শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস বাংলাদেশের পালিত একটি বিশেষ দিবস। বছর বাংলাদেশের ১৪ ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়ে থাকে। এই দিনটি মূলত বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করে পালন করা হয়। বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভ করেছে। এই যুদ্ধ পুরো ৯ মাস অনুষ্ঠিত ছিল। আর এই নয় মাসে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছে। তার মধ্যে মারা গিয়েছে ও অনেক অনেক বুদ্ধিজীবীরা। পাকিস্তানিরা সেনাবাহিনীরা বুদ্ধিজীবীদের নির্বিচারে হত্যা করেছে বাংলাদেশকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য। ১৯৭১ সালের ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য অনেক মানুষ বাংলাদেশকে নানা রকম সাহায্য সহযোগিতা করেছে।১৪ই ডিসেম্বর কে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে প্রথম ঘোষণা করেন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ।
১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতার চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীদের সাথে, রাজাকার, আল বদর, বাংলাদেশের অসংখ্য শিক্ষাবিদ,কবি, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, সাংবাদিক,গবেষক, চোখ বেঁধে তাদের বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করে।চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে বাংলাদেশকে একেবারে মেধাশূন্য করে দেয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ টি চালানো হয়। বুদ্ধিজীবী বলতে তাদের বুঝানো হয় যারা তাদের মেধা দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়ে ছিলো।বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের মেধা কাজে লাগিয়েছিল বলে তাদের শহীদ বুদ্ধিজীবী বলা হয়। যে ব্যক্তি শারীরিক শ্রম কাজে না লাগিয়ে মানসিক শ্রম কাজে লাগিয়ে সাহায্য সহযোগিতা করে তাদেরকে বুদ্ধিজীবী বলা হয়।
দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করার পর থেকে পা হানাদার বাহিনীরা বুঝতে পেরেছিল যে তাদের বাংলাদেশে সময় শেষ হতে চলেছে। তখন তারা পরিকল্পনা করে বাংলাদেশকে একেবারে মেধাশূন্য করে দেওয়ার। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা যত বুদ্ধিজীবী অর্থাৎ যত জ্ঞানীগুণী ব্যক্তি রয়েছে সবাইকে তালিকাভুক্ত করে এবং নির্মমভাবে নির্বিচারে হত্যা করে। ঢাকা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।তারা বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করার জন্য সাহায্য নিয়েছিল বাংলাদেশে থাকা স্বাধীনতা বিরোধী কিছু সংগঠনের রাজাকারদের।
যেসব ব্যক্তি তাদের জ্ঞান দিয়ে যুদ্ধে সহযোগিতা করেছিল তাদেরকে বুদ্ধিজীবী বলা হয়। মুক্তিযোদ্ধ চলাকালীন অবস্থায় বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন রকম ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছিল।মুক্তিযুদ্ধারা ময়দানে লড়াই করেছিল আবার কোন ব্যক্তি রয়েছে যারা তাদের বুদ্ধি খাটিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য সহযোগিতা করেছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পিছনে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। যদি যুদ্ধে বা বুদ্ধিজীবীদের কোন অবদান না থাকতো তাহলে তাদের নাম ইতিহাসের পাতায় কখনো লেখা থাকত না। তারা বিভিন্ন রকম ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছিল।তাদের মধ্যে ছিল চিকিৎসক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, প্রফেসর,শিক্ষাবিদ, জ্ঞানী গুণী মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন রকম ভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যে সহযোগিতা করেছিল, মুক্তিযুদ্ধের পরেও তারা থাকলে বাংলাদেশ আরও বেশি উন্নতি হতো। কিন্তু পায়খানার বাহিরে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে এবং আত্মসমর্পণ করার আগে বাংলাদেশকে একেবারে মেধাশূন্য করে দিয়ে তারা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে দেয়।
১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের সকল বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ এই দিনটিকে বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। 1971 সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ঢাকার মিরপুরে প্রথম স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। স্মৃতিসৌধের স্থপতি মোস্তফা আলী কুদ্দুস।
১৯৯১ সালে ঢাকার রায়ের বাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নামে আরেকটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ শুরু করা জা ১৯৯৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর উদ্বোধন করেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর নকশা করেন জামিয়া আল শাফি ও ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে একটি স্মারক টিকিটের সিরিজ প্রকাশ করেছে।
প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করার জন্য জাতীয়ভাবে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়ে থাকে। তারা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার অন্যতম মহানায়ক। তারা বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার অংশগ্রহণ তাদের স্মরণে প্রতি বছর ১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়।