বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ার খরচ |
সাদা এফ্রন পড়ে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকে হাজার হাজার ছেলে মেয়ে। ছোটবেলা থেকে যেকোনো শিশুকেই বড় হয়ে কি হতে চাও প্রশ্ন করলে শিশু উত্তর দিয়ে থাকে ডক্টর /চিকিৎসক। বেশিরভাগ ছেলেমেয়েরা এই স্বপ্ন নিয়ে বড় হতে থাকে। তারপরে চলে আসে সেই কাঙ্ক্ষিত সময় মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে অনেকের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না সরকারি মেডিকেল অথবা ডেন্টালে চান্স পাওয়া। তাই বলে কি আজীবনের লালিত ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন থেমে থাকবে? উত্তর হল "না "।কেননা সরকারি মেডিকেল ছাড়াও এছাড়া দেশে রয়েছে অসংখ্য বেসরকারি মেডিকেল কলেজ। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই বেসরকারি মেডিকেল কলেজের খরচ টা একটু ব্যয়বহুল। কিন্তু পড়াশোনার মান সরকারের কাছাকাছি। প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আপনারা অনেকে জানতে চান বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ার খরচ সম্পর্কে। আজকের এই প্রতিবেদনটি আপনাদের জন্যই সাজানো হয়েছে। তো দেরি না করে চলুন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের খরচ এবং বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে জেনে নেই।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজ
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়তে হলে প্রথমেই বেসরকারি মেডিকেল কলেজেগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত। বাংলাদেশে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আসন সংখ্যা রয়েছে ৭ হাজার ৩৫৫ টি।আর প্রতি বছর মেডিকেলে ভর্তি যোগ্য প্রার্থী হয়ে থাকে ৪৪ হাজার ৭৫৪ জন।অন্যদিকে সারাদেশে বর্তমানে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সর্বমোট সংখ্যা মাত্র ৯৮ টি। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বেসরকারি মেডিকেল কলেজে হওয়াতে এই সিটের সংখ্যাগুলো দিন দিন বাড়ছে। এছাড়াও আছে ছয়টি মিলিটারি মেডিকেল কলেজ, গণস্বাস্থ্য মেডিকেল জাট এসিড সংখ্যা ১৩০ টি ও USTC Medical কলেজ যার আসন সংখ্যা ১৫০ টি।বেসরকারি মেডিকেল ছাড়াও সারা দেশে ১৮ টি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজও রয়েছে দ্বন্ত চিকিৎসক (BDS)ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে যেভাবে ভর্তি হবেন:
সরকারি মেডিকেল কলেজ গুলোর ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই শুরু হয়ে যায় বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এর ফর্ম বিতরণ। সাধারণত প্রতিবছর একটা নির্দিষ্ট মার্ক ঠিক করে দেওয়া হয় বেসরকারি মেডিকেল কলেজ গুলোতে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষায় মার কমপক্ষে ৪০ পাওয়া হয়। বছর ভেদে এ মার্ক পরিবর্তন করা হয়ে থাকে। মার্ক ও আসন সংখ্যা উল্লেখ করে নোটিশ দেওয়া হয় বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ও তাদের ওয়েবসাইটে, দৈনিক পত্রিকায়। তারপরে শুরু করা হয় ফর্ম বিতরণ।
ফরম কেনার পর যাবতীয় তথ্যাদি পূরণ করে ফর্ম জমা দিতে হবে ওই মেডিকেল কলেজে যে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আপনি পড়তে চান। কর্মের সাথে মেডিকেল এডমিশন রেজাল্ট এর কাগজ, এসএসসি, এইচএসসি মার্কশিট, সার্টিফিকেট ও জমা দিতে হবে।সরকারি মেডিকেল কলেজে সাধারণত নির্দিষ্ট সংখ্যক ফর্ম বিক্রি করে ও তারপর শুরু হয় নির্বাচনী প্রক্রিয়া। তাই এডমিশনের মার্ক ভালো থাকলে আপনি কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ মেডিকেল কলেজের ফরম কিনে এপ্লাই করতে পারবেন যেখানে আপনি ভর্তি হতে ইচ্ছুক। ফর্ম জমা নেয়ার পর কয়েক দিন পর এই কলেজের নোটিশ বোর্ডে টাঙ্গানো হয় ওই সব ছাত্রছাত্রীদের নাম, রোল যারা ওই মেডিকেলে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন।ফোন করে জানানো হয় সব ছাত্রছাত্রীদের। এক অথবা দুই দিনের মাঝেই টাকা জমা দিয়ে ভর্তি করানো হয়।যদি নির্বাচিত ছাত্র-ছাত্রীদের তালিকার মধ্যে আপনার নাম থাকে তাহলে ভর্তির সময় টাকার সাথে আপনার এসএসসি ও এইচএসসির সার্টিফিকেট রেখে দেওয়া হবে আপনার মেডিকেল কলেজে। অনেক সময় টেস্টের রেজাল্ট এর সিরিয়াল পেছনে থাকলে ভর্তির জন্য আপনি দুই থেকে তিনটি মেডিকেলে নির্বাচিত নাও হতে পারেন।এতে হতাশ হওয়ার কিছুই নেই। যত বেশি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ফরম তুলতে পারবেন আপনার ভর্তির জন্য নির্বাচিত হওয়া সম্ভাবনা ততো বেড়ে যাবে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির খরচ
এবার আসি আসল আলোচনায়। বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়তে গিয়ে যে সমস্যাটা ছেলেমেয়েরা ও তাদের অভিভাবকদের সম্মুখীন হতে হয় তা হল বেসরকারি মেডিকেল কলেজের পড়ার খরচ। ভর্তির সময় এককালীন একটি মোটা অংকের টাকা জমা দিতে হবে আপনাকে ভর্তির ফিস ও মেইনটেইন খরচ হিসেবে। সাধারণত ভাবে ৬ লাখ থেকে শুরু করে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ার খরচ ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। আপনাকে খোঁজ নিতে হবে আপনি যে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ইচ্ছুক সেখানকার খরচটা ঠিক কেমন।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ছাড়াও হোস্টেল থেকে পড়তে হলে হোস্টেলের খরচ হিসেবে মাস হিসেবে পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা রাখতে হবে। মাসিক বেতন হিসেবে দিতে হতে পারে ছয় থেকে আট হাজার টাকা। এছাড়া পরীক্ষার সবগুলোতে পরীক্ষার ফি বাবৎ আপনাকে দিতে হবে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকার অংক। বিশেষ করে প্রফ পরীক্ষার আগে। এ খরচটাও বিভিন্ন কলেজে বিভিন্ন হতে পারে যদিও বোর্ড এর ফি নির্দিষ্ট। আর বাকি টাকা গুলো কলেজের অন্যান্য খরচ বাবদ নেওয়া হয়।
সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ার খরচের পার্থক্য
দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে লেখাপড়ার খরচে আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি হচ্ছে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টারসিফ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসেবে এ খরচ সরকারি মেডিকেল কলেজের থেকে বেসরকারি মেডিকেলের খরচ ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে বছরে একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হয়। এজন্য তার পাঁচ বছরের খরচ হবে ৬ লাখ টাকার মত। অথচ সরকারি কলেজের এ ফ্রি বছরের গড়ে ৭ হাজার টাকা করে ৫ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা করে। সে হিসেবে এক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরের ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজের খরচ আপডেট
২০২৩ সালে এই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি ইন্টারসিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সে হিসেবে দেখা যাচ্ছে যে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি 17 শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার। গত বছরে ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজারও মাসিক টিউশন ফি ছিল মাত্র আট হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে দশ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। সেই হিসেবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরের টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হতে পারে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা। যা বিগত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা বেশি। মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি খরচ নিয়ে আমাদের শেষ কথা
প্রিয় পাঠকগণ, ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেই ছোট থেকে অনেকেই পড়াশোনা শুরু করে। কিন্তু মেধা তালিকায় বা প্রশ্নপত্রের চক্রে পড়ে সরকারি মেডিকেল হাসপাতাল গুলোতে চান্স না পেলেও বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে আপনি অবশ্যই চান্স পাবেন। কিন্তু এখানে প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় অর্থ। কেননা সবার পক্ষে এই বেসরকারি মেডিকেল কলেজের খরচ চালানো সম্ভব হয় না। কিন্তু এই স্বপ্ন নষ্ট হওয়ার আগেই আপনি হতাশ হয়ে যাবেন না। মেধা তালিকা বা আপনি দরিদ্রতার কথা বলে কিছু খরচ কমিয়ে নিতে পারবেন আপনার নিকটবর্তী কলেজগুলো থেকে। অর্ধেক কর যেও আপনি ডাক্তারি পড়তে পারবেন বেসরকারি মেডিকেল কলেজে। তাই হতাশ না হয়ে আগে কলেজগুলোতে যোগাযোগ করুন, তথ্য সংগ্রহ করুন, তারপরে ভর্তি হয়ে আপনার স্বপ্ন পূরণ করুন। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আমাদের সাথেই থাকুন, আসসালামু আলাইকুম।