হাড্ডিসার গরু মোটাতাজাকরণ
গরু মোটাতাজাকরণ অর্থ হচ্ছে পরিমিত খাদ্য সরবরাহের মাধ্যমে গরুর স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং মানুষের জন্য আমিষ সরবরাহের ব্যবস্থা করা। খাদ্য থেকে পশু পুষ্টি পায় এবং শারিরীক বৃদ্ধি ঘটে।হাড্ডিসার গরু মোটাতাজাকরণের উপায় জানার আগে প্রাসঙ্গিক অনেক কিছুই জানতে হবে এই যেন ধরুন হাড্ডিসার গরু কি আমারা কিভাবে চিনবো গরু হাড্ডিসার অবস্থায় কেন তারপর মোটাতাজা করণ কি সেটা কিভাবে করবো ইত্যাদি। তা হলে চলুন হাড্ডিসার গরু মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়া জানার আগে কিভাবে হাড্ডিসার গরু চিনবো সেটা আগে জেনে নেই।
হাড্ডিসার গরু কি
যে সব গরুর শরীরে মাংস কম বাহির থেকে সব হাড় সাধারণত দৃষ্টি গোচর হয় সেসব গরুকে হাড্ডিসার গরু বলে।এদের দেখলে মনে হবে যেন ধাক্কা দিলেই মাটিতে লুটোপুটি খাবে।দুর্ভিক্ষ প্রবণ এলাকার মানুষ গুলো যেমন হাড্ডিসার কঙ্কালের মতো দেখা যায় হাড্ডিসার গরুর অবস্থায় ও ঠিক সেই রকম। সাধারণত গরু সঠিক যত্ন না নিলে ঠিক মত খাবার না খাওয়ালে গরু অবস্থা খুব ই শোচনীয় পর্যায়ে চলে যায় তখন তাকে আমরা হাড্ডিসার গরু বলে থাকি।আবার গরু সঠিক আবাসস্থল ও চিকিৎসা সেবা না পেলেও এই রকম হয়ে যায়।
গরু মোটাতাজাকরণ কি
গরু মোটাতাজাকরণ অধিক গোশত উৎপাদনের জন্য হাড্ডিসার গরুকে স্বাস্থবান গরুতে রূপান্তর করাকে গরু মোটাতাজাকরণ বলা হয়। হাড্ডিসার গরু মোটাতাজাকরণের লক্ষে শুরুতে গরুর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান নির্মাণ করা জরুরি। প্রতিটি গরুর জন্য ১.৫মি. ২মি. জায়গার ঘর নির্মাণ করতে হবে।গরুকে পরিষ্কার জায়গায় থাকার ব্যাবস্থা করে দিতে হবে। গরুর ঘরে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো বাতাস থাকে সেদিন বিশেষ নজর রাখতে হবে।অধিক গরমের সময় ফ্যানের ব্যবস্থা করা,বর্ষাকালে গরুর ঘর শুকনো রাখার ব্যবস্থা করা এবং শীতকালে ঠান্ডা থেকে ভালো রাখতে উপযুক্ত ইত্যাদি ব্যবস্থা করতে হবে।
হাড্ডিসার গরু মোটাতাজা করার জন্য শুধু খাবার দিলেই হবে না। পাশাপাশি পশুকে ভালোবাসতে হবে। সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে হবে। যেমন- সময়মতো গোসল, খাবার, ওষুধ দিতে হবে। এছাড়া ভালো সফলতা এনে দেবে ব্যবস্থাপনা, যথাসময়ে সঠিক কাজ
হাড্ডিসার গরু মোটাতাজাকরণে কিছু কার্যকারী পুষ্পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমাদের দেশে গরু পালন একটি লাভজনক পেশা। গরু পালন করে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন আবার সঠিক নিয়মে গরু পালন না করায় অনেকেই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। গরু পালনে লাভজনক হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সঠিক উপায়ে গরু মটাতাজা করণ। আর এক্ষেত্রে খাদ্য ব্যবস্থাপনা উল্লেখযোগ্য। আসুন জেনে নেই হাড্ডিসার গরু মোটাতাজাকরণের কিছু কার্যকর পদক্ষেপ।
১.হাড্ডিসার মোটাতাজাকরন প্রক্রিয়ায় গরুকে দৈহিক ওজন নির্ণয়
গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কেননা গরুর খাদ্য সরবরাহ,ঔষধ সরবরাহ ইত্যাদি কাজগুলো করতে হয় দৈহিক ওজনের ভিত্তিতে।
তাই মোটাতাজাকরণের শুরুতেই গরুর ওজন নির্ণয় করতে হবে তাহলে কৃমির ঔষধ ও খাদ্য দিতে সুবিধা হবে। ওজন মাপার ক্ষেত্রে এই সুত্র ব্যবহার করতে পারেন -দৈর্ঘ্য*(বুকের বেড়ের) ২ (ইঞ্চি)এবার ৬৬০ দিয়ে ভাগ করতে হবে,তাহলে কেজির হিসাব পাওয়া যাবে।
২.গরুর পেটে গ্যাস সৃষ্টি হয় এমন খাদ্য যেমন ভাত বা খুদের জাউ খাওয়ানো উচিত নয় এর ফলে গরুর পেট ফুলে যেতে পারে আবার কখনো কখনো গরুর মারাত্মক রোগ হতে পারে।
৩.গরুকে আঁশ জাতীয় (শুধু খড়, ইউ এম, সবুজ ঘাস) ইত্যাদি সরবরাহ করতে পারেন
৪.হাড্ডিসার গরু মোটাতাজা করতে দানাদার খাবার( খৈল, ভূষি, চাষের কুড়া , খুদ, শুটকি মাছ, ঝিনুকের গুড়া, লবন) ইত্যাদি সরবারহ করতে পারেন
৫.হাড্ডিসার গরু মোটাতাজা করতে তার ইচ্ছা অনুযায়ী, অর্থাৎ গরু যে পরিমান খেতে পারে সে পরিমান খাবার সরবারাহ করতে হব। গরুকে তার দেহের ওজন অনুপাতে দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে পারেন
৬.এছাড়াও হাড্ডিসারা গরুকে সবুজ ঘাস সাথে চিটাগুড়ে মিশিয়ে তা গরুতে খাওয়াতে পারেন
৭.ইউরিয়া ও ঝোলাগুড় দ্বারা প্রক্রিয়াজাত করে খড়ের পষ্টিমান বহুলাংশে বাড়ানো সম্ভব। ইউরিয়া হতে আমিষ তৈরি হয় ঝোলাগুড়ে শর্করা খনিজ পদার্থ থাকে। তাই ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র খাওয়ালে পশু সহজেই এসব উপাদান পায় এবং মোটাতাজা হয়।
৮.গরুকে কৃমি নাশক ঔষধ খাওয়ানো।গরুর পেটে কৃমি থাকলে সেই গরুকে অনেক খাওয়ানো আর যত্ন নিলেও কোনো ফলাফল পাওয়া যাবে না তাই শুরুতে কৃমি নাশক ঔষধ খাওয়ানো প্রয়োজন।
৯.গরু খেতে না চাইলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রুচি বৃদ্ধি কারক ঔষধ খাওয়াতে হবে।
১০.হাড্ডি সারা গরুর মোটাতাজা করার লক্ষে রোগ ব্যাধির চিকিৎসার ব্যাপারে খুব সর্তক থাকতে হবে।কোনো রোগে আক্রান্ত হলে ভালো পশু ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
১১.সংক্রামক রোগের টিকা দেওয়া জরুরী। গরু মোটাতাজাকরণে রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ক্ষুরা, তড়কা, বাদলাসহ অন্যান্য রোগের টিকা দিতে
১২.হাড্ডিসার গরু মোটাতাজা করার জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো খাদ্য সরবরাহ করা। গরুকে এমন খাদ্য দিতে হবে যাতে আমিষ, শর্করা, চর্বি, খনিজ পদার্থ ভিটামিনের পরিমাণ সাধারণ খাদ্যের চেয়ে একটু বেশি পরিমাণ থাকে। খড়, কুড়া। ভুট্টা বা গম ভাংগা, ঝোলাগুড়, খৈল ইত্যাদিতে আমিষ, শর্করা, ও চর্বি জাতীয় খাদ্য থাকে। আর কাঁচা ঘাস, হাড়ের গুঁড়া ইত্যাদিতে খনিজ লবণ ও ভিটামিন থাকে। ইউরিয়া ও ঝোলাগুড় মেশানো খাদ্য হাড্ডিসার গরু মোটাতাজাকরনের সহায়ক।
১৩.মাসের কম বয়সী গরু এবং গর্ভবতী গাভীর গর্ভাবস্থায় ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র খাওয়ানো যাবে না।
১৪.সঠিক নিয়মে গরুকে প্রতিদিন গোসল করাতে হবে। এতে গরুর ত্বক ও শরীর সতেজ থাকবে।