ইসলামী ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম |
ইসলামী ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম
বাংলাদেশের জনপ্রিয় বেসরকারি ব্যাংক হলো ইসলামী ব্যাংক। গ্রাহক নির্ভরতায় সবার শীর্ষে হলো ইসলামী ব্যাংকের অবস্থান। ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে অনেকেই সমস্যায় পড়েন। সকল ব্যাংকের একাউন্ট খোলা প্রায় একই রকম। আজ আমরা ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম কানুন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ইসলামী ব্যাংক একাউন্টের প্রকারভেদ।
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট হল তিন ধরনের। এগুলো হলো
- ১.সেভিংস একাউন্ট
- ২.কারেন্ট একাউন্ট
- ৩.স্টুডেন্ট একাউন্ট
ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলার নিয়ম
ইসলামী ব্যাংকের সবচেয়ে জনপ্রিয় একাউন্ট হলেও সেভিংস একাউন্ট। এ একাউন্ট মূলত টাকা জমা রেখে লাভ করার জন্য। ব্যক্তিগত সেভিংস একাউন্ট খোলার জন্য যে ব্রাঞ্চে একাউন্ট খুলবেন সেখানে কিছু ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে। সেগুলো হলো :
- একাউন্ট হোল্ডারে ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি।
- একাউন্ট হোল্ডার দ্বারা সত্যায়িত করা নমিনির ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- নমিনির nid card এর ফটোকপি।
- গ্রাহকের nid card / পাসপোর্ট /চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট।
- কমপক্ষে ৫০০ টাকা তাৎক্ষণিক ডিপোজিট।
- একাউন্ট মালিকের স্বাক্ষর।
আপনার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট বা ইটিন সার্টিফিকেট প্রযোজ্য হবে।
★এছাড়াও যা প্রয়োজন হবে :
- আপনার প্রতিষ্ঠান যদি ট্রাস্টেড কোম্পানি হয় তাহলে ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠান দলিল বা একটি প্রমাণের কাগজ।
- প্রতিষ্ঠান স্কুল, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় হলে ম্যানেজিং কমিটির রেজুলেশন থাকতে হবে।
- প্রতিষ্ঠান লিমিটেড কোম্পানি হলে মেমোরেন্ডাম আর্টিকেলস অব এসোসিয়েশন এর সত্যায়িত অনুলিপি।
এই ডকুমেন্টস নিয়ে আপনার নিকটস্থ যে কোন ইসলামী ব্যাংকের শাখায় গিয়ে ফর্ম নিয়ে ফর্ম এবং এই ডকুমেন্ট জমা দিলে কর্মরত অফিসার আপনার ফরমটি পূরণ করে দিবেন।আপনি চাইলে নিজেও এই ফরমটি পূরণ করতে পারবেন। এবং বেশ কয়েক জায়গায় আপনার স্বাক্ষর ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে হবে। আপনার এই ডকুমেন্টস গুলো ছাড়া আরো অন্য ডকুমেন্টস প্রয়োজন হলে তারা চেয়ে নেবেন। এরপর আপনি কমপক্ষে ৫০০ বা ১০০০ টাকা জমা দিলে একাউন্ট সচল হয়ে যাবে।এবং আপনাকে আপনার একাউন্ট নম্বর উল্লেখ থাকা একটি চেক বই প্রদান করবে।
ইসলামী ব্যাংক কারেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম :
ইসলামী ব্যাংক কারেন্ট একাউন্ট যেকোনো কারোর জন্য খোলার প্রযোজ্য। এই একাউন্টে টাকা রাখলে কোন লাভ পাওয়া যায় না।এ একাউন্ট খোলার জন্য যে সব ডকুমেন্টস দিতে হবে তা হলো:
- গ্রাহকের nid card, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্ম নিবন্ধন কার্ড এর ফটোকপি।
- গ্রাহকের দুই কপি সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- নমিনি ব্যক্তির একটি nid card এর ফটোকপি এবং এক কপি রঙিন ছবি।
- গ্রাহকের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট প্রযোজ্য হবে।
- একাউন্ট হোল্ডারের স্বাক্ষর।
এই ডকুমেন্টগুলো আপনার নিকটস্থ ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্ব কর্মকর্তা একটি ফরম দিবে এবং ফরমের কয়েকটি স্থানে আপনার স্বাক্ষর ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেবে।
ইসলামী ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম :
স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট হলো শুধুমাত্র স্টুডেন্টদের জন্য। স্টুডেন্টদের ব্যাংকিং এর আওতায় আনার জন্য ইসলামী ব্যাংক এই সুযোগ করে দিয়েছে। সর্বনিম্ন ১০০ টাকা মাসিক ডিপোজিট করে একজন শিক্ষার্থীর ইসলামী ব্যাংকের একটি একাউন্ট খুলতে পারবে।এছাড়াও ইসলামী ব্যাংক স্টুডেন্টদের একাউন্ট এর অনেক সুবিধা রয়েছে।
- ইসলামী ব্যাংকের অধীনে একটি স্টুডেন্ট একাউন্ট তৈরি করলে যেসব সুযোগ সুবিধা পাবে তা নিচে তুলে ধরা হলো:
- এটিএম চার্জ দিতে হবে না।
- ইন্টারনেট ব্যাংকিং একাউন্ট তৈরি করার সুবিধা। রয়েছে মাত্র ১০০ টাকা দিয়ে একাউন্ট তৈরি করা যাবে।
- যেকোনো শাখায় টাকা ট্রান্সফারের সুবিধা রয়েছে।
- একদম স্বল্প মূল্যে ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করার অফুরন্ত সুবিধা।
মূলত একটি স্টুডেন্ট একাউন্ট তৈরি করার এক্ষেত্রে উপরে এর উল্লেখিত সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন।
স্টুডেন্ট একাউন্ট তৈরির ডকুমেন্ট
- গ্রাহকের nid card বা জন্ম নিবন্ধন এর ফটোকপি।
- দুই কপি শব্দ তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রত্যয়ন পত্র কিংবা শেষ বেতনের একটি স্লিপ।
- নমিনির জন্ম নিবন্ধন কার্ডের ফটোকপি ও এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- পিতা-মাতা অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
উল্লেখিত ডকুমেন্ট নিকটস্থ ইসলামী ব্যাংকের যেকোনো শাখায় উপস্থিত হন তাহলে একজন কর্মকর্তা আপনাকে অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফরম দেবে। সেটি পূরণ করতে হবে। তাহলে আপনার একাউন্ট কয়েক দিনের মধ্যেই সচল হয়ে যাবে।
অনলাইনে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার উপায়
বর্তমান যুগে ঘরে বসেই সবকিছু করা যায়।অনলাইনে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য প্রথমে ব্যাংকের অধীনে থাকা অ্যাপ ডাউনলোড করে নিতে হবে।অ্যাপটি ডাউনলোড করে ড্যাশবোটে যেতে হবে এবং রেজিস্ট্রেশন কাজ সম্পন্ন করতে হবে। মূলত তার পরেই আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি এবং আপনার ছবি তোলার মাধ্যমে ধাপে ধাপে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে পারবেন।
★ ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট এর মুনাফা
ইসলামী ব্যাংক সেভিংস ব্যবহারকারী হিসেবে ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট এর ক্ষেত্রে যে সমস্ত মুনাফার অংশীদার আপনি হতে পারবেন সেগুলো নিচে মেনশন করা হলো।
আপনি যদি ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট এ টাকা রাখেন তাহলে ৩.৫% হারে মুনাফা পেতে পারেন, মূলত প্রতি 6 মাস পর পর দেওয়া হয়।
আর আপনাকে দেওয়া এই মুনাফার উপরে সরকারি প্রায় ১৫% ভ্যাট কার্যকর থাকে হয়ে থাকে।
★ এসএমএস ব্যাংকিং চার্জ
ইসলামী ব্যাংক সেভিংস অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারী হিসেবে এসএমএস ব্যাংকিং চার্জ হিসেবে প্রতি ছয় মাস পর পর আপনার একাউন্ট থেকে ৫৭ টাকা + ৭.৫।
★ একাউন্ট সম্পর্কিত চার্জ
মূলত আপনার একাউন্টের একটিভিডির উপরে ভিত্তি করে আপনার একাউন্ট সম্পর্কিত চার্জ গুলো নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। তবে একাউন্ট একটিভ চলতে থাকলে প্রতি বছরের 6 মাস পরপর চার্জ পরিশোধযোগ্য।
বছরের প্রতি ছয় মাস পর পর আপনার একাউন্ট থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ চার্জ ও ভ্যাট প্রযোজ্য হবে।
ইসলামী ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চার্জা লিস্ট
- * একাউন্টে ১০,০০০ টাকার বেশি এবং ২৫,০০০ টাকার কম থাকলে কাটা যাবে ১০০ টাকা + ১৫% ভ্যাট।
- * একাউন্টে ২৫ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা থাকলে চার্জ প্রযোজ্য হবে ২৫০ টাকা + ১৫% ভ্যাট
- * একাউন্টে দুই লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা থাকলে চার্জ প্রযোজ্য হবে ২০০ টাকা + ১৫% ভ্যাট।
- * সর্বশেষ ১০ লাখ টাকার বেশি থাকলে চার্জ হিসেবে কাটা যাবে ৩০০ টাকা + ১৫% ভ্যাট।
★ ইসলামী ব্যাংকে একাউন্টের সুবিধা
- * জমাকৃত অর্থের উপনির্দিষ্ট হারে লাভাংশ পাওয়া যায়।
- * পায়ের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন পরিমাণ অর্থ জমা দেওয়া যায়।
- * ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা পাওয়া যায়।
- * ব্যাংক বিভিন্ন খাতে এই টাকা ইনভেস্ট করে মুনাফা অর্জন করতে পারে।
- * সেভিংস একাউন্ট খুলতে ইসলামী ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়মে মাত্র ৫০০ টাকা ডিপোজিট করতে হয়।
★ ইসলামী ব্যাংক কারেন্ট একাউন্ট এর সুবিধা
- * কারেন্ট একাউন্টে আনলিমিটেড লেনদেন করা যায়।
- * যেকোনো পরিমাণ অংকে টাকা জমা ও উত্তোলন করা যায়।
- * ব্যাংকের সার্ভিস প্রদান করতে হয় না।
- * ব্যাংক কারেন্ট একাউন্ট টাকা প্রয়োজন এ বিভিন্ন খাতে ইনভেস্ট করা যায়।
- * চাহিদা মাত্র টাকা প্রদানে ব্যাংক বাধ্য থাকে।
- * ইসলামী ব্যাংকের অনলাইনে ব্যাংকিং সেবা পাওয়া যায়।
★ অনলাইনে ইসলামী ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম
অনলাইনে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য গুগল প্লে স্টোর থেকে সেলফি অ্যাপটি ইন্সটল করতে হবে। তারপর
- * আইডি কার্ড
- * আয়ের উৎসের প্রমাণপত্র
- * নমিনের আইডি কার্ড
সাথে নিয়ে নিচে ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে
★ সেলফি অ্যাপ রেজিস্ট্রেশন
এপ্স ওপেন করে লাগিয়ে পেজে নিচে রেজিস্ট্রেশন বাটনে ক্লিক করতে হবে। তারপর
- * রেজিস্ট্রেশন ফর্ম বাংলাদেশ সিলেক্ট করতে হবে।
- * যেহেতু অ্যাকাউন্ট নেই তাই হিসেবে ন্যাশনাল আইডি কার্ড সিলেক্ট করতে হবে।
- * মোবাইল সিম অপারেটর ও মোবাইল নম্বর দিতে হবে।
- * ৬ ডিজিটের একটি কোড দিতে হবে।
- * মোবাইল কোড ভেরিফাই করতে হবে।
- * আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র সামনের ও পিছনের ছবি আপলোড করতে হবে।
- * ক্যামেরার সামনে আপনার ফেস ভেরিফাই করতে হবে।
কাজ শেষ হলে পুনরায় লগইন অপশনে গিয়ে মোবাইল নম্বর ও পিন দিয়ে লগইন করতে হবে।
ইসলামী ব্যাংক ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা
- * মোবাইল রিচার্জ করা যায়
- * একাউন্ট ট্রানজেকশন সামারি সম্পর্কে জানা যায়।
- * ব্যাংক থেকে বিকাশ নগদ রকেটের মানি ট্রান্সফার করা যায়।
- * ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা যায়।
- * অনলাইনে বাস ট্রেন বিমানের টিকেট হয় ক্রয় করা যায়।
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট চেক করার নিয়ম
বর্তমানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার মতোই একাউন্টের ব্যালেন্স চেক করার জন্য ব্যাংকের শাখায় উপস্থিত হতে হয় না। বাড়িতে বসেই ব্যাংকের ব্যালেন্স চেক করা যায়।
* সেলফিন অ্যাপস এর মাধ্যমে ব্যালেন্স চেকের উপায়
আপনার একাউন্টে সেলফ ইন অপশনে লগইন করে ব্যাংক একাউন্ট অপশন থেকে একাউন্ট ব্যালেন্স দেখতে পারবেন।
* এসএমএস এর মাধ্যমে ব্যালেন্স চেকের উপায়
মেসেজ অপশনে গিয়ে IBB<space >BAL লিখে পাঠিয়ে দিন হেল্প সেন্টারে। বাংলালিংক সিম হলে ২৬৯৬৯,গ্রামীন সিম হলে ১৬২৫৯ নাম্বারে এসএমএস করলেই ব্যালেন্স দেখা যাবে।
★ শেষ কথা
বর্তমানে খুব সহজেই নিকটস্থ ইসলামী ব্যাংক বা অনলাইনের মাধ্যমে একাউন্ট খোলা যায়। অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় এ ব্যাংক কিছু বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায় সার্ভিস চার্জ ও তুলনামূলক কম। তবে ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী অন্য সকল ব্যাংকের মতো ইসলামিক ব্যাংকের ডিপোজিট করলে লাভ্যংশ ভোগ করা থেকে বিরত থাকুন।