ক্যাডেট কলেজ কিঃ সামরিক বাহিনী দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্যাডেট কলেজ বলা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট 12 টি ক্যাডেট কলেজ আছে।
ক্যাডেট কলেজের ইতিহাসঃ জার্মানিতে প্রথম বিসমার্ক ক্যাডেট কলেজের ধারণা প্রবর্তন করেন। পরবর্তীতে নেপোলিয়ন ফ্রান্সে এরকম শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেন।এখান থেকে ধারণা নিয়ে পরবর্তীকালে তৎকালীন পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের এই শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়। ইংল্যান্ডের উন্নত মানের পাবলিক স্কুলের সাথে এর কিছুটা মিল আছে।
ক্যাডেট কলেজে পড়ার খরচঃ
ক্যাডেট কলেজের বর্তমান বেতন সর্বনিম্ন নির্ধারণ করা আছে আছে ২৫০০ এবং সর্বোচ্চ বেতন ২২০০০।অভিভাবকদের আয়ের উপর বেতন নির্ধারণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়একজন শিক্ষার্থীর বাবা যদি দিনমজুর হয়তাহলে শিক্ষার্থীর বেতন অনেক কম হবেযেমন 2500|আবার শিক্ষার্থীর বাবা যদি শিল্পপতিবাসুদেব অথবা সরকারি চাকরিজীবী হন মাসে অধিক আয় করে থাকেন তাহলে তার মাসিক বেতন সর্বোচ্চ দুই লাখ বিশ হাজার পর্যন্ত হতে পারে|তাই এটি সুনিশ্চিত ভাবে বলা যায় একজন শিক্ষার্থীর মাসিক বেতন তার অভিভাবকের মাসিক আয় এর উপর নির্ভর করবে।তাই ক্যাডেট কলেজগুলোতে মধ্যবিত্ত নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা পড়াশোনা করার সুযোগ পায় কারণ সেখানে তাদের বেতন নির্ভর করে তাদের অভিভাবকের মাসিক আয়ের উপর।
যদিও ক্যাডেট কলেজেগুলোর খরচ নির্ভর করে ঐ ক্যাডেট কলেজে উপর।প্রতি বছর গড়ে খরচ হয় প্রায় ১,০০,০০০।প্রতি বছর এই ১,০০,০০০টাকা মধ্যে থেকে টিউশন ফি, বোর্ডিং ও অন্যান্য ফি হয়ে যায়।
টিউশন ফিঃ টিউশন সাধারণত সব কলেজে এক রকম হয় না একেক কলেজ একেক রকম।তবে সাধারণত ৩০,০০০থেকে ৫০,০০০এর মধ্যেই হয়ে থাকে।
বোডিংঃ বোর্ডিং ফি ও এক কলেজ থেকে অন্য কলেজে পরিবর্তন হয়।সাধারণত ২০,০০০-৩০,০০০এর মধ্যে হয়ে যায়।
আন্যান্য ফিঃ আন্যান্য ফি এই যেমন বই,ইউনিফর্ম সরবাহ প্রতি বছর অতিরিক্ত ২০,০০০ টাকার মতো যোগ হতে পারে।
এটা গুরুত্বপূর্ণ যে টাকার পরিমান টা শুধু মাত্র পরিমাণের ধারণা। সতন্ত্র ক্যাডেটের টাকার পরিমান ক্যাডেটের পরিস্থাতির উপর ভিত্তি করে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ ক্যাডেট কলেজের খরচ কমানোর জন্য করণীয়
১. বৃত্তির জন্য আবেদন করা ক্যাডেট কলেজে ভর্তি ইচ্ছুক ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বেশ কিছু বৃত্তি ব্যাবস্থা আছে।
২.আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন। বাংলাদেশ সরকার আর্থিক ভাবে অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তা করে থাকন|
ক্যাডেট কলেজে অধ্যায়ন করে একটি মান সম্মতশিক্ষা পেয়ে সামরিক , সরকারি চাকরির ও কর্মজীবনে দুর্দান্ত ভালো করা যায়।
পাকিস্তানের ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠা
১৯৫২ সালের শাহীওয়ালে গভার্নমেন্ট কলেজ ও পেশোয়ারি ইসলামিয়া কলেজে মিলিটারি উইং শেখানো শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৪ সালে পাঞ্জাব ক্যাডেট কলেজ নামে প্রথম ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। যদিও পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে যদিও পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে ক্যাডেট কলেজ হাসান আবদাল রাখা হয়। যদি এটি ক্যাডেট কলেজ ছিল কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ব্রিটিশ পাবলিক স্কুলে নিয়োগ অনুযায়ী চালানো হতো। অনেকেরই ধারণা মতে জারের আমলে রাশিয়ায় বিদ্যমান ক্যাডেট কোর ও ব্রিটেন পাবলিক স্কুল এর সমন্বিত ছিল ওই ক্যাডেট কলেজ। এই কলেজ প্রতিষ্ঠার পেছনে মূল ভূমিকা ছিল পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের।
পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৮ সালে।এটি চট্টগ্রাম জেলার ফৌজদারের হাটে অবস্থিত ছিল। প্রথমে কলেজের নামকরণ করা হয় ইস্ট পাকিস্তান ক্যাডেট কলেজ পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ। কলেজের সকল অর্থের যোগান দিত রাষ্ট্র। এটি সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল।
ক্যাডেট কলেজের পড়াশোনা উচ্চমানের হওয়ায়,,, পাকিস্তান সরকার এতে উৎসাহিত হয়ে আরো বেশ কয়েকটি ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।যদিও তার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ছিল তিনটি ক্যাডেট কলেজ।
পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকারের উদ্যোগে ১৯৬০ সালে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় (আবাসিক)। এই ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে কুমিল্লা, রংপুর সিলেট পাবনা ময়মনসিংহ বরিশালে রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ তৈরী করা হয়। রেসিডেন্সিয়াল ও ক্যাডেট কলেজের মধ্যেকিছু মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান।পরবর্তীতে রেসিডেন্সিয়াল স্কুল গুলোকে ক্যাডেট কলেজে রূপান্তরিত করা হয়।
ক্যাডেট কলেজঃ
বর্তমানে দেশে মোট ক্যাডেট কলেজের সংখ্যা বারোটি তারমধ্যে তিনটি মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত।বাকি ৯ টি ছেলেদের জন্য। স্বাধীনতার আগে দেশে ক্যাডেট কলেজের সংখ্যা ছিল ০৪ টি। ২০০৬ সালে সরকারের বিশেষ উদ্যোগে বাকি দুইটি প্রতিষ্ঠিত করা।একটি ফেনি জেলায় অন্য টি জয়পুরহাট জেলায়।এই দুইটি কলেজ ই মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত।
মাধ্যমে ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে ক্যাডেট কলেজের মান অন্যতম।
সুশৃঙ্খল জীবনগড়ে তুলতে ও শিক্ষা উচ্চ মানের জন্য সব অভিভাবকেরাই নিজেদের সন্তান দের ক্যাডেট কলেজ পড়াতে চান।ক্যাডেট কলেজে ভর্তির জন্য এটি সুনির্দিষ্ট বয়সসীমা নির্ধারণ করা আছে।একজন প্রার্থীর বয়স সর্বোচ্চ 13 বছর 6 মাস হবে ।ন্যূনতম উচ্চতা ৪ ফুট ৮ ইঞ্চি বালক বালিকা উভয়ের ক্ষেত্রে।প্রার্থীকে অবশ্যই শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে।
ক্যাডেট কলেজে ভর্তি
ক্যাডেট কলেজের মোট আসন সংখ্যা ৬০০ টি|প্রতিবছর জানুয়ারি মাসের ক্যাডেট কলেজগুলোতে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হয়|জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে ফলাফল প্রকাশ করে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়|সাক্ষাৎকারে পরিচালনা করা হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বোর্ড অফ অফিসার্সদের দ্বারা|ফেব্রুয়ারি মাসের সফল শিক্ষার্থীরা ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হয়|মার্চ মাস থেকে ক্যাডেট কলেজের শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়|