চিরতার উপকারিতা বা চিরতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের আজকের পোস্ট। সবার আগে জানবো চিরতার সম্পর্কে। চিরতা হচ্ছে একটা ভেষজ উদ্ভিদ যেটা ঔষধি গুণে ভরপুর। ভারত এবং বাংলাদেশের চিরতা প্রচুর পাওয়া যায়। চিরতা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Swertia chirayita (Roxb. ex Fleming) H. Karst.।
এটিকে অনেক ধরনের ঔষধি কাজে ব্যবহার করা যায় যেমন জ্বর, কৃমিনাশক শক্তি পাশাপাশি পাচকতার গুণের কারণে সারা ভারতে এটি বেশ প্রসিদ্ধ। অত্যধিক তিক্ততা যুক্ত এই গাছটি ম্যালেরিয়াতে ও দেওয়া হয়ে থাকে। আবার অনেকেই বলেন এটা অতিরিক্ত সেবন করা ঠিক হবে না তাহলে লাভের চেয়ে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বিভিন্ন ভেষজ ঔষধি উপাদান হিসেবে চিরতার ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় ভারত এবং বাংলাদেশে।চিরতার উপকারিতা। চিরতা খাওয়ার উপকারিতা
রক্তের শর্করার মাত্রাঃ যারা ডায়াবেটিসের রোগী রয়েছেন তাদের জন্য চিরতা বেশ উপকারী। চিরতা শরীরের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এছাড়া চিরতা শরীরের মধ্যে থাকা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখাঃ তোকে যদি কোন ধরনের সমস্যা থাকে যেমন ব্রণ ফুসকুড়ি ইত্যাদি তাহলে সেগুলো থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এটি বেশ কার্যকর। চিরতা শরীরের রক্তকে পরিষ্কার করে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় ফলে ত্বকের ভেতর থেকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। চামড়ার যেকোনো ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য চিরতার অনেক সুনাম রয়েছে।
এলার্জিজনিত সমস্যাঃ যাদের এলার্জিতে সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য চিরতা আশীর্বাদ স্বরূপ। কারণ এলার্জির কারণে যদি চোখ ফুলে যাওয়া, সর্দি কাশি হওয়া এ ধরনের সমস্যা থাকে তাহলে এটা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য চিরতরে উপকারিতা রয়েছে।
লিভারের জটিলতাঃ চিরতার উপকারিতার মধ্যে আরেকটি হচ্ছে লিভারের জটিলতা দূর করতে সহায়তা করা। লিভার পরিষ্কার রাখার জন্য চিরতার উপকারিতা সম্পর্কে অনেকের জানা আছে। ফ্যাটি লিভার নিয়ন্ত্রণ করা পাশাপাশি শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করার জন্য চিরতার বেশ উপকার পাওয়া যায়।
বদহজমের সমস্যাঃ যাদের বদহজমে সমস্যা রয়েছে তারাও চাইলে চিরতার উপকারিতা গ্রহণ করতে পারেন। এসিডিটি নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি বলা হয়ে থাকে সব অসুখের দাওয়াই হচ্ছে চিরতার পানি। রক্তস্বল্পতা দূর করতে সহায়তা করেঃ রক্তস্বল্পতা দূর করার জন্যও চিরতার বেশ সুনাম রয়েছে। যদি আপনি রক্তস্বল্পতায় ভোগেন তাহলে নিয়মিত চিরতার পানি পান করুন উপশম পাবেন।
চিরতা খাওয়ার নিয়ম
বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে চিরতা খাওয়ার নিয়মের ভিন্নতা রয়েছে। যদি জর্জনিত সমস্যা হয় তাহলে 7 থেকে 8 কাপ গরম পানিতে চিরতর সিদ্ধ করে সেটাকে দুই থেকে তিন কাপ পানিতে পরিণত করে সকালে অর্ধেক বিকেলে অর্ধেক খাওয়া যেতে পারে।
যদি কাটা ছেঁড়া বা ক্ষত শুকানোর জন্য চিরতার ব্যবহার করতে চান তাহলে এক কাপ গরম পানিতে চিরতা ভিজিয়ে রেখে ওই পানি থেকে তা দিয়ে ক্ষত মুছে দিলে উপকার পাওয়া যাবে। সমস্যার ক্ষেত্রে এক থেকে দুই গ্রাম চিরতা গুড়ের সাথে সামান্য মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে তাহলে উপকার পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে দুই থেকে তিন দিন সেবন করলে উপকার পাওয়ার আশা রয়েছে।
চুল পড়ার সমস্যা দূর করার জন্য পাঁচ থেকে সাতগাম চিরতা রাতে গরম পানিতে রেখে সকালে ছেঁকে নিয়ে মাথা ভাল করে ধুয়ে ফেলুন তাহলে উপকার পাবেন।
চুলকানিজনিত সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যেতে পারে চিরতার মাধ্যমে। সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ গুড়া করে সেটাকে ১০০ গ্রাম সরিষার তেলের সাথে মিশিয়ে গরম করে নিন এই গরম তেল চুলকানির জায়গাতে লাগিয়ে দিন তাহলে ইনশাল্লাহ উপশম পাওয়া যাবে। তবে কাটা ছেঁড়া কিংবা ক্ষতস্থানে পোড়াতে লাগানো যাবে না।
নিয়মিত চিরতার পানি পান করার মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। তবে একটানা দীর্ঘদিন চিরতার পানি খাওয়া যাবে না তাহলে উপকারের ক্ষেত্রে বিপরীতটাও হতে পারে।
চিরতার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে শেষ কথা
আজকের পোষ্টের আলোচনার বিষয় ছিল চিরতার উপকারিতা এবং চিরতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। এটি একটি ঔষধি গাছ আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি তবে আমার মনে হয় জেনেশুনে বুঝে শুনে তারপরেই সেবন করা উচিত। এছাড়া যার এ ব্যাপারে অভিজ্ঞতা রয়েছে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েই সেবন করা যেতে পারে। যেহেতু প্রাচীনকাল থেকে ভেষজ উপায়ে চিকিৎসা পদ্ধতি চলমান ছিল আছে এবং এখান থেকে উপকার পাওয়া যায় সেহেতু আপনিও চাইলে এখান থেকে চিরতার উপকারিতা গ্রহণ করতে পারেন।