কলমি শাকের উপকারিতা |
সাধারণত আমাদের দেশে সহ এশিয়া মহাদেশের দেশগুলোতে কলমি শাক অনেক বেশি সহজলভ্য।এশিয়া মহাদেশের কিছু অঞ্চলে কলমি শাককে Kangkong বলা হয়। কলমি অর্ধ জলজ উষ্ণমন্ডলীয় লতা।কলমি সপুষ্পক উদ্ভিদ। যদিও এর আদি নিবাস জানা যায়নি তবে এটি ক্রান্তীয় উপক্রান্তীয় অঞ্চলের জন্মায়। ইংরেজিতে একে Water Spinach ,River Spinach, Water Morning Glory, Water Convolvulus,Chinese Spinach,Swamp Cabbage কলমি শাকের বৈজ্ঞানিক দ্বী-পদী নাম Ipomoea aquatica
কলমি শাকের পুষ্টিগুণ:
- ক্যালসিয়াম
- আয়রন
- পটাশিয়াম
- ম্যাগনেসিয়াম
- কার্বোহাইড্রেট প্রোটিন
- খাদ্যশক্তি
- সোডিয়াম
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন বি এক
- ফসফরাস
- শ্বেতসার
প্রতি ১০০গ্রাম কলমি শাকে পুষ্টিমান:
- ২৯ কিলো ক্যালরি
- ২১৩ মিলিগ্রাম সোডিয়াম
- ৩১২ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম
- ২.১ গ্রাম খাদ্য আঁশ
- ৩ গ্রাম প্রোটিন
- ৫.৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেটস,
- ২.৫ মিলিগ্রাম লৌহ
- ৫০ মিলিগ্রাম ফসফরাস
- ৮৯.৭ গ্রাম জলীয় অংশ
- ৭৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম
- নয়াসিন ১.৩ মিলিগ্রাম
- শ্বেতসার ৪.৪গ্রাম
- আমিষ ৩.৯ গ্রাম
- খাইয়ামিন 0.9 মিলিগ্রাম
- ৪৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি
বহু পুষ্টিমান সমৃদ্ধকর্মী কলমি শাক আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।
কলমি শাকের উপকারী গুণ:
1. কলমি শাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম আছে।ক্যালসিয়াম দাঁত, মাড়ি ,পেশি ও হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে।দাঁত হাড় মাড়ি ও পেশি মজবুত করতে ছোটদের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত কলমি শাক রাখা দরকার।
2. ভিটামিন সি আমাদের শরীরের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।কলমি শাকে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন সি আছে।ভিটামিন সি শরীরে আন্টি আক্সিজেন রূপে কাজ করে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কলমি শাকের দু চামচ রস একটু গরম করে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
তাই ছোট বড় সকল বয়সীদের জন্য কলমি শীক অনেক বেশি উপকারী।
3. কলমি শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণের লৌহ আছে।লৌহ রক্তে থাকা হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে।তাই বলা যায় আমাদের শরীরের রক্ত সরবরাহ ঠিক রাখতে কলমি শাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।বিশেষত রক্তশূন্য রোগীদের জন্য কলমি শাক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
4. জন্মের পর একটি শিশু মায়ের বুকের দুধ না পেলে অথবা কম পেলে মাকে কলমি শাক অথবা ছোট মাছ দিয়ে কলমি শাক রান্না করে খাওয়ালে মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি পায়।মায়ের বুকের দুধ একদিন অবজাতক শিশুর জন্য খুবই জরুরী।এছাড়া কলমি শাকের রস ঘিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে সকাল বিকাল দুবেলা খেলে প্রসূতি মায়ের বুকের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
5. কলমি শাকে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটি। ক্যারোটি আমাদের শরীরে ভিটামিন -এ তৈরিতে সাহায্য করে।ভিটামিন এ দৃষ্টি শক্তি প্রখর করে থাকে।কলমি শাক খেলে রাত কানা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ।বলা হয়ে থাকে রাতকানা রোগ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে চার থেকে পাঁচ সপ্তাহ নিয়ম করে কলমি শাক খাওয়ালে রাত কোনো রোগ ভালো হয়ে যেতে পারে।
6. কলমি শাক খেলে প্রসাবে জ্বালাপোড়া কমতে সাহায্য করে।
প্রসবের জ্বালা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কলমি শাকের রস দুই থেকে তিন চামচ প্রতিদিন খেতে হবে।
7. হাত পা বা শরীরে অন্য কোন অংশে জ্বালাপোড়া থাকলে কলমি শাকের রসের সাথে একটু দুধ মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে এক সপ্তাহের মধ্যে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
8. কলমি শাক মাথাব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া অনিদ্রা দূর করার জন্য কলমি শাক উপকারী।
9. কলমি শাক এতে আঁশ জাতীয় খাবার।তাই একই খাবার দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে।কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীরা নিয়মিত কলমি শাক খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাবে।এছাড়াও কলমি শাক তুলে পেটে এক পোয়া রস করে আখের গুড়ের সঙ্গে শরবত বানিয়ে দুবেলা খেলে উপকার পাওয়া যাবে ,তবেই উপকার পাওয়ার জন্য এক সপ্তাহ প্রতিদিন খেতে হবে।
10. শারীরিক দুর্বলতা কমাতে কলমি শাক বেশ উপকারে।কারণ কলমি শাকে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য শক্তি।এই খাদ্য শক্তি শারীরিক দুর্বলতা সারিয়ে তুলতে বেশ কার্যকরী।তাই রবিকে শারীরিকভাবে সুস্থ করতে কলমি শাক খাওয়ানো উচিত।
11.গর্ভবতী মায়েদের জন্য কলমি শাক বিশেষ উপকারী।যেসব মায়েদের গর্ভাবস্থায় হাত পায়ের পানি আসে তাদেরকে কলমি শাক বেশি করে রসুন দিয়ে ভেজে দুই থেকে তিন সপ্তাহ খাওয়ালে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে।
12. ফোড়া ভালো করতে কলমি শাক বেশ উপকারী।
কর্মী পাতার সঙ্গে একটু আদা বেটে ফোড়ার চারপাশে তিন থেকে চারদিন দিয়ে রাখে ফোড়া পেকে যাবে।
13. কলমি শাক চুলের জন্য উপকারী।মাথার খুশকি দূর করতে কলমি শাক ব্যবহার করা যায়।
14.কলমি শাক বসন্ত রোগের প্রতিশোধ হিসেবে দারুণ কাজ করে।
15. কলমি শাক রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্র কমাতে সাহায্য করে।বিশেষজ্ঞদের মতে এই শাক হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রক প্রভৃতি হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়মিত খাওয়া উচিত।
16.জন্ডিস বা লিভারের সমস্যা তো দারুন উপকারী কলমি শাক।
17.কলমি শাক মধুমেহ রোগীদের জন্যও উপকারী।
18.নিয়মিত কলমি শাক খেলে মহিলাদের স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
কলমি শাকের উপকারিতা
19. বিভিন্ন প্রকার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে কলমি শাক খাওয়া দরকার।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় কলমি শাক রাখার পরামর্শ দেয় বিশেষজ্ঞরা।
20. কলমি শাক ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।
21. এগজিমর সমস্যা দূর করে।
22. পিঁপড়া ,মৌমাছি ,বিছা বা কোন পোকামাকড় কামড়ালে কমলি শাকের পাতা ডগা সহ রস করে লাগালে যন্ত্রণা অনেকাংশে কমে যায়।
23. আমাশয় হলে কলমের শাকের রসের সঙ্গে আখের গুড় মিশিয়ে শরবত বানিয়ে সকাল বিকাল খেলে উপকার মিলে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
ইউরিক এসিডিটির ভুক্তভোগী বা কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কলমি শাক না খাওয়াই উত্তম।
কলমি শাকের অপকারিতা
কলমি শাকের উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতা ও আছে যেমন: অতিরিক্ত কলমি শাক খেলে বদহজম বা ডায়রিয়া হতে পারে
কলমি শাক একটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ উপকারী খাবার। আমাদের দেশে কলমি শাক দামে সস্তা আর সহজলভ্য।তাই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সঠিক পরিমাণে