|
সর্বজনীন পেনশন খুটিনাটি সব জেনে নিন |
সর্বজনীন পেনশন সম্পর্কে আপনারা অনেকেই হয়তো অনেক কিছু শুনে থাকবেন। আবার অনেকেই আছেন যারা সর্বজনীন পেনশন সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তাহলে এই প্রতিবেদনটি আপনাদের জন্য।আজকের এই প্রতিবেদনে সর্বজনীন পেনশন সম্পর্কে সকল প্রকার বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তাই শুরু থেকে আমাদের সাথেই থাকুন।
সর্বজনীন পেনশন কি?
পেনশন কি? সেই সম্পর্কে আমাদের অনেকের ধারণা থাকলেও সর্বজনীন পেনশন সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা নেই। তাহলে আসুন আমরা সবার আগে সর্বজনীন পেনশনটি সেটা জেনে নেই।
সর্বজনীন পেনশন হলো বাংলাদেশ সরকারের অবসর ভাতার উদ্যোগে একটি ব্যবস্থা।এর বয়স ও আবেদনের হিসাবের ওপর নির্ভর করে এই সুবিধা তারতম হয়ে থাকে। যদি আবেদনের ন্যূনতম সংখ্যক আবেদনের যোগ্যতার বছর থাকে সেক্ষেত্রে কেউ পেনশন দাবি করতে পারে। সর্বজনীন পেনশন বাংলাদেশের প্রথমবারের মতো চালু হলো। সরকারি চাকরিজীবী ব্যতীত দেশের সকল নাগরিক পেনশন সুবিধার অন্তর্ভুক্ত হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনের পর একটি অনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে।কারো বয়স ১৮ বছরের বেশি হলেই এখন অনলাইনে একটি নিবন্ধন করতে পারবেন। উদ্বোধনের সময় শেখ হাসিনা বলেন-
"আমাদের জ্বালা সরকারি চাকরিজীবী তারা তো পেনশন পান, কিন্তু যারা চাকরি করেন না তারা তো পান না, কাজেই এটা সরকারি চাকরিরজীবীদের জন্য নয়। সরকারি চাকরিজীবীদের বাইরে যে জনগোষ্ঠী তাদের জন্য এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।"
তবে সরকারের নতুন চালু করা এই সর্বজনীন পেনশন নিয়ে নানা প্রশ্ন আলোচনা।কারা, কিভাবে, এতে সংযুক্ত হতে পারবেন, সুবিধা কি, কত টাকা দিতে হবে ইত্যাদি। আসুন এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা আমাদের এই সকল প্রশ্নের উত্তর গুলো জেনে নেই।
সর্বজনীন পেনশনের পটভূমি:
আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে সাধারণ নির্বাচনের জন্য একটি ইশতেহার প্রকাশ করেন। তাতে বলা হয় যে দলটি সকল শ্রেণীর নাগরিকদের জন্য একটি অবসর ভাতার ব্যবস্থা করবেন।২০১৬ সালের ৩০ শে জুন ২০১৬ -২০১৭ অর্থবছরের বাজেট পরিকল্পনা পেশ করার সময় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বেসরকারি খাতের কর্মচারীদের জন্য একটি পেনশন প্রবর্তন ও দেশের পেনশন ব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। বাংলাদেশের প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তিনি এই পরিকল্পনার প্রস্তাব করেন। পরবর্তী সময়ে ২০১৯ সালের ২০১৯ ও ২০২০ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের ঘোষণা করা হয়েছিল। একই বছরের পরিকল্পনা মন্ত্রীএম.এ. মান্নান জানিয়েছিলেন যে-
"প্রবীণ নাগরিকদের জন্য প্রস্তাবিত পেনশন পরিকল্পনাটি সর্বজনীন হবে ও অর্থমন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ ছেলে ইতিমধ্যে এটি বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু করেছে। "
২০২২ সালে ১৭ ফেব্রুয়ারি দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার ওপর প্রস্তুতকৃত কৌশল পত্র উপস্থাপনের পর দ্রুত সম্ভব এই নতুন পেনশন ব্যবস্থার উদ্যোগে একটি আইন প্রণয়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। ২০২২ সালে ৩০ শে মার্চ এ সর্বজনীন পেনশনের খসড়া প্রকাশিত হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল ৯ ই জুন ২০২২ সালে ঘোষণা করেন যে-
"২০২৩ ২০২৪ অর্থ বছরের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হবে।"
২০২৩ সালের ৬ জুলাই পেনশন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়। সর্বজনীন পেনশন জুলাই ২০২৩ সালে চালু হওয়ার কথা ছিল, তবে পরের ১৭ ই আগস্ট ২০২৩ সালে চালু হবে বলে নিশ্চিত করা হয়। প্রতিশ্রুতি দিয়ে শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার উদ্বোধন করেন।
সর্বজনীন পেনশনের নীতিঃ
সর্বজনীন পেনশনের বিশেষ কিছু নীতি রয়েছে। চলুন সর্বজনীন পেনশনের সেই বিশেষ নীতি গুলো সম্পর্কে জেনে নেই। সর্বজনীন পেনশন মূলত সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে।২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ থেকে ৫০ বয়সী যেকোনো বাংলাদেশী নাগরিক স্বেচ্ছায় এই পেনশন পেতে পারেন, ভবিষ্যতে এই পেনশন সবার জন্য বাধ্যতামূলক হবে। পেনশন পেতে হলে একজন নাগরিককে কমপক্ষে ১০ বছরের জন্য অবদান রাখতে হবে, যার পরিমাণ তিনি নিজে নির্দিষ্ট করতে পারবেন। দশ বছর বয়সের আগে কেউ মারা গেলে তার উত্তরাধিকারীদের টাকা দেওয়া হবে। বেসরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে তাদের সংস্থাটি সর্বজনীন পেনশনে যোগদান করলে তাদের ক্ষেত্রে জাতীয় পেনশন প্রতিপক্ষ কর্তৃক অবদানের পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে।
বছর শেষ হওয়ার আগে সম্পূর্ণ অবদানের অর্থ প্রদান নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে অস্থায়ী সময়ের জন্য পেনশন হিসাব স্থগিত করা হবে। যা বকেয়া পরিষদের মাধ্যমে সক্রিয় করা যেতে পারে।পেনশন হিসাব ধারের বয়স ৬০ বছর হয়ে গেলে তারা মাসিক হারে পেনশন পেতে থাকবেন যা তাদের জমাকৃত পরিমাণের মোট পরিমাণ ও বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত লাভাংশের সমান হবে। ৮০ বছর পূর্ণ হওয়ার পাঁচ বছর আগে মৃত্যুর ক্ষেত্রে ব্যক্তির পেনশন তার মনোনীত ব্যক্তিকে দেওয়া হবে। জমাকৃত অর্থের অর্ধেক অর্থ ঋণ হিসেবে নেওয়া যেতে পারে। যদি কোন ব্যক্তি ১৮ থেকে ৪২ বছর পর্যন্ত অবিচ্ছিন্নভাবে অবদান রাখেন তবে ৬০ বছর বয়স থেকে তারা প্রতি মাসে পেনশন হিসেবে ৬৪,৭৭৬ মোট টাকা পাবেন এবং যদি কেউ ৩০ বছর বয়স থেকে ৩০ বছর ধরে অবদান রাখেন তবে তাকে প্রতি মাসে ১৮, ৯০৮ টাকা দেওয়া হবে।
সর্বজনীন পেনশনটি আসলে কাদের জন্য?
আপনাদের সকলেরই প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে এই সর্বজনীন পেনশন টি আসলে কাদের জন্য। কোন শ্রেণীর এবং কোন বয়সের লোকেরা এই সর্বজনীন পেনশনটি পাবে। তাহলে আসুন আমরা সবার আগে এটাই জেনে নেই যে সর্বজনীন পেনশনটি আসলে কাদের জন্য। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বলেছে -
"দেশের সর্বস্তরের জনগণকে সুবিধা দিতে এই পেনশন ব্যবস্থাটি চালু করা হয়েছে। বর্তমানে গড় আয়ুর বৃদ্ধির কারণে দিন দিন বয়স্কদের পরিমাণ বাড়ছে। হলে তাদের সামাজিক নিরাপত্তা ও আর্থিক সুবিধার জন্য এই পেনশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী ১৮ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সি সকল শ্রেণি এবং সকল পেশার নাগরিকরা এই পেনশনে অংশগ্রহণ করতে পারবে।অর্থাৎ সর্বজনীন পেনশনে অংশগ্রহণ করতে হলে জাতীয় পরিচয় পত্রটি আবশ্যক। এই সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাটি মূলত সরকারি চাকরিজীবী ব্যতীত অন্য সকল পেশার মানুষের জন্য।
কিন্তু এর মধ্যে প্রবাসীদের জন্য অন্যরকম ব্যবস্থা রয়েছে। যারা প্রবাসী এবং যাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নেই তারা তাদের পাসপোর্ট দিয়ে এই সর্বজনীন পেনশনে অংশগ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু পরবর্তীতে যত দ্রুত সম্ভব তার জাতীয় পরিচয় পত্র সংগ্রহ করে তার কপি জমা দিতে হবে।
এবং বয়সের ক্ষেত্রেও রয়েছে বিশেষ বিবেচনা। যাদের বয়স ৫০ পেরিয়ে গেছে তারা ও সর্বজনীন পেনশন প্রকল্পটিতে অংশগ্রহণ নিতে পারবে। কিন্তু এক্ষেত্রে তিনি পেনশন পাবেন টানা ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার পর।
অর্থাৎ বয়স ষাট বছর হলেই, নিয়ম অনুযায়ী তিনি থেকে সরকার থেকে পেনশন পাওয়া শুরু করবেন,তাকে আর চাঁদা দিতে হবে না। কিন্তু কেউ যদি ৫৫ বছর বয়সে এসে এই সর্বজনীন পেনশনে অংশ নিতে চান, তাহলে তিনি ৬৫ বছর বয়স থেকে পেনশন পাওয়া শুরু করবেন। সরকার মোট ছয়টি প্রকারভেদ ঘোষণা করলেও চালু হয়েছে মাত্র চারটি। আশা করা যাচ্ছে অতি তাড়াতাড়ি বাকি দুটি প্রকারভেত চালু হয়ে যাবে।
সর্বজনীন পেনশনের প্রকারভেদঃ
সর্বজনীন পেনশন কে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। চলুন সর্বজনীন পেনশনের প্রকারভেদ গুলো জেনে নেই।
১.প্রগতি :
যারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী প্রগতি তাদের জন্যই।এক্ষেত্রেও তিন ভাগে চাঁদার হার ভাগ করা হয়েছে।কেউ চাইলে মাসে ২০০০, ৩০০০ বা ৫০০০ টাকা করে এই টেনশনে অংশ নিতে পারবে। আমার প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানের মালিকও টেনশনে অংশগ্রহণ করতে পারবে। সেক্ষেত্রে মোট চাঁদার অর্ধেক কর্মচারী এবং বাকি অর্ধেক প্রতিষ্ঠান বহন করবে।
২.প্রবাস :
প্রবাস শুধু বিদেশে কর্মরত বা বা অবস্থানকারী বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য। এর মাসিক চাঁদার আর ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার সাড়ে সাত হাজার ও দশ হাজার টাকা করে।ব্যক্তির চাইলে এই চাঁদার সমপরিমাণ অর্থ তিনি যে দেশে আছেন মুদ্রায় নিতে পারবেন। আবার দেশে এসে দেশীয় মুদ্রা তেও নিতে পারবেন। এছাড়া প্রয়জনে প্রবাস পেনশন পরিবর্তনেরও সুযোগ রয়েছে।
৩.সুরক্ষা :
এ পেনশনটি নির্ধারণ করা হয়েছে স্বনির্ভর ব্যক্তির জন্য।অর্থাৎ কেউ কোথাও চাকরি করছেন না কিন্তু নিজে উপার্জন করতে পারেন, তারা সুরক্ষা পেনশনে অংশ নিতে পারবেন। এর আওতায় পড়েন ফ্রিল্যান্সার, কৃষক, শ্রমিক ইত্যাদি পেশার লোকজন। এই পেনশনে চাঁদার হার চার প্রকার। মাসে ১ হাজার,২ হাজার, ৩ হাজার ও ৫০০০ করে।
৪.সমতা:
এই পেনশনে চাঁদার হার একটি।মাত্র ১০০০ টাকা। তবে এক্ষেত্রে প্রতি মাসে ব্যক্তি দিবে ৫০০ টাকা আর বাকি ৫০০ দেবে সরকার। মূলত দরিদ্র সীমার নিচে বসবাসরত স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য এই পেনশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে দরিদ্র সীমা নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। যেমন বর্তমানে বছরে যাদের আয় এখন বছরে ৬০০০০ টাকার মধ্যে তাদেরকেই কেবল এই পেনশনের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
সর্বজনীন পেনশন বাস্তবায়নঃ
আমরা প্রথমেই জেনেছি যে সর্বজনীন পেনশন মূলত বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনার একটি প্রতিশ্রুতি। তিনি দেশের সাধারণ জনগণ যারা সরকারি চাকরির অন্তর্ভুক্ত নয় তাদের একটি ভাতার কথা চিন্তা করে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এবং তা বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছেন।যেন দেশের সাধারণ মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত শ্রেণীর লোকেরা এই পেনশনের সুবিধা লাভ করতে পারে তিনি সেই ব্যবস্থা করেছেন।
কারা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাটি পরিচালনা করবে?
আপনাদের অনেকেরই মনে প্রশ্ন জেগেছে যে বাংলাদেশ সরকারের এই নতুন উদ্যোগটি কে পরিচালনা করবে। মূলত ১৫ সদস্য নিয়ে গঠিত গভর্নিং এই ব্যবস্থা পরিচালনা করবে বলে জানা যায়। এবার সেই ১৫ সদস্য গুলো সম্পর্কে জেনে নেই।
•বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর
•বাংলাদেশ ব্যাংকের সচিব
•অর্থ বিভাগের সচিব
•আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের চেয়ারম্যান
•জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সচিব
•সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব
•মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব
•প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব
•শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব
•ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব
•প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চেয়ারম্যান
•বাংলাদেশ সিকিউরিটিস এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান
•ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি
•বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি
•বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল নির্বাহী চেয়ারম্যান
উক্ত উল্লেখিত ১৫ টি সদস্য নিয়ে গঠিত হয়েছে এই ব্যবস্থাটি।
সর্বজনীন পেনশনের প্রতিক্রিয়াঃ
বাংলাদেশ সরকার সর্বজনীন পেনশন প্রকল্পটি ঘোষনা করার পরে এ নিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন।অনেকে সরকারের এই প্রকল্পটিকে ভালো ও জনগণের উন্নয়ন হবে বলে মনে করেছেন, অন্যদিকে অনেকেই এটি সরকার আত্মসাৎ করবে বলে মনে করেন।আসুন এবার আমরা এই সার্বজনীন পেনশন সম্পর্কে সকলের মতামত গুলো জেনে নেই। সর্বজনীন পেনশন প্রকল্প টিকে একটি মহান ও যুগান্তরকারী পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।এই পদক্ষেপটি একটি দেশের মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নত করবে বলে ধারণা করা হয়েছে। কিন্তু এই পেনশন ব্যবস্থাটিকে "সর্বজনীন" বলা হলেও অর্থনীতিবিদদের মতে এটি সর্বজনীন নয়। কারণ এই ব্যবস্থাই সমস্ত শ্রেণীর নাগরিকদের অংশগ্রহণের উপায় নেই। তারা একে "অবদান মূলক" পেনশন বলে অভিহিত করেছেন। অর্থনীতিবিদদের মতে-
"সরকারের এই পেনশন ব্যবস্থা চালু করার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ছিল রাষ্ট্রের সর্বাধিক সংখ্যক নাগরিক কে পেনশনের আওতায় আনার চেষ্টা করা।" তাই বিরোধী রাজনৈতিক দল সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার বিরোধিতা করেছে। কিছু সংসদ সদস্য সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আইনটি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করার সময়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির রাজনীতিবিদ মুজিবুল হক চুন্নুর
মতে -
" ব্যাংকগুলোর আমানত পেনশনের সঙ্গে এর কোন পার্থক্য নেই। তার মতে সর্বজনীন পেনশনের সরকারের অবদান অস্পষ্ট।"
সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু এই সর্বজনীন পেনশন থেকে মানুষ আসলেই উপকৃত হবে কিনা সন্দেহ প্রকাশ করেন। কেননা দেশে সরকারি কর্মচারীদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা থাকলেও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে তাদের অনেকেই অবসর গ্রহণের পর পেনশন সুবিধা পাচ্ছে না। জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের পেনশন ব্যবস্থাকে দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিত বলে মনে করেন। তহবিল ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞদের মতে -
"সরকার যদি জবাবদিহিতা ছাড়া পেনশনের অর্থ যথেষ্ট ভাবে ব্যবহার করতে না পারে তবে এটি একটি ভালো উদ্যোগ।"
১৮ আগস্ট ২০২৩ সালে বাংলাদেশের জাতীয়তা বাদী দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন যে -
"সরকার এই অবসর ভাতা ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে জনগণের অর্থ আত্মসাৎ করে আসন্ন নির্বাচন করতে চান।" অন্যদিকে বাংলাদেশী আলেম শায়ক আহমাদুল্লাহ এই উদ্বেগের প্রশংসা করেছেন এবং একই ব্যবস্থার অধীনে একটি ইসলামিক পেনশন চালু করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সর্বজনীন পেনসন পেতে হলে কিভাবে অংশগ্রহণ করবেন?
সর্বজনীন পেনশন নিয়ে আশা করি আপনাদের সব প্রশ্নের উত্তর আপনারা পেয়ে গেছেন। এবার আসুন জেনে নেই কিভাবে সর্বজনীন পেনশনে অংশগ্রহণ করবেন। সর্বজনীন পেনশনে অংশগ্রহণ নিয়ে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সজীব গোলাম মোস্তফা বলেন -
"আমরা একটা ফর্মুলা দিয়ে এই মুনাফার ব্যাপারটা ঠিক করেছি। ওখানে উল্লেখ করেছি এটা বাড়তে বা কমতে পারে। কিন্তু আমাদের ফর্মুলা অনুযায়ী কমার কোন সম্ভাবনা নেই।
সর্বজনীন পেনশন প্রকল্পটিতে নিবন্ধন করার জন্য প্রথমে সর্বজনীন পেনশনের ওয়েবসাইটে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে ব্যক্তি তার জাতীয় পরিচয় পত্র, মোবাইল নাম্বার, ইমেইল এড্রেস সহ কয়েকটি ধাপে নিবন্ধন করতে পারবে। এর সাথে ব্যাংক একাউন্টের তথ্য দরকার হতে পারে। কেউ চাইলে এক বা একের অধিক নমিনি দিতে পারে।
ব্যক্তির সুবিধা অনুযায়ী ব্যক্তি মাসিক চাঁদার পরিবর্তে তিন মাস পর বা এক বছরেও তার পুরো চাঁদা পরিশোধ করতে পারবে।নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা দিতে ব্যর্থ হলে, তারপরের মাসে জরিমানা ছাড়া চাঁদা পরিশোধ করতে পারবে।কিন্তু এর পরবর্তী থেকে প্রতিদিনের জন্য ১% বিলম্ব ফি যুক্ত করা হবে। কেউটানা 3 মাস কিস্তি পরিশোধ করতে না পারলে, তার একাউন্ট টি স্থগিত হয়ে যাবে। তবে কেউ যদি নিজেকে অসচ্ছল ঘোষণা করে, সেক্ষেত্রে ১২ মাসেও তার একাউন্টে স্থগিত হবে না।
অনলাইনে অথবা যে কোন মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে চাঁদা পরিশোধ করা যাবে। বর্তমানে শুধু সোনালী ব্যাংকে সর্বজনীন পেনশনের প্রকল্পটি চালু করা হয়েছে। কেউ চাইলেই আপনার পার্শ্ববর্তী সোনালী ব্যাংকে গিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন এবং চাঁদা পরিশোধ করতে পারবেন।এভাবেই আপনারা সর্বজনীন পেনশনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
সর্বজনীন পেনশনের সুবিধাঃ
সর্বজনীন পেনশনের আসল সুবিধা ভোগ করতে পারবে বৃদ্ধ বয়সে। কেননা বাংলাদেশে দিনদিন বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এবং তাদের অসহায়ত্ব বেড়ে চলছে। তারা প্রতিনিয়ত তাদের সন্তানদের কাছে অবহেলার শিকার হচ্ছে। যার ফলে তাদের স্থান হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে। বৃদ্ধ বয়সে নিজেদের প্রয়োজন মিটাতে অনেকেই রিক্সা চালাচ্ছে এবং অনেকেই বেছে নিচ্ছে ভিক্ষার পথ। তাই বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনা এই সর্বজনীন পেনশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সরকারি চাকরিজীবীরা রিটায়ার্ড করার পরে যেমন পেনশন পেয়ে থাকেন ঠিক তেমনি অন্য সকল পেশার জনগণ এই সুবিধাটি লাভ করতে পারবে। তাদের কর্ম জীবনের দেওয়া কিস্তির মাধ্যমে বৃদ্ধ বয়সে তারা আজীবন পেনশন লাভের সুবিধা ভোগ করতে পারবে। এতে করে বৃদ্ধ বয়সে কাউকে আর লাঞ্ছনার শিকার হতে হবে না। নিজেদের প্রয়োজনগুলো নিজের জমানো পেনশন দিয়ে মিটাতে পারবে। বাংলাদেশে থাকবে না কোন অসহায় বৃদ্ধ।
কিন্তু আমাদের অনেকের মাথায় একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে যে ১০ বছর কিস্তি প্রদানের পরে আদৌ কি এই পেনশনটি ভোগ করতে পারবো?
এ প্রসঙ্গে মি. মোস্তফা বিবিসি বাংলার কাছে বলেন যে -
"সর্বজনীন পেনশন নিয়ে কোন শঙ্কা থাকার কোন কারণ নেই। কারণ সরকার নিজে এটা গ্যারান্টি দিচ্ছে। আর আমরা যে ইউনিট নাম্বার দেব প্রত্যেক পেনশনারকে, তারা কিন্তু ওই নম্বর দিয়ে সব সময় চেক করতে পারবেন তার অ্যাকাউন্ডে কত টাকা রয়েছে।"
পেনশনারগন আজীবন অর্থাৎ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। তবে কেউ যদি ৭৫ বছর বয়স পূরণ হওয়ার আগেই মারা যান তাহলে তার নমিনি পেনশনার বয়স ৭৫ হওয়া পর্যন্ত পেনশন সুবিধাটি পাবে।
আর যদি পেনশন আর ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগেই মারা যান তাহলে তার জমকৃত অর্থ মুনাফা সহ ব্যক্তির নমিনিকে ফেরত দেয়া হবে।
সর্বজনীন পেনশন নিয়ে আমাদের শেষ কথাঃ
প্রিয় পাঠক, আশা করি আমাদের এই আজকের প্রতিবেদনে আপনার মনের সকল প্রশ্নের উত্তর আপনি পেয়ে গেছেন। এতক্ষন সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। সার্বজনীন পেনশন একটি বিশেষ সুবিধা। যা আপনাকে বৃদ্ধ বয়সে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু আসলেই এই সর্বজনীন পেনশন টি কতটুকু সত্য তা যাচাই-বাছাই করা আপনার কর্তব্য। কিন্তু আমরা মনে করছি এই সর্বজনীন পেনশনটি আসলেই খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যা আপনার শেষ বয়সের সম্বল হয়ে দাঁড়াবে। তাই দেরি না করে আপনিও এতে অংশগ্রহণ করতে পারেন।