এজমা থেকে মুক্তির উপায়
বর্তমানে এজমা সমস্যার নাম শুনে নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আমরা নিজেরা কিংবা আমাদের আশেপাশে বহু লোক এই এজমা সমস্যায় ভুগছেন। বিশেষ কারনবশত শ্বাসনালী সরু বা সংকুচিত হয়ে গেলে শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা তৈরী হয়। সেটাই এজমা বা হাঁপানি। বিশেষজ্ঞদের মতে হাপানি স্থায়ী ও বংশানুক্রমিক একটি অসুখ। আরো বলা হয় এই রোগের কোনো নিরাময় নেই৷ অর্থাৎ এমন কোনো সমাধান নেই যার ফলে একবারে এজমা সমস্যা নির্মূল হয়ে যাবে৷
তবে চিন্তার কোনো কারন নেই। এজমা কোনো মরণব্যাধী রোগ নয়। এজমা থেকে মুক্তি কিংবা সাময়িক নিরাময়ের অনেক উপায় রয়েছে। এসব চিকিৎসা করালে এবং জীবনযাপনের সাধারন কিছু নিয়ম মেনে চললে, এজমা আপনার স্বাভাবিক জীবনযাপনে কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। কিন্তু অনেকেই জানেন না এজমা থেকে মুক্তির উপায় কি। এ কারনে এজমার প্রকোপ অনেক মানুষকে নাজেহাল করে দেয়। তাই আমরা আজকে এজমা কি? কেন হয়? এবং এজমা থেকে মুক্তির উপায় গুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরব।
এজমা থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো আজকের প্রতিবেদনে। এজমা বা হাপানি এরকম সমস্যায় ভুগেন অনেকে। যাদের এজমা আছেন তারা এই থেকে চিরতরে কিভাবে মুক্তি পাবে সেটি নিয়ে আজকের আলোচনা।এজমা মুলত শ্বাসনালীতে যখন ইওসিনোফিল কোষ ও অন্যান্য উপাদান জমা হয় তখন শ্বাসনালীর ছিদ্রপথ সংকোচিত হয়ে যায়।তখন একজন ব্যাক্তির শ্বাস নিতে কষ্ট কিংবা বাধার সৃষ্টি হয়।এবং এতে শ্বাসনালীতে প্রদাহ তৈরি হয়।এই যে সংকোচিত হয়ে যাওয়া কিংবা প্রদাহ হয়ে যাওয়াকেই বলে এজমা।তবে আমরা অনেকে জানি না শ্বাসকষ্ট এবং এজমা এক জিনিস না।যদিও এটি আমরা এক করে ফেলি।এজমা একটা রোগ বলা চলে যার চিকিৎসা নেওয়া খুব জরুরি।
এবং শ্বাসকষ্ট হচ্ছে অনেকগুলো রোগের উপসর্গ মাত্র।তাই কিভাবে এজমা হয়,কেনই বা এজমা হয় এজমা হওয়ার ফলে কি কি ক্ষতি হয়,এবং এজমার প্রকারভেদ সহকারে সম্পুর্ন ভাবে বিস্তারিত আলোচনা করবো।আশা করি আপনি এজমা রুগি হলে এখান থেকে ভালো উপকার পাবেন।এবং এজমা দূর করার জন্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কিভাবে এজমা চিরতরে দূর হবে সেই সকল ব্যাপারে জানতে পারবেন।আশা করি সম্পুর্ণ প্রতিবেদন টি পড়বেন।
এজমা কি?
এজমা থেকে মুক্তির উপায় জানার আগে আসুন আমরা জেনে নেই এজমা কি?
শ্বাসনালীতে অনেক সময় ইওসিনোফিল কোষ ও অন্যান্য উপাদান জমা হয়। ফলে শ্বাসনালীর ছিদ্রপথ সংকুচিত হয়ে যায়। তখন শ্বাসপ্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি হয় ও শ্বাসনালিতে প্রদাহ তৈরী হয়। শ্বাসনালী সরু হয়ে যাওয়া ও প্রদাহ সৃষ্টিকারী এই অবস্থাকেই বলা হয় এজমা। তবে অনেকেই শ্বাসকষ্ট ও এজমাকে এক করে ফেলেন। এজমার কারনে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তবে এজমা ও শ্বাসকষ্ট এক জিনিস নয়। শ্বাসকষ্ট অনেক রোগের উপসর্গ মাত্র।
এজমা কেন হয়?
এজমা থেকে মুক্তির উপায় জানতে হলে এটিও জেনে রাখা উচিত এজমা কেন হয়।এজমা হওয়ার বিভিন্ন কারন থাকতে পারে তবে উল্লেখযোগ্য কারন গুলো সম্পর্কে আলোচনা করবো।
১.শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যার কারনের এজমা বা হাপানি হয়ে থাকে।যা একটি অসহনীয় যন্ত্রনাদায়ক ব্যাধি বলা চলে।বর্তমানে এই রোগের পরিধি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।যেহেতু শ্বাসকষ্ট জনিত কারনে এজমা হয় তাই জানতে হবে কেন শ্বাসকষ্ট হয়।
আমরা প্রত্যাহিক জীবনে সবসময় যা এরিয়ে চলার চেষ্টা করি, কিন্তু পারি না সেই সব কারনেই শ্বাসকষ্ট হয়।যেমন বাসা বাড়িতে জমে থাকা ধুলাবালি, ময়লা,বা বিভিন্ন যায়গায় জমে থাকা ধুলাবালি যা আমাদের শ্বাসকষ্টের জন্য উদ্রেককারী।
রাস্তাঘাটে যে ধুলাবালি আছে সেগুলো শ্বাসকষ্টের প্রধান কারন।কেননা এই ধুলা খুব সহজে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে।যার কারনে এজমা হয়ে থাকে।
এছাড়াও বেশ কিছু কারন রয়েছে যেগুলো কারনেও এজমা হয়।
২.শিশুদের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় বংশগত কারনে এজমা হয়ে থাকে।
৩.যদি বংশে কিংবা রক্ত সম্পর্কের কারো এজমা থাকে তাহলে তার এজমার ঝুকি থাকে।তারাই মুলুত বেশি এজমা রোগে আক্রান্ত হয়।
৪.এছাড়াও যারা গারমেন্টস কিংবা এরুপ ফ্যাক্টরি তে চাকরি করে তাদের এজমা হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।কেননা ফ্যাক্টরির ভিতরে প্রচুর ডাস্ক থাকে যা নাক দিয়ে শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে এবং এজমা হয়।
এ ছাড়া বিভিন্ন খাদ্য, পতঙ্গজনিত অ্যালার্জি, ছত্রাকজনিত অ্যালার্জি, আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত অ্যালার্জি, ওষুধজনিত অ্যালার্জি ইত্যাদি থেকেও অ্যাজমা হতে পারে।
এজমার লক্ষণ গুলো কী কী
এজমার কিছু কমন লক্ষন রয়েছে, যেগুলো থেকে খুব সহজেই আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনি এজমায় আক্রমণে কি না।এজমা থেকে মুক্তির উপায় জানতে হলে এটা সম্পর্কে ও আমাদের জেনে নেয়া প্রয়োজন। আপনার কিংবা অন্য কারোর এজমা হয়েছে কিনা সেটা জানতে আপনাকে সাহায্য করবে।
যে উপসর্গ গুলো দেখতে পাওয়া যায় একজন এজমা রোগীর ক্ষেত্রে তা হলো।
১.শ্বাস প্রসাস নিতে এবং ছাড়তে ভিষণ কষ্ট হয়।
২.সাধারণ ব্যাক্তির তুলনায় এদের কাশির ধরন আলাদা হবে এবং কাশি ঘন ঘন হবে।
৩.যেহেতু শ্বাসনালী সংকোচিত হয় তাই বুকের ভিতর শ শ বাশির মত শব্দ হয়।যেটা অনেকটাই আওয়াজ হয় যেটা বাইরে থেকেও বুঝা যায়।
৪.ঠিক ভাবে শ্বাস নিতে না পারায় এজমা রোগীর একটা বড় লক্ষন হচ্ছে এদের বুক ভাড়ি হয়ে থাকে।
৫.বুক ভাড়ি হয়ে থাকায়, দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত অনুভূতি সবসময় হয়।এটি সবচেয়ে চোখে পড়ার মত লক্ষন।
৬.কাশি খুব ঘন ঘন হয়। একজন গর্ভবতী মহিলার এজমা হলে কিভাবে বুঝবেন।
৭.এমতবস্থায় অনেকের এজমা হয়।তাদের এই সময়ে উচ্চরক্তচাপ দেখা দিতে পারে। উচ্চরক্তচাপ এজমার লক্ষন।
অ্যাজমার উপসর্গ
কিছু উপসর্গ আছে যাথে বোঝা যাবে যে আপনি এজমার রোগী কি না।এজমা থেকে মুক্তির উপায় পেতে এগুলো জেনে নেয়া প্রয়োজন। তাহলে এই সমস্যায় ভুগলে আপনি সহজে তা বুঝতে পারবেন।
মূলত ফুসফুসে যেসব নালীগুলির মাধ্যমে বায়ু চলাচল করে সেগুলোর সংকীর্ণতার জন্য এজমা বা হাঁপানির লক্ষণ গুলো দেখা যায়। এজমার লক্ষণ গুলো হল-
- ১.নিঃশ্বাস বা ঊর্ধশ্বাসে দুর্বলতা
- ২.বুকের ভেতর শো শো শব্দ
- ৩.শুকনো কাশি
- ৪.বুকে ব্যথা
- ৫.রাতে হঠাৎ দম আটকে যাওয়া।
এজমা কত প্রকার
এজমা থেকে মুক্তির উপায় পেতে এজমার ধরন ও প্রকার গুলো জেনে রাখা উচিৎ। কেননা এক এক ধরনের এজমার এক এক রকমের চিকিৎসা হয়ে থাকে।তাই এজমা থেকে মুক্তির উপায় জানার সাথে সাথে আসুন আমরা এটা ও জেনে নেই।
এজমা মুলুত কত প্রকার এবং কোন ধরনের এজমার জন্য কিভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে সেই ব্যাপার গুলো আমাদের জানতে হবে।এজমা মুলত ৪ প্রকার।
- ক.বিরতিহীন এজমা
- খ.স্থায়ী মৃদু এজমা
- গ.স্থায়ী মধ্যম এজমা
- ঘ.অবিরাম তীব্র এজমা।
১.বিরতিহীন এজমাঃ
এই এজমা মুলুত খুব অল্প সময় থাকে।প্রতি সপ্তাহে ২ দিন খুব কাশি হবে এবং প্রতি মাসে ২ বার রাতে হাপানি বা এজমা হতে পারে।
২.স্থায়ী মৃদু এজমাঃ
এই স্তরে যারা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে সপ্তাহে ২ দিনের বেশি তবে প্রতিদিন নয় এরকম ভাবে কাশি হবে।এবং এদের মাসে তিন থেকে চার বার এজমা হতে পারে।
৩.স্থায়ী মধ্যম এজমাঃ
এই স্টেপে যারা থাকে তারা মুলুত কষ্ট করে প্রতিদিন নিজের সাথে।প্রতিদিনের কাজে ব্যাঘাত ঘটে।এবং এই স্টেপে যারা রয়েছে এদের প্রতি সপ্তাহে একের অধিক বার এজমা হয়ে থাকে।একজন ব্যাক্তির ৬০ ভাগের মধ্যে ৪০ভাগে পৌছে এই স্টেপের রোগী দের।
৪.অবিরাম তীব্র এজমাঃ
এই স্টেপে যারা থাকেন তারা প্রতিদিন এজমা অনুভব করেন।এবং সবসময় এটি উপলব্ধি করতে পারেন।রাত্রিকালীন জাগরনে সপ্তাহে ৭ দিন তাদের ঘুম হয় না বললেই চলে।এজমার তীব্র আক্রমণের কারনে।।চিকিৎসা না করলে এই ধিরনের রোগীর খুব বাজে অবস্থা হয়ে যেতে পারে।এরা খুব ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় প্রতিদিন থাকে।
এজমা হলে কি করনীয়
এজমা হলে কিছু কাজ আপনাকে নিয়ম করে মেনে চলতে হবে।যার মাধ্যমে আপনি এই রোগ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন।বা এই এজমা থেকে মুক্তির লাভ করতে পারেন।এজমা একেবারে নির্মুল হয় না।তবে এজমা কে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।এজমা হলে করনীয় গুলো জেনে নেই।
- ১.মানসিক চাপ, উৎকণ্ঠা এড়িয়ে চলতে হবে।
- ২.নিয়মিত চেকআপ করাবেন।
- ৩.ভিটামিন-এ জাতীয় খাবার, কলিজা, গাজরসহ শাক-সবজি ও মধু খাবেন।
- ৪.নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করতে পারেন।
- ৫.বাড়িতে পোষা প্রাণী (কুকুর, বিড়াল) থাকলে নিয়মিত গোসল করাতে হবে বা পরিচ্ছন রাখতে হবে।
- ৬.ধূমপান ও ধুলোবালি এড়িয়ে চলুন।
- ৭.বালিশ লেপ তোশক-পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
- ৮.অ্যাজমার ওষুধ বা ইনহেলার সবসময় হাতের কাছে রাখুন।
- ৯.অ্যাজমার ওষুধ বা ইনহেলার সবসময় হাতের কাছে রাখুন।
- ১০.ঘরে কার্পেট ব্যবহার না করা।
- ১১.ঠাণ্ডা খাবার আইসক্রিম ইত্যাদি না খাওয়া।
হটাৎ করে আক্রমণ করলে এজমার থেকে মুক্তির উপায় :
আপনি যদি এজমা রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তবে মাঝে মাঝে আপনাকে হঠাৎ করেই এজমা আক্রমণ করবে।আর এই হটাৎ আক্রমণ থেকে বাচতে কিছু নিয়ম মেনে চললে আপনি সহজে এজমা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার করনীয় গুলো হচ্ছে।
১. শুইয়ে না পরে সোজা হয়ে বসতে হবে।একেবারে শুইয়ে পরবেন না।
২. যেহেতু এজমা হলে শ্বাসনালী সংকোচিত হয়।তাই এই সময় খুব আস্তে আস্তে শ্বাস নিতে এবং ছাড়তে হবে।কোন ভাবেই এই অবস্থায় ঘাবড়ানো যাবে না।ঘাবরালে বিপদ আরো বারতে পারে।
৩. লক্ষণ খারাপ হলে যেই ইনহেলার নেয়ার কথা, সেটাকে সাধারণত রিলিভার ইনহেলার বলা হয়। আপনার রিলিভার ইনহেলার থেকে ৩০ থেকে ৬০ সেকেন্ড পরপর ১ বার করে পাফ (দম) নিন। সর্বাধিক ১০ বার পর্যন্ত পাফ নিতে পারবেন।
যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।এবং হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরেও ডাক্তার দেখিয়ে নিতে হবে।
ডাক্তার থেকে প্রয়োজনীয় সবকিছু বুঝে নেওয়া। আপনার কি ধরনের সমস্যা হয় সেগুলো খুলে বলা এবং ডাক্তার এর পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা।
সঠিক ভাবে ইনহেলার ব্যবহার এর নিয়ম শিখে নিতে হবে।
এজমা থেকে মুক্তির উপায়
এজমা থেকে মুক্তির উপায় রোগের মাত্রা ভেদে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। কারো ক্ষেত্রে জীবনধারণে সাধারন পরিবর্তন আনলেই চলে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে ঔষধ দিয়ে সাময়িক ভাবে এর প্রকোপ কমানো যায়। তবে অনেকের অবস্থা গুরুতর হয়ে যায়। তখন চিকিৎসা ছাড়া উপায় থাকে না। আমরা এজমা থেকে মুক্তির সব ধরনের উপায় সম্পর্কে আপনাকে জানাতে চেষ্টা করব।
চিকিৎসার মাধ্যমে এজমা থেকে মুক্তির উপায় :
এজমা থেকে মুক্তির উপায় এর মধ্যে ভালো একটি উপায় চিকিৎসা। একটি ভালো ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া।মুলত চিকিৎসা করানো হয় এই রোগের তীব্র আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়া জন্য এবং দীর্ঘ সময় এই রোগের স্থায়ীত্ব রোধ করার জন্য। এজমা থেকে স্থায়ীভাবে মুক্তি পাওয়া বা এর প্রকোপ কমানোর জন্য অনেক চিকিৎসা রয়েছে। তার মধ্যে কিছু তুলে ধরা হল-
এজমা থেকে মুক্তির উপায় দ্রুত ত্রাণ বা উদ্ধারকারী ঔষধ:
তাৎক্ষণিকভাবে এজমা নিয়াময়ের জন্য কিছু ঔষধ খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। অনেকের ব্যায়াম করার ফলে এজমার সমস্যা অর্থাৎ হাপানির টান শুরু হয়ে যায়। এছাড়াও দৌড়, খেলাধুলা, ভারী কিছু উত্তোলন, সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠা এসব কারনেও এজমার সমস্যা হয়। ডাক্তাররা এজন্য ভারী কাজ বা পরিশ্রমের আগে ঔষধ সেবন করতে বলেন। এসব ঔষধ সংকুচিত পেশীকে শিথিল করে এবং বায়ুনালী গুলোকে খুলে দেয়। ফলে শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়।
এজমার সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্য অনেকেই বিটা -অ্যাগোনিস্ট ঔষধ গুলি সাজেস্ট করেন। এগুলো শ্বাসের সাথে মুখের ভেতর টেনে নিতে হয়। এরা শ্বাসনালী দ্রুত শিথিল করে এবং নিঃশ্বাস স্বাভাবিক করে। এছাড়াও এজমা থেকে মুক্তির জন্য ডাক্তাররা আরো কিছুু ঔষধ প্রেসক্রাইব করেন। যেমন – অলবিউটেরল, পিরবিউটেরল, লেভালবিউটেরল ইত্যাদি।
এজমা থেকে মুক্তির উপায় দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণ:
ইনহেলড কর্টিকোস্টেরয়েডস: এজমার প্রকোপ দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ রাখতে ইনহেলড কর্টিকোস্টেরয়েডস ডাক্তারদের প্রথম পছন্দ। এটি ব্যবহারের ফলে শ্বাসনালীর প্রদাগহ কমে এবং ফোলাও কমে। কিছু ইনহেলড কর্টিকোস্টেরয়েডস হল – ফ্লুটিকাজোন, মোমেটাজোন, বাডেসোনাইড, বিক্লমিথাজোন ইত্যাদি।
মিথাইলজ্যান্থিন:
এজমার সমস্যা দুর করতে মিথাইলজ্যান্থিন ব্যবহার করা হয়। এজমা থেকে মুক্তির উপায় গুলোর মধ্যে এটি দ্রুত এজমার প্রকোপ কমায়। যেমন রাত্রিকালীন এজমা প্রতিরোধ করতে থিয়োফাইলিন ব্যবহার করা হয়।
ব্রঙ্কিয়াল থার্মোপ্লাস্টি:
ব্রঙ্কিয়াল থার্মোপ্লাস্টি প্রাপ্তবয়স্ক এজমা রোগীদের জন্য উপযুক্ত।এটিও এজমা থেকে মুক্তির একটি ভালো উপায়। যাদের এজমা সমস্যা গুরুতর এবং এই থেরাপি নেয়ার মত শারীরিক অবস্থা রয়েছে এফ-ডি দ্বারা তাদের জন্য এই চিকিৎসার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
ইমিউনোথেরাপি:
কীট, পরাগ রেনু, মোল্ডস, পশম ইত্যাদি জিনিসে যাদের এজমা হয় তাদের জন্য ইমিউনোথেরাপি খুবই কার্যকরী। এটি ও এজমা থেকে মুক্তির উপায়। এই ঔষধ গুলি ইনজেকশন এর মাধ্যমে প্রয়োগ করে এবং এলার্জিজনিত এজমাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
জীবনধারার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এজমা থেকে মুক্তির উপায় :
- ১.প্রথমত নিজের যত্ন নিতে হবে। যে কোন রোগ বালাই থেকে মুক্তি পেতে এটাই প্রথম শর্ত।
- ২.যেসব জিনিসে এলার্জি আছে সেগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে।
- ৩.ডাস্ট এলার্জি কমবেশি অনেকেরই আছে। তাই ধুলা ময়লা থেকে দূরে থাকা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা বাধ্যতামূলক।
- ৪.এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে এজমা রোগীদের অনেকেরই দুশ্চিন্তার সময়ে শ্বাসকষ্ট বাড়ে। তাই নিজেকে দুশ্চিন্তা মুক্ত ও শান্ত রাখার চেষ্টা করুন।
- ৫.নিয়মিত শ্বাসের ব্যায়াম, মেডিটেশন করবেন।
- ৬.হালকা কায়িক পরিশ্রম করবেন।
- ৭.ধূমপান, মদ্যপান পরিহার করবেন।
- ৮.পুষ্টিকর খাবার খাবেন।
- ৯.ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করবেন।
ক্যান্সার ও ক্যান্সারের ১০টি লক্ষণ
শিশুর এজমা সমস্যা ও চিকৎসা
বংশগত ও পরিবেশগত কারণে শিশুদের মধ্যে এজমা সমস্যা লক্ষ করা যায়। শিশুর শারীরিক অবস্থা ও পারিবারিক রোগের ইতিহাস বিশ্লেষণ করে এজমা নির্ণয় করা হয়। শিশুর এজমার চিকিৎসা প্রাপ্তবয়স্কদের থেকে অনেকটা আলদা।
স্বল্পমাত্রায় আক্রান্ত শিশুকে সাধারণত সালবিউটামল ইনহেলার দেয়া হয়। অথবা সালবিউটামল সিরাপ খাওয়ানো হয়।
মাঝারি মাত্রায় আক্রান্ত শিশুকে সালবিউটামল ইনহেলার কয়েকবার প্রয়োগ করা হয়। অথবা শিশুকে নেবুলাইজার মেশিনে সালবিউটামল ও সাধারণ স্যালাইন দিয়ে নেবুলাইজ করে চিকিৎসা করানো হয়।
তীব্র মাত্রায় আক্রান্ত শিশুকে অবশ্যই হাসপাতালে নিয়ে অক্সিজেন দিতে হবে। আর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্টেরয়েড ইনজেকশন প্রয়োগ ও নেবুলাইজ করতে হবে।
এতক্ষণ যেসব চিকিৎসা পদ্ধতি আলোচনা করা হল তা ছিল স্বল্পমেয়াদী চিকিৎসা। এজমা আক্রান্ত শিশুর দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসায় সালবিউটামল ছাড়াও নিডক্রোমিল, স্টেরয়েড, সালমেটারল এবং মনটিলুকাস্ট ইনহেলার ব্যবহার করা হয়।