ভোক্তা অধিকার অভিযোগ করার নিয়ম

ভোক্তা অধিকার অভিযোগ করার নিয়ম

ভোক্তা অধিকার অভিযোগ করার নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। বক্তা অধিকারের নিয়ম পাশাপাশি আইন সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণে আমরা অনেকেই এ ব্যাপারে উপযুক্ত জায়গায় অভিযোগ করতে পারি না। আজকে আমরা ভোক্তা অধিকার অভিযোগ করার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব। ভক্ত হিসেবে আপনার কি অধিকার রয়েছে এবং কিভাবে কোথাও প্রতারিত হলে সেটার অভিযোগ জানাবেন তার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া আপনাদের জানিয়ে দেবো। আশা করছি ভোক্তা অধিকার অভিযোগ করার নিয়ম সম্পর্কে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক কাজে লাগবে। 

ভোগ করার সাথে ভোক্তার সম্পর্ক। অর্থনীতির ভাষায় বলতে গেলে  দ্রব্য ভোগ করার জন্য ব্যক্তি যখন অর্থ ব্যায় করতে প্রস্তুত থাকে অথবা যে ব্যাক্তি ভোগ করে সেই হলো ভোক্তা।ভোক্তারা একটি দেশের অর্থনৈতিক ব্যাবস্তা সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। 

ভোক্তা অধিকার কিঃ

একজন ব্যক্তি ভোক্তা হওয়ার জন্য তাকে দ্রব্য জন্য অর্থ বিনিময়, ভোগ করতে হবে।একজন ভোক্তা যখন অর্থের বিনিময়ে কোনো কিছু ক্রয় করতে যাবে তখন উক্ত পণ্য সম্পর্কে জানা একজন নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।একটি পণ্য বা দ্রব্য সম্পর্কে জানার বিষয়গুলো হলো  পণ্যের উৎপাদনের সমায় কাল, মেয়াদোত্তীর্ণের সময়, পণ্যের গুণগত মান, পণ্য তৈরী র উপাদান ইত্যাদি। 

ভোক্তা কারা হবেন

ভোক্তা অধিকার একটি মৌলিক অধিকার। যা সংবিধানের অনুচ্ছেদে সুনিশ্চিত করা আছে।জাতীয় ভোক্তা অধিকার আইন অনুযায়ী একজন ব্যক্তি যখন  সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করে বা পুরোপুরি বাকিতে তথবা আংশিক মূল্য পরিশোধ করে আংশিক বাকি রেখে বা কিস্তি মাধ্যমে কোনো সেবা বা পণ্য ক্রয় করেন অথবা বানিজ্যিক উদ্দেশ্য কেনাবেচা করেন সেই ব্যক্তি হলো ভোক্তা। 

একজন ভোক্তা যেভাবে প্রতারিত হয়ঃ

ভোক্তাদের প্রতারিত হওয়া এখন  সচারাচরই দেখা যায়।ভেজাল পণ্য বিক্রিয়, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রিয়, পণ্য গায়ে অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন বা বেশি মূল্যে বিক্রি ইত্যাদি। 

হোটেল রেস্তোরাঁ গুলোতে অস্বাস্থকর পরিবেশ খারাব তৈরী, পচা বাসি খাবার বিক্রি, খাবার আকর্ষনীয় করে ক্ষতিকর রং ব্যাবহার কারা,রান্নায় নষ্ট ও পচে যাওয়া সবজি ব্যবহার  ইত্যাদি। 

কাপড়ের দোকান গুলোতে মিথ্যা বলে অতিরিক্ত অর্থ নেয়া।

অসাধু ব্যাবসায়িরা পণ্য অন্যায় ভাবে  স্টক করে দেশে  বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে  পড়পণ্য দাম বৃদ্ধি করে ভোক্তাদের প্রতারিত করে থাকে।

ভোক্তা অধিকার আইন

সরকার ২০০৯ সালে ভোক্তা অধিকার আইন পাস করা হয়। যেখানে খাদ্য, চিকিৎসা, পণ্য, ওষুধ ও সেবা খাতের ভোক্তা অধিকার  নিশ্চিত করা হয়েছে।জেলা-উপজেলা পর্যায়ে জেলা ও অধীনস্থ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এই কাজগুলো করেন। দায়িত্বরত কর্মকতারা কিছু মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে অপরাধীদের বিচারকার্য পরিচালনা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ করে থাকেন।

 ভোক্তা অধিকার অভিযোগ করার নিয়মঃ

  • মহাপরিচালক, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ১ কারওয়ান বাজার (টিসিবি ভবন-৮ম তলা), ঢাকা, ফোন: +৮৮০২ ৮১৮৯৪২৫
  • জাতীয় ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্র,  টিসিবি ভবন- ৯ম তলা, ১ কারওয়ান বাজার ঢাকা, ফোন: ০১৭৭৭ ৭৫৩৬৬৮, ই-মেইল: nccc@dncrp.gov.bd  
  • উপ পরিচালক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, টিসিবি ভবন, বন্দরটিলা, চট্টগ্রাম, ফোন: +৮৮ ০২৩৩ ৩৩৪১২১২
  • উপ পরিচালক, রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, শ্রীরামপুর, রাজশাহী, ফোন: +৮৮ ০২৫৮ ৮৮০৭৭৪
  • উপ পরিচালক, খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, টিসিবি ভবন, শিববাড়ী মোড়, খুলনা, ফোন: +৮৮ ০২৪৭ ৭৭২২৩১১
  • উপ পরিচালক, বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, মহিলা ক্লাব ভবন, বরিশাল, ফোন: +৮৮ ০২৪৭ ৮৮৬২০৪২
  • উপ পরিচালক, সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, সিলেট ফোন: +৮৮ ০২৯৯ ৬৬৪৩৪৫৬
  • উপ পরিচালক, রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিউ ইঞ্জিনিয়ার পাড়া, রংপুর, ফোন: +৮৮ ০৫২১-৫৫৬৯১
  • প্রত্যেক জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।

ভোক্তা অধিকার অভিযোগ করার নিয়মঃ

  • দায়েরকৃত অভিযোগ অবশ্যই লিখিত হতে হবে।
  • ফ্যাক্স, ই-মেইল, ওয়েব সাইট, ইত্যাদি ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে; বা
  • অন্য কোন উপায়ে;
  • অভিযোগের সাথে পণ্য বা সেবা ক্রয়ের রশিদ সংযুক্ত করতে হবে।
  • অভিযোগকারী তাঁর পূর্ণাঙ্গ নাম, পিতা ও মাতার নাম, ঠিকানা, ফোন, ফ্যাক্স ও ই-মেইল নম্বর (যদি থাকে) এবং পেশা উল্লেখ করবেন।

ভোক্তা অধিকারবিরোধী  অপরাধগুলো হলোঃ


  •  নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বা সেবা বেচাকেনার প্রস্তাব করা বা বিক্রিয় করা
  • জেনেশুনে ভেজাল পণ্য/ঔষধ  কেনাবেচার প্রস্তাব করা বা বিক্রিয় করা
  • স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক কোনো নিষিদ্ধ দ্রব্য কোনো খাদ্যপণ্যের সাথে মেশানো ও বিক্রি করা।
  •  মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতা সাধারণ কে  প্রতারিত করা। 
  • প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় ও সরবরাহ না করা। 
  • ওজনে,  কারচুপি করা। ভোক্তা অধিকার 
  • কোনো নকল পণ্য বা ওষুধ উৎপাদন করা। 
  • মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করা।
  • নিষিদ্ধ ঘোষিত কোনো কাজ করা, যাতে সেবাগ্রহীতার নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে। 
  • অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াজাত করা। 
  • অবহেলা, দায়িত্বহীনভাবে সেবাগ্রহীতার অর্থ বা স্বাস্থ্যহানি ইত্যাদি ঘটানো। 
  • পণ্যের মোড়ক ব্যবহার না করা বা পণ্যের মোড়কের গায়ে খুচরা বিক্রয়মূল্য, মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ ইত্যাদি লেখা না থাকা।

প্রতারিত ভোক্তাদের অভিযোগ করার নিয়মঃ


অভিযোগ অবশ্যই লিখিত হতে হবে। হাতে, ই-মেইল অথবা টাইপ করে যেকোনো ভাবেই করা যাবে।পণ্য /সেবা কেনার দিম থেকে শুরু করে ৩০ দিনের মধ্যে ই অভিযোগ দায়ের করতে হবে এর পর করলে হবে না।ভোক্তা হিসেব কি ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত(ওজন,ভেজাল,বেশি দাম) সেটা উল্লেখ করতে হবে। সম্ভব হলে পণ্যের ছবি যোগ করা যাবে (আবশ্যক নয়)

আবশ্যিক করণিয়

অভিযোগ কারীর পূর্ণাঙ্গ নাম, পেশা, পিতা, মাতার নাম,ঠিকানা, ফোন নাম্বার, ইমেইল (আবশ্যক নয়) উল্লেখ করতে হবে। 

অভিযোগ কোথায় করবেন

১.প্রত্যেক জেলার ডিসি বা ইউএনও বরাবর। প্রত্যেক জেলার ডিসি আফিসে ভোক্তা অধিদপ্তরের শাখা আছে।
২.ই-মেইল (nccc@dncrp.gov.bd) উক্ত ঠিকানায় অভিযোগ লিখে বিলের কাগজের ছবি তুলে সেন্ট করলেই হবে।

৩.ডাকযোগাযোগ /সরাসরি এসে মহাপরিচালক, জাতীয়  ভোক্তা অধিকার- সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ১ কারওয়ান বাজার (টিসিবি ভবন ৮ তলা),ঢাকা।

vokta odhikar online complaint form

vokta odhikar online complaint form
vokta odhikar online complaint form


শাহীন

আমি শাহীন । পেশায় একজন ব্যবসায়ী । পাশাপাশি অনলাইনে কাজ করতে পছন্দ করি। আশা করছি আমার শেয়ারকৃত তথ্য থেকে আপনারা উপকৃত হচ্ছেন আর তা হলেই আমার পরিশ্রম স্বার্থক।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads