পাট শাকের উপকারিতা
পাট বাংলাদেশের অন্যতম একটি অর্থকারী ফসল ।আমাদের দেশের পাটকে সোনালী আঁশ বলা হয়।বাংলাদেশের প্রচুর পরিমাণে পাট চাষ করা হয়।সাধারণত চৈত্র মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু করে বৈশাখ মাস পর্যন্ত পাটের চাষ করা হয়ে থাকে।কচি পাট পাতা পাট শাক হিসেবে খাওয়া হয়।এই পাঠ শাক খেতে যেমন সুস্বাদু তেমন পাট শাকের উপকারিতা অনেক।পাট বাংলাদেশের প্রচুর চাষ হওয়ার কারণে এটি যথেষ্ট সহজ লভ্য।
পাট শাক শুধু শাক হিসাবেই নয় পাট পাতার ও রয়েছে বহু ঔষধিগুণ।পাটপাতাতে ঔষধি গুণাগুণ থাকার কারণে এটি তিক্ত টনিক হিসেবে পাকস্থলী প্রশমক, কোষ্টকাঠিন্য দূরীকারক, পাকস্থলীয় বায়ুনাশক বা রক্তনালির সংকোচক রোধক এবং অন্ত্রের অ্যান্টিসেপটিক ওষুধ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।
পাট শাক গাছের প্রতিটি অংশই আছে ওষুধ ই গুণ । পাট পাতা শারীরিক অসুস্থতা যেমন- রেচক বা কোষ্টকাঠিন্য, মাথাব্যথা, চিকেনপক্স বা গুটিবসন্ত, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং গুঁড়াকৃমি চিকিৎসায় পাটগাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করা হয়।
পাট শাকের উপকারিতা জানতে পাট শাকের পুষ্টিমান জানা প্রয়োজন।
- পাট শাকের পুষ্টিমান:
- ক্যালসিয়াম
- ম্যাগনেসিয়াম
- সেলেনিয়াম
- ফসফরাস
- ভিটামিন ই
- ভিটামিন কে
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন বি-৬
- উচ্চমাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
- খাদ্য আঁশ
পাট শাকের উপকারিতা ভালো ভাবে বোঝার জন্য চলুন জেনে নেই ১০০ গ্রাম পাট শাকের পুষ্টিমান
- ১০০ গ্রাম পাট শাকে ক্যালরি ৭৩
- আমিষ ৩.৬ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম ২৯৮ মিলিগ্রাম
- লৌহ ১১ মিলিগ্রাম
- ক্যারোটিন ৬৪০০ (আইইউ)
পাট শাকের পুষ্টি আমাদের শরীরকে সুস্থ ও রোগমুক্ত রাখতে সাহায্য করে
পাট শাকের উপকারিতা
পাট শাক খাওয়ার রুচি বাড়িয়ে
মুখের স্বাদ ফিরিয়ে আনে ও মেদ
বৃদ্ধির আশঙ্কা কমায়। এর তেতো স্বাদ মুখের লালাক্ষরণ বৃদ্ধি করে কার্বোহাইড্রেডকে ভাঙতে সাহায্য করে হজমে সহায়তা করে।
- 1.শরীরে প্রদাহ থেকে রক্ষা করে:পাট শাক খেলে তা আমাদের শরীরের প্রদাহ কমতে সাহায্য করে।কেননা পাট শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-3 ফ্যাট।এই ওমেগা -3 ফ্যাট শরীরে সৃষ্ট প্রদাহ কমাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ
- 2.পাট শাকে আছে এন্টিঅক্সিডেন্ট(লাইকোপিন)এই এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে কোষগুলোকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
- 3.পাট শাকের উপকারিতার মধ্যে অন্যতম একটি হল শরীরে হাড় সুগঠিত করা
- হাড় সুগঠিত করতে প্রয়োজন ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম।পাট শাকে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকায় এটি আমাদের শরীরে হাড় সুগঠিত হতে সাহায্য করে।নিয়মিত পাট শাক খেলে হাড় সুগঠিত হয় তাই আমাদের খাদ্য তালিকা পাট শাক রাখা উচিত।
- 4.প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- বিশেষজ্ঞদের মধ্যে পাট শাক খেলে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং এটির সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে।
- 6.পাট শাকের পটাশিয়াম রক্ত সঞ্চালন ও রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।ফলে পাট শাক উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যার দূর করে
- 7.পাট শাক রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে ফলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
- 8.প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় রক্তের হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের সাহায্য করে।রক্তশূন্যে ভোগ আর রোগীদের নিয়মিত পাট শাক খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়।
- 9.পাট শাকের আয়রন দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে।
- 10.খাদ্য আজ হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।পাট শাকে খাদ্য আঁশ থাকা একটি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- 11.পাটের ভিটামিন ই গেঁটেবাত আর্থ্রাইটিস ও প্রদাহ জনিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- 12.উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে যেকোনো ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধের সাহায্য করে।
- 13.পাট শাকের ফলিক এসিড ত্বক ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- 14.ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
- 15.মানুষিক চাপ দূর করে শরীর তো রাতে সহায়তা করে।
পাট শাকের উপকারিতার পাশাপাশি কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে সেগুলো জেনে রাখা প্রয়োজন না হলে উপকারিতার পরিবর্তে ক্ষতি বেশি হবে।
তাই বলা হয়ে থাকে প্রায় সকল রোগের জন্য পাট শাক একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ্য।প্রাচীন ভারতবর্ষীয়রা পাট গাছকে ছাই করে, মধুর সঙ্গে মিশিয়ে অস্ত্র পরিষ্কারের কাজে ব্যবহার করতেন। পাতার গুঁড়া, ৫-১০টি বীজদানা, গুঁড়া হলুদের সাথে সমান অংশে মিশিয়ে, আমাশা নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। দেখা গেছে, এক গ্রাম পাটপাতা শুকনা আধকাপ পানিতে ভিজিয়ে কিছুক্ষণ পরে পাটপাতার পানি ছেঁকে খেলে আমাশয় রোগ ভালো হয়। তাছাড়া
দেড় গ্রাম পরিমাণ পাট পাতার গুঁড়া ভাতের সঙ্গ খেলে বারবার টয়লেটে যাওয়ার প্রবণতা অনেকখানি কমে যায়।
পাট শাকের উপকারিতা থাকলেও কিছু মানুষের জন্য পাট শাক ক্ষতি কর অনেকের বিভিন্ন শাপ সবজি তে এলার্জি থাকে তেমনি পাট শাকেও কারো কারো এলার্জি হতে পারে।কারো যদি পাট শাক খাওয়ার পর শরীরে চুলকানি অথবা রশ বের হয় তাহলে তার এইসব খাওয়া বন্ধ করতে হবে।সম্ভব হলে এলার্জি টেস্ট করে নিতে হবে।