Class 7 History & Social Science PDF Book Free Download
শরীফা
শরীফা বললেন, যখন আমি তোোমাদের স্কুলে পড়তাম তখন আমার নাম ছিল শরীফ আহমেদ। আনুচিং অবাক
হয়ে বলল, আপনি ছেলে থেকে মেয়ে হলেন কী করে? শরীফা বললেন, আমি তখনও যা ছিলাম এখনও তাই
আছি। নামটা কেবল বদলেছি। ওরা শরীফার কথা যেন ঠিকঠাক বুঝতে পারল না।
আনাই তাকে জিজ্ঞেস করল, আপনার বাড়ি কোোথায়? শরীফা বললেন, আমার বাড়ি বেশ কাছে। কিন্তু আমি
এখন দূরে থাকি। আনাই মাথা নেড়ে বলল, বুঝেছি, আমার পরিবার যেমন অন্য জায়গা থেকে এখানে এসেছে,
আপনার পরিবারও তেমনি এখান থেকে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে। শরীফা বললেন, তা নয়। আমার পরিবার
এখানেই আছে। আমি তাদের ছেড়ে দূরে গিয়ে অচেনা মানুষদের সঙ্গে থাকতে শুরু করেছি। এখন সেটাই
আমার পরিবার। তাদের অবাক হতে দেখে শরীফা এবার নিজের জীবনের কথা বলতে শুরু করলেন।
শরীফার গল্প
ছোোটবেলায় সবাই আমাকে ছেলে বলত। কিন্তু আমি নিজে একসময়ে বুঝলাম, আমার শরীরটা ছেলেদের
মতোো হলেও আমি মনে মনে একজন মেয়ে। আমি মেয়েদের মতোো পোোশাক পরতে ভালোোবাসতাম। কিন্তু
বাড়ির কেউ আমাকে পছন্দের পোোশাক কিনে দিতে রাজি হতোো না। বো�োনদের সাজবার জিনিস দিয়ে লুকিয়ে
লুকিয়ে সাজতাম। ধরা পড়লে বকাঝকা, এমনকি মারও জুটত কপালে। মেয়েদের সঙ্গে খেলতেই আমার
বেশি ইচ্ছে করত। কিন্তু মেয়েরা আমাকে খেলায় নিতে চাইত না। ছেলেদের সঙ্গে খেলতে গেলেও তারা
আমার কথাবার্্ততা , চালচলন নিয়ে হাসাহাসি করত। স্কুলের সবাই, পাড়া-পড়শি এমনকি বাড়ির লোোকজনও
আমাকে ভীষণ অবহেলা করত। আমি কেন এ রকম একথা ভেবে আমার নিজেরও খুব কষ্ট হতোো, নিজেকে
ভীষণ একা লাগত।
একদিন এমন একজনের সঙ্গে পরিচয় হলোো যাকে সমাজের সবাই মেয়ে বলে কিন্তু সে নিজেকে ছেলে বলেই
মনে করে। আমার মনে হলোো, এই মানুষটাও আমার মতন। সে আমাকে বলল, আমরা নারী বা পুরুষ নই,
আমরা হলাম তৃতীয় লিঙ্গ (থার্্ডজেন্ডার)। সেই মানুষটা আমাকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেল, যেখানে
নারী-পুরুষের বাইরে আরও নানা রকমের মানুষ আছেন। তাদের বলা হয় ‘হিজড়া’ জনগোোষ্ঠী। তাদের
সবাইকে দেখেশুনে রাখেন তাদের ‘গুরু মা’। আমার সেখানে গিয়ে নিজেকে আর একলা লাগল না, মনে হলোো
না যে আমি সবার চেয়ে আলাদা। সেই মানুষগুলোোর কাছেই থেকে গেলাম। এখানকার নিয়ম-কানুন, ভাষা,
রীতিনীতি আমাদের বাড়ির চেয়ে অনেক আলাদা। আমরা সবার সুখ-দুুঃখ ভাগ করে নিয়ে একটা পরিবারের
মতনই থাকি। বাড়ির লোোকজনের জন্যও খুব মন খারাপ হয়। তাই মাঝে মাঝে বাড়িতেও যাই।
আজ থেকে বিশ বছর আগে বাড়ি ছেড়েছি। সেই থেকে আমি আমার নতুন বাড়ির লোোকদের সঙ্গে শহরের
বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে, নতুন শিশু আর নতুন বর-বউকে দোোয়া-আশীর্্ববা দ করে পয়সা রোোজগার করি। কখনোো
কখনোো লোোকের কাছে চেয়ে টাকা সংগ্রহ করি। আমাদেরও ইচ্ছে করে সমাজের আর দশটা স্বাভাবিক
মানুষের মতোো জীবন কাটাতে, পড়াশোোনা, চাকরি-ব্যবসা করতে। এখনও বেশির ভাগ মানুষ আমাদের সঙ্গে
মিশতে চায় না, যোোগ্যতা থাকলেও কাজ দিতে চায় না। তবে আজকাল অনেক মানুষ আমাদের প্রতি যথেষ্ট
সহানুভুতিশীল। ইদানীং আমাদের মতোো অনেক মানুষ নিজ বাড়িতে থেকে লেখা পড়া করছে।
আমাদের মতোো মানুষ পৃথিবীর সব দেশেই আছে। অনেক দেশেই তারা সমাজের বাকি মানুষের মতনই
জীবন কাটায়। তবে আমাদের দেশের অবস্থারও বদল হচ্ছে। ২০১৩ সালে সরকার আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে।
বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আমাদের জন্য কাজ করছে। শিক্ষার ব্যবস্থা করছে, কর্্মসংস্ র্্ম থানের
ব্যবস্থা করছে। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোোর প্রচেষ্টা নিচ্ছে। নজরুল ইসলাম ঋতু, শাম্মী রানী চৌৌধুরী,
বিপুল বর্্মণে র মতোো বাংলাদেশের হিজড়া জনগোোষ্ঠীর অনেক মানুষ সমাজজীবনে এবং পেশাগত জীবনে
সাফল্য পেয়েছেন।