সোনালী ব্যাংক লোন
বাংলাদেশের একটি বৃহত্তম রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংক হলো সোনালী ব্যাংক। এই ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ব্যাংক ন্যাশনালাইজেশন ১৯৭২ সালের আইন অনুযায়ী। এই ব্যাংকটির অনুমোদিত মূলধন কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ আর ৪১৩০ কোটি টাকা। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ঢাকার মতিঝিল এলাকায় অবস্থিত। সোনালী ব্যাংকের একজন রেগুলার গ্রাহক হিসেবে সোনালী ব্যাংক লোন নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে তা সম্পর্কে আজ বিস্তারিত আলোচনা করব।
সোনালী ব্যাংকের অধীনে বিভিন্ন মেয়াদের জন্য লোন নিতে হলে কিছু শর্ত প্রযোজ্য হবে।
সোনালী ব্যাংক লোন প্রকারভেদ
- পার্সোনাল লোন
- স্যালারি লোন
সোনালী ব্যাংক পার্সোনাল লোন
সোনালী ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ লোন নিতে চাইলে সোনালী ব্যাংকে যে পার্সোনাল লোন সেবা পাওয়া যায় সেটি নেওয়া যেতে পারে।এই লোনের মাধ্যমে ব্যবসায় কার্যক্রমে কিংবা অন্য যে কোন প্রফিটেবল খাতে ব্যবহার করা যে তে পারে। সোনালী ব্যাংকের যে পার্সোনাল লোন সভা রয়েছে সেটিকে ছোট এবং বড় এন্টারপ্রাইজ লোন বলা হয়।
★ সোনালী ব্যাংক পার্সোনাল লোনের জন্য যে সকল ডকুমেন্টস প্রয়োজন :
- আবেদনকারীর ছবি ও তার ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি।
- নমিনের ছবি ও তার ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি।
- বিবাহিতদের ক্ষেত্রে স্ত্রীর ছবি ও ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি প্রয়োজন হতে পারে।
- আবেদনকারী ও নমিনের স্বাক্ষর করা একটি blank চেক।
- এমপিও ভুক্ত চাকরি হলে এমপিওর কপি প্রয়োজন।
- অবশ্যই আবেদনকারী কে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
★ লোন এর লিমিট
- যেকোনো ব্যক্তি কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত লোন নিতে পারবে।
- যে ব্যক্তির লোন এর অপব্যবহার করে লোন পরিশোধের সময় এবং মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি এ লোন নিতে পারবে না।
- নারী উদ্যোক্তা হলে খুব বেশি পরিমাণে সফলতা পেলে লোন নিতে পারবে।
সিকিউরিটি
- পুরুষ উদ্যোক্তার জন্য লোন এর সিকিউরিটি বাবদ 5 লক্ষ টাকা দেওয়া লাগতে পারে।
- নারী উদ্যোক্তা হলে সিকিউরিটি বাবদ এক লক্ষ টাকা দিতে হতে পারে।
সময়সীমা
- যে ব্যক্তি এই লোন সেবা উপভোগ করবে সে ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের মধ্যে লোন পরিশোধ করতে হবে।
লোন চলাকালীন সময়ে যেকোনো ব্যক্তির মাসে কিস্তিতে ক্লোন পরিশোধ করতে পারবে।
★ সোনালী ব্যাংকের স্যালারি লোন
এই লোন মূলত কর্মচারীদের জন্য। যাদের বেতন খুবই কম এবং তাদের জীবনযাত্রার মান খুবই নগণ্য এ কারণে তারা সোনালী ব্যাংকের অধীনে স্বল্প বেতনের এই ঋণ নিতে পারবে। এই ঋণ নেওয়ার রিকুয়ারমেন্ট গুলো হলো:
- যেকোনো ব্যক্তির কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকা ঋণ দিতে পারবে।
- মার্জিন হল ঋণ সীমার ২০%।
- ১২ মাস থেকে ৩৬ মাসের জন্য ঋণ পরিশোধ যোগ্য।
- ১২% টাকা পরিশোধ করতে হবে।
ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি
ঋণ সীমাঃ ২০০০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০০০০ টাকা পর্যন্ত।
মেয়াদ ও কিস্তিঃ মেয়াদ ১২ মাস থেকে ৩৬ মাস পর্যন্ত। মেয়াদের উপর ভিত্তি করে মাসিক কিস্তি টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
সোনালী ব্যাংক স্যালারি লোনের যোগ্যতা
- চাকরিজীবী হতে হবে।
- কর্মচারী হতে হবে LpR সমাপ্তির আগে তিন বছরের জন্য নিযুক্ত থাকতে হবে।
সোনালী ব্যাংকের অধীনে আরো কিছু খাত রয়েছে এগুলো হলো :
- শিক্ষালোন বা স্টুডেন্ট লোন।
- সোনালী ব্যাংক কৃষি লোন।
- সোনালী ব্যাংক প্রবাসী লোন।
- ফরেন এডুকেশন ঋণ প্রকল্প।
- সরকারের ভাতা অথবা শুধুমাত্র প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ মেয়াদী ঋণ।
- ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ঋণ।
- বিশেষ ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি।
শিক্ষা লোন বা স্টুডেন্ট লোন
এ লোন শুধুমাত্র স্টুডেন্টদের জন্য। শিক্ষার্থীরা যেন ঝরে না পড়ে সে জন্য সোনালী ব্যাংক এ লোনের ব্যবস্থা করেছে। শিক্ষার্থীরা যেন পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে এর জন্য প্রতিবছর সোনালী ব্যাংক শিক্ষায় স্কলারশিপ দিয়ে থাকে।
সোনালী ব্যাংক কৃষি লোন
যোগ্যতা
- এসএসসি বা সমমান
- এইচ এস সি বা সমমান পরীক্ষায় পাশ করতে হবে।
- প্রতি চলতি বছরের এসএসসি বা এইচএসসি হতে হবে।
সোনালী ব্যাংক কৃষি লোন
সোনালী ব্যাংক কৃষি লোন শুধু কৃষকের জন্য। কৃষকরা যাতে উন্নয়ন বেশি করতে পারে এবং দেশের চাহিদা যোগান দিতে পারে এজন্য সোনালী ব্যাংক কৃষি লোনের ব্যবস্থা করেছে।
সোনালী ব্যাংক প্রবাসী লোন
সোনালী ব্যাংক প্রবাসী লোন শুধুমাত্র প্রবাসীদের দিয়ে থাকে। প্রবাসীদের উন্নয়নের জন্য সোনালী ব্যাংক লোন এ ব্যবস্থা করেছে।
সোনালী ব্যাংক ক্ষুদ্রঋণ কর্মসুচী
সোনালী ব্যাংক ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি এই সর্বনিম্ন ২০০০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০০০০ টাকা পর্যন্ত লোন পাওয়ার সুবিধা রয়েছে। ১২ মাস থেকে ৩৬ মাস পর্যন্ত সোনালী ব্যাংক ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচির মেয়াদ থাকে।মার্জিন সীমার শতাংশ।
সাধারণত সোনালী ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রদান করা হয়।
- কৃষি পণ্য বিপণন।
- পার্সোনাল কম্পিউটার, প্রিন্টার স্ক্যানার ক্রয়।
- সাইকেল অথবা মোটরসাইকেল ক্রয়।
- সেলাই মেশিন, এমব্রয়ডারি মেশিন,সোয়েটার বুনন মেশিন ক্রয়।
- সবজি বাগান বা নার্সারী স্থাপন।
- শিক্ষার জন্য বিনিয়োগ।
- ক্ষুদ্র ব্যবসা ইনভেস্ট।
- হাঁস মুরগি পালন মাস উৎপাদন গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প।
- মৌসুমী ফল মজুদ।
সোনালী ব্যাংক মুক্তিযোদ্ধা লোন
সোনালী ব্যাংক মুক্তিযোদ্ধা লোন শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধা ছেলে-মেয়ে স্ত্রী র জন্য। সোনালী ব্যাংকের এই বিশেষ মুক্তিযোদ্ধা লোন পাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলে মেয়ে সন্তান হতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ছেলেমেয়ে ব্যতীত এই অন্য কোন সাধারণ জনগণ এই লোন পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে না।
এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা লোন পাওয়ার জন্য আপনাকে যে কোন ব্যবসা বা স্ব-কর্মস্থানের সাথে জড়িত থাকতে হবে। সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের যে কোন শাখায় এই বিশেষ মুক্তিযোদ্ধা লোন পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধা লোনের সীমা পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত। সুদের হার ৪% যা পরিবর্তন যোগ্য। এই লোনের মেয়াদ ৫ বছর পর্যন্ত।
সোনালী ব্যাংক থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা লোন পেতে যা ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয় তা হলো
- আবেদন পত্র
- আবেদনকারী ও নমিনির সদ্য তোলার ছবি
- স্টাম্প ও চেকের দুটি পাতা
এই কাগজপত্রগুলো নিয়ে সোনালী ব্যাংকের লোন পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে।
★ সোনালী ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়
- লোন গ্রহণের জন্য প্রথমে আপনি কি টাইপের লোন নিতে চান সেটা নির্ধারণ করতে হবে।
- এরপরে উক্ত লোনের জন্য আপনি যোগ্য কিনা সেটা বিবেচনা করতে হবে।
- লোন গ্রহনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো সংগ্রহ করতে হবে।
- নিকটস্থ সোনালী ব্যাংক শাখা যোগাযোগ করে লোন আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে।
- লোনের আবেদনের পূর্বে অবশ্যই সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং একজন নোমিন এর দরকার পড়বে।
- প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো দিয়ে লোন আবেদন ফরম পূরণ করে এর সঙ্গে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো সোনালী ব্যাংক শাখায় জমা দিতে হবে।
- ব্যাংক আপনার আবেদনটির যথাযথ বাছাই যাচাই করে আপনাকে লোন প্রদান করবে।
সোনালী ব্যাংক লোন ইন্টারেস্ট রেট
সোনালী ব্যাংক লোন ইন্টারেস্ট রেট তথা সুদের হার মাত্র ১২% তবে ব্যাংকের নিয়ম কানুন অনুযায়ী যে কোন সময় কর্তৃপক্ষ সোনালী ব্যাংক লোন ইন্টারেস্ট রেট পরিবর্তন করতে পারে।
সোনালী ব্যাংক লোন ফরম
সোনালী ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণের জন্য অবশ্যই লোন ফরম সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণত দুইভাবে এই ফর্ম সংগ্রহ করা যায়। সরাসরি ব্যাংকে উপস্থিত হয়ে বা ব্যাংক ম্যানেজারের কাছ থেকে লোন ফরম সংগ্রহ করা যায়। দ্বিতীয় অপশনটি হচ্ছে অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে।
সোনালী ব্যাংক লোনের কিস্তি
সোনালী ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণের পর প্রতি মাসে কত টাকা কিস্তি দিতে হবে তা আপনাকে ব্যাংক থেকে জানিয়ে দেবে। সাধারণত এমাউন্ট ও লোনের মেয়াদের উপর নির্ভর করে কিস্তি নির্ধারণ করা হয়।
★ শেষ কথা
১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই ব্যাংকটি বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে বিভিন্ন খাতে লোন প্রদান করে আসছে। বিশেষ করে এই লোনগুলোর মধ্যে সোনালী ব্যাংক শিক্ষালয় ও সোনালী ব্যাংক পার্সোনাল লোন অন্যতম। উপরে উল্লেখিত তথ্য গুলোর মাধ্যমে যেকোনো তথ্য ব্যাংক যেকোনো সময় পরিবর্তন করতে পারে। তাই লোন নেওয়ার ডিসিশন নেওয়ার পরে সরাসরি ব্যাংক শাখায় উপস্থিত হয়ে উক্ত লোন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।