কাজী নজরুল ইসলাম। রচনা ও বাংলা প্রবন্ধ

কাজী নজরুল ইসলাম। রচনা ও বাংলা প্রবন্ধ
কাজী নজরুল ইসলাম

 কাজী নজরুল ইসলাম  রচনা

ভূমিকাঃ

থাকব না ক বদ্ধ ঘরে/দেখব এবার জগৎ টাকে
কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘুর্ণিপাকে।

অনেক খ্যাতিমান করির  কবিতায় বাংলা সাহিত্য, সমৃদ্ধি রয়েছে।কিন্তু কাজী নজরুল ইসলাম তাদের মধ্যে ব্যতিক্রম।তিনি বিদ্রোহী কবি, প্রেমের কবি,মানবতার কবি, আমাদের জাতীয় কবি।

যে কবির কবিতা পাঠে হৃদয়ে স্পন্দন জাগে, রক্তে তােলে শিহরণ, তিনি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।তিনি বিদ্রোহ ও তারুণ্যের কবি। তাঁর লেখনীতে লুকিয়ে ছিল সমগ্র ভারতবর্ষের মানুষের মুক্তির সংগ্রামের বাণী। তাঁর কিছু কিছু লেখনীতে তা প্রকাশ পেয়েছে সাবলীলভাবে। যা জন্য তাঁকে কারাবরণ করতে হয়েছিল। বাংলা সাহিত্যে ধূমকেতুর মতাে তার আবির্ভাব। অন্যায় অবিচার, জুলুম ও শােষণের বিরুদ্ধে তাঁর কবিতায় ধ্বনিত হয়েছে প্রচণ্ড বিদ্রোহ। তিনিই শুনিয়েছিলেন সংগ্রাম ও বিপ্লবের কথা। জাতিকে দেখিয়েছিলেন স্বাধীনতার স্বপ্ন। পচনধরা প্রথাগত সমাজকে ভেঙ্গেচুরে স্বাস্থ্যকর নতুন এক সমাজ নির্মাণ করাই তাঁর স্বপ্ন ছিল। তাই তিনি বিদ্রোহ করেছিলেন সকল অন্যায়, অসত্য, শোষণ-নির্যাতন আর দুঃখ-দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে ।

জন্ম ও শৈশবকালঃ

কাজী নজরুল ইসলাম ১১ই জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দে, ২৪শে মে ১৮৯৯ সালে ভারতের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন।পিতার নাম কাজী ফকির আহমদ এবং মাতার নাম জাহেদা খাতুন। দাদার নাম  কাজী আমিন উল্লাহ। শৈশবে মাত্র আট বছর বয়সে বাবাকে হারান। পিতার মৃত্যুর  পর  নজরুলের পরিবারে নেমে আসে  চরম আর্থিক অভাব-অনটন দুঃখ দারিদ্র। ফলে শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্থ। হয়। তখন থেকেই জীবিকা নির্বাহের জন্য তাকে কাজ করতে হয়। গ্রামের মক্তবে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর কিছুদিন স্থানীয় মাজারে খাদেম, মসজিদে ইমামতি ও মোল্লাগিরি করেন। নজরুলের জন্মের পূর্বে তার একাধিক ভাইবোন মারা যায়। এজন্য ছোটবেলায় তাঁকে তাঁর পিতামাতা “দুখু মিয়া” বলে ডাকতেন।মাদ্রাসায় কাজ করার সুবাদে নজরুলের ভিতর ইসলামের মৌলিক আচার-অনুষ্ঠানের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হবার সুযোগ পান যা পরবর্তীকালে তার সাহিত্যকর্মে বিপুলভাবে প্রভাবিত করে। খুব অল্প বয়সে তাঁর কবিত্বশক্তির প্রকাশ পায়। তিনি মুখে মুখে ছন্দ মিলিয়ে পদ্য রচনা করতে পারতেন। গ্রামের লেটোর দলে যোগ দিয়ে নজরুল গান গেয়েছেন, অনেক পালাগান রচনা করেছেন।

