আমাদের বিদ্যালয়। বাংলা রচনা ও প্রবন্ধ

আমাদের বিদ্যালয়। বাংলা রচনা ও প্রবন্ধ
আমাদের বিদ্যালয়। বাংলা রচনা ও প্রবন্ধ 

আমাদের বিদ্যালয়। বাংলা রচনা ও প্রবন্ধ 

ভূমিকাঃ

বিদ্যালয় মোদের বিদ্যালয় 
এখানে সভ্যতারি ফুল ফোটানো হয়।।

বিদ্যালয় আমাদের সবার কাছে এক পরম ভালোবাসার জায়গা। এইখানে রোজ বন্ধুদের সাথে আমাদের দেখা হয়। আমাদের খেলাধুলা থেকে শুরু করে পড়াশোনা সবকিছু নিয়ে প্রতিদিনকার বেশিরভাগ সময়টুকুই আমরা বিদ্যালয়ে কাটাই। আমাদের শিক্ষকেরা প্রতিনিয়ত বিদ্যালয়ের কার্যক্রমের সবক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য করে থাকেন। বিদ্যালয় থেকে এক-দু দিনের ছুটি যেমন আমরা পছন্দ করি, তেমনি দীর্ঘদিন বিদ্যালয় থেকে দূরে থাকা অতি অপছন্দের। 

আমার বিদ্যালয়ঃ

আমার বিদ্যালয়ের নাম রাজা রামমোহন বালিকা বিদ্যাপীঠ। রাজা রামমোহন রায়ের একান্ত ভালোবাসার সংস্থান এটি। এটি কলকাতা শহরের উত্তরে সুকিয়া স্ট্রীট নামক একটি রাস্তার উপর অবস্থিত। আমাদের বিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য হচ্ছে এই বিদ্যালয়ের পিছনেই মস্ত বড় একটি বাগান অবস্থিত।

এটি সমস্ত রকমের ফুলের গাছ দিয়ে ঘেরা মাঝখানের মাঠটি নরম ঘাসে পরিপূর্ণ এবং তারই মধ্যে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি মস্ত বড় বটগাছ। যেটির ছায়ায় দিনের পর দিন আমরা খেলে কাটাই।  আবার কখনো চুপটি করে বসে থাকি; কখনো বা  সহপাঠীদের সাথে গল্প করি। এই পথ আর গাছটি আমাদের অনেক গল্পের সাক্ষী। আমাদের ক্লাসরুম গুলো মস্ত বড়, এক একটি ক্লাসে প্রায় ষাট জন করে ছাত্র-ছাত্রী একসাথে ক্লাস করি। এবং চারপাশে রয়েছে বড় বড় জানালা।

ইতিহাস ও ঐতিহ্যঃ

আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই জেলার এক অন্যতম নামজাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটির স্থাপনাকাল ১৯৬৫ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর। 

যাত্রারম্ভে এখানে দশম শ্রেণি অব্দি পড়ানো হতো। তারপর আস্তে আস্তে উচ্চ বিদ্যালয় হওয়ার পর জেলাজুড়ে এটি সুপরিচিতি লাভ করল। রাজা রামমোহন রায়ের স্মৃতি বিজড়িত এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠেছিল ওনার ই এক অন্যতম কাজের সূত্রে। নারী শিক্ষা। আমরা সকলেই জানি রাজা রামমোহন রায় আমাদের দেশে নারীশিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম পথপ্রদর্শক। সেই কার্যক্রমকে সঙ্গে নিয়েই আজ আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সগৌরবে এগিয়ে চলেছে। 

অবকাঠামোঃ

আমাদের বিদ্যালয়ের মোট 22 টি শ্রেণিকক্ষ, দুইটি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কক্ষ, দুইটি লাইব্রেরি, এবং একটি কম্পিউটার ল্যাব এবং একটি কেমিস্ট্রি ল্যাব। আগেই বলেছি আমাদের বিদ্যালয় সবচেয়ে বড় প্রাঙ্গণ হলো আমাদের বিশাল খেলার মাঠ।

সেখানেই প্রতিবছরের স্পোর্টস আয়োজিত হয়, এবং রয়েছে একটি অডিটোরিয়াম যেখানে প্রতি বছর আমাদের সকল সাংস্কৃতিক এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। আমাদের বিদ্যালয়টিতে প্রায় আটশত ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। এবং প্রায় ৩০ জন শিক্ষক শিক্ষিকাদের নিয়ে আমাদের বিদ্যালয় গঠিত।

ছাত্র /শিক্ষকের সম্পর্কঃ

শিক্ষাকগণ আমাদেরকে তাদের সন্তানদের মতো ভালোবাসেন।আমরা ও শিক্ষকদের খুব মান্য করে চলি।কোনো সমস্যায় পরলে তারা আমাদের তার সমাধান করতে সাহায্য করে থাকে।আমাদের প্রধান শিক্ষক খুবই নীতিবান ও আদর্শবান ব্যক্তি। তিনি আমাদের সাথে প্রয়োজন অনুশারে কখনো পিতা,কখনো বন্ধু, কখনো শিক্ষকের মতোই আচরণ করেন।  

বিশেষ কৃতিত্বঃ

প্রতিবছর এই স্কুল থেকে বৃত্তি পেয়ে থাকে।আমাদের বিদ্যালয়ে লেখাপড়া ছাড়া ও আমাদের চরিত্র গঠন এবং মানবতাবোধ এবং দেশাত্মবোধ জাগ্রত করার জন্য যথেষ্ট প্রচেষ্টা চালানো হয়।খেলাধুলায় আমাদের বিদ্যালয় উপজেলা ও জেলার মধ্যে প্রায় সবসময় শীর্ষ স্থান অধিকার করে।আন্ত:থানা স্কুল ক্রিয়া-প্রতিযোগিতায় আমাদের পুন:পুন বিজয় তারই প্রমান বহন করে।

আমার বিদ্যালয়ের পরিবেশঃ

আমাদের বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের গাছ পালা রিয়েছে।প্রতি বছর বৃক্ষ মেলায় সকল ছাত্র /ছাত্রীদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়।এবং গাছ কেনা হয়। আমাদের স্কুলের প্রধান গেটের কাছে রয়েছে বড় বড় দুটো কৃষ্ণচুরা ও রাধা চুরা ফুলের গাছ।যার ফুল সারা আকাশ ছেয়ে থাকে এবং আমাদের ছায়া দেয়।সেই ছায়ার মাঝেই আমাদের সকালের কর্মসূচি পালন করা হয়।গেইটের ভিতরে রয়েছে বকুল ও কামিনি ফুলের গাছ। যার সুভাসে মেতে থাকি চারিপাশ। সব মিলিয়ে আমাদের বিদ্যালয়ের পরিবেশ খুব সুন্দর ও সতেজ।ছায়ায় ঘেরা একটি বিদ্যালয়। 

বিদ্যালয়ের বাগানঃ

বাগান সবারই একটি শখের জিনিস। আমাদের বিদ্যালয়ে একটি বাগান রয়েছে।যেটাতে আমাদের সকলেই বিশেষ ভুমিকা রয়েছে।আমাদের বিদয়ালয়ের এই বাগানের পরিচর্র‍যা করার জন্য আলাদা কোনো ব্যক্তি নেই।প্রতি সপ্তাহে এক এক করে প্রতিটি শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এর পরিচর্যা করে থাকে।আমাদের বাগানে বিভিন্ন ধরনের ফুল রয়েছে। বিভিন্ন ধিরনের গোলাপ, গাদা,  ডালিয়া, কসমস, ক্যামিলিয়া, গন্ধরাজ, কাঠ গোলাপ, কামিনি, হাইড্রজিয়া, চাপা, রঙণ,  বেলি, বকুল, হাসনাহেনা, নানান ধরনের বাগান বিলাশ,কৈলাস,ক্যক্টাস,নয়ন তারা অনেক জাতের ছোট বড়,বিভিন্ন রঙের ফুলের গাছ রয়েছে। এছাড়াও বিদ্যালয়ের পেছনে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ।যেমন:আম, জাম, কাঠাল, লিচু, পেয়ারা, বড়াই, জলপাই, নারিকেল, চালতা ইত্যাদি।

লাইব্রেরি:

আমাদের বিদ্যালয়ের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান হচ্ছে লাইব্রেরি। এটা আমার খুব পছন্দের একটি  স্থান। এখানে রয়েছে নানান রকমের বই।এখান থেকে বই নিতে হলে লাইব্রেরির সদস্য হিতে হয়।এবং সদস্য কার্ড দেখিয়েই এখানে বই নেয়া ও বই পড়া যায়।লাইব্রেরি তে বই পড়ার জন্য খুব সুন্দর পরিবেশ রয়েছে।এখানে সব ধরনের বই রয়েছে। যেমন: সাইন্স, ইতিহাস, ভৌগোলিক, ডিটেকটিভ, এডভেঞ্চার,  ভৌতিক, বিখ্যাত সব লেখকের উপন্যাস। লাইব্রেরির এক পাশে রয়েছে খেলার স্থান। এখানে দাবা, লুডু, কুইক কুইজ টেবিল টেনিস সহ বিভিন্ন ধরনের খেলার সামগ্রী রয়েছে।

খেলাধুলাঃ

আমাদের বিদ্যালয়ে আরও রয়েছে বিশাল বড় একটি খেলার মাঠ।এখানে আমরা নানা ধরনের খেলাধুলা করে থাকি।বিদ্যালয়ে একজন ক্রিয়া শিক্ষক রয়েছেন।তিনি আমাদের নিয়মিত শরিরচর্চা,ও খেলা ধুলা  করান।

সৃজনশীল কর্মকান্ডঃ

আমাদের বিদ্যালয়ে অনেক গুলো ক্লাব রয়েছে।যেমন,বিতর্ক ক্লাব,আবৃতি,ক্লাব,নিত্য ক্লাব,সংগীত ক্লাব,বিজ্ঞান ক্লাব,রচনা ক্লাব,নাট্য ক্লাব,শরীরচর্চা  ক্লাব।এই গুলোর মাধ্যমে আমরা ভিবিন্ন ধরনের সৃজনশীল  কর্মকান্ডে অংশ নিয়ে থাকি।

অনুষ্ঠানঃ

আমাদের বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের বিদ্যালয়ের বেশ সুনাম রয়েছে।প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে আমাদের স্কুলে বার্ষিক ক্রিয়া প্রতিযোগিতা ও সংস্কৃতি অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। দৌড়,লং ঝাপ,চাকতি নিক্ষেপ,ভর্সম্য দৌড়,রশি খেলা,হাই জাম,চেয়ার খেলা,বালিশ পাচার সহ বিভিন্ন ধরনের খেলার আয়োজন করা হয়। এবং পুরুস্কার বিতরনি অনুষ্ঠানে প্রথম ও দ্বিতীয় প্রতিযোগিতাদের পুরুস্কৃত কথা রা হয়।এছাড়া আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষা দিবস,বিজয় দিবস,স্বাধীনতা দিবস,বিদ্যার দেবীর পুজা ও ঈদে মিলাদুন নাবী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

প্রতিযোগিতা মুলক কর্মসূচিঃ

প্রতিবছর আমাদের বিদ্যালয়ে প্রতিযোগিতা মুলক কর্মসূচি পালন করা হয়। তাতে আমাদেরই বিদ্যালয়ের ক্লাবের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ অংশগ্রহণ করে থাকে।রচনা,আবৃতি,সংগীত, নৃত্য,  তর্ক  বিতর্ক,চিত্রাংকনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এবং পুরুষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে তাদের পুরুষ্কার দেয়া হয়।এতে করে সকল শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা মনোভাব তৈরী হতে সহায়তা করে।

ফলাফলঃ

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনি পরিক্ষায় প্রতিবছর আমাদের বিদ্যালয় থেকে ট্যালেন্টফুলে বৃত্তি সহ বেশ কয়েকজন ছাত্র/ছাত্রী এ+ পায়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল দিয়ে সবার নজর কারে।

স্কুল ম্যাগাজিনঃ

প্রতি বছর আমাদের স্কুলে স্কুল ম্যাগাজিন প্রকাশ করা হয়।তাতে স্কুলের ছাত্র ছাত্রী সহ শিক্ষকরা অংশ গ্রহন করে থাকে।এতে শিক্ষার্থীরা নিজের অনুভুতি প্রকাশ করতে পারে ছোট গল্প,বড় গল্প,কবিতা আকারে।

স্কুল শপঃ

আমাদের বিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হল এখানে স্কুলে ছাত্র ছাত্রী দের নিজের তৈরির একটি দোকান রয়েছে।এই স্কুলের দোকানের মাধ্যমে ছাত্র ছাত্রীদের সততা শিখানো হয়।আদর্শ চরিত্র গঠনের মুল মন্ত্র এটাই।কেননা এই দোখানে কোনো লোক বা সিসি ক্যামেরা নেই।একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষার জন্য যা যা প্রয়োজন এখানে তার সব সব কিছুই রয়েছে।আর শিক্ষার্থীদের যা লাগবে তারা তার দাম নিজের ইচ্ছেমতো টাকার বক্সে রেখে দেবে।এটাই হল সততা।

বিদ্যালয়ের একটি স্মরণীয় ঘটনা: 

আমি সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী। স্কুল লীগের খেলায় আমাদের স্কুল ফাইনালে উঠেছে। গতবছর সেমিফাইনালে ভাল খেলেও আমাদের স্কুল হেরে গিয়েছিল। এবছর বিপরীত ঘটনা। আমরা খুবই উৎফুল্ল। কেননা প্রতিপক্ষ স্কুলকে আমরা একাধিকবার হারিয়ে দিয়েছি। জয় আমাদের নিশ্চিত। খেলা হবে আমাদের স্কুলের মাঠে। স্কুল শুরুর  আগে  প্রার্থনা হয় ,জাতীয় সংগীত হয়।

প্রার্থনা শেষে প্রধান শিক্ষক মহাশয়া আমাদের স্কুলের খেলোয়াড়দের মঞ্চের উপর আহ্বান করলেন। তাদের উৎসাহ দিলেন। সমবেত ছাত্রীরা ফাইনাল খেলা দেখতে আসার জন্য চতুর্থ ঘন্টার পর ছুটির আবেদন করা হলো। আমি ছিলাম সেই বছর স্কুল লিগ খেলার অন্যতম লিডার। প্রত্যেকে একসাথে মিলে স্কুল লীগের নিয়মিত প্র্যাকটিস সেখান থেকে নানা অচেনা ছাত্রীদের  সাথে আলাপ এবং বন্ধুত্ব স্থাপন। এবং নানা রকম অভিজ্ঞতা দিয়ে সেবার শেষ হয়েছিল আমাদের স্কুল লিগ। সেই দিনটি ভোলার মত নয়।

উপসংহার: 

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড।

ভালো শিক্ষার জন্য যেমন প্রয়োজন আদর্শ শিক্ষকের তেমনি প্রয়োজন ভালো পরিবেশের একটি স্কুল।

আমাদের বিদ্যালয় শুধুমাত্র ভালো শিক্ষা এবং ভালো ফলাফল নয়, বরং সর্বদা একজন ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে উৎসাহ দেয় বারবার। সেইজন্য আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নানা শিক্ষানুরাগীদের মনে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে রয়েছে। শুধু পুঁথিগতই নয়, প্রকৃত মূল্যবোধের শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে প্রতিবছর আমাদের স্কুল থেকে ছাত্রীরা নিজেদের জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমি এই বিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবে গর্ব বোধ করি।

হাবিবা আফরিন

আমার নাম হবিনা আফরিন । ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি আমার শখ। sorolmanus.com আমার সেই শখ পুরণে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আশা করছি আমার লেখার মাধ্যমে আপনারা উপকৃত হবেন। সবাই আমার ও আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads