সত্যবাদিতা রচনা
ভূমিকাঃ ❝মরে না মরে না যাহা সত্য যাহা,শত শতাব্দীর বিস্মৃতির তলে, নাহি মরে উপেক্ষায়,অপমানে না হয় অস্থির আঘাতে না টলে।❞
-রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর
যে সব গুন মানব চরিত্রকে মহিমান্বিত করে তোলে তার মধ্যে একটি মূল্যবান গুন হলো সত্যবাদিতা বা সততা। এটি মানুষের অন্যতম একটি মহৎ গুন। সত্য মুক্তি দেয় আর মিথ্যা ডেকে আনে ধ্বংস। তাই বলা হয়ে থাকে সত্যের চেয়ে বড় গুন আর নেই।
সত্যের চেয়ে বড় গুণ আর অন্য কোনো কিছুতেই নেই।যে সব গুণ মানুষের চরিত্রকে মহৎ করে সত্যবাদিতা। এই মহাবিশ্ব চির সত্যের উপর দন্ডায়মান। সত্য ও বিশ্বাসের মধ্যে দিয়ে মানুষ তার নিজেকে আবিষ্কার করে। মনুষ্যত্বকে অর্জন করতে সাহায্য করে। তাই মানুষের মুল সাধনা হচ্ছে সত্যের সাধনা।সত্যবাদিতার গুন অর্জন করাই মানুষের প্রধান সাধনা হয়া উচিৎ।
মিথ্যা ও অসত্যকে বিতাড়িত করে সত্য চিরদিন মাথা উঁচু করে থাকে বলে এর মূল্য যুগে যুগে স্বীকৃত হয়ে এসেছে।
সততা ও সত্যবাদিতাঃ
সত্য ও ন্যায়ের পথে সর্বদা থাকাই হলো সততা ও সত্যের আলোকেই পরিচালিত মানব গুনই সত্যবাদিতা। মানুষের জীবনের সব ভালো গুন গুলোর মধ্যে সত্যবাদিতার অন্তর্ভুক্ত। দৃঢ় চিত্তে, সাহসের সঙ্গে সত্যের পথ অবলম্বন করে কল্যাণ নিশ্চিত করা যায়। তাই সর্বদা সত্যের সাথে থাকা উচিৎ।
সত্যবাদিতার বৈশিষ্ট্যঃ
সত্যবাদিতা নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে ও গুরুত্বে বিশেষ অবদান রাখতে পারে বলে আদিকাল থেকে মানুষ তার চর্চা করে সত্য ও ন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করেছে। জীবনকে নিয়ে দার করিয়েছে সফলতার দারপ্রান্তে। সত্য হলো আলোর পথ আর মিথ্যার পথ হলো অন্ধকার। সত্যবাদিতার মূল বৈশিষ্ট্য হলো ‘সত্য’ অর্থাৎ সত্য চিরকাল প্রকাশমান থাকে।তাই তো সত্যের জয় সবসময়ই হয়ে থাকে,দেরি হলেও সত্যের জত হবেই।
শুধু মিথ্যা কথা থেকে দূরে থাকাকে ব সত্যবাদিতা বোঝায় না। সত্যকে অবলম্বন করে যে বৈশিষ্ট্য বিকশিত হয় তার নাম সত্যবাদিতা। সত্যের মধ্যে কোনো গোপনীয়তা নেই,নেই কোনো লুকোচুরি। সত্য জীবনের স্বরূপ বিকশিত করে। সত্যবাদী লোকের কথা ও কাজে কোনো পার্থক্য থাকে না,থাকে না কোনো অজুহাত । সত্যবাদিতা মানুষকে খাঁটি সোনার মতো নিখাদ করে তোলে।
সত্যের মধ্যে মহান আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়। সত্যের মধ্য দিয়েই মানুষ অর্জন করে সততা। সততা মানব চরিত্রের অপর একটি মহৎ গুন।সততা ও সত্য একে অপরের পরিপুরক। সত্যের অবলম্বনকারী মানুষ সৎ থাকার প্রবণতার মাধ্যমে সততার বৈশিষ্ট্য রূপায়িত করে তোলে।
কোনো প্রকার পাপের কাজ থেকে দূরে থেকে ন্যায় ও সত্যের প্রতিফলন ঘটিয়ে চরিত্রের বিকাশ ঘটাতে পারলে তাতে সততার যথার্থ পরিচয় পাওয়া যায়। ফলে সত্যবাদিতা জীবনকে সার্থক করার একটি চমৎকার পন্থা ও মানব চরিত্রের উজ্জল অলংকার। তাই যুগে যুগে সত্যের সাধন চলছে। কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন –
সত্যবাদিতা শ্ৰেষ্ঠ গুণঃ
সত্যবাদিতা মানবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রেষ্ঠ গুণ। যে সব গুণ মানবজীবনকে সার্থক ও সুন্দর করে তােলে তার মধ্যে সত্যবাদিতার স্থান সবার ওপরে। সত্যের অনুসরণে জীবনকে সুন্দর করে তোলে। সত্যকে অবলম্বন করলে জীবনে সাফল্য আসবেই। সত্যবাদী লােক সমাজে সম্মান ও মর্যাদার আসন পান। সবাই তাকে বিশ্বাস করে। কিন্তু সত্যের পথ অবলম্বন যে করে তার পথ একটু কষ্টকর হয়।প্রত্যেক ধর্মই সত্যকে গ্রহণ ও মিথ্যাকে বর্জন করার আদেশ রয়েছে। বলা হয়েছে, সকল পাপের উৎস হল মিথ্যা। কেননা মিথ্যা থেকেই শুরু হয় প্রতারণা, জালিয়াতি, নানাবিধ কুকর্ম। তাই মিথ্যা বলা মহাপাপ। আর সত্যবাদিতা মানুষের মহৎ গুণ।যা জীবন কে করে তোলে সুন্দর।
সত্যবাদিতার সুফলঃ
চির মুক্তি ও কল্যাণের পথ হচ্ছে সত্যবাদিতা। সত্যবাদীকে সবাই বিশ্বাস করে। সমাজে তাকে সবাই শ্রদ্ধার চোখে দেখে এবং ভালােবাসে,সম্মান করে। অপরদিকে মিথ্যাবাদীকে কেউ বিশ্বাস করে না। সমাজে তাকে সবাই ঘৃণার চোখে দেখে।কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে কোনাে মানুষ অসৎ হয়ে জন্মায় না। জন্মাবার পরে পরিবার, সমাজ ও তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা তাকে অসৎ পথে পরিচালিত করে। বিশেষ করে সাংসারিক চাপের মুখে, নানা হাতাশ থেকে পরিত্রাণের জন্যে নিরুপায় হয়ে অসৎ পথে পা বাড়ায়।যা সমাজ ও দেশের এবং জাতির জন্য ক্ষতিকর।
সত্য চিরস্থায়ী। আর যে সত্যের পথে চলে এবং অন্যকে সত্যবাদি হওয়ার উপদেশ দেয় তিনি হলেন প্রকৃত মানুষ। সত্যের সুফল কেউ একা ভোগ করে না। একটি সমাজ তথা দেশের উন্নতি অনেকাংশে নির্ভর করে দেশের জনগণের উপর। জনগণের ভালো কর্মকান্ডের উপর ভিত্তি করেই দেশের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। কাজেই জনগণের মাঝে যদি সত্যবাদিতার গুণটি থাকে তাহলে দেশ থেকে অন্যায় চিরতরে বিদায় নিবে। থাকবে না কোনো অসৎ কাজ, থাকবে না মারামারি খুন রাহাজানি। দেশে শান্তি থাকবে অটুট।
সত্যবাদিতার প্রয়োজনীয়তাঃ
সত্যবাদিতা থেকে দুরত্ব বাড়তে থাকলে মানুষের নৈতিক অবক্ষয় ঘটে।যার ফলে সমাজজীবনে অবৈধ কার্যকলাপ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে এবং মানুষের মহৎ গুণাবলি গুলো তলিয়ে যায় মাটির গভিরে। মানুষ তখন নানা অন্যায় কাজে লিপ্ত হতে থাকে। সমাজে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলতা,অস্থিরতা । দেশে নানা অশান্তির সৃষ্টি হয়। ফলে ব্যাপক আকারে অন্যায় অনাচার সমাজে প্রবেশ করে জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে নিয়ে যায়। তাই মানবজীবনের স্বার্থে অন্যায়কে সমাজ থেকে বিদূরিত করতে হবে। অন্যায়পথে যে চলে তার বিবেক বলতে কিছু থাকে না। বিবেক না থাকলে সমাজ হিংসায় মত্ত হয়ে উঠবে।একে অন্যেকে বিশ্বাস করতে পারবে না। তাই সমাজে বসবাসের জন্য সমাজকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। ধর্মীয় দিক থেকেও সত্যবাদিকে উচ্চ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তাই ধর্মবােধসম্পন্ন আদর্শ জীবনযাপনের জন্য সততা ও সত্যবাদিতার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।এবং ছোট থেকেই সকল পরিবারকে তাদের সন্তানদের ধর্মীয় জ্ঞান এবং সত্যবাদিতা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। সত্যবাদিতার জন্য তাদেরকে পুরুষ্কারের ব্যাবস্থা করলে তারা উৎসাহিত হয়ে সত্যবাদীর পথে এগিয়ে যাবে।
সততার বাস্তব অবস্থাঃ
সততা ও সত্যবাদিতা বাস্তব জীবনের একটি মহৎ দিক হলেও বাস্তব জীবনে বিশেষত দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তার যথার্থ মর্যাদা লাভ করতে পারছে না।সততা পরিহার করে মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে অন্যায়ের পথে।আমাদের দেশের সত্যবাদিতার অবস্থা খুবই নাজুক। এদেশে দুর্নীতি জাতির রক্তে মিশে গেছে।এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে দুর্নীতির কালো থাবা আঘাত হানেনি। দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি,ঘুষ,গুম,হত্যা,রাহাজানি বর্তমানের প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সৎ পথে উপার্জনের চেয়ে অসৎ পথে উপার্জনের জন্য বেশি ঝুকে গেছে। অবৈধ ভাবে উপার্জনের মাধ্যমে অতি সহজেই এবং বেশি অর্থ উপার্জন করা যায় সেই লোভে পরেই দিন দিন অন্যায়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।চলছে এর প্রতিযোগিতা। সত্যের পথ ছেড়ে সকলে এগিয়ে যাচ্ছে অন্ধকার পথে। যা দেশের মানুষের হয়রানিতে পরিনত হয়েছে।
সত্যবাদিতার মূল্যায়নঃ
সততা ও সত্যবাদিতা বাস্তব জীবনের মুল্যে হীন হয়ে যাচ্ছে।কেননা সৎ পথে এখন আর কেউ উপার্জন করতে চায় না।সকলে লোভে পরে বেশি উপার্জন করার জন্য বেছেনিয়েছে অসৎ পথ। আমরা এই মহৎ গুণটির মূল্যায়ন সঠিকভাবে করছি না। সততা পরিহার করে মানুষ সত্যপথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। ফলে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিকেই তারা প্রাধান্য দিয়ে নানা রকমের অত্যাচার, অনাচার ও দুর্নীতি করে চলেছে। অসততার প্রতি মানুষের তেমন প্রতিবাদ বা বিরূপতা দেখা যাচ্ছে না।
একদিকে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-কলহ, অপরদিকে অর্থনৈতিক দুর্দশা, ফলে শিক্ষাজগতে নৈরাজ্য, সমাজসেবার নামে নিজের স্বার্থ হাসিল এবং স্বেচ্ছাচারিতা যুবসমাজকে বিপথগামী করছে। আজ আমরা অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করি, সমাজে সমাজ-বিরােধীর যে সম্মান, যে প্রতিপত্তি, সেখানে একজন জ্ঞানী, সৎ মানুষের মূল্য তুচ্ছ। সততা সেখানে লাঞ্ছিত, অসহায়। বিবেক সেখানে বিবর্জিত। জ্ঞানী-গুণীরাও তাদের খাতির করে। রাজনৈতিক নেতাদের তারা ডান হাত! জঘন্য, নিষ্ঠুর কাজকর্ম করেও তারা আইনের চোখে নিরাপদ। প্রশাসন প্রয়ােজন মতাে ওদের ব্যবহার করে। কী তাদের মূলধন? তারা অনায়াসে মানুষ খুন করে, ডাকাতি করে, জনজীবনে ত্রাসের সৃষ্টি করে। এই মূলধন নিয়েই ওরা সমাজের বিশিষ্ট মানুষ। আজ তাই মানবিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ গৌণ হয়ে উঠেছে। বস্তুত সমাজের সর্বস্তরে আজ যে সততা, সত্যবাদিতা ও মূল্যবোধের অভাব, তার মারাত্মক প্রতিক্রিয়া যুবকদের মাঝে প্রতিনিয়ত বিস্তৃত হচ্ছে।সমাজের মানুষ আজ সত্যবাদিতাকে মুল্যায়ণ করতে ভুলে গেছে।
আমাদের কর্তব্যঃ
সত্যবাদিতার মাধুর্যে জীবনকে অবশ্যই সাজাতে হবে।অন্যায় বা অবৈধ উপায়ে যত বিত্তশালী হোক না কেন তা যে অনেক বড় পাপ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সত্যের পরাজয় আসবেই।যতই তারা অবৈধ উপায়ে বিত্তশালী হোক না কেন তা একদিন ধংস হবেই।কিন্তু অন্যদিকে ন্যায়ের পথ থাকবে চির উজ্জ্বল।সেজন্যই সততা ও সত্যবাদিতা অনুশীলন করা উচিৎ। এবং জীবনে তার প্রতিফলন ঘটিয়ে যথাযথ মনুষ্যত্বের অধিকারী হিয়ে উঠতে হবে।
সত্যবাদিতার প্রভাবঃ
মানুষের জীবনে সত্যবাদিতার প্রভাব খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সত্যবাদিতা মানুষের জীবনকে করে তোলে সুন্দর ও মনকে দেয় প্রশান্তি।মহামানবগণ সত্যের অনুশরনে তাদের জীবনের মহান সাধনাকে সফল করতে পেরেছে। সত্যবাদিতার জন্য যেমন তারা লক্ষ্য অর্জনের সাফল্য লাভ করেছেন, তেমনভাবে সত্যের বলে বলিয়ান হয়ে তারা প্রবল শত্রুকেও পরাজিত করে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছেন। যুগ যুগ ধরে সত্যের প্রভাব আমরা দেখে এসেছি।যার কারনে মানসিক প্রশান্তি এবং সম্মান। তাই সত্যবাদিতার প্রভাব অনেক বেশি।
সত্যবাদিতার সাধনাঃ
সত্যবাদিতার জন্য সাধনার প্রয়োজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিথ্যার জাল ভেদ করে সত্যেকে অবলম্বন করতে কঠোর সাধনা করতে হয়।পৃথীবিতে সত্য কখনো আপনা আপনি প্রতিষ্ঠিত হয়নি।সত্যের জন্য করতে হয়েছে সাধনা আর লড়াই।সত্য সবসময় সৌন্দরয্যকে ফুটিয়ে তুলতে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে।মাওলানা আকরাম খাঁ বলেন-
"পৃথিবীতে যখন কোনো সত্য আত্মপ্রতিষ্ঠিত করিতে চাহিয়াছে তখনই তাহার বিরুদ্ধাচারণ হইয়াছে,এই বিরুদ্ধাচারণের ধারা ও নীতি মুলতঃ সকল ক্ষেত্রে অভিন্ন"।
মানবজীবনে সত্যবাদিতার আবশ্যকতাঃ
মানুষকে সুন্দর, সঠিক ও কল্যাণের পথে পরিচালিত করে সত্যবাদিতা। আর যদি মানুষের জীবনে এই মহৎ গুনটি না থাকে তাহলে মানুষ হয়ে উঠে পুশুর মতো। কোনো প্রকারের পাপবোধ তাদের মধ্যে কাজ করে না।যখন তখন যেখানে সেখানে এই সব মানুষ অন্যায় কাজ করে সমাজ কে করে কুলষিত।মানবতা বলতে তাদের মধ্যে কিছুই থাকে না।কিন্তু মুলত জীবনে সফলতা অর্জনের জন্য সত্যবাদিতা অনুশীলন করা জরুরি।
ঠাকুর অনুকুল চন্দ্র বলেন-
'সত্যকে আশ্রয় করো আর অসত্যের অনুগমন করো না, শান্তি তোমাকে কোনোদিনো ছেরে যাবে না।'
সত্য ও সততা যে মানুষের মধ্যে রয়েছে সে কখনো কোনো প্রকার অন্যায় করতে পারে না।তার মনে থাকে না কোনো হিংসা, বিদ্বেষ,হানাহানি। সে কখনো দূর্নীতি করবে না, ঘুষ নেবে না,অবৈধ ভাবে অর্থ উপার্জনের কোনো লোভ ও তার মনে থাকে না।তার জীবন হয় সুন্দর ও সাভাবিক।
ধর্মীয় দিক থেকে সত্যবাদিতার গুরুত্বঃ
প্রতিটি ধর্মের মানুষকে সত্যের পথ অবলম্বন করতে বলা হয়,এবং সৎ পথে উপার্জনের কথা বলা হয়ে থাকে। প্রতিটি ধর্মে সত্যবাদিতাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।ইসলাম ধর্মে ও এই বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হয়েছে।মহানবী (সাঃ) ছোট থেকেই ছিল সত্যবাদী। তাই সকলে তার নাম দিয়েছিলেন 'আলামিন' মানে "বিশ্বাসী"।মহানবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন -
" সত্যবাদীতা সুকর্মের পথ দেখায় আর সুকর্ম বেহেশতের পথ দেখায়"।
অসত্যবাদীতার পরিনতিঃ
সত্যবাদিতা ছাড়া মানুষের কোনো গুনই বিকাশিত হতে পারে না।সত্য যখন অসত্যের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পরে তখন মানুষের মানবিক মূল্যবোধ কমে যেতে থাকে।তখন সমাজের শান্তি, শৃঙ্খলা নষ্ট হয়। মানুষ হয়ে উঠে সার্থপর ও দূর্নীতিপরায়ন।তাদের মধ্যে ন্যায় অন্যায় বলে কোনো বোধ থাকে না।সততা তাদের বিবেক কে নারা দিতে পারে না।তাদের জীবন হয়ে উঠে অন্ধকার এগিয়ে যায় ধংসের দিকে। কবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন-
"দ্বার রুদ্ধা করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি,সত্য বলে আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি"।
অসৎ ব্যাক্তিদের কেউ বিশ্বাস করে না,এবং কেউ তাদের পছন্দমতো করে না।অসৎ পথে উপার্জন করেও তাদের জীবনে থাকে না কোনো সুখ,শান্তি।থাকে শুধু অশান্তি অন্ধকার আর জীবনের শেষ পরিনত হয় ধংস আর অসম্মান।
সত্যবাদিতার উপায়ঃ
সত্যবাদিতার সঠিক উপায় হচভহে শিশু কাল থেকেই শিশুদের সত্যবাদিতা শিক্ষা দিতে হবে।পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের এই গুনটি গরে তুলতে সাহায্য করতে হবে।এবং আমাদের সকল মানুষকেই সত্যবাদিতা অনুশীলন করা প্রয়োজন। যেন শিশুরা আমাদের থেকেই সত্যবাদীতা শিক্ষা নিতে পারে।তাই সমাজে সত্যবাদিতার চর্চা করতে হলে এগিয়ে আসতে হবে আমাদের সকলকেই।অসৎ ব্যাক্তিদের শাস্তির ব্যাবস্থা করাতে হবে।এবং সকলের সচেতন হতে হবে।
সততার শত্রুঃ
সততার সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে লােভ ও মিথ্যা । সীমাহীন উচ্চাকাঙক্ষা, ভােগ-বিলাস, বিবেচনাহীন জৈবিক কামনা মানুষকে অসৎ পথে পরিচালিত করে। পাওয়া না-পাওয়ার দ্বন্দ্বে মানুষ ভুল পথে পা বাড়ায়। হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ে বিবেকহীন অমানুষে পরিণত হয়ে পরে। অন্যদিকে মিথ্যা হল মানবজীবনের তথা মনুষ্যত্বের অন্তরায়। মিথ্যা মানুষকে অমানুষে পরিণত করে। একটি মিথ্যার আশ্রয় নিতে গিয়ে মানুষ অসংখ্য মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়। মিথ্যা সততার অন্তরায়। তাই এসব বিষয় থেকে নিজেকে দূরে রেখে সত্যের ও সততার চর্চা করতে হবে।
সত্যের জয়ঃ
সমাজে সত্যের জয় এবং মিথ্যার পরাজয় নিশ্চিত। স্বার্থান্ধ মানুষ অনেক সময় নিজের সুবিধার জন্যে মিথ্যার আশ্রয় নেয়। নিজের লােভী মন অপরের ক্ষতিসাধনে তৎপর হয়। মিথ্যার ছলনায় মানুষ নিজের স্বার্থ উদ্ধার করে নেয়। আপাতদৃষ্টিতে মিথ্যার জয় প্রতীয়মান হলেও তা স্থায়ী নয়। বরং সত্যের প্রকাশ এক সময় অনিবার্য হয়ে ওঠে এবং পরিণামে সত্যের বিজয় ঘােষিত হয়। সত্য-বিশ্বাসীরা পরম ধৈর্য-সহকারে সত্যের অনুসরণ করে এবং পরিণামে জয়লাভ করে।
অন্যদিকে, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে মানুষ ধ্বংসের পথে পরিচালিত হয়। যে অসৎ সে হয়তাে কখনাে কখনাে ভােগে, সম্পদে বিলাসবাসনে অনেক বড়াে হয়ে ওঠে কিন্তু তা ক্ষণিকের। পরিণামে সে অসৎ পথের জন্য অশান্তি ও দুর্ভোগ পােহাতে হয়। পক্ষান্তরে সৎ ব্যক্তি সাময়িক দুঃখ-কষ্টে জীবন অতিবাহিত করলেও ব্যক্তিজীবনে সে সফল ও কৃতকর্মে তৃপ্ত এবং আনন্দ লাভ করে। মহাকাল সৎ পথের যাত্রীদের নামই লিখে রাখে, অসৎ ব্যক্তিদের মহাকালের বুকে ঠাই নেই, তারা নিক্ষিপ্ত হয় ইতিহাসে আস্তাকুড়ে। সততাই সত্য, আসল এবং খাঁটি। এর রূপের কোনাে পরিবর্তন নেই। মিথ্যায় রয়েছে প্রলােভন, ছলচাতুরি। হীরা রং বদল করে না বলেই মূল্যবান, মুক্তো তা করে বলেই তার কম দাম। সত্যই জীবনকে পরিপূর্ণ বিকশিত করে, মিথ্যা জীবনকে পঙ্গু করে দেয়।
সত্যবাদিতার দৃষ্টান্তঃ
মহৎ ও বরণীয় মানুষ মাত্রই সত্যবাদিতার দৃষ্টান্ত। সত্যবাদিতার জন্য যেমন তারা লক্ষ্য অর্জনে সাফল্য লাভ করেছেন, তেমনি সত্যের বলে বলীয়ান হয়ে তারা প্রবল শত্রুকেও পরাজিত করে নিজেদের প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করেছেন। সর্বকালের মহামানব, মহাপুরুষ, মানব মুক্তির অগ্রদূত হযরত মুহাম্মদ (স.) সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর সমস্ত জীবন নানা দুঃখকষ্ট সহ্য করে কঠোর সাধনা মগ্ন ছিলেন। সত্যের সাধনায় তিনি ছিলেন অটল-অবিচল। হাজার দুঃখ-যন্ত্রণায়ও তিনি সত্যের পথ থেকে কখনাে বিদ্যুৎ হন নি। সত্যের সাধনার বলেই তিনি সবার কাছে আল-আমিন বিশ্বাসী উপাধিতে ভূষিত হন। সত্যের জন্য ক্রুশ বিদ্ধ হয়েছেন জিশুখ্রিস্ট। সত্যাশ্রয়ী জোন অব আর্ককে (Joan of Arc) ‘ডাইনি’ বলে মিথ্যা অভিযুক্ত করে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। সত্যকে সমুন্নত রাখতে হেমলক (Hemlock) বিষপানে জীবন দিতে হয়েছে জ্ঞানপ্রেমিক দার্শনিক সক্রেটিসকে (Socrates)। এমনি করে সত্যের সাধনায় মহাপুরুষগণ জীবনকে যেভাবে গৌরবান্বিত করে গেছেন তা মানুষের কাছে মহান আদর্শ হিসেবে যুগ যুগ ধরে প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এঁদের নাম লেখা হয়েছে স্বর্ণাক্ষরে।
উপসংহারঃ সত্যকে যারা মর্যাদা দেয় না তারা উদার হতে পারে না, তাদের মনে চিরদিন ভয় বিরাজ করে। সত্যবাদিতার মহৎ গুণের অভাবে মানুষের মন সব সময়ের জন্য ছােট হয়ে থাকে। অন্যদিকে, সত্যবাদী মানুষ নির্ভীক হয়, দুর্বার সাহস তার মনে বাসা বাঁধে। সে জন্য সত্যের পথ দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে থাকতে হবে, আর মনে রাখতে হবে কবির অমর বাণী-