শিক্ষা জীবনঃ

ছোটবেলা থেকেই নজরুল ছিলেন মুক্তমনা। স্কুলের বাঁধাধরা জীবন তাঁর ভালো লাগতো না। তাছাড়া পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে তাঁর বেশি দূর পড়াশোনা করা হয়ে ওঠে নি। তার প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মীয়। স্থানীয় এক মক্তবে তিনি পড়াশুনা করতেন। নিন্ম মাধ্যমিক পাঠ শেষ করেন মক্তবেই। ১৯১০ সালে লেটো দল ছেড়ে স্কুল জীবনে ফিরে আসেন। এই নতুন ছাত্রজীবনে তার প্রথম স্কুল ছিল রাণীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ স্কুল (Searsole Raj High School), এরপর ভর্তি হন মাথরুন উচ্চ ইংরেজি স্কুলে (Mathrun N.C. Institution) যা পরবর্তীতে নবীনচন্দ্র ইনস্টিটিউশন নামে পরিচিতি লাভ করে। পারিবারিক আর্থিক সমস্যা তাঁকে বেশি দিন স্কুলে পড়তে দেয় নি। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর তাঁকে আবার কাজে ফিরতে হয়।  বাড়ি থেকে পালিয়ে তিনি মহকুমা শহর আসানসোলে গিয়ে রুটির দোকানে চাকরি নেন। রুটির দোকানের কাজের ফাঁকে নজরুল সুর করে গান গাইতেন পুঁথি করতেন। প্রতিভাবান বালক হিসেবে তাঁর গানে মুগ্ধ হয়ে আসানসোলের দারোগা কাজী রফিজউল্লাহ নিজ বাড়ি ময়মনসিংহ (Mymensingh) জেলার  ত্রিশালের দরিরামপুর স্কুলে (বর্তমান নাম ত্রিশাল সরকারি নজরুল একাডেমি ) সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি করে দেন। এখানে কিছুদিন পড়ালেখার পর নজরুল আবার গ্রামে ফিরে যান ভর্তি হন সিয়ারসোল রাজ হাই স্কুলে। সেখানে অষ্টম শ্রেণী থেকে পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯১৭ সালের শেষদিকে মাধ্যমিকের প্রিটেস্ট পরীক্ষার না দিয়ে তিনি সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগ দেন।

পারিবারিক জীবনঃ 

নার্গিস আসার খানম কবি নজরুল ইসলামের প্রথম স্ত্রী ছিলেন। ১৯২১ সালে কবির সাথে নার্গিসের বিয়ের দিন ধার্য হয়। বিয়ে সম্পন্ন হলেও কাবিনে ঘর জামাই থাকার শর্ত নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলে নজরুল বাসর সম্পন্ন না করে নার্গিসকে রেখে দৌলতপুর ত্যাগ করে কুমিল্লা শহরে বিরজাসুন্দরী দেবীর বাড়িতে চলে যান। আলী আকবর খানের সাথে পরিচিত হন। আলী আকবর খানের সাথে তিনি প্রথম কুমিল্লার বিরজাসুন্দরী দেবীর বাড়িতে আসেন। আর এখানেই পরিচিত হন প্রমীলা দেবীর সাথে। এরপর তাদের প্রনয় হয়। ২৫ এপ্রিল ১৯২৪ ( ১২ বৈশাখ ১৩৩১) কবি নজরুলের সাথে প্রমীলা দেবীর বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এটি ছিল কবি নজরুলের দ্বিতীয় বিয়ে। বিয়েতে কাজী হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক মইনুদ্দিন হোসেন। সাক্ষী হিসাবে কুমিল্লার আবেদনকারী আবদুস সালাম, সাংবাদিক মোঃ ওয়াজেদ আলী এবং কবি খান মুহাম্মদ মাইউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। বিয়ের পরে প্রমিলার নাম দেওয়া হয়েছিল “আশালতা”। এরপর প্রায় ১৫ বছর পরে নজরুলের সাথে নার্গিসের দেখা হলে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।

কর্মজীবনঃ

পারিবারিক আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে নজরুলকে অল্প বয়স থেকেই কাজের জন্য ছুটতে হয়েছিল। যে বয়স ছিল অবাধ চঞ্চলের, হাসি-খুশির সে বয়সেই কবিকে ধরতে হয়েছিল কর্মজীবনের হাত। পিতাকে হারানোর পর পরিবারের আর্থিক অবস্থা এতই খারাপ হয়ে পড়েছিল যে কবিকে মাত্র আট বছর বয়সে জীবিকা অর্জনের জন্য কাজে নামতে হয়েছিল। মক্তবের নিন্ম  মাধ্যমিকের পাঠ শেষ করার আগেই কবি সেই মক্তবেই শিক্ষকতা করেন। সেই সাথে হাজি পালোয়ানের কবরের সেবক এবং মসজিদের মুয়াযযিন হিসেবে কাজ শুরু করেন। তবে সেখানে তিনি বেশি দিন কাজ করেন নি। লেটো দল ছেড়ে আবার পড়াশুনায় মন দিলেও পরবর্তীতে তাকে আবার কাজে নামতে হয়। যোগ দেন বাসুদেবের কবি দলে। এর পর একজন খ্রিস্টান রেলওয়ে গার্ডের খানসামা এবং সবশেষে আসানসোলের চা-রুটির দোকানে রুটি বানানোর কাজ নেন। এভাবেই কষ্টে কেটেছিল জাতীয় কবি নজরুলের বাল্যকাল।

সৈনিক জীবনঃ

১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে উঠে সমগ্র ইউরোপে। নজরুল তখন দশম শ্রেণীর ছাত্র। যুদ্ধের আহ্বান শুনে  স্কুল থেকে পালিয়ে তিনি ৪৯ নম্বর বাঙ্গালি পল্টনে সৈনিক হিসেবে যোগ দিয়ে চলে যান করাচি। নিজ দক্ষতায় অল্পদিনের মধ্যে নজরুল হাবিলদার পদে উন্নীত হন। সেনা শিবিরে ব্যস্ততার মাঝেও তিনি সাহিত্য চর্চার চালিয়ে যান। করাচি থেকেই তিনি কলকাতার বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা পাঠান। তার প্রথম লেখা বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী নামে একটি গল্প এবং প্রথম কবিতা মুক্তি। সৈনিক থাকা অবস্থায় তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন। এ সময় নজরুলের বাহিনীর ইরাক যাবার কথা ছিল। কিন্তু যুদ্ধ থেমে যাওয়ায় আর যাননি। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে যুদ্ধ শেষ হলে ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্ট ভেঙে দেয়া হয়। এরপর তিনি সৈনিক জীবন ত্যাগ করে কলকাতায় ফিরে আসেন।

সাংবাদিক জীবনঃ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর নজরুল কলকাতায় এসে ৩২ নং কলেজ স্ট্রিটে বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে বসবাস শুরু করেন। এখান থেকেই তাঁর সাহিত্য-সাংবাদিকতা জীবনের মূল কাজ শুরু হয়েছিল। বিভিন্ন পত্রিকায় যেমন মোসলেম ভারত, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা,উপাসনা প্রভৃতি পত্রিকায় তাঁর বেশ কিছু লেখা প্রকাশিত হয় এবং এরই ধারাবাহিকতায় কবি ও সমালোচক মোহিতলাল মজুমদার পত্রিকায় তার খেয়া পারের তরণী এবং বাদল প্রাতের শরাব কবিতা দুইটি প্রশংসা করে একটি সমালোচনা প্রবন্ধ লিখেছেন। যার ফলে সাহিত্য ও সমালোচকদের মাঝে নজরুলের ঘনিষ্ঠ পরিচয় শুরু হয়। ১৯২১ সালের অক্টোবর মাসে তিনি শান্তিনিকেতনে যেয়ে রবীন্দ্রনাথের সাথে সাক্ষাৎ করেন। দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে। নজরুলের সাংবাদিকতা শুরু হয় ১৯২০ সালে। অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে প্রকাশিত  নবযুগ নামক একটি সান্ধ্য দৈনিক পত্রিকার নিয়মিত সাংবাদিকতা করতেন নজরুল। সওগাত পত্রিকার ১৩২৭ বঙ্গাব্দের বৈশাখ সংখ্যায় নজরুলের  প্রথম গান “বাজাও প্রভু বাজাও ঘন” প্রকাশিত হয়।

রাজনৈতিক জীবনঃ

সাহিত্যকর্ম ছাড়াও কবি নজরুল রাজনীতিতেও ছিলেন সক্রিয়। সৈনিক জীবন ত্যাগ করার পর তার মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ শুরু। তাঁর নেপথ্যে ছিলেন এদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন প্রতিষ্ঠার  অগ্রদূত মুজফ্‌ফর আহমেদ। তাঁরই হাত ধরে নজরুল বিভিন্ন সভা-সমিতি ও বক্তৃতায় অংশগ্রহন করতেন। রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব তাকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। যার স্পষ্ট রূপ ফুটে উঠে তার লেখা  সাম্যবাদী ও সর্বহারা কবিতায়। অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কবি নজরুল অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। এর কারণ, এই সংগ্রাম দুটি ভারতীয় হিন্দু মুসলমানদের সম্মিলিত সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল। ১৯২০ এর দশকের জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে পরাজয়ের মাধ্যমে কবির রাজনৈতিক জীবন থেকে সরে গিয়ে সাহিত্যের প্রতি মনোনিবেশ করেন।

কবির কাব্যপ্রতিভাঃ

কবি ১৯২০ সাল থেকে তার করিতা রচনা ও সাহিত্যে মন দেন।তিনি তার লেখার মধ্যে দেশের জনগণের মধ্যে এক চঞ্চলতা,উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারত।তিনি তার লেখার মাধ্যমে যুবগদের জাগিয়ে দিত,,তাদের চেতনাকে সজাগ করে দিত।তার এই ধরনের লেকার প্রতিভার কারনে তাকে কারাগারে ও থাকতে হয়েছে।

সাহিত্যকর্মঃ

কবি নজরুলের সাহিত্যকর্ম ছিল মাধুর্য্য, পান্ডিত্যে আর সংগ্রামে ভরা। নজরুল একধারে কবিতা, সঙ্গীত, গদ্য রচনা, গল্প ও উপন্যাসে পটু ছিলেন। নানান সময় তিনি দুঃখ বরণ করেও সাহিত্যচর্চা প্রাধান্য দিয়েছেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর কলকাতায় ফিরে এসে নজরুল পুরোপুরি সাহিত্যে মনোনিবেশ করেন। এ সময় ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন চলছিল। করাচি থেকে পাঠানাে কয়েকটি লেখা পূর্বে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশের কারণে নজরুল কলকাতার কবি-সাহিত্যিক মহলে সমাদৃত হন। তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’ প্রকাশিত হলে নজরুলের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘ব্যথার দান’ এবং প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অগ্নিবীণা’ ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয়। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ, গানসহ প্রায় পঞ্চাশটি গ্রন্থ রচনা করেন। এছাড়া নজরুলের ‘নবযুগ’, ‘ধূমকেতু’, ‘লাঙল, ‘গণবাণী’ পত্রিকা সম্পাদনা করেন। নজরুলের লেখায় নিপীড়িত মানুষের মুক্তির কথা ধ্বনিত হয়েছে। তাঁর ভাষায়

মহা বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রােল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না
অত্যাচারীর খড়গ-কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না।
বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।

নজরুলের গানের সংখ্যা চার হাজারের অধিক। নজরুলের গান নজরুল সঙ্গীত নামে পরিচিত।নজরুলের প্রথম গদ্য রচনা ছিল “বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী”। ১৯১৯ সালের মে মাসে এটি সওগাত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। নজরুল ছিলেন ঔপনিবেশিক আমলের কবি। তাই ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে তিনি কবিতা লিখেছেন। তাঁর কবিতা বাজেয়াপ্ত হয়েছে। কবিতা লেখার অপরাধে তিনি জেলে গেছেন। তবু তিনি পিছপা হননি, সত্য-সুন্দর-ন্যায়ের কথা বলেছেন, জাতিকে শুনিয়েছেন মুক্তির গান

প্রার্থনা করা যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাস,
যেন লেখা হয় আমার রক্ত লেখায় তাদের সর্বনাশ।

সাম্যের কবি নজরুল:

