জাতীয় শোক দিবস। রচনা ও বাংলা প্রবন্ধ সকল শ্রেণীর জন্য

জাতীয় শোক দিবস।। রচনা ও বাংলা প্রবন্ধ সকল শ্রেণীর জন্য
জাতীয় শোক দিবস

জাতীয় শোক দিবস রচনা 

 ভূমিকাঃ

যদি রাত পোহালে শোনা যেত,বঙ্গবন্ধু মরে নাই,
যদি রাজপথে আবার মিছিল হতো বঙ্গবন্ধুর 
মুক্তি চাই,মুক্তি চাই,মুক্তি চাই,
তবে বিশ্ব পেত ফিরে মহান নেতা
আমরা পেতাম ফিরে জাতির পিতা।। 

দ্বিধাবিভক্ত পরাধীন জাতিকে সুসংগঠিত করে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করা এবং সঠিক নেতৃত্ব দেয়া সহজ কাজ নয়।অথচ এই কঠিন কাজ টি বঙ্গবন্ধু খুব সহজেই করতে পেরেছিলেন।স্বাদীকার থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম সবাই পরিচালনা করেছেন শেখ মুজিবুর রহমান অসীম দক্ষতা ও যোগ্যতায়। তার ছিল মানুষকে উদ্ধুদ্ধ করার মতো অসাধারণ ব্জ্রকন্ঠ।অনলবর্ষী বক্তা হিসেবে তার বিপুল খ্যাতি ছিল। অথচ সবার সেরা আর বাঙালির  প্রানপ্রিয় এই নেতাকে ঘাতকেরা কি নিষ্ঠুরভাবেই না হত্যা করলেন!সেই সাথে ঘাতক্রা শুধু একজন মানুষকে হত্যা করেনি, হত্যা করেছে ১৬ কোটি বাঙালির পিতাকে,হত্যা করে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যকে,হত্যা করেছে সমাজের নিরীহ,অত্যাচারীত,শোষিত, নির্যাতিত সকল মানুষের আশা, আকাঙ্ক্ষার সত্য প্রতিককে।ঘাতকেরা বাঙালি জাতি এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কালো অধ্যায় রচিত করেছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চিত্রকর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার মাধ্যমে। ১৫ আগস্ট জাতির জীবনে এক কলঙ্কময় দিন।এই দিনটিকেই জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করে বাঙালি জাতি।

বঙ্গবন্ধুর জীবনীঃ

শেখ মুজিবুর রহমান (১৭ই মার্চ ১৯২০ – ১৫ই আগস্ট ১৯৭৫), সংক্ষিপ্তাকারে শেখ মুজিব বা বঙ্গবন্ধু ৷ ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ভারত বিভাজন আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কেন্দ্রীয়ভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেন। শুরুতে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি, এরপর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন।

পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন অর্জনের প্রয়াস এবং পরবর্তীকালে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পেছনের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে কৃতিত্ব রাখেন ৷

এছাড়াও তাকে প্রাচীন বাঙালি সভ্যতার আধুনিক স্থপতি ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জনসাধারণের কাছে তিনি “শেখ মুজিব” বা “শেখ সাহেব” নামে এবং তার উপাধি “বঙ্গবন্ধু” হিসেবেই অধিক পরিচিত। তার কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুঃ

বাংলাদেশের নামের সাথে মিশে আছে যে নাম সেটা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৷ বাংলাদেশের একচ্ছত্র এবং অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের নাম অগ্রগণ্য ৷ তিনি এক বিস্ময় বালক ৷ জন্মের পর থেকেই দেশ মাটি ও মানুষের ভাবনা তাকে তাড়িত করতো ৷ তিনি ছোটবেলা থেকেই একজন মানবিক বালক ছিলেন ৷ এবং খেলাধুলার সাথীদের মধ্যে নেতা হয়ে ওঠেন ৷ তিনি সবার সুখে দুখে পাশে থাকবার চেষ্টা সেই শৈশব কাল থেকেই করে আসছেন ৷

এক দিন খোকা ছাতা নিয়ে বেরিয়েছিল কিন্তু সেই ছাতা ছাড়াই বাড়িতে এসেছে ৷ বঙ্গবন্ধুর মা জিজ্ঞাসা করলেন ৷  স্কুলে গিয়েছিলে সেই ছাতাটি কোথায়?  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অত্যন্ত সাবলীল ভাবে ৷ নম্র ভাষায় তার মাকে বললেন, মা আমার এক ক্লাসমেট বন্ধু ৷ যে প্রতিদিন বৃষ্টিতে ভিজে স্কুলে আসা-যাওয়া করে ৷ তাকে ছাতা কিনে দেওয়ার মতো সামর্থ্য তার পরিবারের নাই ৷ তার কষ্ট দেখে আমার ভীষণ মায়া হয় ৷ তাই আমার ছাতাটি আমার সেই বন্ধুকে দিয়ে এসেছি ৷ যাতে করে সে ছাতা নিয়ে প্রতিদিন স্কুলে আসা যাওয়া করতে পারে নির্দ্বিধায় ৷ তাকে যেন আর বৃষ্টিতে ভিজতে না হয় ৷ সে কারণেই মূলত তাকে দিয়েছি ৷

তিনি বুঝতে পারলেন তার পুত্র এখন আর ছোট নেই ৷ সে এখন নিজেকে নিয়ে শুধু ভাবনার বয়সে নাই ৷ দুঃখ এবং দুর্দশাগ্রস্থ মানুষদের নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছে ৷ সে তার প্রতিবেশী এবং ক্ষুধার্ত মানুষদের নিয়ে ভাবছে ৷ ভবিষ্যতে অনেক বড় কিছু হবেন বঙ্গবন্ধু ৷ সে স্বপ্ন এবং আশায় দেখছিলেন বঙ্গবন্ধুর মা ৷

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আপাদমস্তক একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন ৷ ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস ৷ দেশ ও জাতির জন্য যিনি এত ত্যাগ করেছেন ৷ দেশ মাটি মানুষের জন্য যিনি কাজ করেছেন ৷ ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের মানুষের কল্যাণের যতগুলো আন্দোলন হয়েছে ৷ সবগুলো আন্দোলনে নিজেকে ব্যাপকৃত রেখে যে মানুষটি দেশের জন্য কাজ করেছেন ৷ মানুষের জন্য কাজ করেছেন ৷ একটা সময় সে দেশ ও জাতি তার সাথে গাদ্দারি করে বসলো ৷ এমন কি এমনকি তাকে ব্রাশ ফায়ার করে দুনিয়া থেকে চির বিদায় করল ৷

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের মাটি ও মানুষকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন ৷ তিনি একটি ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন ৷ যেখানে থাকবে না কোন হানাহানি ৷ মারামারি খুন-খুনি ৷ একে অপরের সৌহার্দ্রো সম্প্রীতি নিয়ে বসবাস করে সুন্দর একটি সোনালী সমাজ তিনি উপহার দিতে চেয়েছিলেন ৷

তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশের রাস্তাঘাট যাবতীয় উন্নয়ন সাধিত করতে ৷ তিনি একটি সোনালী সূর্যোদয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন ৷ বাংলাদেশের কোন মানুষ আর খুধার যন্ত্রণায় ছটফট করে মারা যাবে না ৷ আর কোন মেয়ে ধর্ষিতা হবে না ৷ আর কোন চোর বাটপার খুনি ডাকাত বদমাশ লম্পটদের দেখা মিলবে না ৷

বাংলাদেশ হবে একটি রোল মডেল ৷ বিশ্বের জন্য একটি মডেল রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হবে ৷ বাংলাদেশ সারা পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম একটি সেরা দেশ হিসেবে আখ্যায়িত হবে ৷ পরিপূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত নির্মল এক সোন সোনালী স্বদেশ হবে বাংলাদেশ ৷ এমন একটি দেশের স্বপ্ন দেখায় কি বঙ্গবন্ধুর অপরাধ? তবে কি অপরাধে তাকে এভাবে নৃশংসভাবে খুন হতে হলো ৷ বঙ্গবন্ধু মনে করেছিলেন তিনি যেভাবে দেশ পরিচালনা করছেন ৷ এভাবেই তিনি একটি সোনালী সমাজ উপহার দিতে পারবেন ৷ কতিপয় বিশ্বাসঘাত গাদ্দার দেশ ও জাতির শত্রু বঙ্গবন্ধু  এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের আগেই তাকে দুনিয়া থেকে চিরতরে বিদায় করে দেয় ৷

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাষ্ট্রপতিত্বঃ

১৯৭১ সালে ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা দেয়ার পর তাকে বন্দিকরে রাখা হয়।১৯৭১ সালে ১৬ ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।স্বাধীনতা লাভের পর বাঙালির প্রাণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কারামুক্তি দেয়া হয়।তিনি লন্ডন ও ভারত হয়ে বাংলাদেশে পা রাখেন।সেই দিনটি ছিল ১৯৭২ সালের ১০ ই জানুয়ারী " স্বদেশ প্রত্যাবর্তন " দিবস হিসেবে পালন করা হয়। তারপর তিনি একই বছরের ১২ই জানুয়ারী দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এর পরবর্তি ৩ বছর তিনি উক্ত পদে থাকেন।তারপর ১৯৭৫ সালে তিনি রাষ্ট্রপতির দায়ীত্ব গ্রহণ করেন।ধারণা করা হয় বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ ষড়যন্ত্রকারীদের পছন্দ  হয়নি।

দেশের যুদ্ধবিধ্বস্হ অবস্থাঃ

১৯৭১ সালে সংঘটিত হয় মুক্তিযুদ্ধ। সেই মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ হারায় ৩০ লাক্ষ বাঙালি এবং ধর্ষিত হয় ২ লক্ষ্য নারী। এই সকল ঘটনাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান "ইতিহাসের জঘন্যতম ধংসযজ্ঞ " বলে ঘোষণা করেন।তখন বাংলাদেশের অবস্থা ছিল করুন। বিশেষ করে অর্থনীতিতে। তবে সদ্য স্বাধীন হয়া রাষ্ট্রের জনগণের ছিল উচ্চা আকাঙ্ক্ষা। যা পূরন করা বঙ্গবন্ধু সরকারের পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে পরেন।

প্রেক্ষাপটঃ

স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে ১১ ই জানুয়ারী তারিখ হতে ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট পযর্ন্ত  শেখ মুজিবুর রহমানের শাসন কার্যকর ছিল। এই সময় অর্থাৎ মাত্র ৩ বছর ৮ মাসের মাথায় স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী শেখ মুজিবের একক ও সর্বাত্নক নেতৃত্বধীন আওয়ামী লীগ দলীয় সরকারের পতন ঘটে ও নেতৃত্বের অবসান হয়।নিচে এর জন্য দ্বায়ী কয়েকটি কারণ লিখা হলঃ

১)সেনাবাহিনীর প্রতি উপেক্ষা: রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতা গ্রহণ করার পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণের প্রতি সে ভাবে গুরুত্ব দেয় নি।পাকিস্তান ফেরত সামরিক অফিসারদের প্রতি বৈরী মনভাব ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত অফিসারদের দ্রুত পদ উন্নতি, প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়, বরাদ্দের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাসকরন এবং সামরিক বাহিনীর সমান্তরাল রক্ষি বাহিনী তৈরী ও তার দ্রুত উন্নয়ন এবং এর উপর সরকারের নির্ভরশিলতা সামরিক বাহিনীর লোকদের মধ্য প্রচন্ড ক্ষোভের সঞ্চার করে।তাই ক্ষমতাশিন সরকারের দলীয় লোকদের সীমাহীন লোভ ও দূর্নীতির প্রক্ষাপটে মুজিব সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাসের সুযোগে হত্যা কান্ড চালায়।

২) রাজনৈতিক কারণ : ১৯৭৫ সালের সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী সংগঠন করে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের সমস্ত রাজনৈতিক তৎপরতা ও রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রর্বতনের মাধ্যমে গনতন্ত্রে কুঠারাঘাত করে।ফলে জনগণের মনে এ নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয়।

৩)সামরিক অভ্যুথান: সেনাবাহিনীর কতিপয় অফিসারের সঙ্গে সরকারের অপ্রত্যাশিত আচরনের কারণে তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা যায়।

হত্যাকান্ড পর্বরতী ঘটনাঃ

১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর দেশে জাড়ি করা হয় সামরিক শাসন।গনতন্ত্রকে বাদ দিয়ে কেড়ে নেয়া হয় মানুষের মৌলিক অধিকার। দেশে সৃষ্টি হয় এক প্রকারের অরাজকতা, ও বিশৃঙ্খলা। অপরদিকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের ও কোনো প্রকার বিচার করা হয় নি।এর মধ্যে দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আঘাত করা হয়।বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর সারা দেশের শাসনব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব লক্ষিত হয়,এবং অন্যান্য দেশের কাছে বাংলাদেশের মর্জাদা ক্ষুন্ন করা হয়।

জাতীয় শোক দিবস কী?

জাতীয় শোক দিবস বাংলাদেশে পালিত একটি জাতীয় দিবস। প্রতিবছরের ১৫ আগস্ট জাতীয় ও রাষ্ট্রীয়ভাবে এ দিবসটি শোকের সাথে পালন করা হয়। এ দিবসে কালো পতাকা উত্তোলন ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তারিখে বাংলাদেশ ও স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে এ দিবসের উৎপত্তি।

জাতীয় শোক দিবসের ইতিহাসঃ

১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের নিজ বাসায় সেনাবাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সেনাসদস্যের হাতে সপরিবারে নিহত হন। সেদিন তিনি ছাড়াও নিহত হন তার স্ত্রী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব। এছাড়াও তাদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনসহ নিহত হন আরো ১৬ জন।

ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজি মজিবুর রহমানকে হত্যা করে ক্ষান্ত হয়নি ৷ বরং তার পরিবারবর্গের অন্যান্য আরো ১৬ জন নিহত হয় ৷ ১৫ আগস্ট নিহত হন মুজিব পরিবারের সদস্যবৃন্দ: ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু পুত্র শেখ রাসেল; পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজী কামাল; ভাই শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগনে শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণি। বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসেন কর্নেল জামিলউদ্দীন, তিনিও তখন নিহত হন। দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও তার ছোটবোন শেখ রেহানা।

প্রতি বছর ১৫ আগস্ট জাতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সকল সদস্যদের, পালিত হয় জাতীয় শোক দিবস।

কবে জাতীয় শোক দিবসের ঘোষণা হয়ঃ

বাংলাদেশের যতগুলো হত্যাকান্ড হয়েছে এর মধ্যে অন্যতম জঘন্য হত্যাকান্ড হলো ৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবার বর্গের উপর নৃশংস হত্যাকাণ্ড ৷ বাংলাদেশের সর্বপ্রথম শোক দিবস পালন করা হয় ১৯৯৬ সালে ৷ আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ড এবং তার খুনিদের বিচারে তৎপর হয় ৷ এবং ১৯৯৬ সালে সর্বপ্রথম ১৫ ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হয় ৷

বঙ্গবন্ধুর হত্যায় জড়িতদের বিচার কর্মসূচিঃ

দায়মুক্তি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত এসব খুনিকে বিচারের সম্মুখীন হওয়া থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিচারের উদ্যোগ নেয় এবং বিচারিক কাজ শেষে ২০১০ সালে আদালতের রায় অনুসারে পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তবে দণ্ডপ্রাপ্ত ছয় খুনি এখনো পলাতক রয়েছে।

জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি বা উৎযাপনঃ

আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল সাড়ে ছয়টায় ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, সকাল সাড়ে সাতটায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল। সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। দুপুরে অসচ্ছল, এতিম ও দুস্থ ব্যক্তিদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করা হবে।

উপসংহারঃ

১৫ ই আগস্ট দিনটি বাঙালির ইতিহাসের একটি জঘন্য ঘটনা ও কালো অধ্যায়। এই দিনটিকে ১৬ কোটি বাঙালি স্বরণ করে শোকের সাথে।শোক দিবস তাই সার্থক হবে যখন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সোনার বাংলাদেশ বাস্তবাইত হবে।পুরো বাঙালি জাতি এই দিনটিকে শ্রদ্ধা ভরে স্বরণ করে।কেননা বঙ্গবন্ধু বাঙালির মনে। তাই তো কবি বলেছেন-

"যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরি মেঘনা বহমান 
ততকাল রবে কীর্তি  তোমার শেখ মুজিবুর রহমান "।

হাবিবা আফরিন

আমার নাম হবিনা আফরিন । ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি আমার শখ। sorolmanus.com আমার সেই শখ পুরণে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আশা করছি আমার লেখার মাধ্যমে আপনারা উপকৃত হবেন। সবাই আমার ও আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads