ইন্টারনেট রচনা |
ইন্টারনেট রচনা ও বাংলা প্রবন্ধ
ভূমিকাঃ
আধুনিক সভ্যতা ও প্রযুক্তি বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার সমগ্র সমাজব্যস্থায় এনেছে আমূল পরিবর্তন। পৃথিবীর সাধারণ নিয়ম গেছে বদলে। আমাদের আধুনিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযুক্তি বিজ্ঞানের প্রভাব আজ অতিমাত্রায় স্পষ্ট।
গণমাধ্যমও প্রযুক্তি বিজ্ঞানের এই বৈপ্লবিক পরিবর্তনের বাইরে নেই।গণমাধ্যমে প্রযুক্তি বিজ্ঞানের জয়যাত্রা শুরু সম্ভবত ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে বেতার আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে। তারপর কালের নিয়মে প্রযুক্তি বিজ্ঞানের উন্নতিতে আমরা পেয়েছি টেলিভিশন ও পরবর্তীতে ইন্টারনেটের মতো সর্বাধুনিক গণমাধ্যম।
মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে থাকা ইন্টারনেট আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অন্যতম অংশ। ইন্টারনেটের জালে আমরা এমন ভাবে জড়িয়ে গিয়েছি যার থেকে বেরিয়ে আসা একেবারেই অসম্ভব। অনেক কঠিন কাজকে সহজ করে দিয়েছে ইন্টারনেট। মানবজীবনে নিয়ে এসেছে আমূল পরিবর্তন।
ইন্টারনেটঃ
অসংখ্য নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত বিশ্বব্যাপী বৃহৎ কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে ‘ইন্টারনেট বলা হয়। অর্থাৎ ইন্টারনেট হলাে নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক তথা নেটওয়ার্কের রাজা। এর মাধ্যমে সারাবিশ্বের কম্পিউটারগুলাে একই সূত্রে গ্রথিত হয়ে পড়েছে। এর মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনাে স্থান থেকে যেকোনাে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যেকোনাে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি যােগাযােগ কিংবা সংবাদ আদানপ্রদান করতে পারে।
ইন্টারনেট কয় প্রকারঃ
বর্তমানে আধুনিক ইন্টারনেট ৬ প্রকার।
- ডায়াল-আপ ইন্টারনেট
- ডিএসএল ইন্টারনেট
- স্যাটেলাইট ইন্টারনেট
- ক্যাবল ইন্টারনেট
- ওয়ারলেস ইন্টারনেট
- সেলুলার ইন্টারনেট
ইন্টারনেট প্রটোকলঃ
ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হল ইন্টারনেট প্রটোকল। নেটওয়ার্কএর কম্পিউটারের মধ্যে দিয়ে তথ্য আদান-প্রদানের সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতিকে প্রটোকল বলে।দুই বা ততোধিক কম্পিউটারের মধ্যে নির্দিষ্ট প্রটোকল না থাকলে পারস্পরিক যোগাযোগ সম্ভব নয়।তবে অনেক গুলো প্রটোকলের মধ্যে TCP/IP (Transmission control protocol /Internet protocol) সবচেয়ে সুপ্রাচীন ও কর্যকরি প্রটোকল হিসেবে গন্য হয়।আর এর সব চেয়ে বড় সুবিধা হল অনেক বড় আকারের ফাইল ও প্রটোকলের মধ্যেমে অতি সহজেই আদান প্রদান করা যায়।
ইন্টারনেটের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানঃ
ইন্টারনেট কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান নয়।এটা আন্তর্জাতিক ভাবে বিস্তৃত। তবে এর উন্নয়ন ও কার্যসম্পাদনে ৩টি প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে।প্রতিষ্ঠান গুলো হলো :
১.Internet Network Information Center বা INIC -প্রতিষ্ঠানটির ডোমেইনের নাম (Q.V) রেজিস্ট্রি করে।
২. Internet Society -প্রতিষ্ঠানটি ইন্টার-ইন্টারনেটের প্রটোকল বা প্রকৌশলের মান নির্ণয় করে।
৩.World wide web consortium :ভবিষ্যতে ওয়েবের প্রোগ্রামিং ভাষা কোন ধরনের হবে তা এ প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করে।
ইন্টারনেটের অনলাইন ও অফলাইনঃ
যদি কোনাে দেশে ইন্টারনেটের সার্ভার থাকে তবে এ সার্ভারের সাহায্যে দুনিয়ার যেকোনাে প্রান্তে রাখা অপর সার্ভারে যােগাযােগ করা যায়। এক ব্যবহারকারীর সাথে অপর ব্যবহারকারীর এ সংযােগকে বলা হয় অনলাইন । কিন্তু যেসব দেশে সার্ভার নেই সেক্ষেত্রে অপর দেশের সার্ভারের সাথে প্রথমে টেলিফোনের মাধ্যমে যােগাযােগ করতে হয়। একে বলে অফলাইন । অফলাইনে খরচ বেশি এবং সময়ও লাগে বেশি। আনুষ্ঠানিক ভাবে অনলাইন ইন্টারনেট’ -এর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ টিএন্ডটি বাের্ড প্রথম বারের মতাে ব্যক্তিগত পর্যায়ে স্যাটেলাইট যােগাযােগের ব্যবস্থা করে দেয়। ব্যবস্থাটির নাম VSAT (Vast Very Small Aperture Termenal)। উল্লেখ্য VSAT- এর মাধ্যমে এখন টিএন্ডটি বাের্ডের সাহায্য ছাড়াই সরাসরি রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সাথে যােগাযােগ স্থাপন করা যায়।
ইন্টরনেট ধারণার উদ্ভব ও বিকাশঃ
১৯৬১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাহিনী সর্বপ্রথম ইন্টারনেট ব্যবহার করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা মাত্র ৪টি কম্পিউটারের মধ্যে গড়ে তুলেছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী অভ্যন্তরীণ এক যােগাযােগ ব্যবস্থা। এই যােগাযােগ ব্যবস্থার নাম ছিল ‘ডপার্নেট’। ক্রমশ চাহিদার ভিত্তিতে ১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন সর্বসাধারণের জন্য এরকম অন্য একটি যােগাযােগ ব্যবস্থা চালু করে। এর নাম দেওয়া হয় ‘নেস্ফোনেট’। ৩ বছরের মধ্যে নেস্ফোনেট-এর বিস্তার সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ইতােমধ্যে গড়ে ওঠে আরও অনেক ছােট-মাঝারি নেটওয়ার্ক।
এতে এর ব্যবস্থাপনায় কিছুটা অরাজকতা সৃষ্টি হয়। এ অরাজকতা থেকে মুক্তি পেতে পুরাে ব্যবস্থাটি নিয়ন্ত্রণের আবশ্যকতা দেখা দেয়। এজন্য একটি কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্ক গড়ে তােলা হয়। বিশ্বের মানুষ পরিচিত হয় ‘ইন্টারনেট’ নামক একটি ধারণার সাথে। বর্তমান বিশ্বে এর প্রায় ২০০ কোটি সদস্য। এ সংখ্যা প্রতি মাসে শতকরা ১০ ভাগ হারে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।
ইন্টারনেট যেভাবে কাজ করেঃ
ইন্টারনেট নামক যােগাযােগ ব্যবস্থাটি কোনাে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সম্পত্তি নয়। এর কোনাে মূল কেন্দ্রও নেই। এক Server থেকে আরেক Server-এর সংযােগের ফলেই ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে বিশাল Internet Networking সাম্রাজ্য। Server-এর মাধ্যমে এর কর্মকাণ্ড সম্পাদিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রধান প্রধান শহরে স্থাপিত হয়েছে একাধিক Server। যেকোনাে স্থান থেকে যেকোনাে একটি Server-এর সাথে যােগাযােগ স্থাপন করলেই বিশ্বের সকল Server-এর সাথে যােগাযােগ স্থাপিত হয়।
কম্পিউটার:
এটি তথ্যাদি টাইপ করতে সাহায্য করে ও এর নিজস্ব মেমােরিতে জমা রাখে। এরপর তা নেটওয়ার্কিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রাপকের কাছে তথ্যাদি পাঠানাের ব্যবস্থা করে।
মডেম:
এর পূর্ণ নাম modilator/Demodulator. এর দ্বারা সাধারণত তথ্যাদি টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে পাঠানাের উপযােগী করা হয়। এটি এক কম্পিউটার থেকে অপর কম্পিউটারে তথ্যাদিকে ডিজিটাল থেকে এনালগ আবার এনালগ থেকে ডিজিটালে রূপান্তরিত করার একটা ডিভাইস।
টেলিফোন লাইন:
টেলিফোন বা সেলুলার লাইন ছাড়া ইন্টারনেটের কোনাে প্রক্রিয়াই সম্ভব নয়। লাইনের স্পিড-এর ওপর তথ্যাদি দ্রুত স্থানান্তরিত হওয়া নির্ভর করে। এনালগের তুলনায় ডিজিটাল টেলিফোনে তথ্যাদি দ্রুত স্থানান্তরিত হয়।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রােভাইডার (সংক্ষেপে ISP)
এদের কাজ অনেকটা পােস্ট অফিসের মতাে। এদের সদস্য হলে এরা মাসিক বা ব্যবহৃত সময়ের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট একটা চার্জ নিয়ে সদস্যদের কম্পিউটার, ফাইবার অপটিক্স বা স্যাটেলাইটের (vSAT) মাধ্যমে দেশেবিদেশে অন্যান্য ইন্টারনেট সদস্যদের সাথে যােগাযােগ করিয়ে দেয়। ১৯৯৬ সালের ৪ জুন TAST চালুর মাধ্যমে প্রথম অনলাইন ইন্টারনেট চালু করে ISN (Information Services network)। এরপর গ্রামীণ সাইবারনেট, Brae Bdmail Pradeshto Net, Agni System ইত্যাদি সংস্থাসহ মােট ১২টি সংস্থা বর্তমানে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রােভাইডার হিসেবে কাজ করছে।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাঃ
দেশে বর্তমানে ১৩০টি ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের মােট অনুমিত গ্রাহক সংখ্যা ১০,২০,০০০। অবশ্য সরাসরি গ্রাহকসংখ্যা বিবেচনা করে এ সংখ্যা অনুমান করা হয়েছে। সারা দেশে অসংখ্য সাইবার ক্যাফের ব্যাপক প্রসার ঘটায় এ সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইন্টারনেট সেবার ধরন ও সহজলভ্যতাঃ
এক সময় বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবা টেলিফোনের ওপর নির্ভর করলেও বর্তমানে বেশ কিছু রেডিও লিংক ও ব্রডব্যান্ডের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করছে। সম্প্রতি মােবাইল কোম্পানি গুলাে মােবাইল সংযােগের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা চালু করায় ইন্টারনেট কম্পিউটারের পাশাপাশি মােবাইল ফোনে বহুল ব্যবহার শুরু হয়েছে। ওয়ারলেস সংযােগ হওয়ায় এর চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি সেটকস্ট না থাকায় গ্রাহকের কাছে এটি অত্যন্ত সহজলভ্য হয়ে উঠছে।
ইন্টারনেটের গুরুত্বঃ
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেটের গুরুত্ব অপরিসীম। তথ্য প্রেরণ ও গ্রহণ থেকে শুরু করে বিশ্বের সকল প্রান্তের মানুষের সাথে আড্ডা, সম্মেলন, শিক্ষা, বিপণন, অফিস ব্যবস্থাপনা, বিনােদন ইত্যাদিও ইন্টারনেটের সাহায্যে সম্ভব হচ্ছে। মাল্টিমিডিয়ার বিকাশের সাথে সাথে প্রতিদিন এর সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হচ্ছে। একটি লােকাল টেলিফোন খরচে পৃথিবীর এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে কথা বলা সম্ভব হচ্ছে। মহাকাশ গবেষণায় ইন্টারনেট বিজ্ঞানীদেরকে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্রদান করে চলেছে। প্রচার মাধ্যম সহজতর হয়েছে। মূলত নিম্নলিখিত সুবিধাগুলাে দিচ্ছে বলেই ইন্টারনেটের গুরুত্ব আমাদের কাছে অপরিসীম।
ই-মেইল :
ই-মেইলের কার্যকারিতা অনেকটা ফ্যাক্সের মতােই। প্রেরক কম্পিউটারে তার বক্তব্য টাইপ করে সাথে সাথে তা এক বা একাধিক প্রাপক টারমিনালের কাছে একই সময়ে নেটওয়ার্কিং প্রক্রিয়ায় পাঠিয়ে দিতে পারেন।
ওয়েব :
ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত কম্পিউটারগুলােতে যেসব তথ্য রাখা হয়েছে, সেগুলাে ব্যবহার করার ব্যবস্থাকে ‘ওয়েব’ বলা হয়। সাধারণত বড় ধরনের কোম্পানি তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরি করে নেটওয়ার্কে রেখে দেয় সাধারণের ব্যবহারের জন্য। কোম্পানি সম্পর্কে তথ্যাদি ছাড়াও চাকরি বা ডিলারের জন্য আবেদনপত্র ওয়েবসাইটে থাকে।
চ্যাট :
এ প্রক্রিয়ায় যে কেউ এক বা একাধিক ব্যক্তির সাথে একই সময়ে কম্পিউটারের মাধ্যমে আড্ডা জমিয়ে তুলতে পারে।
নেট নিউজ :
এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে কেউ ইন্টারনেট তথ্যভান্ডারে যেকোনাে সংবাদ সংরক্ষণ করে তা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পারে।
গুগল :
গুগল ইন্টারনেটে তথ্য সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে স্থাপিত একটি পদ্ধতি বিশেষ। এটি তথ্যের সমন্বয় করে এবং ব্যবহারকারীর প্রয়ােজন অনুসারে তথ্য খুঁজে দেয়।
E-Cash বা Electronic Cash :
ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে ই-ক্যাশ পদ্ধতি বলা হয়। সাধারণত, ই-ক্যাশ হচ্ছে অনেকগুলাে আধুনিক অর্থনৈতিক লেনদেনের সমষ্টি। এছাড়াও ইন্টারনেটের রয়েছে বহুবিধ ব্যবহার। বলা চলে, বিশ্ববাসীর সাথে ইন্টারনেট আজ অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কে জড়িয়ে গেছে।
ইন্টারনেট এর ব্যবহারঃ
বর্তমানে আমাদের জীবনে প্রত্যেকটি মুহূর্তে ইন্টারনেটের ব্যবহার। এক মুহূর্তও ইন্টারনেট ছাড়া কল্পনা করা এখন কষ্টসাধ্য। বর্তমান জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইন্টারনেট খনিকটা করে হলেও ব্যবহৃত হচ্ছে। চাইলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসে পাওয়া যাচ্ছে চিকিৎসা- সেবাও! জানা যাচ্ছে পরীক্ষার ফলাফল।
১. ই- লার্নিং
বর্তমানে ইন্টারনেট এর কল্যানে শিক্ষাব্যবস্থায় দারুন এক ধরনের পরিবর্তন এসেছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিটি জায়গাতেই ব্যবহৃত হচ্ছে ইন্টারনেট। মাল্টিমিডিয়ার সাহায্যে হাতে কলমে শিক্ষাও ইন্টারনেটের অবদান। আবার, করোনা পরিস্থিতিতে জুম মিটিং এ ক্লাস করতে হয়েছে প্রায় সকলেকেই। আর এটাও ইন্টারনেটের কল্যানের ফলেই। আর চাইলে ইন্টারনেট এর মাধ্যমে পড়াশোনাতে আরও বড় ধরনের উন্নতি আনা যায়।
২. অফিসে
বর্তমান সময়ে মানুষ হয়েছে আধুনিক। এখন একটি বিরাট অফিস তৈরি করা সম্ভব শুধুমাত্র মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারেই। তবে তা ইট – পাথরের নয়, ইন্টারনেটের সাহায্যে তৈরি অফিস। অনপক সময় দেখা গেল একটা প্রয়োজনীয় কাজে সবার একত্র হওয়া দরকার।
তবে এখন কোনো সমস্যার কারনে কেউ যেতে পারবে না। তখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে তিনি সরাসরি অফিসে যুক্ত হতে পারবেন অনলাইনে। আবার অফিসের বিভিন্ন কাজ ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা যায়। ভার্চুয়াল অফিস কি? ভার্চুয়াল অফিসের সুবিধা ও অসুবিধা লেখাটি পড়লে আরও ভাল বুঝতে পারবেন।
৩. ই-কমার্স
ই-কমার্স হলো কেনাকাটা বিষয় ভিত্তিক। আমরা অনেকেই অনলাইন কেনাকাটা সম্পর্কে জানি। বর্তমান সময়ে কেউ চাইলে নিজের বাড়িতে বসে একটি স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটার এর সাহায্যে যেকোন কিছু অর্ডার করে, তা নিজের বাড়িতে হোম ডেলিভারি পেয়ে যেতে পারেন। এমনকি পেমেন্টও করতে পারেন ফোনের সাহায্যেই।
৪. ওয়ার্ল্ড ভিলেইজ
বর্তমানে ইন্টারনেট এর কল্যানে সার বিশ্ব একটি গ্রামে পরিনত হয়েছে। মানে, আপনি কয়েক মুহূর্তে জেনে যাচ্ছেন বিশ্বের কোথায় কি ঘটে যাচ্ছে। এছাড়া, স্যোশাল মিডিয়ার কল্যানেতো পৃথিবীর যেকোন জায়গার মানুষের সাথে যোগাযোগ এবং লাইভ ভিডিও কলে কথা বলতে পারছেন।
৫. টেলি-মেডিসিন
এখন ইন্টারনেট এর মাধ্যমে চাইলে ঘরে বসে যেকোনো অভিজ্ঞ একজন ডাক্তারের কাছ থেকে আপনি সেবা নিতে পারেন, ভিডিও কলের মাধ্যমে। আবার ওষুধও হোম ডেলিভারি নিতে পারবেন।
৬. জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম হিসাবে ইন্টারনেটের ব্যবহার
ইন্টারনেটের সাহায্যে আমরা মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার থেকেই প্রাগৈতিহাসিক অনেক কিছু সম্পর্কে প্রচুর জ্ঞান লাভ করতে পারি। এতে আমাদের জ্ঞানের পরিধির বৃদ্ধি হয়।
৭. পরীক্ষার ফলাফল
আগে পরীক্ষার ফলাফল জানার জন্য স্কুলে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ত। তবে এখন বাড়িতে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে খুব সহজেই পরীক্ষার ফলাফল জানতে পারা যায়।
৮. ভিডিও
আগে কোনো কিছু সম্পর্কে জানতে হলে অন্য কারো কাছে গিয়ে শুনতে হতো বা অনেক বই পত্র ঘাঁটতে হতো। এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে তা সম্পর্কে সহজেই অনেক ভিডিও ফোন বা কম্পিউটারে পেয়ে যাওয়া যায়। এমমকি অনেক পড়াশোনার লেকচারও পাওয়া যায় সেখানে।
৯. বিনোদনের মাধ্যম হিসাবে ইন্টারনেটের ব্যবহার
আগে মানুষ সিনামে হলে গিয়ে সিনামা দেখতো কিন্তু বর্তমানে নেটফ্লিক্স কিংবা এরকম নানা রকমের ওটিটি প্লাটফর্মের মাধ্যমে সহজেই ঘরে বসে সিনেমা দেখতে পারছে। এছাড়া, নাটক থেকে শুরু করে বিনোদনের সকল সুবিধাই নিতে পারছে এই ইন্টারনেট ব্যবহার করে।
১০. অনলাইনে আয়
বর্তমানে অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করার পাশাপাশি ইন্টারনেট এর মাধ্যমে অনলাইন থেকে আয় করতে পারছে। অনেকে ফ্রিল্যান্সিং করে ডলার আয় করছে। আনলাইনে আয় নিয়ে আমাদের অনেক লেখা আছে সেগুলো পড়তে পারেন।
১১. সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা
ইমেল, স্যোশাল মিডিয়া, মেসেঞ্জিং অ্যাপ কিংবা VoIP সেবার মাধ্যমে এখন যেকোন জায়গা থেকে যেকোন সময় আমরা যোগাযোগ করতে পারছি। এর ফলে আমাদের খরচ যেমন কম হয়, তেমনি যোগাযোগ ব্যবস্থাও অনেক সহজ হয়ে যায়।
ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাঃ
১.দূর্লভ তথ্য সংগ্রহ করা যায়। যেগুলো খোঁজার জন্য আগে দেশ বিদেশ ঘুড়তে হতো।
২.খুব অল্প সময়ে যোকোন দেশের খবর পাওয়া যায়।
৩.চাকরি খোঁজা কিংবা অনলাইনে রিমোটলি যোকোন দেশে চাকরি করা যায়।
৪.অনলাইনে টিকিট বুকিং কিংবা হোটেল বুকিং দেয়া যায়।
৫.সহজে তথ্যের আদান-প্রদান করা যায়।
৬.বিনামূল্যে তথ্য পাওয়া।
৭.তথ্যের সহজলভ্যতা।
৮.সকল প্রশ্নোত্তর।
৯.অনলাইনে সহজেই চিকিৎসাসেবা নেয়া যায়।
১০.ক্লাউড স্টোরেজ তথা ইন্টারনেটে কম খরচে অনেক বেশি ডাটা রাখা যায়।
ইন্টারনেট ব্যবহারের অসুবিধাঃ
১.ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশী।
২.ভাইরাস দ্বারা আক্রন্ত হয়ে ডাটা নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা থাকে। যেমন, কিছুদিন আগে র্যানসমওয়্যার ১৫০ দেশের দুই লাখের বেশি কম্পিউটার আক্রান্ত হয়েছিল।
৩.পরিবার ও সমাজের প্রতি নেতিবাচক প্রভাব পরে। যেমন, সারাক্ষন স্যোশল মিডিয়াতে পরে থাকার ফলে পরিবারের সাথে ছেলে-মেয়ে কিংবা পিতা-মাতার কথা বার্তা কম হয়। পারিবারিক বন্ধন নষ্ট হয়ে যায়।
৪.গুজব ও মিথ্যা তথ্য দ্রুত ছড়িয়ে পরে। যেহেতু, তাৎক্ষনিক ভাবে কোন তথ্য যাচাই করা সহজ হয়ে উঠেনি এখনও। তাই, অনেক অসাধু ও খারাপ লোকেরা মিথ্যা ও গুজব খুব দ্রুত ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়।
৫.প্রতারণার শিকার হতে হয় অনেক সময়। যেমন, অনেকে পণ্য কেনার আগে টাকা দিয়ে দেয় কিন্তু পন্য আর পায় না।
৬.গবেষণার মান হ্রাস।
৭.তরুণ-তরুণীরা পর্ণগ্রাফীতে আসক্ত হয়ে পরে।
৮.নির্ভরযোগ্যতা কম থাকে অনেক সময়।
৯.তথ্যের অসম্পূর্ণতা থাকে অনেক ক্ষেত্রে।
১০.শিশু কিংবা প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রেও অতিমাত্রায় ইন্টারনেট ব্যবহার মারাত্মক ক্ষতিকর। মেজাজ খিটখিটে হওয়া, অবসাদ, ডিপ্রেশন, চোখের ক্ষতি সহ আর অনেক রকম রোগের কারণ। ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তির উপায়।
বাংলাদেশ ও ইন্টারনেটঃ
১৯৯৩ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশে ইন্টারনেট চালু হয়। তবে তখন এর ব্যবহার ছিল খুবই সীমিত এবং তা কেবল ই-মেইলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ১৯৯৬ সালে ইন্টারনেট সংযোগের প্রসার ঘটতে থাকে। ২০০০ সালের শুরুতে ইন্টারনেটের গ্রাহক ছিল প্রায় ৬০,০০০। ২০০৪ সালে বাংলাদেশ তথ্য প্রযুক্তির মহাসড়ক সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হয়। এতে দেশে ইন্টারনেটের গতি অনেক বেড়ে যায়। ২০১৭ সাল নাগাদ সাবমেরিন ক্যাবলের দ্বিতীয় মহাসড়কে যুক্ত হবে বাংলাদেশ।
বর্তমানে ব্রডব্যান্ড এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১.৫ কোটি। সরকার ইন্টারনেটের প্রসারে অনেক কাজ করে যাচ্ছে।
তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে করণীয়ঃ
জ্ঞান বিজ্ঞান ও ইন্টারনেট ব্যবহারে নিজ অবস্থান সুদৃঢ় করতে তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের কোনো বিকল্প নেই। বর্তমানে এক্ষেত্রে যারা পিছিয়ে পড়ছে, তারা এক ধরণের বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, যাকে ডিজিটাল বৈষম্য বলা হয়। বাংলাদেশও এরূপ বৈষ্যমের শিকার। এই বৈষম্য দূর করতে চাইলে যে কাজগুলো করতে হবে তা হলো-
আমাদের তরুণ সমাজকে তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে।
ব্যাপক সংখ্যক জনগণের নিকট ইন্টারনেট পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য তথ্য প্রযুক্তির অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
তথ্য প্রযুক্তির জগতে ভাষা হিসেবে ইংরেজির অধিপত্য একক। তাই ইংরেজির ব্যবহারে দক্ষতা বাড়াতে হবে।
তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ জনসম্পদ এবং সরকার গড়ে তুলতে হবে।
উপসংহারঃ
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিই বর্তমান বিশ্বের সকল প্রকার উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের মূল চালিকাশক্তি। এক্ষেত্রে যারা যতো বেশি অগ্রগামী, তারা ততো উন্নত। ইন্টারনেট এখন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটি স্তরকে জয় করে মহাকাশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। কিন্তু আমরা তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এখনও পিছিয়ে আছি। আমাদের উচিত হলো ইন্টারনেটের ব্যাপক ও বহুমাত্রিক ব্যবহারের প্রসার ঘটিয়ে দেশকে আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার উপযোগী করে গড়ে তোলা।