নজরুলের কবিতার একটি বিশেষ দিক হলো অসাম্প্রদায়িকতা। তাই তাকে সাম্যের কবি বলা হয়। এই পৃথিবীতে সকল মানুষ কে তিনি এক জাতি অর্থাৎ ধনী-গরিব, ধলো-কালো ভুলে গিয়ে এক মানুষ জাতি হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। এই সাম্যের জন্য তিনি অনেক কবিতা লিখে গিয়েছেন। তিনি তার কবিতায় বলেন,

“গাহি সাম্যের গান
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান”

তাছাড়া ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে হিন্দু-মুসলিম যে দাঙ্গা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে তিনি কলমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। তার কলম থেকে বেরিয়ে আসে,

“হিন্দু না ওরা মুসলিম
ঐ জিজ্ঞাসে কোন জন
কাণ্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ
সন্তান মোর মার”

তার জীবন শুরু হয়েছিল অকিঞ্চিতকর পরিবেশে। স্কুলের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। মুসলিম পরিবারের সন্তান এবং শৈশবে ইসলামি শিক্ষায় দীক্ষিত হয়েও তিনি বড় হয়েছিলেন একটি ধর্মনিরপেক্ষ সত্তা নিয়ে। একই সঙ্গে তার মধ্যে বিকশিত হয়েছিল একটি বিদ্রোহী সত্তা।

স্বদেশের কবি নজরুলঃ

কবি কাজী নজরুল ইসলাম সাম্য ও বিদ্রোহের কবি হিসেবে বেশি পরিচিতি লাভ করলেও স্বদেশের জন্যও তিনি কম কবিতা লেখেন নি। স্বদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তিনি লিখেন,

“একি অপরূপ রুপে হেরিনু মা তোমায় পল্লী-জননী
ফুলে ফসলে, কাদামাটি জলে ঝলমল করে লাবণী”

স্বদেশের জন্য কবি নজরুল অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। স্বদেশের স্বাধীনতা ও ইংরেজদের বিরুদ্ধে কবিতা লিখে মানুষদের সচেতন করার জন্য তাকে অনেকবার জেলে যেতে হয়েছে। তবু তার কলম থেমে থাকেনি। জেলে বসেই তিনি রচনা করেন আরও অনেক কবিতা। দেশের এতটুকু অসম্মানও তিনি কখনোও সহ্য করেননি। দেশের জন্য আত্মত্যাগে তিনি ছিলেন সর্বদা প্রস্তুত।

মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলামঃ

নজরুল ছিলেন মানবতার কবি। তার চোখে নারী-পুরুষ কোনো ভেদাভেদ ছিল না। নারী-পুরুষের এই ভেদাভেদ আজকের দিনের অনেকে মানতে না চাইলেও সেই সময় থেকেই নজরুল তা বুঝতে পেরেছিলেন। নজরুল তার কবিতায় বলেন,

“সাম্যের গান গাই

আমার চক্ষে পুরুষ রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই

বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যানকর

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর”

বিদ্রোহী নজরুলঃ

কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের উপর মানুষের অত্যাচার ও সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। নজরুল ইসলামের কবিতা দুই বাংলাতেই সমানভাবে সমাদৃত। তার কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। তার কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা হাতে তার প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তার প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে কাজেই “বিদ্রোহী কবি”।

নজরুলের সাহিত্যে সম্ভারঃ

১৯২০ সাল থেকে নজরুল পুরােপুরি সাহিত্য রচনায় মনােনিবেশ করেন। তাঁর প্রথম প্রকাশিত কবিতার নাম মুক্তি। কিন্তু যে কবিতা তাঁকে খ্যাতি এনে দেয় তার নাম ‘বিদ্রোহী’। পরবর্তীকালে তিনি বিদ্রোহী কবি হিসেবে সমধিক পরিচিতি লাভ করেন। নজরুল বাংলা সাহিত্যে এক নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেন। তিনি বাংলা গান ও কবিতা লেখার ধারাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছিলেন। তিনি তার কবিতায় বাংলা, ফারসি ও আরবি শব্দের সুন্দর প্রয়োগ দেখান যা অন্য কোনো কবির কবিতায় দেখা যায় না। তিনিই বাংলার বেশিরভাগ গজল ও ইসলামী গানের রচয়িতা। বাংলা সাহিত্যে ইসলামচর্চা তিনিই প্রথম শুরু করেন।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘বিদ্রোহী’ কবিতা লিখে সর্বপ্রথম খ্যাতি অর্জন করেন। তারপর তার লেখা কাব্য অগ্নিবীণা, বিষের বাশি, দোলনচাপা, ছায়ানট ইত্যাদি প্রকাশ পায় এবং তিনি বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। শিশুদের জন্য লেখা তার বিভিন্ন কবিতা যেমনঃ খুকি ও কাঠবিড়ালী, লিচু চোর, খাঁদু-দাদু ইত্যাদির জন্যও তিনি বিখ্যাত। আনন্দময়ীর আগমনে কবিতাটি রচনা করে তিনি ব্রিটিশ শাসকদের ব্যঙ্গ করেছিলেন। এ কারণে তাকে কারাবরণও করতে হয়েছে।

কবির অসুস্থতাঃ

সাংবাদিকতার পাশাপাশি নজরুল বেতারে কাজ করতেন। ১৯৪২ সালে কবি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন যার ফলে তিনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। এর জন্য তাঁকে জন্য হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা করানো হয় কিন্তু অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য কবিকে ইউরোপ পাঠানো সম্ভব হয়নি। ১৯৪২ সালের শেষের দিকে কবি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন এবং পরবর্তী 10 বছর অর্থাৎ ১৯৫২ সাল পর্যন্ত তিনি সপরিবারে নিভৃতে ছিলেন। ১৯৫৩ সালে নজরুল ও তার স্ত্রী প্রমীলা দেবীকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে পাঠানো হয়। লন্ডনে পৌঁছানোর পর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তার রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করেন। এবং বুঝতে পারলেন নজরুল এমন এক দুরারোগ্য রোগে ভুগছেন যা আরোগ্য লাভ করা ছিল প্রায় অসম্ভব। এরপর ১৯৫৩  সালে কবিকে আরো একবার পরীক্ষা করানো হয় এবং পরীক্ষায় চিকিৎসক নিশ্চিত হন যে কবি পিক্স ডিজিজ নামক একটি নিউরন ঘটিত সমস্যায় ভুগছেন এবং এই অবস্থা থেকে আরোগ্য করে তোলা অসম্ভব বলে জানান। এরপর  কবি রুম থেকে দেশে উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন।

বাংলাদেশে আগমনঃ

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশ বিজয় লাভ করার পর একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে।  ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে ১৯৭২ সালের ২৪শে মে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশ নিয়ে আসা হয়। বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এর বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এরপর বাকি জীবনট কবি বাংলাদেশে কাটান। ১৯৭৬ সালে কবি নজরুলকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদানের সরকারি আদেশ জারি করা হয়।

কবির প্রয়াণঃ

যথেষ্ট চিকিৎসা দেওয়া সত্ত্বেও নজরুলের স্বাস্থ্যের অবস্থার বিশেষ কোনো উন্নতি হয়নি। ১৯৭৪ সালে কবির সবচেয়ে ছোট ছেলে মৃত্যুবরণ করে। ১৯৭৬ সালের নজরুলের স্বাস্থ্যেরও অবনতি হতে শুরু করে এবং ঢাকার পিজি হাসপাতালে ভর্তি হন।  ২৯ আগস্ট ১৯৭৬ (১২ ভাদ্র ১৩৮৩) ঢাকার পিজি হাসপাতালে ৭৭ বছর বয়সে কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের উত্তর পার্শ্বে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয় বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে। তবে প্রমিলা দেবীর মারা যাওয়ার পূর্বে ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন তাঁর কবরের পাশে জায়গা যেন  স্বামীর জন্য রাখা হয়। কিন্তু প্রমিলার শেষ ইচ্ছাটা আর পূরণ হয় নি। প্রমিলা দেবীকে উল্লেখ সমাধিস্থ করা হয় চুরুলিয়ায় নজরুলের পৈতৃক বাড়িতে।

সংবধর্না,সম্মাননা ও পুরস্কারঃ

১৯২৯ সালে কলকাতা অ্যালবার্ট হলে নজরুলকে জাতির পক্ষ থেকে সম্মাননা জানানাে হয়। ১৯৩৮ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সম্মেলনে নজরুলকে সভাপতির পদে সমাসীন করে সম্মান দেখানাে হয়। ১৯৪৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় নজরুলকে ‘জগত্তারিণী’ স্বর্ণপদক প্রদান করে। ১৯৬০ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মভূষণ উপাধি দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৫ সালে তাঁকে ডি.লিট উপাধি প্রদান করা হয়। ১৯৭৬ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন।

বাংলাদেশঃ

কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হয়। রচিত “চল্‌ চল্‌ চল্‌, ঊর্ধগগনে বাজে মাদল” বাংলাদেশের রণসংগীত হিসাবে গৃহীত। বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে তার বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে। ১৯৭৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্মানসূচক পদক একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। নজরুলের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী প্রতি বছর বিশেষভাবে উদযাপিত হয়।  ঢাকায় কবির স্মৃতিতে নজরুল একাডেমি, বুলবুল ললিতকলা একাডেমী ও শিশু সংগঠন বাংলাদেশ নজরুল সেনা স্থাপিত হয়। কবির স্মরণে ঢাকার একটি সড়কের নামকরণ করা হয় কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ। তাছাড়া কবির নামে  ত্রিশালে (বর্তমানে ময়মনসিংহ জেলায়) একটি  সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। যা নাম জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।

ভারতঃ

১৯৪৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বাংলা সাহিত্যের সর্বোচ্চ পুরস্কার জগত্তারিণী স্বর্ণপদক নজরুলকে প্রদান করা হয়। ১৯৬০ সালে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণে ভূষিত করা হয়। চুরুলিয়ার আসানসোলে  ২০১২ সালে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে।কাজী নজরুল ইসলাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর  যা কবির নামকরণে রাখা হয়েছে। কলকাতার প্রধান একটি সড়ক কাজী নজরুল ইসলাম সরণি  কবির নামকরণে রাখা হয়েছে। কলকাতা মেট্রোর গড়িয়া বাজার মেট্রো স্টেশনটির নাম রাখা হয়েছে কবি নজরুল মেট্রো স্টেশন।

উপসংহারঃ

মানবতার কবি, সাম্যের কবি, সুন্দরের কবি, প্রেমের কবি নজরুল ইসলাম। ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি, আর হাতে রণতূর্য’– এ কেবল নজরুলের পক্ষেই বলা সম্ভব। কারণ, তিনি নিপীড়িত-লাঞ্ছিত মানুষের কথা ভেবেছেন। পরাধীন জাতির মুক্তির কথা বলেছেন। উপমহাদেশের ইতিহাসে একমাত্র নজরুলই কবিতা লেখার অপরাধে জেল খেটেছেন। নজরুল ছিলেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা। তাই বাংলাদেশ সরকার তাঁকে দিয়েছে আমাদের জাতীয় কবি’-র মর্যাদা।কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাঙালির গর্ব, বাঙালির প্রিয় কবি। তিনি তার সৃষ্টির দ্বারাই বাংলা সাহিত্যে অমরত্ব পেয়েছেন। বাঙালি জাতি চিরকাল তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। তাঁর সাহিত্য যুগ যুগ ধরে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে আমাদের প্রেরণা জোগাবে। নজরুল শুধু একটি সময়ের কবি নন। তিনি সব সময়ের সব মানুষের কবি। কাজী নজরুল ইসলাম খুব অল্প সময় সাহিত্য সাধনার সুযােগ পেয়েছিলেন। তার মধ্যেই তিনি রচনা করেছিলেন অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশী, চক্রবাক, দোলনচাঁপা, ফণীমনসা প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ এবং কুহেলিকা, মৃত্যুক্ষুধা প্রভৃতি উপন্যাস। তিনি প্রায় দুই হাজারের মতাে গান রচনা করেছেন। তাঁর গানের সুরের বৈচিত্র্য আমাদের মুগ্ধ করে। মানুষ এখনাে শ্রদ্ধা সহকারে তার গান শােনে।

হাবিবা আফরিন

আমার নাম হবিনা আফরিন । ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি আমার শখ। sorolmanus.com আমার সেই শখ পুরণে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আশা করছি আমার লেখার মাধ্যমে আপনারা উপকৃত হবেন। সবাই আমার ও আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads