মোবাইল ফোন রচনা। বাংলা রচনা ও প্রবন্ধ

মোবাইল ফোন রচনা। বাংলা রচনা ও প্রবন্ধ
মোবাইল ফোন রচনা

মোবাইল ফোন রচনা

ভূমিকাঃ বিজ্ঞান দূরকে করেছে নিকট এবং পরকে করেছে আপন। বর্তমান বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিপ্লব ঘটিয়েছে মােবাইল ফোন। কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের সমন্বিত মিনি সংস্করণ এ তারবিহীন মুঠোফোন। যতই দিন যাচ্ছে নিত্যনতুন সেবা নিয়ে হাজির হচ্ছে বিজ্ঞানের এ বিস্ময়কর আবিষ্কার। তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে মােবাইল ফোন ছাড়া যেন একমুহূর্তও কল্পনা করা যায় না। অতি দ্রুত পৃথিবীর যেকোনাে স্থানে যােগাযােগ করা এবং সহজ পরিবহন যােগ্যতার কারণে সমগ্র বিশ্বে মােবাইল ফোন ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মোবাইল ফোন যেমন দূরুত্বকে জয় করেছে তেমনি যোগাযোগের ক্ষেত্রেও সৃষ্টি করেছে নবযুগের। 

 মােবাইল ফোনের আদিকথাঃ 

মাত্র দুই যুগ আগেও মােবাইল ফোন শুধু সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরেই ছিল না, বলা যায় এটা ছিল তাদের ধারণারও অতীত। অথচ আজ বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনগােষ্ঠীর দৈনন্দিন জীবন মােবাইল ফোন ছাড়া প্রায় অচল। মােবাইল ফোনের প্রথম ব্যবহার শুরু হয় ১৯২৬ সালে জার্মানির বার্লিন-হামবুর্গ চলাচলকারী প্রথম শ্রেণির ট্রেনে। ১৯৫০ সালের গােড়ার দিকে জার্মানির রাইন নদীতে বিনােদনের। জন্য চলাচল করা নৌযানের সাধারণ যাত্রীদের জন্য ব্যবহারােপযােগী। মােবাইল ফোন প্রথম চালু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় মােবাইল ফোন আবিষ্কার করে সুইডেনের ফোন কোম্পানি এরিকসন। ১৯৫৬ সালে তৈরিকৃত এ মােবাইল ফোনের নাম ছিল মােবাইল সেল। ফোন সিস্টেম-এ’ (এমটিএ) যার ওজন ছিল ৪০ কেজি। ওজনের কারণে এটি সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযােগ্যতা ও জনপ্রিয়তা পায়নি। তাছাড়া সেটির আকার, সীমিত সেবা এবং উচ্চমূল্যও গ্রহণযােগ্যতা না পাওয়ার একটি কারণ। তারপর ১৯৬০-এর শুরুতে মােবাইল ফোন প্রযুক্তিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে। 

বর্তমানে আমরা যে মােবাইল ফোন ব্যবহার করি তার প্রকৌশলগত বিবর্তন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় লাগে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত। অবশেষে ১৯৭৩ সালে Motorola-এর ড. মার্টিন ‘কুপার (১৯২৮) কর্তৃক প্রথম হাতে বহনযােগ্য মােবাইল ফোন প্রদর্শিত হয়, যার ওজন ছিল প্রায় দুই কেজি। ১৯৮৩ সালে Dyna TAC 8O00X মডেলের মােবাইল ফোন প্রথম বাজারজাত করা হয়। তারপর থেকে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে। 

মোবাইল ফোন কী? 

মোবাইল ফোন বা সেলুলার ফোন বা হ্যান্ড ফোন হচ্ছে তারবিহীন টেলিফোন বিশেষ। "মোবাইল" ইংরেজি শব্দ যার বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে "ভ্রাম্যমাণ বা স্থানন্তর যোগ্য। এই ফোন সহজে যে কোনো স্থানে ব্যবহার করা যায় বলে একে মোবাইল ফোন নাম করণ করা হয়েছে।এটি ষড়ভুজ আকৃতির ক্ষেত্রে বা এক একটি সেল নিয়ে কাজ করে বলে একে সেল ফোন ও বলা হয়।মূলত মোবাইল ফোন যোগাযোগের একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র বিশেষ। এটি বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে কাজ করে বলে অনেক বড় ভৌগলিক এলাকায় নিরিবিচ্ছিন্ন ভাবে সংযগ দিতে পারে।শুধু কথা বলাই নয়, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আরও অনেক সেবা গ্রহণ কিরা যায়।যেমন : এসএমএস, ই-মেইল, ইন্টারনেট, ব্লুটুথ ইত্যাদি। 

মোবাইল ফোনের ব্যবহারঃ 

 আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর পূর্বে মোবাইল ফোনের ব্যবহার শুরু হয়।বর্তমানে পৃথিবীর মোটামুটি জনসংখ্যার ৮৭% মোবাইল ফোন যোগাযোগের আওতায় এসেছে। ধনী ও সৌখিন পরিবারেই শুরু দিকে মোবাইল ফোন ব্যবহার দেখা যেত।কিন্তু বর্তমানে শিল্পপতি থেকে শুরু করে রিকশা চালক পর্যন্ত এটি ব্যবহার করে থাকে।২০১২ সালের এক জরিপে দেখা গেছে ১১ কোটির বেশি মানুষ মোবাইল ফোনের আওতায় রয়েছে। বর্তমানে এটির জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

বাংলাদেশে মোবাইল ফোনঃ 

 বর্তমান বিশ্বে চার প্রযুক্তির মোবাইল সেট প্রচলিত। তম্মধ্যে বাংলাদেশে ‘সিডিএমএ’ ও ‘জিএসএম’ নামক দুই প্রযুক্তির মোবাইল চালু রয়েছে। আমাদের দেশে একুশ শতকের শুরুতেই মােবাইল ফোনের জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়। এর আগে বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এর ব্যবহার শুরু হলেও তা ছিল খুবই সীমিত পরিসরে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে মােবাইল ফোনের গঠনপ্রণালিও ক্রমশ উন্নতির পথে এগিয়ে চলেছে। মাত্র ১০/১২ বছরের ব্যবধানে এর আকৃতিতে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। বর্তমানে ছােট আকারের বিভিন্ন ধরনের মােবাইল সেট সহজলভ্য। এসব সেটে প্রযুক্তিগত সুবিধাও অনেক। এসব সেটের মাধ্যমে কথা বলা ছাড়াও ইন্টারনেট ব্যবহার, গান শােনা, ছবি তােলা, ভিডিও করা, কথা রেকর্ড করাসহ প্রয়ােজনীয় অনেক কাজ করা যায়। মােবাইলের গঠনপ্রণালির এক একটি ধারাকে বলা হয় ‘জেনারেশন’। এভাবে তিনটি ধারা পার করে দিয়ে বর্তমানে পঞ্চম ‘জেনারেশন’-এর মােবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা ও টেলিভিশন দেখারও সুযােগ রয়েছে। বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। মোট জনসংখ্যার বিরাট অংশ এখন মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা সাড়ে ১৬ কোটি ছাড়িয়েছে। তাদের মধ্যে গত এক বছরে যুক্ত হয়েছেন ৮০ লাখ নতুন গ্রাহক। 

মােবাইল ফোনের গুরুত্বঃ 

 বর্তমান সময়ে একে অন্যের সাথে দুত যােগাযােগের সহজ মাধ্যম মােবাইল ফোন। সাম্প্রতিক সময়ে মােবাইল ফোনে ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথ্য আদান প্রদানসহ ভিডিও চিত্র বিনিময় সম্ভব হয়েছে। মােবাইল ফোনের মাধ্যমে এখন চলতি পথে গল্পের ফাকেও অতি সহজে জেনে নেয়া সম্ভব হচ্ছে সর্বশেষ সংবাদ। দূরের কাউকে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে চিঠি বা Message পাঠানাে সম্ভব হচ্ছে মুঠোফোনের কল্যাণেই। ঘড়ি, ক্যালকুলেটর, গেমসসহ নানা কাজে এখন মােবাইলের ব্যবহারই জনপ্রিয়। তাই দৈনন্দিন জীবনে মােবাইল ফোনের গুরুত্ব অপরিসীম। মিনিটের মধ্যেই পাবলিক পরীক্ষার মতাে বড় বড় পরীক্ষার ফলাফল পরিক্ষার্থী ঘরে বসে পাচ্ছে শুধু মােবাইলের জাদুর কাঠির সুবাদেই। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা, চাকরির পরীক্ষার ফরম পূরণ ইত্যাদি কাজও করা যাচ্ছে মােবাইল ফোন ব্যবহার করে। তাই মােবাইল ফোনের ব্যবহারিক গুরুত্ব যে কোনাে মানুষের কাছেই সর্বাধিক। 

বাংলাদেশে মােবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানঃ 

১৯৯২ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশে মােবাইল ফোন চালু হলেও মানুষের নাগালে পৌছাতে ২০০০ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। বর্তমানে আমাদের দেশে গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি এক্সিয়াটা, এয়ারটেল ও টেলিটক— এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠান মােবাইল ফোন সেবা দিচ্ছে। এসবের মধ্যে একমাত্র টেলিটক সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। কল রেট নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রতিযােগিতা চলে বলে সাধারণ গ্রাহকরা তাদের পছন্দের সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বেছে নেওয়ার সুযােগ পায়। সেট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলাে- স্যামসাং, সিম্ফনি, নোকিয়া , অত্রো, লাভা, মটোরােলা, সনি এরিকসন এবং বিভিন্ন চায়না প্রতিষ্ঠান। 

যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে মোবাইল ফোনঃ 

 মোবাইল ফোন সমগ্র পৃথিবীকে হাতের মুঠোর মধ্যে বন্ধি করেছে। মোবাইল ফোনের সাহায্যে মানুষ দূরদূরান্তে অবস্থানকারী আত্মীয়-স্বজনদের সাথে মুহূর্তে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারছে। মোবাইল ফোন সুবিধা হলো এটি সবসময় সঙ্গে করে বয়ে নেওয়া যায়। বিপদে আপদে প্রিয়জনদের খোঁজখবর নেওয়া যায়। মোবাইল ফোন আবিষ্কারের পূর্বে বিদেশে অবস্থানরত আত্মীয়-স্বজনদের খবর জানা সময়সাপেক্ষ , কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল ব্যাপার ছিল। এখন মুহূর্তের মধ্যে যেকোনো সময় আপনজনদের সাথে কথা বলে তাদের সার্বিক অবস্থান সম্পর্কে অবহিত যায়। মোবাইলে শুধু কথাই না এসএমএস এর মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত সংবাদ মুহূর্তেই পৌঁছে দিতে পারে। 

মােবাইল ফোনের সুফলঃ 

মােবাইল ফোন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হওয়ায় পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি লােক প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে নানা সুবিধা ভােগ করছে। জীবনে গতি আনতে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে মােবাইল ফোন। নিচে মােবাইল ফোনের নানা সুফল তুলে ধরা হলাে 

(ক) যােগাযােগের মাধ্যম : মােবাইল ফোন সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করছে যােগাযােগের মাধ্যম হিসেবে। মােবাইল ফোনের মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনাে প্রান্তের যেকোনাে ব্যক্তির সাথে সরাসরি যােগাযােগ করা যায়। পৃথিবীর সকল মানুষকে মােবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় এনে বিশ্বগ্রাম (Global Village) গড়ে তােলার প্রক্রিয়া চলছে। পৃথিবীর সকল মানুষের মধ্যে মােবাইল ফোন পরােক্ষভাবে ভ্রাতৃত্ববােধ সৃষ্টি করে চলেছে। 

(খ) ইন্টারনেট সেবা : যেকোনাে স্থান থেকে বিশ্বের বিভিন্ন ঘটনা জানার জন্য মােবাইল ফোনে ইন্টারনেট সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। মােবাইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের যেকোনাে ঘটনা ও তথ্য প্রত্যন্ত গ্রামে বসেও জানা সম্ভব। মােবাইলে ইন্টারনেটের ব্যবস্থা থাকায় মানুষ গতিশীল ও আধুনিক হয়ে উঠেছে। 

(গ) তথ্য আদান-প্রদান : মােবাইলের মেসেজ অপশন থেকে সহজেই বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদান করা যায়। এতে বিশেষ কিছু কথা মুখে না বলে মােবাইলের মাধ্যমে বার্তা প্রেরণ করে অন্যকে জানানাে সম্ভব হয়। 

(ঘ) ব্যাংকিং আদান-প্রদান : আগে মানুষকে বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, গ্যাস বিল দেওয়ার জন্য ব্যাংকে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হতাে। এ সমস্যা সমাধানের সহজ পথ বের করে দিয়েছে মােবাইল ফোন। এখন দেশের যেকোনাে প্রান্ত থেকে মােবাইল ফোনের মাধ্যমে এসব বিল পরিশােধ করা সম্য হচ্ছে, যা মানুষের সময় ও অর্থকে সাশ্রয় করছে। 

(ঙ) কর্মসংস্থান সৃষ্টি : বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মােবাইল ফোন কোম্পানিগুলােতে বহু লােকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। যেমন বাংলাদেশে ছয়টি মােবাইল ফোন কোম্পানিতে প্রায় পাঁচ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। তাছাড়া আরও কয়েক লাখ লােক পরােক্ষভাবে ব্যবসা করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে। 

(চ) হিসাব-নিকাশ : মােবাইল ফোনে ক্যালকুলেটরের ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে যেকোনাে প্রয়ােজনীয় মুহূর্তে ছােটখাটো হিসাবনিকাশ মােবাইল ফোনের মাধ্যমে করা সম্ভব হচ্ছে। 
 
(ছ) ভিডিও ও ক্যামেরা : মােবাইল ফোনের আধুনিক মডেলগুলােতে ভিডিও এবং ক্যামেরা আছে। ফলে দূরে কোথাও বেড়াতে গেলে এখন আর আগের মতাে ক্যামেরা নিতে হয় না। ক্যামেরা থেকে শুরু করে ভিডিও রেকর্ডিং পর্যন্ত মােবাইল ফোনের মাধ্যমে করা যায়।

(জ) বিনােদন : কর্মময় জীবনের একঘেয়েমি দূর করে অবসর বিনােদনের জন্য মােবাইল ফোনে বিশেষ ব্যবস্থা আছে। এখন মেমােরি কার্ডে অডিও ও ভিডিও গান সংরক্ষণ করে রাখা যায়। ফলে অবসরে মনে আনন্দ দিতে মােবাইল ফোন বন্ধুর মতাে কাজ করে। 

মােবাইল ফোনের কুফলঃ 

ভালাে-মন্দ নিয়েই পৃথিবীর সকল কিছুর সৃষ্টি। প্রতিটি যন্ত্রের মাঝে তার ভালাে দিক যেমন আছে, তেমনি খারাপ দিকও আছে। মােবাইল ফোনের ব্যবহার বৃদ্ধির যেমন কিছু সুফল রয়েছে তেমনি নিম্নোক্ত কুফলও বহন করছে। 

 (ক) আর্থিক অপচয় : মােবাইল ফোনের মাধ্যমে মানুষ যেমন সচ্ছল হচ্ছে, তেমনি কিছু মানুষ দারিদ্রের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। মানুষ ধার-দেনা করে মােবাইল ফোন কিনছে, আবার অনেকে বিশেষ করে যুবসমাজ অকারণে মােবাইলে টাকা অপচয় করছে। 
 
(খ) অপরাধ বিস্তার : মােবাইল ফোন এমন একটি যন্ত্র যার সাহায্যে সামনে না এসেও সরাসরি কথা বলা যায়। ফলে সন্ত্রাসীরা সহজেই নিজেদের মধ্যে যােগাযােগ রক্ষা করতে পারে। তাছাড়া মােবাইল ফোনের সহায়তায় সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমেইল প্রভৃতি অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। 
 
(গ) রােগব্যাধি বিস্তার : প্রতিটি ইলেকট্রনিক যন্ত্রের মাধ্যমে কিছু রােগব্যাধির বিস্তার ঘটে। বুক পকেটে বা মাথার নিচে মােবাইল রাখলে এর ক্ষুদ্র তরঙ্গ মানুষের বুকে ও মস্তিষ্কে নানারকম রােগের জন্ম হয়। তা ছাড়া স্ক্রিনের আলাে চোখের ক্ষতি সাধন করে। 

 (ঘ) লেখাপড়ার ক্ষতি : বিভিন্ন মোবাইল ফোন কোম্পানি লাভবান হাওয়ার জন্য লোভনীয় অফার দিচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীরা এসব সুবিধা ভোগ করতে গিয়ে বা রাত জেগে কথা বলে লেখাপড়ার ক্ষতি সাধন করছে। 

 (ঙ) যুবসমাজের অবক্ষয় : মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যুবশ্রেণী অশ্লীল ভিডিও দেখে তাদের মূল্যবোদের অবক্ষয় সাধন করছে। বর্তমানে যুবসমাজ মোবাইল ফোনের ভালোর দিকের চেয়ে খারাপ দিকই বেশি গ্রহণ করছে। 

মোবাইল ফোন প্রেক্ষাপট বাংলাদেশঃ 

 বাংলাদেশে গ্রামীণ, বাংলালিংক, রবি, টেলিটক ও এয়ারটেল এই পাঁচটি মোবাইল ফোন কোম্পানির নেটোওয়ার্ক রয়েছে। এসব কোম্পানি নিরলসভাবে সেবা দিয়ে আসছে। বিগত কয়েক বছর ধরে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো পূর্বের তুলনায় তাদের কলরেট কমিয়ে আনলেও এতে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকার। সরকার দফায় দফায় মোবাইল ফোনে কল ও ইন্টারনেটের খরচ প্রতি বাজেটে বাড়িয়ে আসছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে সেবার বিপরীতে সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। 

উপসংহারঃ মোবাইল ফোন সভ্যতার চেহারাকে পাল্টে দিয়েছে। মোবাইল ফোন মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখছে। মোবাইল ফোন আধুনিক প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ এক অবদান। বর্তমানে মোবাইল ফোন ছাড়া আমরা এক মুহূর্ত চিন্তা করতে পারি না। প্রযুক্তি ব্যবহারে আমাদের সর্বোচ্চ সচেতন থাকা উচিত। প্রযুক্তির অবদান মোবাইল ফোনকে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে। মোটকথা, প্রযুক্তির যথাযত ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে আমাদের জীবন ও জগৎ আরও বেশি সহজ ও সুন্দর হয়ে উঠতে পারে।
হাবিবা আফরিন

আমার নাম হবিনা আফরিন । ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি আমার শখ। sorolmanus.com আমার সেই শখ পুরণে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আশা করছি আমার লেখার মাধ্যমে আপনারা উপকৃত হবেন। সবাই আমার ও আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads