★শেখ রাসেলের জন্ম । শেখ রাসেলের জীবনী
১৯৬৪ সালের ১৮ই অক্টোবর ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িতে (ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু) ভবনে জন্মগ্রহণ করেন শিশু শেখ রাসেল।তার বাবার নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মায়ের নাম শেখ ফজিলাতুন্নেসা।রাসেলের জন্মের পর পুরো বাড়ি মেতে উঠেছিল আনন্দে। রাসেলের জন্ম শুধু পরিবারের নয় বরং সারা জাতির মধ্যে আনন্দ ভরে নিয়েছিল। সেদিন আনন্দের জুড়ে ভেসে উঠেছিল সারা বাড়ি ও সারাদেশ। জন্মের পরে শেখ রাসেল ছিলেন বেশ স্বাস্থ্যবান। দেখতে হয়েছিল অনেক সুন্দর।
★ নামকরণ ও পরিচয়
শেখ রাসেলের জীবনী সম্পর্কে জানার জন্য অবশ্যই তার নাম ও পরিচয় জানতে হবে। তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার প্রিয় লেখক বাট্রান্ড রাসেলের অনুসারে পরিবারের ছোট সদস্যর নাম রাখেন শেখ রাসেল।মা ফজিলাতুন্নেছা তার পুত্রের নাম রাখেন নেশা মুজিব। তবে সবাই তাকে শেখ রাসেল নামের চিনতো। রাসেল পরিবারের মধ্যে সবথেকে ছোট ছিল। সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র ছিল। এবং বর্তমান বাংলাদেশের শেখ হাসিনার সব থেকে ছোট ভাই ছিল। তাকে পরিবারের সবাই খুব ভালোবাসতো। শুধু ভাই বোন বা দাদা-দাদী নয় বরং শেখ রাসেলকে সবাই খুবই ভালোবাসতো।
★ শেখ রাসেলের ছেলেবেলা
শেখ রাসেলের জীবনীতে তার ছেলেবেলা দেশের উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মতো বর্ণময় ছিল। জন্মের পর তার খুব বেশি বাবার সাথে থাকা হয়নি। রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার কিছুদিন পরে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে জেনে রাখা হয় পাকিস্তানি সরকারের নির্দেশে।রাসেল তার বড় বোন শেখ হাসিনার সাথে কারাগারে বঙ্গবন্ধুকে দেখতে যেতো।মাত্র দুই বছরের রাসেল তার বোনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি কি তোমার বাবা বলে ডাকতে পারি? বাবার কাছ থেকে সে একদমই আসতে চাইত না। তাকে বোঝানো হয়েছিল জেলই তার বাবার বাসা।তার বাবা সেখানেই থাকেন। সে বেড়ে ওঠে মা ও ভাইবোনদের সাথে।
★ রাসেলের শিক্ষা জীবন
শেখ রাসেলের জীবনীতে তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু হয় ইউনিভার্সিটির ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজ দিয়ে। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট যখন তাকে হত্যা করা হয় তখন সে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিল। তার পড়াশোনায় ছিল প্রবল আগ্রহ। স্কুলে এসে অনেক ভদ্র ও শান্তশিষ্ট ছিল শিক্ষক-শিক্ষিকারাও তাকে খুবই আদর করত। সে পড়াশোনায় খুব ভাল ছিল। সে বন্ধু-বান্ধবীর সাথেও খুব ভালো ব্যবহার করতো।এবং সবাই তাকে খুবই পছন্দ করতো।
★ শেখ রাসেলের শৈশব । শেখ রাসেলের জীবনী
রাসেল কোমল হৃদয়ের একটি শিশু ছিল। সে পশুপাখিকে খুবই ভালোবাসতো। তার টমি নামে একটি কুকুর ছিল।সে ওই কুকুরটিকে খুবই ভালোবাসতো এবং সারাদিন সে কুকুর নিয়ে খেলাধুলা করতো। এছাড়াও তার বাসায় অনেকগুলো কবুতর ছিল। হারতে শেখার পর থেকে রাসেল কবুতরের পিছনে ছোট্ট নিজের হাতে খাবার দিত। সে নিয়ম করে কবুতরগুলোকে খাবার দিত। এছাড়াও রাসেলের মাছ ধরার খুব শখ ছিল। মাছ ধরে আবার সেই মাছ ছেড়ে দিত এই অবুঝ রাসেল।এতে রাসেল ভীষণ আনন্দ পেত। ছোটবেলা থেকেই রাসেল ছিল দুরন্ত প্রকৃতির। তার এই দুরন্তপনার সঙ্গী ছিল তার বাইসাইকেল।
সে প্রটোকল ভেঙ্গে বাইসাইকেল নিয়ে স্কুলে যেত। রাসেলের মধ্যে ছোটবেলা থেকে বঙ্গবন্ধুর মত মানসিকতা দেখা গিয়েছিল। সে ছোটবেলা থেকেই অতিথি পরায়ণতা ছিল।বাড়িতে কোন অতিথি এলে সে ছুটিতে যেত তাদের কাছে। নানারকম গল্প করতে অতিথিদের সাথে।স্বাধীনতার পর এক ভদ্রমহিলা রাসেলের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলো। কে পরানো খুব সহজ কাজ ছিল না। শিক্ষককে ওর কথা শুনতে হতো। প্রতিদিন শিক্ষিকা দুটো করে মিষ্টি খাওয়াতে হবে।আর শিক্ষিকা এ মিষ্টি না খেলে ও পড়তে বসবে না। কাজেই শিক্ষিতাকে খেতেই হতো। তাছাড়া সব সময় ও লক্ষ্য থাকতে হবে শিক্ষিকার যেন কোন অসুবিধা না হয়। মানুষকে আপন করতে রাসেল খুবই পছন্দ করত।
★ মাকে আব্বা বলে ডাকতো রাসেল
রাসেল তার আব্বার সঙ্গে প্রতি ১৫ দিন পর পর দেখা করতে যেত। তাকে নিয়ে গেলে সে আর আসতে চাইতো না খুব কান্নাকাটি করতো। বেশ কষ্ট করে ওকে বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে আনা হতো। বাসায় আপা যেন কান্নাকাটি করলে মা ওকে বোঝাতেন এবং মা কে আব্বা বলে ডাকতে শেখাতেন। তখন থেকেই সে তার মাকেই আব্বা বলে ডাকতো।
★ শেখ রাসেলকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল
১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট প্রত্যষে একদল কিশোর সেনা অফিসের টাইমস দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি স্থল ৩২ নম্বর বাড়ি ঘিরে ফেলে শেখ মুজিব, তার প্রয়োজন ও তার পার্সোনাল কর্মচারিদের সাথে শেখ রাসেল কেউ হত্যা করা হয়। শেখ মুজিবের নির্দেশে রাসেলকে নিয়ে পালানোর সময় ব্যক্তিগত কর্মচারীসহ রাসেলকে অভ্যন্তরীরা আটক করে।আতঙ্কিত হয়ে ছোট্ট শিশুরা সেল কান্নার জড়িত কন্ঠে বলেছিল আমি মায়ের নিকট যাব। পরবর্তীতে মায়ের লাশ দেখার পর শিক্ত কন্ঠে মিলিত করে আমি হাসু আাপার ( শেখ হাসিনা) কাছে যাব।ব্যক্তিগত কর্মচারী এ এফ এম মহিতুল ইসলামের ভাষ্যমতে,
"রাসেল দৌড়ে এসে আমাকে জাপটে ধরে। আমাকে বলল ভাই আমাকে মারবে না তো? ওর কন্ঠ শুনে আমার চোখে ফেটে পানি এসেছিল।একঘাতক আমাকে রাইফেলের বাট দিয়ে ভীষণ মারলো। আমাকে মারতে দেখে রাসেল আমাকে ছেড়ে দিল। ও (শেখ রাসেল) কান্নাকাটি করছিল, আর বলছিল যে আমি আমার মায়ের কাছে যাব। ঘাতক এসে ওকে বলো চল তোকে তোর মায়ের কাছে দিয়ে আসি। ভাবতে পারিনি যে ঘাতকেরা এত নির্মমভাবে ছোট্ট সে শিশুকে হত্যা করবে তুলে নিয়ে গেল এবং তারপর ব্রাশ ফায়ার। এরপরে ঘরে গিয়ে দেখে তা নিথর দেহ ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে। এখানেই শেষ হয় তার জীবন কাহিনি।
রাসেল বেঁচে থাকলে বয়স ৫৫ বছর হতো। রাসেল বেঁচে থাকলে হয়তো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে। সে বেঁচে থাকলে নিঃসন্দেহে নিজেকে দেশের জন্য নিয়োজিত রাখতেন।সে হয়তো বিজ্ঞানী অথবা প্রফেসর অথবা জাতির পিতার মতো বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার কান্ডারী হতেন। কিংবা হতে পারতেন বাট্রান্ড রাসেলের মতোই সব স্বমহিমায় উজ্জল বিশ্ব মানবতার প্রতীক।
শিশু রাসেলকে দিয়ে ঘাতকরা মানব যে সভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্যতম অপরাধ করেছে। এধরনের নিষ্ঠুর মাসিক কিলিং শুধু রাসুলের জীবনেই কেড়ে নেয়নি সে সাথে ধ্বংস করেছে তার সকল অবিকশিত সম্ভাবনা।