১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস।বাংলা রচনা ও প্রবন্ধ

১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস

 ১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস

সূচনাঃ

কাল যেখানে পরাজয়ের কালো সন্ধ্যা হয়
আজ সেখানে নতুন করে রৌদ্র লেখে জয়

স্বাধীনতা হীনতায় কেউ বাঁচতে চায় না। সবাই চায় পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মুক্ত জীবনযাপন করতে। আমাদের দেশের মানুষও পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তি ছিনিয়ে এনেছে পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার সেনাবাহিনীর কাছ থেকে। আর তা হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এজন্য এ দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্য রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর এই দিনে অর্জিত হয় মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় বিজয়। এই দিনে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বিশ্বমানচিত্রে জন্ম নেয় নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ। তাই ‘বিজয় দিবস আমাদের আত্মমর্যাদার ও আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতীক।

বিজয় দিবসের প্রেক্ষাপটঃ

প্রতিটি স্বাধীন জাতির স্বাধীনতার সঙ্গে জড়িত নানান ত্যাগ-তিতিক্ষা ও আবেগ। তেমনই আমাদের বাংলাদেশের বিজয় দিবসের প্রেক্ষাপটে রয়েছে বিপুল ত্যাগ ও সংগ্রামের  দীর্ঘ ইতিহাস। সে ইতিহাসের এক গৌরবময় মাইলফলক মহান ভাষা-আন্দোলন। এই আন্দোলনের রক্তাক্ত ইতিহাসের মধ্য দিয়ে বাঙালির ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে। পরে দীর্ঘ দুই দশক ধরে চলে পাকিস্তানি স্বৈরাচারী জঙ্গিবাহিনীর বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম। এ পটভূমিতেই ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ মধ্য রাতে বঙ্গবন্ধু ঘােষণা করেন স্বাধীনতা।

পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় বীর বাঙালি। শুরু হয়, এ দেশে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ঘটনা- মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাস ধরে চলে মুক্তিসেনাদের সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ বাঙালি জীবন বিসর্জন দেয়। অবশেষে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বাঙালির বিজয় সূচিত হয়। এই দিনে ঢাকায় ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সােহরাওয়ার্দী উদ্যানে) ঘটে ইতিহাসের অন্যতম গৌরবময় ঘটনা- পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মাথা নিচু করে অস্ত্র মাটিতে ফেলে আত্মসমর্পণ করে আমাদের বীর মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর কাছে। 

বিজয় দিবসের তাৎপর্যঃ


বিজয় দিবস আমাদের কাছে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা, এ দিনটিতে আমরা পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্তি লাভ করতে সক্ষম হয়েছি। ত্রিশ লক্ষ জীবনের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। অশ্রু আর রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এ স্বাধীনতা আমাদের কাছে অত্যন্ত গৌরবের। প্রজন্মের পর প্রজন্ম বয়ে নিয়ে চলেছে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পতাকা, গাইছে বিজয়ের গৌরবগাথা। তাই বিজয় দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম।

প্রতিবছর এই দিনটি পালনের মধ্য দিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্ম এবং বিশ্বকে বারবার মনে করিয়ে দেয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযযাদ্ধাদের কথা, বীর শহীদদের কথা। আমরা অনুপ্রাণিত হই আমাদের দেশের গৌরবােজ্জ্বল ইতিহাসের কথা স্মরণ করে। উদ্বুদ্ধ হই অগ্রগতির পথে এগিয়ে যেতে।

বাঙালির মুক্তির আকাঙ্ক্ষাঃ

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর এদেশের মানুষের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ শুরু করে দেয় পাক শাসক গুষ্টি।তারা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের সাথে রিতীমত অবজ্ঞা-অবহেলা করতে থাকে এবং এদেশের জনগনকে শোষনের বস্তুতে পরিণত করে।তাদের ন্যায্য অধিকার না দিয়ে মৌলিকঅধিকার গুলো একে একে কেড়ে নেয়ে শুরু করে। তারা সরকারি চাকরি থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে বাঙালিকে অবমাননা কিরতে থাকে।

শুধু তাই নয়, তারা বাঙালির মাতৃভাষাকে কেড়ে নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে বাপিয়ে দিতে চায়।এমনকি ৭০ এর নির্বাচনে জয়লাভ করার পরেও তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বধীন আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে না।এমন আচরণ ও বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতে বাঙালি একটি নতুন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখে।

মুক্তিযুদ্ধ ও আত্মত্যাগঃ

১৯৭১ সালে ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) প্রায় ১০ লাখ মানুষের সমাবেশে দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ  দেন।তিনি ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলে, যার যা কিছু আছে, তাই নিয়েই শত্রুর মোকাবিলা করার আহব্বান জানান।

বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারে দিয়ে বাঙালিরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায় ঢাকা সহ দেছের বিভিন্ন শহরে। মধ্যেরাতের পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গ্রেফতারের পূর্বেই অর্থাৎ ২৬ শে মার্চ প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এর পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনা বাহিনী। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাস ধরে চলে এই যুদ্ধ।পাক হানাদার বাহিনী বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নকে ভেঙে দিতে শুরু করে পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্যতম গণহত্যা। গনহত্যার পাশাপাশি নারী নির্যাতন, ধর্ষন, শহরের পর শহর, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয় তারা।বাংলাদেশ পরিনত হয় ধ্বংসস্তুপে।

৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ শহিদ হয়।সম্মান হারায় দেশের ২ লাখ মা ও বোন। আধুনিক অস্রসস্র পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে অদম্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে এদেশের কৃষক,শ্রমিক, ছাত্র, যুবক, নারী সহ সকল শ্রেণীর, পেশার সর্বস্ত্রের বাঙালি। বাঙালির মরণ পন যুদ্ধ ও দুর্বার প্রতিরোধের মুখে পাক হানাদার বাহিনী পরাজিয়ের আভাস পায় এবং বিজয়ের দুই দিন আগে জাতির সূর্য সন্তান বুদ্ধিজীবীদের  বেছে বেছে হত্যা করে।

অবশেষে বাঙালির দুর্বার  প্রতিরোধের মুখে ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর যৌথ কমান্ডারের কাছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্মাসমর্পন করে।এর মধ্যে দিয়ে জন্ম দেয় নতুন  স্বাধীন দেশ বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বঃ

যেকোনো আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনার জন্য বিচক্ষণ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব অপরিহার্য। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের আন্দোলনের তেমনি এক বলিষ্ঠ নেতৃত্ব হলেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলার কোটি কোটি মানুষকে তিনি  স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন এক দল বিচক্ষণ রাজনৈতিক নেতা।জেল,জুলুম, নির্যাতন সত্ত্বেও এ নেতৃত্ব তাদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয় নি। 

শত্রুর রক্তচক্ষুকে অগ্রাহ্য করে তারা বাংলাদেশের মানুষকে বিজয়ের স্বপ্নে উজ্জীবিত করেছিলেন, ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন।বজ্রকন্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে অধিকার আদায়ের জন্য সবাইকে ঝাপিয়ে পড়ার মন্ত্রনা জগিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। তার নির্দেশনা অনুশরন করেই অর্জিত হয়েছে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।তাই এমন তেজোদীপ্ত দেশপ্রেমিক নেতৃত্বকে আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।

কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতাঃ

এক সাগল ও রক্তের বিনিময়ে 
বাংলার স্বাধীনতা আনলো যারা 
আমরা তোমাদের ভুল না,,,

দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর লক্ষ্য প্রানের বিনিময়ে অবশেষে বাঙালি জাতি লাভ করে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর কাছে সম্পুর্ন ভাবে পর্যুদস্ত হয়।১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর আসে বাঙালির জীবনের সেই মহেন্দ্রক্ষন।সেদিন বিকাল ৫ টা ১ মিনিট ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী নিঃশর্তে আত্মসমর্পন করে।ঐতিহাসিক এই দিনটিকে ডিসেম্বরের বিজয় দিবস হিসেবে আমাদের দ্বারে সমাগত হলে আমরা তাই আলোড়িত হই আত্মস হয়ে আগামী দিনের দেশ গঠনের সংগ্রামে শপথ গ্রহণ করি।

আত্মসমীক্ষাঃ

১৯৭১ সাল থেকে ২০২০ সাল।এই দীর্ঘ  ঊনপঞ্চাশ বছরের পর পরিক্রমণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা বাঙালি জাতির জীবনে কতটুকু তৎপর্য, দান করেছে এটা আমাদের অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে। কোনোরূপ বিতর্কে না গিয়ে আমরা বিশ্বজনীন আবেদনে সাড়া দিয়ে শুধু স্বাধীনতার মৌল প্রশ্নে সকলের মনোযোগ আকর্ষন করি।যে মহান আদর্শ, উদ্দেশ্যে, ও লক্ষ্য সামনে রেখে স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল দীর্ঘ ৯ মাস রক্তঢালা প্রচন্ড যুদ্ধ চলেছিল তা আজ স্বাধীনতা লাভের ঊনপঞ্চাশ বছর পর কতটুকু কার্যকরী ও তৎপর্যপূর্ন হয়েছে তা আমাদের হিসেব করে দেখতে হবে। 

জণগণের চেতনাঃ

জনগণ সচেতন না হলে দেশের কোনো উন্নয়ন কর্মই ফলপ্রসূ হতে পারে না।আজ গ্রাম থেকে শহর বন্দর পার হয়ে রাজধানী ঢাকা পযর্ন্ত একই চেতনা একই লক্ষ্য ও অভিন্ন কর্মসূচি প্রবাহিত না হলে জাতীয় ঐক্য রক্ষা করা সুকঠিন। বাংলাদেশকে মুষ্টিমেয় ধনিক বনিক  চাটুকার রাজনৈতিক দের খাস তালুক বানাবার নীল নকশায় আনা হলে স্বাধীনতার কোন রকমের আস্বাদ গ্রহণ সাধারণের পক্ষে সম্ভব হবে না।

বাংলাদেশের বিজয় দিবসঃ

১৬ ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর এই দিনে বাঙালি জাতি অর্জন করেছে পূর্ণাঙ্গ  বিজয়।১৯৭১ সালে এই দিনে বাঙালিরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজীত করে তাদেরকে আত্মসমর্পন করতে বাধ্য করেছিল।৩০ লক্ষ শহিদের জীবন উপসর্গ অগনিত মা বোনের সম্মান হানি এবং বীরত্ত্বপুর্ন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ৭১ এই দিনে পৃথিবীর মানচিত্রে একটি স্বাধীন  সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম হয়েছে  বাংলাদেশের। তাই বিজয়ের এই দিনে আমাদের জাতীয় জীবনে সসর্বাপেক্ষা, স্মরনীয়,আনন্দময়  ও গৌরবের দিন।

৭১ এর বিজয় উল্লাসঃ

১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর ছিল বাঙালির বহু  ত্যাগ, তিতিক্ষা ও সধনার ফল।৭ কোটি বাঙালির মহা উৎসবের দিন ছিল সেটি।৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের দুঃসহ স্মৃতি স্বজন  হারানোর বেদনা সব কিছু ভুলে মানুষ দলে দলে নেমে এসেছিল রাজপথে। সবার হাতে ছিল স্বাধীন বাংলার লাল, সবুজ পতাকা।দুর্বিসহ অতীতকে ভুলে মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল সম্ভাবনা ময় আগামী বাংলাদেশের। বাঙালির জাতীয় জীবনে এর থেকে আনন্দের দিন আর নেই।

বাঙালির বিজয়োৎসবঃ

১৫ ই ডিসেম্বর রাত ১২. ১ মিনিট থেকে বাঙালির বিজয়োৎসব শুরু হয়। ১৬ ই ডিসেম্বর ভোরে স্বাধীনতার যুদ্ধে প্রাণ উৎসর্গকারী লাখো শহিদের  প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সর্বস্ত্রের জনগন সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে মিলিত হয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ  করে। এ দিনে সরকারি ছুটি পালিত হয়।এই দিন জাতীয় প্যাড়েড গ্রাউন্ডে বাংলাদেশের সকল সামরিক ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর অংশগ্রহনে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ অসংখ্য মানুষ এই অনুষঙ্গ উপভোগ করেন।বিজয় দিবসের এই দিনে সারা দেশের সমস্ত স্কুল, প্রতিষ্ঠান, কলেজ,ঘর,বাড়ি দোকান পাঠ ও যানবাহনে লাল সবুজ পতাকা দেখা যায়।দিনব্যাপী টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। সারা দেশের সকল মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডায় মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও প্রার্থনাকরা হয়।মোট কথা দেশের প্রতি জেলায় প্রতি ঘরে ঘরে বিজয়ের এই দিনটি আনন্দঘন ও উউৎসবমুখর পরিবেশে দিন টি পালন করা হয়।

জাতীয় কর্তব্যঃ

বাঙালি হিসেবে প্রত্যেক কের এই দিনটির প্রতি কিছু ককর্তব্য রয়েছে।কেবল বিজয় দিবসের এই দিনটি নয় বরং বিজয়ের চেতনায় উদ্দিপ্ত হয়ে প্রত্যেক বাঙালির উচিত সারাবছরই দেশ জাতি স্বাধীনতা সার্বভৌমের পক্ষে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যাওয়া। বিজয় দিবসের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ ও প্রচারে জাতীয় ভাবে উদ্দ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।যারা স্বাধীনতার সংগ্রাম ও বিজয়ের ইতিহাস বিকৃত কিরে পরবর্তী প্রজন্মকে লক্ষ্যেভ্রস্ট করতে সচেষ্ট তাদেরকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যাথাযথ পদক্ষেপ নেয়া বাঙালির জাতীয় কর্তব্য । 

বিজয়ের পরবর্তী সম্ভাবণা ও আমাদের প্রত্যাশাঃ

শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হলেও আমাদের স্বপ্ন সম্ভাবনা বাস্তবের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।১৯৭৫ সালে বুলেটের আঘাতে সপরিবারে জাতির জনকে  মর্মান্তিক মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে সংগঠিত হয় রাজনৈতিক পথ পরিবর্তন। সমাজতন্ত্র ও ধধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ হয় পরিত্যাক্ত।স্বাধীন দেশ গনতন্ত্র হয় নির্বাসিত। প্রায় দের দশক জুরে নতুন করে সংগ্রাম করতে হয়েছে গনতন্ত্রের জন্য। আদর্শিক ভাবে স্বাধীনতার মুল চেতনার অনেক কিছুই এখন অধরা। গনতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরনে এখনো পারি দিতে হবে অনেক পথ।অঅর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন এখনো স্বপ্ন মাত্র।জাতীয় জীবনে ঐক্যের বদলে সংঘাত,সুস্থিতির বিদলে অস্থিরতা, শান্তির বিদলে নৈরাজ্য মাথা চারা দিয়ে উঠেছে। 

বিজয় দিবসের চেতনাঃ

বিজয় দিবস আমাদের দেশ প্রেমকে শানিব করে।আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু পরে লড়াইয়ে প্রেরণা পাই।দেশে সার্বভৌমত্ব রক্ষার নিজেদের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হই।মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানতে শিখি এই দিনে।

অনুষ্ঠানমালাঃ

বিজয় দিবস উদযাপিত হয় মহাসমারােহে। এ দিন সারাদেশ ছেয়ে যায় লাল-সবুজের সাজে। বাড়ির ছাদে, দোকানে, রাস্তার পাশে, গাড়ির সামনে, স্কুল-কলেজে, এমনকি রিকশার হ্যান্ডেলেও শােভা পায় লাল-সবুজ রঙের জাতীয় পতাকা। প্রতিটি শহরে পরিলক্ষিত হয় উৎসবের আমেজ। রাজধানী ঢাকার রাস্তায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গােষ্ঠী আয়ােজন করে গণমুখী নানা অনুষ্ঠানের। স্বাধীনতার আবেগে উদ্বেলিত নরনারী উৎসবের সাজে সেজে সেখানে জমায়েত হন। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা নানারকম অনুষ্ঠানের আয়ােজন করে।

এইদিন সকালবেলা ঢাকার জাতীয় প্যারেডে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, কূটনীতিবিদ, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে হাজার হাজার মানুষ এই কুচকাওয়াজ উপভােগ করেন। চট্টগ্রাম এবং তার আশেপাশের এলাকা থেকে প্রতিদিন হাজার মানুষ এই মেলা দেখতে আসেন। দেশের প্রতিটি জেলায়ও উৎসবমুখর পরিবেশে এই দিনটি পালিত হয়। 

উপসংহারঃ

বিজয় আমার পতাকার রং
মানচিত্রের রেখা
বিজয় আমার আনন্দঘন ভিটেমাটি ফিরে দেখা।
বিজয় আমার স্মৃতির মিনার 
সৌধ চূড়ার গান
বিজয় আমার স্বাধীন দেশের 
সুখভড়া অফুরান।। 

বিজয় দিবস আমাদের জাতীয় দিবসসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি দিবস। তবে এ দিবসটি অন্যান্য দিবসের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব রাখে। কেননা, বিজয় দিবস আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের একটি দিন হলেও এর সাথে জড়িয়ে আছে ‘৭১-এর মহান শহিদদের স্মৃতি, স্বজন হারানোের আর্তনাদ আর যুদ্ধাহত ও ঘরহারা মানুষের দীর্ঘশ্বাস। এ দিনটি শুধু আমাদের বিজয়ের দিন নয়, এটি আমাদের চেতনার জাগরণের দিন। তাই এই দিনে প্রতিটি বাঙালি নতুন করে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় দেশকে গড়তে- বিশ্বসভায় সামনের সারিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে।

হাবিবা আফরিন

আমার নাম হবিনা আফরিন । ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি আমার শখ। sorolmanus.com আমার সেই শখ পুরণে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আশা করছি আমার লেখার মাধ্যমে আপনারা উপকৃত হবেন। সবাই আমার ও আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads