কচু শাকের উপকারিতা
কচু শাকের উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ প্রচুর। কচু শাকের পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় এর চাহিদা ব্যপক। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে কচু শাক খুবই জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য
কচুশাকের উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমায়। শরীরে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে ডাক্তারা কচু শাক খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
কচু শাকে ভিটামিন এ-এর পাশাপাশি ভিটামিন বি এবং সি-ও পাওয়া যায় । কচুশাক আয়রনসমৃদ্ধ হওয়ায় চাহিদা অনেক বেশি। এইশাক ভিটামিন এ-এর খুব ভালো উৎস, রাতাকানা রোগসহ ভিটামিন এ- অভাব জনিত রোগ থেকে বাঁচতে এ শাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কচু শাকই দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদার অনেকখানি পূরণ করতে পারে এবং ভিটামিন -এ এর অভাবে হওয়া সব ধরনের রোগ প্রতিরোধে করতে পারে কচু শাক
কচুশাকের পুষ্টি উপাদান বেশি থাকায় সব বয়সের মানুষ খেতে পারে। এই শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং খনিজ। কচু শাক দুই রকম হয়।একটি হলো কালো কচু শাক অন্যটি সবুজ কলো শাক।কচু শাকের উপকারিতা জানার আগে দুই রকম কচু শাকের পুষ্টিমান জানা দরকার।
কচু শাকের পুষ্টি উপাদানঃ কচু শাকের উপকারিতা
প্রতি ১০০ গ্রাম সবুজ কচুশাকে থাকে
- ১.শর্করা ৬.৮ গ্রাম
- ২.প্রোটিন- ৩.৯ গ্রাম
- ৩.লৌহ ১০ মিলিগ্রাম
- ৪.ভিটামিন বি-১থায়ামিন - ০.২২ মিলিগ্রাম
- ৫. ভিটামিন 'সি'-১২ মিলিগ্রাম
- ৬. স্নেহ বা চর্বি-১.৫ গ্রাম
- ৭. ক্যালসিয়াম-২২৭ মিলিগ্রাম,
- ৮.ভিটামিন বি-২ (রাইবোফ্লেবিন)- ০.২৬ মিলিগ্রাম
- ৯.খাদ্যশক্তি-৫৬ কিলোক্যালরি।
প্রতি ১০০ গ্রাম কালো কচুশাকে থাকে- কচু শাকের উপকারিতা
- ১) ৮.১ গ্রাম শর্করা
- ২) ৬.৮ গ্রাম প্রোটিন
- ৩)৩৮.৭ মিলিগ্রাম লৌহ
- ৪) ০.০৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন)
- ৫) 0.80 মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ (রাইবোফ্লোবিন)
- ৬)৬৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি
- ৭)২.০ গ্রাম স্নেহ বা চর্বি
- ৮) ৪৬০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম,
- ৯)৭৭ কিলোক্যালোরি খাদ্যশক্তি।
কচু শাকের উপকারিতা ঃ
- ১. কচু শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাংগানিজ, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস। আমাদের দাঁত ও হাড়ের গঠনে কচু শাকের তুলনা হয়না।
- ২.ক্ষয়রোগ প্রতিরোধে কচু শাকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত কচু শাক খেলে দাঁত ও হাড় ভালো থাকবে।
- ৪.কচু শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন থাকে। এই আয়রন আমাদের রক্তশূন্যতা ভোগা থেকে রক্ষা করে। তাই রক্তশূন্যতায় ভোগা রোগীদের জন্য কচু শাক খাওয়া অবশ্যই দরকার।
- ৫. কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকে যা খাবারকে অতি সহজে হজম করতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগীরা , নিয়মিত কচু শাক খেলে উপকার পাব।
- ৬. কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এর লৌহ উপাদান দেহে সহজে আত্তীকরণ হয়ে যায়। ভিটামিন সি আমাদের শরীরের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।
- ৭.কচু শাকে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ থাকে। এটি আমাদের রাতকানা, ছানি পড়াসহ চোখের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধসহ দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে দেয়। রাত কানা রোগ সারাতে কচু শাকের উৎকৃষ্ট।
- ৮. কচু শাক খেলে রক্তের কোলেস্টরেল কমে তাই উচ্চরক্ত চাপের রোগীদের জন্য কচু শাক এবং কচু বেশ উপকারী।
- ৯. নিয়মিত কচু শাক খেলে কোলন ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।
- ১০.কচু শাকে বিদ্যমান বিভিন্ন রকমের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান গর্ভবর্তী মা ও শিশুর জন্য অনেক উপকারী।
- কচু শাক সহজ লভ্য হওয়ায় দরিদ্র গর্ভবতী মায়েরা ভিটামিন ও আয়রনের চাহিদা পূরণের জন্য কচু বা কচু শাক খেতে পারেন।
- ১১.আমাদের শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ সচল রাখতে কচু শাক বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
- ১২.এই শাকের আয়রন ও ফোলেট রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এর ফলে অক্সিজেন সংবহন পর্যাপ্ত থাকে।
- ১৩.কচু শাকের উপস্থিত ভিটামিন কে রক্তপাতের সমস্যা প্রতিরোধ করে থাকে।
- ১৪.সাধারণত বাচ্চাদের জ্বরের সময় শরীরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য দুধ কচু খাওয়ালে বেশ উপকার পাওয়া যায়।শুধু বাচ্চাদের জন্যই নয় বড়দের ক্ষেত্রে এটা খুব কার্যকরী।
- ১৫. ওল কচুর রস উচ্চ রক্তচাপের রোগীকে প্রতিষেধক হিসেবে খাওয়ানো হয় এবং এতে বেশ ভালো উপকার পাওয়া যায়।
- ১৬.কচুশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, যা দেহের বৃদ্ধি ও কোষ গঠনে অনেক বড় ভূমিকা রাখে। কচু শাকের ভিটামিন কোষের পুনর্গঠনে সহায়তা করে৷
- ১৭.কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা চেহারা থেকে বয়সের ছাপ দূর করতে সহায়তা করে।
- ১৮.কচুর শাকের উপকারিতাগুলো অন্যতম একটি কচুর শাক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।কচু শাকে আছে বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়ামের মত বহু উপকারী উপাদান। এগুলো দেহে প্রবেশ করলে দেহ সুস্থ সবল থাকে, পুষ্টির অভাবও কমে যায়। তাই কচু শাক বাড়ন্ত শিশু, গর্ভবতী ও প্রসূতি মা, এবং বয়স্কদের জন্য খুবই উপকারী। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, প্রতি ১০০ গ্রাম কচু শাকে যতটুকু ক্যালরি পাওয়া যায় তা দৈনন্দিন ক্যালরির চাহিদা অনেকটাই মিটিয়ে দেয়। ফলে বাড়তি ক্যালরির তেমন দরকার পড়ে না। আর ওজনও বাড়ে না। কচু শাক রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়িয়ে দেয়। তাই ডাক্তাররা হিমোগ্লোবিনের ঘাটতির জন্য কচু শাক খাওয়া প্রেসক্রাইব করে থাকেন।
- ১৯.কচুর শাক উপকারিতার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো এটি শরীরের প্রদাহ ও জ্বালাপোড়া কমায়।কচু শাকের অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান যেকোন ধরণের প্রদাহ ও জ্বালাপোড়া কমায়। বুক জ্বালা, পেট জ্বালা, অ্যাসিডিটি ইত্যাদি সারাতে কচু শাক চমৎকার ভূমিকা পালন করে। রক্তের ইনফ্লেমেশনও সারে এই শাক খেলে। এছাড়াও শরীরের কোন অঙ্গের প্রদাহ সারতে পারে কচু শাকের টোটকায়।
কচু শাক গ্রাম বাংলায় অনেক বেশি সহজলভ্য সেই সাথে জনপ্রিয়। এটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি কচু শাকের উপকারিতা অনেক।
কচু শাকের অপকারিতাঃ
কচু শাকের উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি এবার কচু শাকের অপকারিতা সামান্য পরিমানে আছে সেটাও জেনে নেব।তবে সেটা সবার জন্য না।
- ১.কচু শাক বা কচু খেলে অনেক সময় গলা চুলকায়। কারণ কচু শাকে অক্সলেট নামক একটি উপাদান আছে। এই জন্য কচু রান্নায় লেবুর রস বা সিরকা ব্যবহার করাতে হয়।
- ২. শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা বেশি থাকলে কচু শাক না খাওয়াই ভালো।
- ৩.কচুশাকের অপকারিতা মধ্যে একটি অন্যতম হলো গ্যাসট্রিকের সমস্যা হতে পারে।
গ্রাম বাংলা কচু শাক অনেক বেশি পরিচিত। কমবেশি সবাই এই সুস্বাদু কচুর শাক খেতে পছন্দ করে থাকে।ভোজন রসিক মানুষের এর কদর বেশি করে থাকে।কচুর শাকের উপকারিতা অনেক এটি আমাদের শরীরের অনেক ভিটামিন ও পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে।