বাংলাদেশের বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার। রচনা ও বাংলা প্রবন্ধ

বাংলাদেশের বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার
বাংলাদেশের বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার

ভূমিকাঃ

"শূন্য বিকেলে চেনা রাস্তায় বাড়ি ফেরার আগে
শিক্ষিত বুকে মাথা পেতে রোজ বেকারত্ব কাদে"।

কাজেই মুক্তি, কাজেই সমৃদ্ধি। কর্মহীন জীবন কফিনে ঢাকা লাশ।বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার একটি অন্যতম মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। দিন দিন বেকার সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে। কর্মক্ষম ব্যক্তির কর্মের অভাবকেই সমাজবিজ্ঞানের ভাষায় বেকারত্ব বলে। বেকারত্ব একটি দেশের অর্থনীতির উপর মারাত্মক চাপ তৈরি করে। বেকারত্ব জীবনের জন্য যেমন অভিশাপস্বরূপ, তেমনি জাতীয় জীবনের জন্য বিরাট বোঝা। বেকার মানুষ নানা অপকর্মে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে। বেকারত্বের কারনে পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়।

বেকারের সংজ্ঞাঃ

বেকার শব্দটি "কার" শব্দের পুর্বে  ফরাসি "বে" উপসর্গ যোগে  সৃষ্টি। যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে কর্মহীন। সাধারণ অর্থে যার কোনো কাজ নেই বা যে কোনো কাজ করে না সেই বেকার।

সমাজ বিজ্ঞানের ভাষায় -

"বেকার হচ্ছে তারা যারা সামাজিক অবস্থায় যথেষ্ট কর্মদক্ষ হয়ার বিপরীতে কাজ পায় না।"

অর্থনীতির দৃষ্টিতে -

"কাজ করার যোগ্যতা ও ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কর্মসংস্থান বা কাজের সুযোগ না থাকাকে বেকারত্ব বলে।"

আর যে বা যারা কাজের সামর্থ ও ইচ্ছে থাকার পরেও কাজের সুযোগ পায় না তারাই বেকার।তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সাধারণত বেকার বলতে আমার দুই শ্রেণিকে বুঝি।

ক)ইচ্ছে ও সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যারা কাজের সুযোগ থেকে বঞ্চিত 

খ)সামর্থ্য ও সুযোগ থাকার পরেও যারা কাজ করে না।

সাধারণত কর্মহীনকে বেকারত্ব বলে।সমাজ বিজ্ঞানের দৃষ্টি কোন হতে বেকারত্ব বলতে এমন এক পরিস্থিতিকে বোঝায়,যাতে কর্মক্ষম ব্যাক্তি বর্তমান মজুরিতে   কর্মে ইচ্ছুক থাকা সত্ত্বেও কর্মে নিয়গ লাভ করতে সক্ষম নয়।

অধ্যাপক পিগু বেকারত্ব সম্পর্কে বলেন-

"এখন কর্মক্ষম লোকেরা যোগ্যতা অনুসারে প্রচলিত মজুরির ভিত্তিতে কাজ করতে চায় অথচ কাজ পায় না সেই অবস্থা কে বেকারত্ব বলে।"

বাংলাদেশে বেকারত্বের চিত্রঃ

"সারাদিন লাইনে দুই পায়ে দাঁড়িয়ে 
আশার হাত বাড়ায়ে
তবুও চাকরির খোঁজ নাইরে,,,,"

বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপুর্ন দেশ।এখানে পর্যাপ্ত শিল্প কারখানা নেই।বেসরকারি কর্মসংস্থান ও সরকারি চাকরির সীমিত সুযোগের কারনে এই দেশের কর্মক্ষম অধিকাংশ মানুষ কাজ খুঁজে পাচ্ছে না।পরিসংখ্যান অনুসারে,দেশে কর্মক্ষম লোকের ২৭.৯৫ শতাংশ বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত।বাংলাদেশের বেরার সমস্যার একটি বড় বৈশিষ্ট্য হল জনসংখ্যার একটি বড় অংশ মৌসুমি বা প্রচ্ছন্ন বেকার।যাদের স্রা বছর কাজ থাকে না,বছরের বিশেষ সময়ে কাজ করেন তাদেরকে মৌসুমি বা প্রচ্ছন্ন বেকার বলে।

বেকারত্বের কারনঃ

বাংলাদেশের বেকারত্বের নানবিধ। অর্থনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ।  উন্নয়নশীল দেশ হাওয়ার কারনে এ দেশে বেকার সমস্যা বাড়ছে ব্যাপক ভাবে। বাংলাদেশের বেকারত্বের  কারন নিচে তুলে ধরা হলঃ

১. শিল্পায়নের অভাব:

আমাদের বাংলাদেশ কৃষির উপর নির্ভরশীল একটি দেশ। শিল্পায়নের সুযােগ এখানে সীমিত। তাই অশিক্ষা ও দারিদ্রের পাশাপাশি পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাবে বাংলাদেশে বেকারত্ব দিন দিন বাড়ছে।

২. সমন্বয়হীন শিক্ষাব্যবস্থা:

বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি মুল কারন হল আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সমাজব্যবস্থার সমন্বয়হীনতা। অর্থাৎ, আমাদের শিক্ষা মােটেও কর্মমুখী নয়।

৩. পিতৃপেশায় অনিহা:

আমাদের দেশের শিক্ষিত তরুণরা শিক্ষা লাভের পর কেউ পিতৃপেশায়, যেমন- কৃষি, চাষাবাদ, কুটির শিল্প ইত্যাদি কাজে আর ফিরে যেতে চায় না। ফলে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৪. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন:

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যতই উন্নত হচ্ছে ততই বাড়ছে বেকারত্ব। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নব নব আবিষ্কার, অনেকের হাতের কাজ একজনকে দিয়ে করার মতাে প্রযুক্তির প্রয়ােগের ফলে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৫. অদক্ষ যুবসমাজ:

বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা যেমন কর্মমুখী নয় তেমনি বর্তমান যুবসমাজের কর্মমুখী হাওয়ার প্রয়াস খুবই কম। তারা শুধু কোনভাবে পরীক্ষায় পাশকে চাকরি পাওয়ার মুল হাতয়ার মনে করে থাকে। কিন্তু নিজেকে কখনো কর্মক্ষম করার চেষ্টা করে না। যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে অদক্ষ যুবসমাজ শিকড় অনেক গভিরে।বাংলাদেশে বেকারত্বের অভিশাপের সৃষ্টির অন্যতম কারণ দীর্ঘদিনের ঔপনিবেশিক শাসন শোষণ ও বঞ্চনা। ইংরেজ ঔপনিবেশিক শক্তি এ দেশের প্রচলিত শিল্পকে ধংস করে নিজের পন্য বাজারে পরিনত করেছিল।পাকিস্তানি শাসনের প্রভাবে ও এ দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি ধংস হয়েছে।তাদের শাসন ও শোষণ বাংলাদেশে এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে।

৭.জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে কর্মসংস্থান বাড়ছে না:

প্রতি বছর যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সে অনুপাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছেনা। কর্ম সুযোগ হ্রাস ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির এই অসম অনুপাত বেকারত্বকে বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। 

৮.কুটিরশিল্পের ধস:

ঐতিহাসিক ভানে বাংলাদেশের কুটিরশিল্প ছিল ঐতিহ্যবাহী।এ দেশের কামার, কুমার,কাসারি,শাখারি,তাত,বাশ,ও বেদজীবি মানুষেরা নীরবে নৃভিতে নিজ নিজ চিরাচ্রিত পেশায় নিয়জিত ছিল।কিন্তু যন্ত্রসভ্যতা, শিল্পবিপ্লব এবং যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এ দেশের কুটিরশিল্প বিলুপ্তির পথে।ঐতিহ্যবাহী দেশিয় পন্যের বদলে দিন দিন কল কালকারখানার পন্যের চাহিদা বাড়ছে।ফলে কুটিরশিল্পের সাথে জড়িত পেশাজীবিরা কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পরছে।

৯.প্রাকৃতিক দুর্যোগ:

বাংলাদেশের মানুষের নিত্যসঙ্গী নানা প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ।বন্যা,খড়া,নদী ভঙন প্রভৃতি দূর্যোগ কৃষিকাজ ব্যহত করে।এবং গ্রামীণ জীবনে বেকারত্ব ডেকে আনে।বিশেষ কিরে নদী ভঙনের ফলে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ জমি জমা,ঘর-বাড়ী হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পরে।জীবিকার প্রয়োজনে তাদের ভিক্ষাবৃত্তি ও দিনমজুর প্রভৃতিতে লিপ্ত হতে হয়।

১০.কায়িকশ্রমের অবমুল্যায়ন:

আমাদের দেশে শারিরীক শ্রমকে অশিক্ষিত, মূর্খদের কাজ বলে বলে মনে করা হয়।ফলে লেখাপড়া করে অফিস -আদালদের বাইরে শারিরীক শ্রমুলক কাজে আত্মনিয়গ করার কথা কেউ ভাবতেই পারে না।অনেকে শারীরিক কাজ করাকে অসম্মানজনক মনে করে।তারা কাইক শ্রমের কাজের চেয়ে বেকার থাকতে বেশি পছন্দ করে।এমন ভুল মানসিকতা বেকারত্ব বাড়ার অন্যতম কারণ। 

১১.নষ্ট রাজনীতি:

বেকারত্বর অন্যতম কারণ নষ্ট রাজনীতি। স্বৈরশাসন,গনতন্ত্রহীনতা,দূর্বল নেতৃিতের প্রভানে দেশে নষ্ট রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।দলের কর্মী সমর্থক বাড়ানোর নাম করে যুবকদের কর্মবিমুখ, চাদাবাজ,সন্ত্রাসী হিসেবে গড়ে তুলে তাদের কর্ম উজ্জল ভবিষ্যতের কবর রচনা করে।

বাংলাদেশে বর্তমানে একদিকে অশিক্ষা বা শিক্ষাবঞ্চিত তরুণ; অন্যদিকে শিক্ষিত অথচ অদক্ষ যুবসমাজ- এ দুই বিপরীতমুখী স্রোতধারা বেকারত্বের সমস্যাকে ভয়াবহ রূপ দিয়েছে, দেশের ভবিষ্যৎকে করে তুলছে অন্ধকারাচ্ছন্ন। বাংলাদেশের মতাে একটি উন্নয়নশীল দেশে কর্মক্ষম অথচ কর্মহীন জনগােষ্ঠী সার্বিক অর্থনীতির ওপর মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

বেকারত্বের প্রকারভেদ বা ধরনঃ

বেকারত্বের প্রকারভেদ অনেক ধরনের হতে পারে। সমাজবিজ্ঞানের ভাষায় স্থায়ী বেকারত্ব, অস্থায়ী বেকারত্ব, সাময়িক বেকারত্ব, ছদ্মবেশী বেকারত্ব ইত্যাদি নানারকম কথা বলা হয়েছে। মূলধন ও পুঁজির অভাবে আমাদের দেশে বড় ধরনের কোন শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে না।  স্বল্পপুঁজির ব্যবসাও আমাদের দেশের নানা আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে মার খায়। ফলে কর্মসংস্থানের তীব্র অভাবে দেশের যুবশক্তির বিরাট অংশ দীর্ঘকাল বেকারত্বের দায়ভার কাঁধে নিয়ে ধুকে ধুকে দিন কাটাচ্ছে। নির্দিষ্ট কাজে প্রয়ােজনের অতিরিক্ত শ্রম বিনিয়োেগই প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব। আমাদের দেশে কৃষিক্ষেত্রে এই বেকারত্ব বর্তমান। কোনাে – কোনাে ক্ষেত্রে বছরের মাত্র কয়েক মাস কাজ থাকে, বাকি সময় কাজ থাকে না। এ ধরনের বেকারত্বকে সাময়িক বেকারত্ব বলে। 

মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে ছদ্মবেশী বেকার দেখা যায় বেশি। তারা উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি জড়িত নয়, কিন্তু পরােক্ষভাবে তাদের অবদান আছে। এ ধরনের বেকারত্বকে ছদ্মবেশী বেকারত্ব বলে। আমাদের দেশে একএক মৌসুমে এক-একরকম কাজের বা লােকের চাহিদা থাকে। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সেই বিশেষ ধরনের কাজের কোননা সুযােগ থাকে না। এরকম বেকারত্ব মৌসুমি বেকারত্বের পর্যায়ে পড়ে। বেকারত্ব যে ধরনের হােক না কেন, তা কখনাে কাক্ষিত নয়। বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। উচ্চ শিক্ষিত তরুণ যােগ্যতা অনুসারে চাকরি পাচ্ছে না, কিংবা পছন্দের পেশায় চাকরি হচ্ছে না এরকম বেকার সবচেয়ে বেশি। চাকরি দ্বারা বেকার সমস্যা সমাধানের সুযােগ যে অল্প, তা  কাউকে বুঝিয়ে বলার প্রয়ােজন নেই। প্রতিযােগিতার এই মার্কেটে যােগ্য ও দক্ষ লােকের অভাব নেই। সবাই চায় আকর্ষণীয় চাকরি। কিন্তু দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাব। তাই দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশে বেকারত্বের হারঃ

দক্ষিণ এশিয়া দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বেকারত্বের হার বাংলাদেশেই বেশি। ২০১০ সালের পর থেকে প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা ও ভুটান এ হার কমিয়ে এনেছে। ভারতে স্থিতিশীল রয়েছে। তবে বেড়েছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নেপালে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০১৩ সালে বাংলাদেশে  বেকারত্বের  হার ছিল ৪.৪ শতাংশ।বেকারত্বের দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। আইএলওর হিসেব মতে বাংলাদেশে সবচেয়ে কম বেকারত্বের হার ছিল ২০১০ সালে। আর এর সংখ্যা ছিল ২০ লক্ষ। ২০১২ সালে ছিল ২৪ লাখ। ২০১৬ সালে তা ২৮ লাখে উঠেছে। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ৩০ লাখে ওঠার আশঙ্কা করছে আইএলও।

বেকারত্বের প্রভাব ও ফলাফলঃ

যেকোনো দেশের জন্য বেকারত্বের সমস্যা হুমকিস্বরূপ। আর সে দেশ যদি হয় উন্নয়নশীল তাহলে তার প্রভাব হয় অতি ভয়ংকর। দেশের যুব সমাজের বড় একটি অংশ বেকার। এর মধ্যে শিক্ষিত বেকার বেশি। দীর্ঘ দিন বেকার থাকার ফলে তার ভিতর হতাশার সৃষ্টি হয়। আর কেউ কেউ এই হতাশা থেকে বের হতে গিয়ে ভুল পদক্ষেপ নিয়ে ফেলে। অনেকে নিজেকে অসামাজিক ও খারাপ কাজে জড়িয়ে ফেলে। ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অন্যায় বেড়ে যায়। যার প্রভাব পরে দেশ ও ওই পরিবারের উপর। যে যুব সমাজ দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে সচল রাখার কথা, সে যুব সমাজ কর্মের অভাবে দুকে দুকে দিন কাটাচ্ছে। অসচ্ছল পরিবার থেকে একজন বেকারকে পেতে হয় লজ্জা আর হীনতা। আর দিন দিন বেকারত্বের হার বেড়ে যাওয়ার কারনে দেশের অর্থনৈতিক শক্তি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।

বেকার সমস্যার সমাধানঃ

বেকারত্ব আমাদের সমাজের একটি অভিশাপ। এর ফলে অসংখ্য আর্থসামাজিক সমস্যার  সৃষ্টি  হচ্ছে।তাই এই সমস্যা সমাধানের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে  কাজ করতে হবে।গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ১৫(ঘ) অনুচ্ছেদে কর্মসংস্থানের নিশ্চিয়তার অধিকার তথা প্রত্যেক নাগরিকের কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করা একটি আদর্শ ও  কল্যাণমুখি রাষ্ট্রের দ্বায়িত্ব বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে অবশ্যই রাষ্ট্রকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। সে জন্য যেসব পদক্ষেপ নেয়া জরুরি তা নিচে আলোচনা করা হলো :

ক)কর্মমুখী শিক্ষাব্যাবস্থা :

ঔপনিবেশিক ধ্যান ধারণা থেকে বের হয়ে এসে দেশে যুগোপযোগী কর্মমুখী, কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটালে প্রযুক্তিবিজ্ঞান সম্পন্ন মানবসম্পদ তৈরী হবে।এরা দেশ বিদেশে উৎপাদনশীল খাতে খুঁজে পাবে কাজের অফুরন্ত সুযোগ। স্বল্পমেয়াদী, দীর্ঘমেয়াদি কারিগরি প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে পারলে স্ব_কর্ম সংস্থানের ক্ষেত্রে বিস্তৃত হবে।

খ)কৃষির সাথে বিকল্প কর্ম সৃষ্টি :

কৃষি কাজে নিয়জিত মৌসুমি ও প্রচ্ছন্ন বেকারদের জন্য কুটিরশিল্প ভিত্তিক বিকল্প কাজ সৃষ্টি করতে হবে।দেশের ভেতরে ও বিদেশে কুটিরশিল্প পণ্যের বিশাল বাজার ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। কুটিরশিল্পের পুরর্জাগরন ঘটানো গেলে বেকারত্ব লাঘবের পাশাপাশি বৈদেশিক  মুদ্রা অর্জনের ও ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।

গ)ব্যাপক শিল্পায়ন :

বাংলাদেশে যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সে অনুপাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না।ফলে বেকারত্ব দিন দিন বাড়ছে।এদের কর্মসংস্থানের জন্য ব্যাপক শিল্পায়নের দিকে নজর দিতে হবে।জনসংখ্যার বৃদ্ধিকে শূন্য কোঠায় নামিয়ে আন্দোলন পারলে এবং শিল্পায়ন বৃদ্ধির পেলে বেকারত্বর অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করা সম্ভব। 

ঘ)দক্ষ জনগণ রপ্তানি :

বিপুল জনসংখ্যাকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনশক্তিতে পরিনত করতে হবে।দেশের বাইরে দক্ষ জনশক্তির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)২০১৩ সালের হিসেবে বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের সংখ্যা প্রায় ৮৩ লাখ।এই হিসেবের বাইরেও ইনেক বাংলাদেশি দেশের বাইরে কাজ করে।প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা তারা দেশে পাঠাচ্ছে।পরিকল্পিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ  কর্মীগিড়ে তুলে এবং সরকারি উদ্যোগে জনশক্তির রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণ করলে আমাদের দেশের বেকারত্ব কমবে।

ঙ)দক্ষ নেতৃিত্ব :

রাজনৈতিক অস্থিরতা, হরতাল,ধর্মঘট, আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ অন্যান্য বাধার কারণে বাংলাদেশে বিদেশি উদ্যোক্তরা পুঁজি বিনিয়োগে উৎসাহ দেখাচ্ছে না।দক্ষ রাজনৈতিক নেতৃিত্বের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। 

চ)শূন্য পদ পূর্ণ করা:

বাংলাদেশে সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ।মোট পদ সংখ্যা প্রায় এর দ্বীগুন।এই শূন্য পথ গুলোতে নিয়োগ দান করা হলে অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।আমাদের শিক্ষিত যুবক শ্রেণি কিছুতেই চাকরি ছাড়া অন্য কোনো পেশা বা বৃত্তিকে গ্রহণের মানসিকতা পোষণ করে না।তাদের কাজ সৃষ্টিতে সরকারকে উদ্যোগনিতে হবে।

ছ)দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন :

কায়িক শ্রমের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙির পরিবর্তন আনতে হবে। কৃষি  ও শিল্প খাতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার পরিমাণ বাড়ালে সেটি আপনাআপনি ঘটবে।কায়িকশ্রমের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনার ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে।

উপসংহারঃ

বেকারত্বর দুনিয়ায় যুবসমাজ আজ পরাধীন
তবুও নির্লজ্জের  মতো বলতে হয় আমরা স্বাধীন।।  

আমাদের দেশের বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। শিল্পায়নই এর অন্যতম পথ। দেশের কৃষি ব্যবস্থায় আধুনিকায়নের পাশাপাশি দ্রুত শিল্পায়নের দিকেও নজর দিতে হবে। এর জন্য দরকার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার। তাছাড়া, শিক্ষিত তরুণদের শুধু চাকরির সােনার হরিণের পেছনে ঘােরার মানসিকতা পরিহার করে আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজের কথা ভাবতে হবে। যুবসমাজকে বেকারত্বের অভিশাপ ও অপবাদ ঘােচাতে হলে এং জাতির কাঁধ থেকে বেকারত্বের বিশাল বােঝা নামাতে হলে সরকারকে যেমন এগিয়ে আসতে হবে, তেমনি জনগণকেও সমবেত প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

হাবিবা আফরিন

আমার নাম হবিনা আফরিন । ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি আমার শখ। sorolmanus.com আমার সেই শখ পুরণে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আশা করছি আমার লেখার মাধ্যমে আপনারা উপকৃত হবেন। সবাই আমার ও আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads