চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় |
চর্ম রোগ আমাদের বেশির ভাগ মানুষেরই রয়েছে।কারো কম,কারো বেশি,আবার কারো গরমে,কারো শীতে অনেকের আবার কোনো কিছুর সংস্পর্শে ও এই সমস্যা হয়ে থাকে। তাই আজকের পোস্ট চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে। খাবারে অ্যালার্জি, নানা ধরনের রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসা, পোকা মাকড়ের কামড়, চুলকানি, কুষ্ঠ রোগ, ঠান্ডা আবহাওয়া ইত্যাদি নানা কারণে চর্মরোগ হতে পারে। আমরা জানি, ত্বকে কোনো সমস্যা হলে খুব সহজেই তা আমাদের চোখে পড়ে। তবে ভয়ের কোনো কারণ নেই। কেননা তা থেকে মুক্তির উপায়ও রয়েছে। আপনি ঘরোয়া উপায়েই এর স্থায়ী সমাধান পেতে পারেন।আজকের এই পোস্টে আশা করি আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।তো আসুন চর্ম রোগ ও তার থেকে মুক্তির উপায় গুলো জেনে নেই।
চর্ম রোগ কী?
চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় জানার আগে আমাদের এটা জানতে হবে যে চর্ম রোগ কি?আমাদের দেহের বাইরের অংশের ত্বক বা চামড়াতে চুলকানি জাতীয় বা অন্য কোনো সমস্যাকেই মুলত চর্মরোগ বলা হয়।এই রোগ বিভিন্ন ধরনের হয়ে পারে।মাঝে মাঝে এর প্রবনতা এতটা বেড়ে যায় যে মানুষ অস্থির হয়ে উঠে।এবং অতিরিক্ত পরিমাণে ছড়িয়ে পরলে তা আরও ক্ষতিকর হয়ে উঠে। অতিরিক্ত সংক্রমণের স্থানে চুলকানোর ফলে রক্ত বেড় হয় ও ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
চর্মরোগের কারণ কী?
রোগতো আর এমনি এমনি হয় না।প্রতিটি রোগের বিশেষ কিছু কারন অবশ্যই থাকে।কিন্তু সেটা আমাদের জানা থাকে না।তাই চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় জানার সাথে সাথে আমাদের এই রোগ হওয়ার কারণ গুলো ও জেনে নেয়ে প্রয়োজন।
- ১.যারা বেশিরভাগ সময় রোদে কাটান তাদের চর্মরোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
- ২.পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকা সত্ত্বেও যেকোনো অ্যান্টিবায়োটিক খেলে ত্বকের রোগ হতে পারে।
- ৩.মাসিক চক্রের অনিয়মিত সমস্যা থাকলেও মহিলাদের চর্মরোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- ৪.শরীরে অতিরিক্ত গ্যাস জমার কারণে শুষ্কতা দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত আঁটসাঁট পোশাক পরলে এবং নাইলনের কাপড় পরলেও ত্বকের রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
- ৫.গোসলের সাবানে অতিরিক্ত সোডারও এই রোগ হতে পারে।
- ৬.চুলকানির রোগ বেশির ভাগই শরীরে রক্ত ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে হয়ে থাকে।
- ৭.গরম গরম জিনিস খেলে ব্রণ ও ফোঁড়া বের হতে পারে।
- ৮.ডায়েট করার পরপরই ব্যায়াম করলেও চর্মরোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- ৯.বমি, হাঁচি, বেলচিং, ফার্ট, সিফিলিস এবং প্যালেস এই সব প্ররোচনা বন্ধ করে চর্মরোগের ঝুঁকি থাকে।
- ১০.দীর্ঘায়িত ধুলো মাটি এবং ঘাম এছাড়াও চর্ম রোগ হতে পারে।
- ১১.আর খাওয়ার পর বিপরীত প্রকৃতির খাবার খেলে কুষ্ঠ রোগ হয়। (উদাহরণ – আমের রস এবং বাটারমিল্ক পান করা)।
চর্ম রোগের লক্ষণ কি?
চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানতে গিয়ে আমরা এই রোগ হওয়ার কারণ গুলো সম্পর্কে জেনে নিয়েছি। এবার আসুন এই চর্মরোগের লক্ষ্মণ গুলো ও একটু জেনে নেই।তাহলে আমরা আরও সচেতন হতে পারব। সবধরনের চর্ম রোগের লক্ষণ এক হয় না। অর্থাৎ চর্ম রোগের ধরন ও কারণ অনুযায়ী লক্ষণ প্রকাশ পায়। সব চর্মরোগে চুলকানি থাকে না।
আবার কিছু ত্বকের সমস্যা রয়েছে যেগুলো চর্ম রোগ নয়। যেমনঃ টাইট বেল্ট পরার কারণে কোমরের ত্বকে সমস্যা, জুতা পরার কারণে পায়ে ফোষ্কা,মোটা কাপড় পরার কারণে শরীরে ফুসকুড়ি হওয়া ইত্যাদি।
সাধারণত বিভিন্ন চর্মরোগর লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে –
- ত্বকে ফুসকুড়ি হওয়া
- ত্বকে ব্যথা বা চুলকানি
- খসখসে বা রুক্ষ ত্বক
- ত্বক থেকে চামড়া ওঠা
- ত্বকে বিবর্ণ দাগ
- অতিরিক্ত ফ্লাশিং
- ত্বকে ক্ষত বা ঘা (একে ত্বকের আলসার বলে)
- ক্ষত থেকে পানি পরা।
চর্মরোগের ধরন:
চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় জানার আগে আপনি ঠিক কোন চর্মরোগে ভুগছেন সেটা জেনে নেয়াও জরুরী। কেননা চর্মরোগের কারন ও ধরন ভিন্ন ভিন্ন হয়। ত্বকে সংক্রমণের কারনে যে চর্মরোগগুলি হয় তাদের ধরন সংক্রামক এজেন্টের উপর নির্ভর করে। সাধারণত ত্বকে সংক্রমণ ঘটায় এধরণের এজেন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস,প্রোটোজোয়া, ছত্রাক ইত্যাদি।
ডায়াবেটিস, লুপাস,স্ট্রেস ইত্যাদি রোগ ও গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন চর্মরোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
তাছাড়াও অ্যালার্জি, অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি কারনেও চর্মরোগ দেখা দেয়।
চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় ঘামাচি:
গরমের সময় ঘামাচি একটি সাধারণ সমস্যা। ঘামাচি সাধারণত তখনই হয় যখন ঘর্মগ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে যায়, ঘাম বের হয় না এবং ত্বকের নীচে ঘাম আটকে যায়। এর ফলে ত্বকের উপরিভাগে ফুসকুড়ি এবং লাল দানার মতো দেখা যায়। কিছু কিছু ঘামাচি খুব চুলকায়। ঘামাচি সাধারণত এমনিতেই সেরে যায়। তবে ঘামাচি সারানোর জন্য ত্বক সবসময় শুষ্ক রাখতে হবে এবং ঘাম শুকাতে হবে।এবং এই ধরনের সাধারণ চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় ও জানা প্রয়োজন।
চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় ব্রণ:
সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালে এই রোগটি দেখা দেয়। তাই একে টিনএজারদের রোগও বলা যেতে পারে। ১৮ থেকে ২০ বছরের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে এ রোগটা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ব্রণ জাতীয় চর্মরোগ থেকে মুক্তি পেতে তৈলাক্ত, ঝাল ও ভাজাপোড়া খাবারসহ চকলেট, আইসক্রিম ও অন্যান্য ফাস্টফুড খাওয়া কমাতে হবে। এছাড়া বেশি করে পানি ও শাক-সবজি খেতে হবে।
চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় দাদ:
শরীরের যে-কোনো স্থান ফাংগাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে একে দাদ বলে। এই আক্রমণ মাথার চামড়ায়, হাত-পায়ের আঙুলের ফাঁকে কিংবা কুঁচকিতে হতে পারে। এটা ছোয়াঁচে রোগ। আক্রান্ত স্থান চাকার মতো গোলাকার হয় এবং চুলকায়। মাথায় দাদ দেখতে গোলাকার হয় এবং আক্রান্ত স্থানে চুল কমে যায়। প্রতিকার পেতে সাবান ও পানি দিয়ে আক্রান্ত স্থান প্রতিদিন ধুতে হবে। এছাড়া আক্রান্ত স্থান শুকনো রাখা জরুরি৷ অনেক সময় ব্যবহৃত সাবান থেকেও দাদ হতে পারে, সেক্ষেত্রে সাবান ব্যবহার কিছুদিন বন্ধ রাখতে হবে।এই চর্মরোগটি ছোয়াচে রোগ বলে পরিচিত। তাই এই চচর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় জেনে নেয়া ভালো।
চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় পাঁচড়া:
শিশুদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায়। পরিষ্কার কাপড়-চোপড় ব্যবহার ও নিয়মিত গোসল করলে খোসপাঁচড়া থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় একজিমা:
একজিমা হলো ত্বকের এমন একটি অবস্থা যেখানে ত্বকে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। একেক ধরনের একজিমার লক্ষণ একেক রকম হয়। তবে সাধারণভাবে লালচে, প্রদাহযুক্ত ত্বক, শুষ্ক, খসখসে ত্বক; ত্বকে চুলকানি; হাত ও পায়ের ত্বকের মধ্যে ছোট ছোট পানির ফুসকুড়ি ইত্যাদি হলো একজিমার লক্ষণ। ডিটারজেন্ট, সাবান অথবা শ্যাম্পু থেকে একজিমার সংক্রমণ হতে পারে। অতিরিক্ত গরম বা অতিরিক্ত ঠান্ডা ও স্যাঁতসেঁতে ভেজা আবহাওয়াও একজিমার কারণ।
চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় সোরিয়াসিস:
সোরিয়াসিস ত্বকের একটি জটিল রোগ। তবে এটি কেবল ত্বক নয়, আক্রমণ করতে পারে শরীরের অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও। যেমন সন্ধি, নখ ইত্যাদি। সাধারণত ত্বকের কোষস্তর প্রতিনিয়ত মারা যায় এবং নতুন করে তৈরি হয়। সোরিয়াসিসে এই কোষ বৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। ত্বকের কয়েক মিলিমিটার থেকে কয়েক সেন্টিমিটার জায়গাজুড়ে এই সমস্যা দেখা দেয়। রোগ যত পুরোনো হয়, ততই জটিল হতে থাকে। তাই দ্রুত শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার আওতায় আসা জরুরি। আক্রান্ত ব্যক্তিকে আজীবন চিকিৎসা নিতে হয়। সোরিয়াসিস বংশগতভাবে হতে পারে।
আর্সেনিকের কারণে চর্মরোগ ও এর থেকে মুক্তির উপায় :
আর্সেনিক যুক্ত পানি খেলে ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন ত্বকের গায়ে ছোট ছোট কালো দাগ কিংবা পুরো ত্বক কালো হয়ে যেতে পারে, হাত ও নখের চামড়া শক্ত ও খসখসে হয়ে যেতে পারে। এছাড়া ত্বকের বিভিন্ন স্থানে সাদা-কালো দাগ দেখা দেয়াসহ হাত ও পায়ের তালুর চামড়ায় শক্ত গুটি বা গুটলি দেখা দিতে পারে। তবে চিন্তার বিষয় হলো, আর্সেনিক যুক্ত পানি পানের শেষ পরিণতি হতে পারে কিডনি ও লিভারের কর্মক্ষমতা লোপ পাওয়া; ত্বক, ফুসফুস ও মূত্রথলির ক্যানসার হওয়া; কিডনির কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়া ইত্যাদি।
হাত পায়ের তালু ফেটে যাওয়া :
এটি একটি বিড়ল ধরনের চর্মরোগ। হাজারে ১ জনের এই চর্ম সমস্যা দেখা যায়।এই রোগে হাত ও পায়ের তালু ফেটে যায় ও চুলকানি শুরু হয়। যার ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।এই ধরনের চর্মরোগ বিড়ল তাই এই চর্মরোগে থেকে মুক্তির উপায় জানতে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া জরুরি।
মাথার চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় :
এই রোগে টি থেকে মুক্তির উপায় জানতে হলে এটা সম্পর্কে আরও একটু বিস্তারিত আলোচনা করে নেয়া প্রয়োজন। কেননা এটি মাথার চর্মরোগ বলে কথা।আসুন এখন আমরা মাথার চর্মরোগ কি ও এর থেকে মুক্তির উপায় জেনে নেই।
মাথায় চর্মরোগ কি?
মাথায় চর্মরোগ অনেক প্রকার হতে পারে, যেমন সেবাইটিস, স্ক্যাল্প প্রবলেম, ডান্ড্রাফ ইত্যাদি। চর্মরোগ মানে হচ্ছে ত্বকের যে কোন সমস্যা বা রোগ। মাথার চর্মরোগের কারণ হতে পারে একটি বিশেষ রোগ বা অবস্থা বা একটি সাধারণ সমস্যা যেমন স্ক্যাল্প প্রবলেম। মাথার চর্মরোগ সম্পর্কে সাধারণতঃ ব্যবহৃত চিকিৎসাগুলি হলো শাম্পু এবং কন্ডিশনার, যা সেবাইটিস এবং ডান্ড্রাফের জন্য কাজ করতে পারে। যদিও আপনি কিছু চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের সাথে কথা বলতে পারেন, তবে এই সাধারণ সমস্যা হলে সাধারণতঃ কোন ঝামেলা হয় না।
চর্মরোগ একটি সাধারণ সমস্যা হলে আপনি স্বাস্থ্য খরচ বেশি করবেন না। সামান্য চিকিৎসার সাথে পরিমিত খাদ্য প্রণালী অনুসরণ করা উচিত এবং আপনার চর্মরোগ পরীক্ষা করতে হলে ডাক্তার দেখিয়ে ল্যাবে গিয়ে স্কিন টেস্ট বা পরীক্ষা করাতে হবে।
মাথার ত্বকে চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় কি ও ঔষধ কি?
মাথার ত্বকে চর্মরোগের জন্য একেবারে কোনও একটি ঔষধ নেই। কারণ মাথার চর্মরোগ অনেক প্রকার হতে পারে এবং প্রতিটি প্রকারের চর্মরোগের জন্য আলাদা আলাদা চিকিৎসা এবং ঔষধ প্রয়োজন। কিছু সাধারণ চর্মরোগ যেমন সেবাইটিস এবং ডান্ড্রাফের জন্য এরকম চিকিৎসার সাথে শাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করা হয়। আপনি কিছু সাধারণ প্রতিষেধক পদার্থ যেমন টি ট্রি আইল, ওটমিল এবং পাইনটার তেল ব্যবহার করতে পারেন যা মাথার সেবাইটিস এবং ডান্ড্রাফে উপকারী হতে পারে।
চর্মরোগের ধরন এবং স্বার্থকেন্দ্রিক বিবেচনার উপর ভিত্তি করে ডাক্তার সাধারণতঃ সাধারণ বা প্রাসঙ্গিক ঔষধের সাথে প্রচলিত চিকিৎসা পরামর্শ দিবেন। তবে অনেক সমস্যা বা সঙ্কটের ক্ষেত্রে ডাক্তার প্রচুর পরামর্শ এবং চিকিৎসার সাথে একই ভাবে চলমান রাখতে হবে।
মাথায় ত্বকে ফাংগাল ইনফেকশন ঔষধ / মাথার গোটা দূর করার ঔষধ
মাথার চর্মরোগ থেকে মুক্তির একটি ভালো ঔষধ হচ্ছে TAB ARTICA 25 MG ট্যাব আরটিকা 25 একটি ঔষধ যা মূলত হাইপারটেনশন (উচ্চ রক্তচাপ) নির্বাহ করতে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি ব্লাড প্রেশার মেডিসিন যা একজন ব্যক্তির রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহৃত হয়। আরটিকা ট্যাবটি একটিলসিয়াম চ্যানেল ব্লকার যা রক্তচাপ কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি ব্লাড ভেসেলগুলি পাঁচালি ও খোলবে না, যার ফলে রক্তের চাপ কমে যায়। ট্যাবটি রোজ একবার খাবারের সাথে নিতে হয় এবং আপনি নির্দিষ্ট পরামর্শ অনুসারে এটি ব্যবহার করতে হবে। তবে, আপনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই প্রয়োজন এবং ডাক্তারের সুপারিশের বিপরীত কোনও ঔষধ বা ডোজ ব্যবহার করা উচিত নয়।
চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় ঔষধ ভিত্তিকঃ
বেশির ভাগ চর্মরোগই নিরাময়যোগ্য। তবে জেনেটিক কারনে অর্থাৎ বংশগত কারণে কোন চর্মরোগ হলে সেটিকে নিরাময় করা যায় না।আবার হরমোনের ভারসাম্য, ডায়াবেটিস, দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সহ না না ধরনের শারীরিক সমস্যার কারনে চর্মরোগ হলে সেটিকে নিরাময় করা জটিল হয়ে পরে। যাইহোক, চর্মরোগের ওষুধ গুলির মধ্যে রয়েছে –
১.অ্যান্টিহিস্টামিন
স্টরয়েড যুক্ত ক্রিম বা মলম
২.অ্যান্টিবায়োটিক
ভিটামিন (রেগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য)
৩.লেজার থেরাপি
ডাক্তার নির্দেশিত পেসক্রিপশন ওষুধ।
চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় চর্মরোগ প্রতিরোধ
চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই রোগের প্রতিরোধ করা। জেনেটিক বা অন্য কোন রোগের অসুস্থতার কারণে যে চর্মরোগ হয় সেগুলোকে প্রতিরোধ করা যায় না। যেতু প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করা হলো সবচেয়ে ভালো কাজ। তাই চর্মরোগ প্রতিরোধে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।
চর্মরোগ প্রতিরোধে নিচের পদক্ষেপগুলো মেনে চলতে হবে –
- ১.সাবান ও গরম পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোঁয়ার অভ্যাস করতে হবে।
- ২.নিজের খাবার পাত্র (যেমনঃ প্লেট,গ্লাস,চায়ের কাপ ইত্যাদি) অন্য কারো সাথে শেয়ার করা যাবে না।
- ৩.চর্মরোগে আক্রান্ত এমন ব্যাক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে।
- ৪.পাবলিক স্পেসে কোন কিছু ব্যাবহার করলে জীবানু মুক্ত করে নিতে হবে।
- ৫.ব্যক্তিগত জিনিসপত্র,যেমনঃ কম্বল,হেয়ার ব্রাশ,তোয়ালে ইত্যাদি কারো সাথে শেয়ার করা যাবে না।
- ৬.অন্য কারো জিনিসপত্র ব্যাবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- ৭.প্রতি রাতে কমপক্ষে সাত ঘন্টা ঘুমাতে হবে।
- ৮.অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক চাপ এড়িয়ে চলতে হবে।
- ৯.পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, পাশাপাশি প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে।
- ১০.সংক্রামক চর্মরোগের টিকা নিতে হবে। যেমনঃ চিকেন পক্স এর টিকা।
ইনফেকশন ছাড়া যে সকল চর্ম রোগ হয় যেমনঃ ব্রন,এটোপিক ডার্মাটাইটিস ইত্যাদি রোগসমুহ প্রতিরোধ করতে নিচের পদক্ষেপগুলো নেয়া যেতে পারে।
- ১.একটি মৃদু ক্লিনজার ও জীবানু মুক্ত পানি দিয়ে প্রতিদিন মুখ ধুতে হবে।
- ২.ত্বকের শুষ্কতা রোধ করতে ময়েশ্চারাইজার ব্যাবহার করতে হবে।
- ৩.অ্যালার্জিযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- ৪.রাসায়নিক দ্রব্যাদি বা ক্ষতিকর প্রসাধনী এড়িয়ে চলতে হবে।
- ৫.প্রতি রাতে কমপক্ষে সাত ঘন্টা ঘুমাতে হবে।
- ৬.স্বাস্থ্যকর খাবার ও প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে।
- ৭.ত্বককে অতিরিক্ত ঠান্ডা,তাপ ও বাতাস থেকে রক্ষা করতে হবে।
- ৮.নিয়মিত ত্বকের যত্ন নিতে হবে। বিভিন্ন চর্মরোগ ও এদের কারণ সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। তাহলে চর্মরোগ প্রতিরোধ করা সহজ হবে।
চর্মরোগের চিকিৎসার জন্য একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিলে সেটা বেশি ভালো হবে। সঠিকভাবে রোগ সনাক্ত না করতে পারলে ওষুধ বা ক্রিম ব্যাবহার ঝুঁকিপূর্ণ হবে। যেমনঃ স্টেরয়েডযুক্ত ক্রিম বা মলম ব্যবহারে কিছু কিছু চর্মরোগে মারাত্নক সমস্যা দেখা দেয়।
চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায়
চর্মরোগ থেকে মুক্তির জন্য ক্ষতি কর দিক থেকে দূরে থাকতে হবে। এবং এর থেকে বাচতে আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। যা এই রোগের আক্রান্ত রোধ করতে সাহায্যে করবে।
১। নিয়মিত গোসল করা:
অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস, ময়লা যেকোন চর্ম রোগের মূল কারণ। দিনে একবার হলেও গোসল করুন। গোসল আপনার শরীরে সমস্ত ময়লা আবর্জনা দুর্গন্ধ দূর করে দিবে। সম্ভব হলে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করুন। তবে খুব গরম পানি দিয়ে গোসল করা থেকে বিরত থাকুন।
২। সূর্যের রশ্মি থেকে দূরে থাকুনঃ
ত্বকের সবচেয়ে ক্ষতি করে থাকে সূর্যের রশ্মি। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ত্বক রিংকেল, কালো দাগ, বলিরেখা ফেলে। এমনকি স্কিন ক্যান্সার হতে পারে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির কারণে। তাই বাইরে বের হওয়ার সময় সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। কমপক্ষে এসপিএফ ১৫ হওয়া উচিত। রোদে বের হওয়ার ৩০ মিনিট থেকে ২ ঘন্টা আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত রোদে বের হওয়া থেকে বিরত থাকুন। দীর্ঘসময় রোদে থাকতে হলে ফুল হাতা পোশাক পরিধান করুন।
৩। ব্রণ প্রতিরোধঃ
আপনার ত্বক যদি ব্রণ প্রবণ হয়ে থাকে, তবে দিনে দুইবার কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার অভ্যাস করুন। এরপর বেনযোইল পারক্সাইড সমৃদ্ধ লোশন ব্যবহার করুন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে মেকআপ তুলতে ভুলবেন না।
৪। এনজাইম প্রতিরোধঃ
আপনি যদি এনজাইম চর্ম রোগ প্রতিরোধ করতে চান, তবে অব্যশই ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। সুগন্ধীযুক্ত লোশন এবং ক্রিম ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
৫। স্বাস্থ্যকর খাবারঃ
একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট অনেক রোগের পাশাপাশি চর্মরোগের হাত থেকে রক্ষা করে থাকে। নিয়মিত প্রচুর পরিমাণ ফল, সবজি, এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার এবং লো ফ্যাট যুক্ত খাবার তারুণ্যদীপ্ত ত্বকের জন্য বেশ কার্যকরী।
ধূমপান, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত স্ট্রেস স্বাস্থ্যের পাশাপাশি ত্বকের উপর প্রভাব ফেলে থাকে। তাই ত্বক সুস্থ রাখার জন্য ত্বকের যত্নের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর ডায়েট এবং ধূমপান ত্যাগ করা প্রয়োজন।
চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় কিছু ঘরোয়া টিপসঃ
অ্যালো ভেরাঃ অ্যালো ভেরার একাধিক গুণাগুণ রয়েছে। ত্বকের যেকোনও সমস্যায় অসাধারণ কাজ দেয় এটি। ত্বকের যেকোনও সমস্যায় অ্যালো ভেরার রস লাগান। সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
অলিভ অয়েলঃ শুষ্ক ত্বকে সমস্যা অনেক বেশি হয়। অলিভ অয়েলে থাকা ভিটামিন ত্বকে মিশে গিয়ে আর্দ্রতা বজায় রাখে। ফলে নিয়মিত মাখলে ত্বক ভালো থাকে।
বেকিং সোডাঃ বেকিং সোডা দিয়েও ত্বকের নানা সমস্যার সমাধান সম্ভব। আক্রান্ত জায়গায় বেকিং সোডা লাগান। সঙ্গে সঙ্গে জ্বালাপোড়া ভাব ও চুলকানি কমে যাবে।
তুলসীঃ তুলসীর হাজারো গুণ রয়েছে। নানা ধরনের ক্ষত, লাল ছোপ, পোড়া, চুলকানিসহ ত্বকের যেকোনো সমস্যায় তুলসী পাতা বেটে রস লাগালে সঙ্গে সঙ্গে উপকার পাওয়া যায়।
নিমঃ নিম পাতা তেতো হলে ও এটা কিন্তু আমাদের জন্য বেশ উপকারী। নিমে রয়েছে এমন উপাদান যা যেকোনো জ্বালাময়ী ভাব কমিয়ে দিতে সক্ষম। বিশেষ করে চুলকানি বা ত্বকের লাল ছোপ ইত্যাদি কমাতে নিমের পাতা বিশেষ কাজ করে।
প্রসাধনীঃ ত্বকে যে কোনো ধরনের প্রসাধনসামগ্রী ব্যবহারের আগে সচেতন হওয়া জরুরি। রাসায়নিক পদার্থসমৃদ্ধ প্রসাধনী এবং অ্যালার্জি তৈরি করে এমন উপাদান সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। প্যারাবিন ও সোডিয়াম লরাইল সালফেট আছে এমন শ্যাম্পু ও সাবান এড়িয়ে চলা উচিত।
ওমেগা ফ্যাটি এসিডঃ ত্বক ভালো রাখতে ওমেগা ফ্যাটি এসিড খুবই জরুরি একটি উপাদান। তাই খাদ্য তালিকায় প্রয়োজনীয় ওমেগা ফ্যাটি এসিডযুক্ত করার চেষ্টা করতে হবে।
ভিটামিন ডিঃ শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন দিনগুলোতে চুলকানির প্রবণতা বেড়ে যায়। এটা কিন্তু কালতালীয় ব্যাপার নয়। শরীরে ভিটামিন ডি কতটুকু রয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে ত্বকের চুলকানি বাড়তে পারে অথবা কমতে পারে। ডা. তারিন বলেন, ‘আপনার শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি নিশ্চিত করতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ভিটামিন ডি কমে গেলে (সাধারণত শীতকালে) ত্বকের সমস্যা ও চুলকানি অগ্নিমূর্তি ধারণ করতে পারে।
চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় (প্রাকৃতিক)
সূর্যের আলোঃ প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকার চেষ্টা করুন।
মেডিটেশনঃ সারাদিনের কর্মব্যস্ততার ফাঁকে কিছুটা সময় নিজের জন্য রাখা উচিত। চাইলে মেডিটেশন বা যোগ ব্যায়াম করা যেতে পারে। কারণ মেডিটেইশন ও যোগ ব্যায়াম পুরো শরীরের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
বিভিন্ন কারণে ত্বকে চুলকানি বা চর্মরোগ হতে পারে। তবে কিছুটা সচেতন হলে এবং পরিষ্কার- রিচ্ছন্নতা বজায় রাখলে চর্মরোগ থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাওয়া যায়।
আমাদের শেষ কথাঃ
আজ চর্মরোগ থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে গিয়ে কিন্তু আমার অনেক কিছু জানানোর চেষ্টা করেছি।এবং এই রোগে আক্রান্ত হলে ঘরোয়া কিছু মুক্তির উপায় ও জানাতে চেষ্টা করেছি। আশা করছি আপনার উপকৃত হতে পারবেন। কিন্তু হ্যাঁ,, ঘরোয়া টিপসের পাশাপাশি একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।কারণ অল্পতে চিকিৎসা করলে হয় তো দ্রুত সুস্থতা নিশ্চিত হবে,নয় তো সেটা চিরকাল বহন করে চলতে হতে পারে।তাই সচেতন হন,ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।