি।
নারী উন্নয়নের প্রয়জনীয়তা:
নারী শুধু পুরুষের নম্র সহচরী নয়।বর্তমানে নারী পুরুষের সাথে বুদ্ধির খেলায় মেতেছে।বীরাঙ্গনার বেশে যুদ্ধ করছে শত্রুর সাথে।সাহসিক অভিজানে পাল্লা দিয়েছে পুরুষের সঙে।রাজনীতিতে পুরুষের সহযাত্রীনি।দেশের কাজে আত্মদানে গৌরবে গরবীনি।ধর্মে, সমাজসংকারে তার ভুমিকা অনন্য।সাহিত্য -বিজ্ঞানে বিশ্বজয়ের স্বিকৃতি।নারী এখন সংগ্রামি জীবনের অংশিদার।
নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন :
যদিও বিগত দিন গুলোর তুলনায় আমাদের সমাজের নারীরা আজ অনেক বেশি স্বাধীন ও ক্ষমতাশীল। কিন্তু পুরুষের তুলনায় পারিবারিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবিনে নানা ক্ষেত্রে নারীদের আজও যে বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। বিশেষত এই বৈষম্য নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করা যায়।এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে,নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের সাথে তার সার্বিক ক্ষমতায়নের দিকতি একে অপ্রের সাথে জড়িত।। নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতার বহুমুখী ইতিবাচক দিক থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ আজও এ ক্ষেত্রে বৈষম্য মূলক চিত্র লক্ষ্য করা যায়।নারীর তার কর্ম জীবনে পুরুষদের চেয়ে কম অর্থমূল্য পেয়ে থাকে। তাই বলা যায় এই দিক থেকে ও নারীর অবহেলিত।
বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়নে প্রধান সীমাবদ্ধতা সমুহ:
এদেশে নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে যে সকল সমস্যা বা সীমাবদ্ধতা বা বাধা লক্ষ্য করা যায় সেগুলো হচ্ছে সামাজিক প্রেক্ষাপট, দারিদ্র্যতা,শিক্ষাক্ষেত্রে নারীদের অনগ্রসরতা,নারীদের যথেষ্ট সচেতনতার অভাব,ধর্মীয় গোড়ামি,সুযোগ ও সুশিক্ষার অভাব ইত্যাদি। এই সব সমস্যা বা সীমাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব না হলে বাংলাদেশ সহজে নারী ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের জন্য যে সকল বিষয়ের উপর জোড় দেয়া জরুরি :
- ১) নারী উন্নয়নে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্তিশালী করন,
- ২) জাতীয় মহিলা উন্নয়ন পরিষদের উন্নয়ন,
- ৩) সংসদীয় স্থায়ি কমিটি গঠন,
- ৪) নারী ও জেন্ডার সমতা বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধি করা।
- ৫) সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
- ৬) নারীদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন করা
- ৭) বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলো কে নারীদের উন্নয়নে এগিয়ে আসা,
- ৮) দেশের বিভিন্ন জায়গায় নারী উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা ইত্যাদি। নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নসহ সার্বিক উন্নয়ন নিচ্ছিত করতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করা জরুরি।
উপসংহার:
কোনো কালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারি প্রেরণা দিয়েছে সাহস দিয়েছে বিজয়লক্ষ্মী নারী। –কাজী নজরুল ইসলাম জগৎ সংসারে নারীকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়। নিজের সন্তানকে গর্ভে ধারণ এবং জন্ম দিয়ে পৃথিবীর আলো দেখানোর মাধ্যমে একজন ‘মা’ নারী হিসেবে জীবনের সার্থকতা লাভ করে। যখন একটি শিশুর জন্ম হয় তখন একজন মায়েরও জন্ম হয়। এছাড়া স্ত্রী, বোন, কন্যাসহ মর্যাদাপূর্ণ সব সম্পর্কের বাঁধনে নারীরা সমাজের সাথে আবদ্ধ। তারা সমাজের অর্ধেক অংশ। তাদের প্রতিভা ও স্বয়ংসম্পূর্ণতা বিকাশের সুযোগ নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের জন্য অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য। আন্তর্জাতিক নারী দিবস যেন শুধু একটি দিনের জন্য না হয় বরং প্রতিটি দিন হোক নারীর জন্য, নারীর অধিকার আর উপযুক্ত সম্মানের জন্য।