সাকিব আল হাসানের পুরো নাম হচ্ছে খন্দকার সাকিব আল হাসান তিনি জন্মগ্রহণ করেন 24শে মার্চ 1987 সাল। তিনি অধিকাংশ সময় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের টি-টোয়েন্টি, ওডিআই এবং টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সাকিব আল হাসান হচ্ছেন একজন বামহাতি মেডেল অর্ডার ব্যাটসম্যান এবং বাম হাতে অর্থোডক্স স্পিনার। সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রিকেটার পাশাপাশি বিশ্বের অন্যতম অলরাউন্ডার হিসেবে পরিচিত। টানা ১০ বছর ধরে শীর্ষ অলরাউন্ডারের খেতাব ধরে রাখতে পেরেছেন এখন পর্যন্ত। ইউএসপিএন এর তথ্য মতে সাকিব আল হাসান হচ্ছেন বিশ্বের নব্বই তম বিখ্যাত ক্রীড়াবিদ। টি-টোয়েন্টি ফরমেটে সর্বোচ্চ উইকেটধারী প্লেয়ার এর খেতাব অর্জন করেছেন তিনি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক
২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বপ্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে তার অভিষেক ঘটে। বাংলাদেশের অন্যতম ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিকেএসপির শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। 2015 সালের আইসিসির রেংকিং অনুসারে টুয়েন্টি ওডিআই এবং টেস্ট ক্রিকেটে একমাত্র এক নম্বর অলরাউন্ডার প্লেয়ার হিসেবে খেতাব অর্জন করেন। এছাড়া জিনিস সর্বপ্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে একদিনের ক্রিকেটে 4000 রান করার গৌরব বর্জন করেন। পাশাপাশি ২০১৭ সালের ১৩ই জানুয়ারি টেস্টে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান সংগ্রাহক হিসেবেও নাম লেখান। টি-টোয়েন্টি ফরমেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ 1000 রান পূর্ণ করেন। তার অর্জনের খাতায় আরো একটি খেতাব রয়েছে তা হলো ২০১৯ সালের জুনে দ্রুততম খেলোয়াড় হিসেবে মাত্র ১৯৯ ম্যাচে পাঁচ হাজার রান 50 উইকেট নেওয়ার মাইলফলক অর্জন করেন।
সাকিব আল হাসানের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার গল্প
খন্দকার সাকিব আল হাসান ১৯৮৭ সালের ২৩ শে মার্চ মাগুরা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাসরুর রেজা বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা এবং তার মা একজন গৃহিণী। ছোটবেলা থেকে সাকিব আল হাসান খেলাধুলার প্রতি দুর্বল ছিলেন। তার বাবাও খুলনা বিভাগের হয়ে এবং তার কাজিন বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে ফুটবল খেলেছেন।
পাড়া মহল্লায় সাকিব আল হাসানের খেলার নৈপুণ্যতার কারণে তাকে খেলার জন্য ভাড়া করে নিয়ে যাওয়া হতো। খেলা পাগল সাকিব আল হাসানের খেলা দেখে এক আম্পিয়ার অভিভূত হন এবং তিনি পরবর্তীতে তাকে ইসলামপুর পাড়া ক্লাব এর সাথে অনুশীলন করার সুযোগ দেন। সাকিব আল হাসান তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিং এবং দ্রুতগতির বোলিং অব্যাহত রাখেন। আর প্রথমবার তিনি পিন বোলিং নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন এবং সফল হন। সফলতার ধরন ইসলামপুর দলে খেলার সুযোগ পান সেইসঙ্গে প্রথম বলেই উইকেট তুলে নেন। আর সেবারকার প্রথম ক্রিকেট বল দিয়ে খেলার আসল স্বাদ গ্রহণ করেন। কারণ এর আগে তিনি পাড়া মহল্লায় টেপ লাগানো টেনিস বল দিয়ে খেলতেন। এরপর তিনি বিকেএসপিতে ছয় মাস ট্রেনিং নেওয়ার সুযোগ পান পরবর্তীতে ২০০৪ সালে ১৭ বছর বয়সে জাতীয় লীগে খেলার জন্য খুলনা দলের নাম জমা দেন।
অনূর্ধ্ব ১৯ দলে খেলার সুযোগ পান মাত্র ১৫ বছর বয়সে। ২০০৬ সালের জিম্বাবুয়ের সফরে সাকিব আল হাসান প্রথম বারের মতো বাংলাদেশের জাতীয় দলের জার্সি পরে খেলার সুযোগ পান।
সাকিব আল হাসানের অধিনায়কত্ব
তখনকার সময়ে আশরাফুল ছিলেন আরো একজন ভালো প্লেয়ার। কিন্তু ২০০৯ এর শুরু থেকে টানা কয়েকটি ম্যাচে হার এবং দীর্ঘ রান খরার কারণে তিনি সমালোচিত হন। সে সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সাকিব আল হাসানকে বাংলাদেশের সম্ভাব্য কর্ণধার হিসেবে চিহ্নিত করেন। যদিও বিসিবি এত স্বল্প সময়ের মধ্যে তাকে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব দিতে চাচ্ছিলেন না। কিন্তু পরবর্তীতে যখন ২০০৯ এর টি-টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপ এর প্রথম পর্বেই আয়ারল্যান্ড এবং ভারতের কাছে হেরে যায় তখন আশরাফুলের অধিনায়কত্ব নিয়ে আবারও প্রশ্ন ওঠে ফলশ্রুতিতে বিসিবি মাশরাফিকে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব দেন এবং সাকিব আল হাসানকে সহ অধিনায়ক করেন।
পরবর্তীতে জুলাই মাসে যখন বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যায় তখন সাকিব আল হাসান নিজেকে মেলে ধরতে পারেন আরো একটু সমৃদ্ধ ভাবে। ওই সফরে প্রথম টেস্টেই মাশরাফি হাঁটুর ইনজুরিতে আক্রান্ত হন। ফলে খেলার শেষ দিনে তিনি মাঠে নামতে পারেননি। আর তখন সাকিব আল হাসান অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় তিনি এবং মাহমুদুল্লাহ বলিনি অ্যাটাকের নেতৃত্ব দেন এবং দুজনে মিলে ১৩ টি উইকেট তুলে নেন ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ বিজয়ের স্বাদ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে পুরো টেস্ট সিরিজ জুড়ে শাকিব আল হাসান মাত্র ২২ বছর ১১৫ দিন বয়সের সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়কত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করে সিরিজ জয়ের খেতাব অর্জন করেন।
সাকিব আল হাসানের সমালোচনা এবং সাময়িক বহিষ্কার
মাঠে এবং মাঠের বাইরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাকিব আল হাসান আলোচিত এবং সমালোচিত হন। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ এবং শ্রীলংকার মধ্যকার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে চলাকালীন সময়ে ড্রেসিংরুমে অশালীন অঙ্গভঙ্গি দেখানোর কারণে টানা তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ এবং তিন লক্ষ টাকা জরিমানা দেন।
২০১৪ সালের জুলাইয়ে শাকিব আল হাসানকে জাতীয় দল থেকে ৬ মাসের জন্য এবং বাংলাদেশের বাইরের ক্লাব ক্রিকেট থেকে ২০১৫ সালের জুলাই পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অভিযোগ ছিল যে তিনি চন্ডিকা হাতুড়ি সিংহার সাথে দুর্ব্যবহার এবং মাঠে অশোভন আচরণ করেছেন। যদিও নাজমুল হাসান তথা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এই শাস্তি দেওয়ার কারণে সমালোচনার মুখোমুখি হন।
পরবর্তীতে একই বছর ২৬ শে আগস্ট বিসিবির সভায় সাকিবের ইতিবাচক আচরণের কারণে বিশেষ বিবেচনায় নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কমানো হয়। সাময়িক নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ের টেস্ট সিরিজের রাজকীয় পরিবর্তন করেন এবং প্রথম টেস্টে ৫৯ রানের বিনিময়ে 6 উইকেট নেন।
এছাড়াও জুয়ারীদের কাছ থেকে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়েও বিসিবিকে না জানানোর অপরাধে ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর দুই বছরের জন্য আইসিসি থেকে নিষিদ্ধ হন। তবে সাকিব আল হাসান তাঁর ভুল স্বীকার করার কারণে এক বছর করা হয়।
সাকিব আল হাসান এর পরিবার
২০১২ সালে সাকিব আল হাসান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী উম্মে আহমেদ শিশিরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ঢাকার রূপসী বাংলা হোটেলে বিবাহ কার্য সম্পন্ন করেন। সেখানে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের বিভিন্ন খেলার উপস্থিত ছিলেন। বর্তমানে সাকিব আল হাসান তিন সন্তানের পিতা। তার সন্তানদের মধ্যে দুইজন কন্যা সন্তান এবং একজন পুত্র সন্তান। তার বড় মেয়ের নাম আলাইনা হাসান অব্রি ছোট মেয়ের নাম ইররাম এবং ছেলের নাম ইজাহ আল হাসান।
সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের কততম ধনী
সাকিব আল হাসান হোসেন দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী অধিনায়ক। তবে যদিও বাংলাদেশে তিনি কত তম ধনী সেটা সম্পর্কে আমাদের ধারণা নেই। 'সিএ নলেজ' নামের একটি সংস্থা যারা সেলিব্রেটিদের সম্পদের হিসাব প্রকাশ করে থাকে। তাদের মতে সাকিব আল হাসান হচ্ছেন বিশ্বের ক্রিকেট অধিনায়কদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তি। তাদের তথ্যমতে ভারতের রোহিত শর্মা হচ্ছেন প্রথম সর্বোচ্চ ধনী অধিনায়ক ক্রিকেটার।
BanglaNews24.com এর তথ্য মতে এদিকে 'সিএ নলেজ'-এর দাবি, বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সম্পদের পরিমাণ ২২২ কোটি টাকা। খেলাধুলা থেকে বিপুল পরিমাণ আয় করেন তিনি। এর বাইরে তিনি ১২টির অধিক কোম্পানির শুভেচ্ছাদূত। এছাড়া নিজের প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে তার। এছাড়া বিনিয়োগ রয়েছে বেশকিছু ব্যবসায়।
সাকিব আল হাসানের মাসিক বেতন কত
সময় নিউজ এর তথ্য মতে সাকিব আল হাসানের মাসিক বেতন 7 লক্ষ 90 হাজার টাকা। যদিও ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি, টেস্ট টিন ফরমেটের আলাদা আলাদা এ গ্রেড প্লেয়ারের বেতনের টাকা একসাথে যোগ করলেন ১২ লক্ষ টাকার উপরে হয় কিন্তু সাকিব সেই পরিমাণ বেতন পান না। কারণ বিসিবি এর আইন অনুসারে একজন খেলোয়াড় যদি একটি ফরমেটে খেলেন তাহলে নির্দেশিত বেতনের পুরোটাই সে পাবে কিন্তু যদি একই প্লেয়ার একাধিক ফরমেটে খেলে তাহলে সে ক্ষেত্রে পুরো বেতন পাবেন না। উদাহরণস্বরূপ যদি শাকিব আল হাসান ওয়ান ডে ম্যাচ খেলেন তাহলে তার পুরো বেতন পাবেন কিন্তু যদি তিনি আবার টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেন তাহলে টি-টোয়েন্টি ম্যাচের 50 শতাংশ বেতন পাবেন তাহলে সেখান থেকে পাবেন চল্লিশ শতাংশ। এভাবে হিসাব করলে সাকিব আল হাসানের মাসিক বেতন 7 লক্ষ 90 হাজার টাকার মত হয়।
এটা তো শুধুমাত্র বেতনের হিসাব তবে সাকিব আল হাসানের মত প্লেয়াররা বিভিন্ন কোম্পানি থেকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বাব দ প্রচুর টাকা ইনকাম করেন। এছাড়া বিভিন্ন সিরিজে বিভিন্ন পুরস্কারের বিনিময়ে প্রচুর টাকা পান। এগুলোর পাশাপাশি ক্রিকেটারদের আলাদা করে বিজনেস থাকে সেখান থেকে তারা প্রচুর টাকা ইনকাম করেন। শাকিব বিয়ান ভক্তরা নিশ্চয়ই এটি জানেন যে সাকিব একজন পুরোদস্তুর খাস ব্যবসায়ী। তার কিছু স্বনামধন্য ব্যবসা রয়েছে যেটার মাধ্যমে তিনি প্রচুর পয়সা করি ইনকাম করেন।