সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম |
সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম
ব্যক্তির জীবনে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সার্টিফিকেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চাকরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন কাজে অথবা বিদেশ গমনে এই সার্টিফিকেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের প্রমাণ স্বরূপ সার্টিফিকেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু এই সার্টিফিকেট যদি ত্রুটিযুক্ত হয় তাহলে সে সার্টিফিকেটের কোন কার্যকারী মান থাকবে না। ত্রুটিযুক্ত মানে হল সার্টিফিকেটের কোন ভুল থাকা এই যেমন নিজের নামে ভুল, বাবা অথবা মায়ের নামের ভুল জন্ম তারিখ ভুল ইত্যাদি । যেহেতু প্রত্যেক বছরে কয়েক লাখ শিক্ষার্থী বিভিন্ন ধরনের ডিগ্রী অর্জন করে থাকে,আর প্রত্যেকের আলাদা আলাদা নির্দিষ্ট সার্টিফিকেট দেওয়া হয় তাই কিছু সার্টিফিকেট তথ্য ভুল হয়ে যায়। পরবর্তীতে যে শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষা দিয়েছে সেই শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করে ত্রুটিযুক্ত সার্টিফিকেট সংশোধন করা যায়। ব্যক্তি স্বশরীরে বোর্ডে গিয়ে উপস্থিত হয়ে ত্রুটিযুক্ত সার্টিফিকেট সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারে অথবা অনলাইনে আবেদন করা যায়।
অনলাইনে ও অফলাইনে সার্টিফিকেট সংশোধনের জন্য আবেদন করা যায়। তবে অফলাইনে সরাসরি শিক্ষা বোর্ডে উপস্থিত হতে হয়। তাছাড়া দালালের প্রতারণা শিকার ,যাতায়াতে অনেক সময় অপচয় ইত্যাদি সমস্যা এড়াতে অনলাইনে অবেদন করা শ্রেয়। তাই সার্টিফিকেট সংশোধন করার জন্য নিয়ম অনুযায়ী সঠিক পদ্ধতিতে আবেদন করুন।যেহেতু একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ১ বার সার্টিফিকেট সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারবে। তাই সার্টিফিকেট সংশোধনের আবেদন করার সময় সঠিক নিয়ম অনুযায়ী একবারেই সকল সার্টিফিকেটের তথ্য সংশোধনের আবেদন করতে হবে। অনলাইনে আবেদন করে ফি পরিশোধ করার পর আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ৩ মাস বা এর বেশি সময় লাগতে পারে।
সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম:
সার্টিফিকেট সংশোধন করার জন্য শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে ভিজিট করে Online Application লিংকে প্রবেশ করে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস আপলোড করতে হবে। অনলাইনে ফি পরিশোধের পর আবেদনটি সাবমিট করতে হবে। তারপর শিক্ষা বোর্ড ইন্টারভিউ এর জন্য ডাকবে। সকল ডকুমেন্টস দেখিয়ে ইন্টারভিউ সম্পন্ন করার পর সার্টিফিকেট সংশোধন হবে।
সার্টিফিকেট সংশোধন সম্পন্ন হওয়ার এসএমএস আসলে শিক্ষা বোর্ডে আবেদনকারীর একাউন্টে লগইন করে সংশোধিত কপির জন্য আবেদন করে পুনরায় ফি জমা দিতে হবে। পরবর্তীতে এসএমএস আসলে আবেদনকারী শিক্ষা বোর্ডে উপস্থিত হয়ে সংশোধিত সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে পারবে।
সার্টিফিকেট সংশোধন করতে যেসব ডকুমেন্টস লাগে:
অনলাইনে সার্টিফিকেট সংশোধন করার জন্য শিক্ষার্থী বেশ কিছু ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও আবেদনের পর নিজস্ব বোর্ড থেকে যাচাই করনের জন্য সকল ডকুমেন্টস নিয়ে যেতে হয়। যেমন-
- ১.শিক্ষার্থীর জন্ম নিবন্ধন সনদ (জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে তার কপি)
- ২.পিতা মাতার নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে, তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র
- ৩.এফিডেভিট/ নোটারি পাবলিক/ হলফনামা
- ৪.পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের কপি। (সার্টিফিকেট সংশোধনের তথ্য উল্লেখ থাকতে হবে)
- ৫.প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট যেমন,( বোর্ড পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড/ প্রবেশপত্র/ট্রান্সক্রিপ্ট এর মুলকপি) (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
- ৬.আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- ৭.অনলাইনে আবেদন করে থাকলে আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপি
- ৮.অনলাইনে বা অফলাইনে নির্ধারিত ফি পরিশোধের স্লিপ
সার্টিফিকেট সংশোধনের জন্য নোটারি পাবলিক সংগ্রহ করার নিয়ম:
লটারি পাবলিক বা এফিডেভিট কোন নিবন্ধিত সরকারি আইনজীবী থেকে সংগ্রহ করতে হবে। শিক্ষার্থীর সার্টিফিকেটের নাম, জন্ম তারিখ, পিতা মাতার তথ্য সংশোধনের উল্লেখ করে এফিডেভিট সংগ্রহ করবেন।
প্রতারণা থেকে বাঁচতে বিবেচ্য নোটারি বিধিমালা ৬০(ক) অনুযায়ী, একজন নোটারিয়ান এর নির্দিষ্ট কার্যালয় থাকবে এবং তাকে অবশ্যই কমপক্ষে ৭ বছর আইনজীবী হিসেবে কর্মরত কিংবা ৫ বছর বিচার বিভাগের সদস্য হিসেবে থাকতে হবে।
সার্টিফিকেট সংশোধনের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়ার নিয়ম:
সার্টিফিকেট সংশোধনের আবেদনের পূর্বে যেকোনো দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে হবে। উক্ত বিজ্ঞাপনে সার্টিফিকেটের বর্তমান তথ্য ও কাঙ্ক্ষিত সংশোধনী তথ্য উল্লেখ করতে হবে। আপনার প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের কাঁটা অংশ বা কপি সাথে রাখতে হবে।
সার্টিফিকেট সংশোধন করতে কত টাকার প্রয়োজন হবে?
সার্টিফিকেট সংশোধন করতে সংশোধন ফি, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন, নোটারি পাবলিক ও সার্টিফিকেট কপি উত্তোলন ফি সহ ৪০০০ থেকে ৫০০০ টাকা লাগে।
সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়মে সংশোধন ফি শিক্ষা বোর্ড ভেদে ভিন্ন। প্রতিটি শিক্ষা বোর্ড তাদের নিজস্ব নীতিমালায় ফি নির্ধারণ করে।
অনলাইন সার্টিফিকেট সংশোধন ফরম পূরণ করার নিয়ম:
অনলাইনে সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম বিভিন্ন বোর্ডে ভিন্ন ভিন্ন।
সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম ঢাকা বোর্ড:
ঢাকা বোর্ডের সার্টিফিকেট সংশোধন করার জন্য নিজ বিদ্যালয় বা কলেজ থেকেই আবেদন করতে হবে। আপনার নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিকট সার্টিফিকেট সংশোধনের বিষয়টি জানাতে হবে। প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার অপারেটরের সহায়তায় আবেদন সাবমিট করতে হবে।
পূর্বে ঢাকা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা সার্টিফিকেট সংশোধন করার জন্য নিজে নিজেই আবেদন করতে পারতো। তবে বর্তমানে বোর্ডের নীতিমালা অনুযায়ী শুধুমাত্র শিক্ষার্থীর নিজস্ব বিদ্যালয়/ কলেজ থেকেই আবেদন করতে পারবে।
সার্টিফিকেটের তথ্য ও সংশোধনের কারণ বললেই প্রাতিষ্ঠানিক কম্পিউটার অপারেটর আবেদনের সাহায্য করবে। আবেদনের ধাপগুলো হলো:
- ১.Educational Board Dhaka ভিজিট করুন
- ২.হোমপেজ এর মেন্যু থেকে Online Application সিলেক্ট করুন
- ৩.নাম ও বয়স সংশোধনের আবেদন অপশনে ক্লিক করে- আবেদন ফরম সিলেক্ট করুন
- ৪.শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের EIIN নাম্বার ও Password দিয়ে সাইন ইন করুন
তারপর পর্যায়ক্রমিকভাবে উপরোক্ত নিয়মে সংশোধনের আবেদন করুন ও ফি পরিশোধ করুন।(ফি পরিশোধ করার নিয়ম নিচে দেয়া আছে)
সার্টিফিকেট সংশোধনের নিয়ম অনুযায়ী, ৩-৪ মাসে সংশোধিত কপিটি দেয়া হয়।
চট্টগ্রাম বোর্ডের সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম:
- ১. চট্টগ্রাম বোর্ডের সংশোধন করার জন্য চট্টগ্রাম বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রবেচ করতে হবে
- ২.Name Correction অথবা Age Correction অপশন সিলেক্ট করে সংশোধনী তথ্য দিয়ে আবেদন সাবমিট করতে হবে
- ৩।এরপর অনলাইনে ফি পরিশোধ করে সার্টিফিকেট সংশোধন আবেদন সম্পন্ন করতে হবে
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের সার্টিফিকেট সংশোধনের নিয়ম :
- ১.কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের সার্টিফিকেট সংশোধনের জন্য কুমিল্লা বোর্ডের ওয়েবসাইডে ভিজিট করুন
- ২.হোমপেজ থেকে কিছুটা স্ক্রল করে নিতে আসলেই Internal eServices অপশন আছে। সেখানে সার্টিফিকেট সংশোধন করার প্রক্রিয়া ও আবেদনের অপশন থাকবে।
- ৩। নাম ও বয়স সংশোধনের জন্য ২ নং অপশনে ক্লিক করতে হবে।
- ৪.আপনি কোন কোন সার্টিফিকেট সংশোধন করতে চান তা সিলেক্ট করতে হবে। যেমন- JSC, SSC, HSC। এসএসসি সার্টিফিকেট সংশোধন করতে চাইলে JSC ও SSC এর পাশের সন, রোল নাম্বার ও রেজিস্ট্রেশন নাম্বার লিখতে হবে।
- তথ্য সঠিক থাকলে সার্টিফিকেটের বিস্তারিত দেখাবে যেমন,সার্টিফিকেটে থাকা- নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, পাশের সন, শিক্ষাবছর/সেশন, রোল নাম্বার, রেজিস্ট্রেশন নাম্বার, জন্মতারিখ- এ সকল তথ্য দেখাবে।
- ৫.যে সার্টিফিকেট সংশোধন করতে হবে সার্টিফিকেটের পাশের টিক মার্ক দিতে হবে।
- ৬.শিক্ষার্থীর নাম, পিতার নাম ও মাতার নামের নিচে Correction অপশন দেখাবে সেই ঘরে আপনার কাঙ্ক্ষিত সংশোধনী নামটি লিখতে হবে।
সংশোধনী তথ্যের পাশাপাশি নিচে-
- ১.আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম সিলেক্ট করুন
- ২.লটারি পাবলিকের নিকট থেকে সংগ্রহ করা এফিডেভিট এর মুলকপি স্ক্যান করে আপলোড করুন
- ৩.যেই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছেন, তার প্রথম পাতা সহ আপনার বিজ্ঞাপনের পাতার ছবি আপলোড করুন
- ৪.আবেদনকারী শিক্ষার্থীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি দিন।
- ৫.এছাড়াও ঐচ্ছিক ভাবে অন্যান্য ডকুমেন্টস আপলোড করার একটি অপশন দেখাবে সেগুলো বাধ্যতামূলক নয় তবে আপলোড করলে আবেদন এপ্রুভ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।তাই আপলোড করাই উত্তম, এমন ডকুমেন্টসগুলো হলো:
- ক. শিক্ষার্থীর ভর্তি রেজিস্টার
- খ.PSC সার্টিফিকেট।
- গ.জন্ম সনদ।
- ঘ.ভাই বোনের সনদ।
- ঙ.ওয়ারিশ সনদ।
- চ.রেজিস্ট্রেশন কার্ড বা প্রবেশপত্রের মূল কপির স্ক্যান কপি।
- ছ.পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের মূল কপির স্ক্যান কপি।
৬.সকল ডকুমেন্টস আপলোড হলে নিচের Confirm অপশনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে ও পেমেন্ট অপশনে যেতে হবে।
৭.পেমেন্ট করা শেষ হলে সার্টিফিকেট সংশোধনের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
৮.বোর্ড কর্তৃপক্ষ আবেদন গ্রহণ করার পর ২-৩ মাসের মধ্যে আবেদন সম্পর্কিত ইন্টারভিউ এর জন্য কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে আপনাকে ডাকা হবে।
সার্টিফিকেট সংশোধনের আবেদন করার পর ফি দেয়ার নিয়ম:
আবেদনের কপি ও সংশোধন ফি পরিশোধের জন্য ‘সোনালী স্লিপ’ নামে একটি স্লিপ পাবেন। এগুলো প্রিন্ট করে সংরক্ষণ করুন।
সোনালী স্লিপ ব্যবহার করে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ থেকে ফি দিতে পারবেন। অথবা সোনালী ব্যাংক থেকে সংশোধন ফি পরিশোধ করে পেমেন্ট স্লিপ সংরক্ষণ করুন। ৭ দিনের মধ্যে ফি পরিশোধ না করলে আবেদন বাতিল হয়ে যাবে।
একটি সার্টিফিকেটের নাম সংশোধন ফি ৬৫০ টাকা। তাই JSC ও SSC সার্টিফিকেটের নাম সংশোধন করলে ১৩০০ টাকা ফি দিতে হবে। (বি:দ্র; প্রতিটি বিভাগের সংশোধন ফি ভিন্ন)
সার্টিফিকেট সংশোধনী তথ্য যাচাইয়ের জন্য বোর্ডে ইন্টারভিউ
আবেদন ও ফি পরিশোধের পর শিক্ষার্থীর নামে নিজস্ব একটি সার্ভিস একাউন্ট খোলা হবে। সেখানে আবেদনের অবস্থা জানতে পারবেন। কিছুদিন পর এসএমএস বা ফোন কল এর মাধ্যমে শিক্ষা বোর্ড থেকে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হবে। নির্দিষ্ট দিনে আপলোডকৃত সকল ডকুমেন্ট সাথে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন। তথ্য যাচাইয়ের পর সার্টিফিকেটের সংশোধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। তারপর নতুন সার্টিফিকেট উত্তোলন করতে পারবেন।
সংশোধিত সার্টিফিকেট উত্তোলনের জন্য আবেদন করার নিয়ম:
আবেদন ও ফি পরিশোধের ৩ মাস পর (কিছু ক্ষেত্রে বেশি) সার্টিফিকেট সংশোধন সম্পন্ন হলে এসএমএস এ জানানো হবে। আবেদনকারী শিক্ষার্থী শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে তার নিজের একাউন্টে লগইন করে ‘সংশোধিত কপি উত্তোলন’ অপশন পাবে। সেই অপশন থেকে নিজেই ঘরে বসে সংশোধিত কপি পাওয়ার আবেদন করতে পারবে।
সার্টিফিকেটের নতুন কপি সংগ্রহের জন্য পুনরায় সার্টিফিকেট প্রতি নির্ধারিত ফি (৫৫৮/৬৫০/৭৫০ টাকা – শিক্ষা বোর্ড ভেদে) দিতে হয়। পরবর্তীতে মোবাইল এসএমএস এর মাধ্যমে নতুন সার্টিফিকেট সংগ্রহের তারিখ জানানো হবে। শিক্ষার্থী শিক্ষা বোর্ডে উপস্থিত হয়ে তা সংগ্রহ করতে পারবে।